30/01/2023
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধি ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়তে লাইভ মেডিসিন!
ব্যাকটেরিয়াকেই এবার ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগালেন স্পেনের কাতালান ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভান্সড স্টাডিস এবং বার্সেলোনা ইন্সটিটিউট অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা। হাসপাতালে ভর্তি রোগিদের অনেকেই সিউডোমোনাস অ্যারুজিনোসা নামের একটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়া দিয়ে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বিশেষ করে আইসিইউতে থাকা সংকটাপন্ন রোগিরা। এই ব্যাকটেরিয়া প্রায়শই প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ (রেসিস্ট্যান্স) দেখিয়ে থাকে। প্রখ্যাত বিজ্ঞান প্রকাশনা ন্যাচার বায়োটেকনোলজিতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধে এই গবেষক দল দেখিয়েছেন যে মাইকোপ্লাসমা নিউমোনি নামের আরেকটি ব্যাকটেরিয়াতে জিনগত কারিগরি ঘটিয়ে সিউডোমোনাস কে কার্যকরি ভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন ‘লাইভ মেডিসিন’।
জৈবনিক এর লেখাগুলো প্রতি সপ্তাহে সরাসরি ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুনঃ https://yameenhamid.substack.com/p/5cd
-----------------------------------------------------------------
লাইভ মেডিসিন কি?
এই প্রযুক্তিকে লাইভ মেডিসিন বলা হচ্ছে কারণ এখানে যে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি জৈবিকভাবে সক্রিয় তবে অ্যাটেনুয়েটেড অর্থাৎ, রোগের কারণ হওয়ার ক্ষেত্রে অপারগ। মাইকোপ্লাসমা ব্যাকটেরিয়া আকারে বেশ ছোট, এর জিনোমের মাত্র ৬৮৪ টি জিন রয়েছে, তাছাড়া এর কোষ পর্দার বাইরে কোন শক্ত কোষ প্রাচীর (সেল ওয়াল) নেই। কাজেই মাইকোপ্লাসমা কে জিনগত ভাবে পরিবর্তন করা সহজতর। মাইকোপ্লাসমার আরও একটি বিশেষ দিক হলো এই ব্যাকটেরিয়াও ফুসফুস ও শ্বাসনালীকে আক্রমণ করে, কাজেই এটি সহজেই ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে থাকা সিউডোমোনাসের সাথে সহজেই মিথষ্ক্রিয়া করতে পারে।
-----------------------------------------------------------------
বিজ্ঞানীরা যা করলেন
প্রথমে মাইকোপ্লাসমার ডিএনএ তে থাকা প্যাথোজেনিক জিন, অর্থাৎ যে জিনগুলোর কারণে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ (ইনফেকশন) ঘটাতে পারে, সেগুলোকে ডিএনএ থেকে কেটে বাদ দেয়া (ডিলিশন) হয়। এরপর এর ডিএনএ তে তিন ধরণের এনজাইমের জিন প্রবেশ (ইনসার্শন) করানো হয় যারা সিউডোমোনাস এর কোষ প্রাচীরের পলিস্যাকারাইডকে ভেঙে দেয়। এছাড়াও পায়োসিন নামের এক ধরণের প্রোটিনের জিনও মাইকোপ্লাসমার ডিএনএ তে প্রবেশ করানো হয় যার ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই জিনগত পরিবর্তিত মাইকোপ্লাসমা রোগির শ্বাসনালী থেকে পৃথককৃত সিউডোমোনাসের বিরুদ্ধে যেমন কার্যকরিতা দেখিয়েছে তেমনি ইঁদুরের শরীরে সংক্রমণ ঘটানো সিউডোমোনাসের বিপক্ষেও কার্যকরিতা দেখিয়েছে।
-----------------------------------------------------------------
বিজ্ঞানীরা যা বলেন
এই গবেষণা দলের একজন প্রধান গবেষক, লুই সেরানো বলেন, ‘ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরণের অণু, যেমন, সাইটোকাইন, ন্যানোবডি বা ডিফেন্সিন এর নিঃসরণ ঘটানো যায়। আমাদের লক্ষ্য ব্যাকটেরিয়ার এই বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা আবিষ্কার করা।’
এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে পালমোবায়োটিকস নামে একটি স্পিন অফ কোম্পানিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যার বিভিন্ন ফুসফুসের রোগের বিরুদ্ধে বায়োথেরাপি উদ্ভাবন ও প্রস্তুত করার চেষ্টা করছে।
-----------------------------------------------------------------
মূল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধঃ https://www.nature.com/articles/s41587-022-01584-9
ছবি বৃত্তান্তঃ এই বার দুটি সিউডোমোনাসের বায়োফিল্ম বা ঘনত্ব বুঝাচ্ছে। ধূসর বারটি শুধুমাত্র অ্যাটেনুয়েটেড মাইকোপ্লাসমার উপস্থিতিতে আর সবুজ বারটি এনজাইম নিঃসরণকারি মাইকোপ্লাসমার উপস্থিতিতে সিউডোমোনাসের ঘনত্ব। দেখা যাচ্ছে পরিবর্তিত মাইকোপ্লাসমার উপস্থিতিতে সিউডোমোনাসের ঘনত্ব অনেক কমে আসে (সূত্রঃ মূল প্রবন্ধ)