
03/07/2025
৭ই মুহাররম |
একটি শিশু, যার বয়স তেরো বছরের বেশি ছিল না, তাঁবুর এক কোণে বসেছিল। তার মনে সন্দেহ ছিল—সে কি আশুরার দিন শহীদদের তালিকায় আছে?
সে বলল:
“চাচাজান! আমি কি শহীদদের তালিকায় আছি?”
ইমাম হুসাইন (আ.) এই প্রশ্ন শুনে অনেক কেঁদেছিলেন। তিনি কাসিমকে কোনো উত্তর দেননি।
হে কারবালার মজলুমের শোক পালনকারীরা!
আপনার হৃদয়কে দৃঢ় করুন এবং চিন্তা করুন। ইমাম হুসাইনের (আ.) ভাষ্যমতে, পরদিন অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটার কথা ছিল।
এই তেরো বছরের কাসিম আশুরার দিনে ইমামের কাছে এল। তার শরীর তখনও পূর্ণরূপে বিকশিত হয়নি, যাতে অস্ত্র-সজ্জা ধারণ করা যায়। যুদ্ধের বর্ম ও হেলমেট শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি হতো, এবং সেগুলো শিশুদের মাথায় ঠিকমতো বসত না।
কাসিম অনুরোধ করল:
“প্রিয় চাচা! এখন আমার যাওয়ার পালা। দয়া করে আমাকে অনুমতি দিন।”
এটা মনে রাখা জরুরি যে আশুরার দিনে কেউই ইমামের অনুমতি ছাড়া ময়দানে যেত না। প্রত্যেকে আগে বলত:
“আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা আব্দিল্লাহ।”
তারপর বলত:
“মাওলা! অনুগ্রহ করে আমাকে অনুমতি দিন।”
ইমাম হুসাইন (আ.) সহজে কাসিমকে অনুমতি দেননি। বরং, কাসিমকে দেখে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। ইমাম ও কাসিম একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলেন।
লিখা আছে—কাসিম ইমামের হাত ও পা চুমু খেতে লাগল।
যদিও ইমাম হুসাইন (আ.) কাসিমকে অনুমতি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর জিহ্বা তা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল।
অবশেষে তিনি হাত মেলে বললেন:
“হে আমার ভাইয়ের স্মৃতি! এসো, তোমায় জড়িয়ে ধরে বিদায় জানাই।”
কাসিম ইমামকে জড়িয়ে ধরলেন, আর চাচা তাঁর ভাতিজাকে বুকে টেনে নিলেন।
লিখা আছে—তারা এত বেশি কাঁদলেন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন।
তারপর কাসিম ময়দানে গিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন।
তিন দিন তৃষ্ণার্ত এই কিশোর আর সহ্য করতে পারল না।
সে ঘোড়া থেকে পড়ে গেল। তখন যুদ্ধের ঘোড়াগুলো একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে দৌড়াতে লাগল। সেই ঘোড়ার দল কাসিমের ওপর দিয়ে ছুটে গেল, আর তাকে পিষে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলল।