05/02/2025
কেন ১১ বছরের একটা মেয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যায়? মূল কারণ কি?
১১ বছর বয়সের একটি মেয়ে যখন বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাবা মাকে ছেড়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায় তখন এটা কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। গোটা দেশ যখন উদ্বিগ্ন, ফিরে আসাতেই একইভাবে সংক্ষুব্ধ। গোটা দেশের বাবা মারাও উদ্বিগ্ন দ্বিধান্বিত, তাদের মনের মধ্যে তাদের সন্তানদের কথায় বারবার ভেসে উঠছে যদি আমার সন্তানের এরকম ঘটনা ঘটে তখন কি হবে?
জটিল এক সময়, জটিল এক সিদ্ধান্ত, কিংকর্তব্য বিমুর বাবা মারা কি করবেন,বোঝায় যখন দায়!!
কোথায় পাব সমাধান? কোথায় আশ্রয় নেব আমি ধর্মে, রাষ্ট্রে!!
চেষ্টা করেছি ডাক্তার হিসেবে মনোদৈহিক পরিবর্তনগুলোকে ফোকাস করে কিছু লেখা!
এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়, এটি শারীরিক, মানসিক, এবং সাইকোসোশিয়াল (psychosocial) পরিবর্তনের একটি জটিল প্রক্রিয়ার ফলাফল। মেডিকেল দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বোঝাতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা যায়:
১. শারীরিক (Physical) পরিবর্তন:
এটি সাধারণত পিউবার্টি (Puberty) বা কৈশোরে প্রবেশের সময় হয়, যা হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে ঘটে।
হরমোনাল পরিবর্তন:
হাইপোথ্যালামাস (hypothalamus) থেকে Gonadotropin-Releasing Hormone (GnRH) নিঃসরণ শুরু হয়।
পিটুইটারি গ্রন্থি (pituitary gland) থেকে FSH (Follicle Stimulating Hormone) এবং LH (Luteinizing Hormone) নিঃসৃত হয়।
এগুলো ডিম্বাশয় (ovaries) কে উদ্দীপিত করে ইস্ট্রোজেন (estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (progesterone) তৈরি করে।
দেহগত পরিবর্তন:
স্তন বৃদ্ধি (Thelarche)
যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিপক্বতা (Pubarche)
মাসিক ঋতু (Menarche) – সাধারণত ১০–১৪ বছর বয়সে শুরু হয়।
উচ্চতার দ্রুত বৃদ্ধি (Growth spurt)
শারীরিক আকর্ষণ ও যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি (Sexual drive)
২. মানসিক (Psychological) পরিবর্তন:
ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট:
প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontal cortex) সম্পূর্ণ বিকাশে সময় লাগে, যা যুক্তি, পরিণতি বিশ্লেষণ, এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য দায়ী।
তবে, লিম্বিক সিস্টেম (limbic system), যা আবেগ এবং ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করে, এটি আগে বিকশিত হয়, ফলে ইমোশনাল ডিসিশন বেশি প্রাধান্য পায়।
আত্মপরিচয় (Identity Formation):
এই বয়সে তারা নিজেদের একটি নির্দিষ্ট পরিচয় গঠন করতে চায়, যা সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে।
ইমোশনাল ইমপালস (emotional impulse) বেশি থাকে, ফলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
৩. সামাজিক (Social/Psychosocial) প্রভাব:
পরিবার ও সমাজের প্রভাব:
পরিবারে সঠিক গাইডেন্সের অভাব বা অসুস্থ সম্পর্ক থাকলে শিশুদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিতে পারে।
সমবয়সী বন্ধু বা সামাজিক চাপও প্রভাব ফেলে।
প্রেম বা সম্পর্কের আকর্ষণ:
এই বয়সে "রোমান্টিক ইন্টারেস্ট" বা প্রেমের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়।
মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এবং চারপাশের পরিবেশও বড় ভূমিকা রাখে।
৪. মনোসামাজিক (Neurobiological) ব্যাখ্যা:
ডোপামিন (Dopamine) রিলিজ:
নতুন অভিজ্ঞতা বা উত্তেজনাপূর্ণ কোনো কিছু করলে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ে, যা আনন্দের অনুভূতি দেয়।
ভালোবাসা বা রোমান্টিক আকর্ষণের পেছনেও এই নিউরোট্রান্সমিটার গুরুত্বপূর্ণ।
৫. পরিণতি (Risks and Concerns):
অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ:
যুক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্তের জন্য ব্রেইনের পূর্ণ বিকাশ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তে প্রলুব্ধ হওয়া সহজ।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা:
বিষণ্নতা, উদ্বেগ, আত্মসম্মানবোধের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উপসংহার:
১১ বছর বয়সে একজন কিশোরীর এমন সিদ্ধান্তের পেছনে হরমোনাল পরিবর্তন, মানসিক পরিপক্বতার অভাব, এবং সামাজিক প্রভাব কাজ করে। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অংশ হলেও, সঠিক গাইডেন্স, শিক্ষা, এবং মানসিক সমর্থন প্রয়োজন।
আপনার মতামত থাকলে জানাবেন।
লিখেছেন
ডাঃ মোঃ গওছুল আযম
এমবিবিএস, এম এস(নিউরো সার্জারি)বিসিএস (স্বাস্থ্য)
সহকারী অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ