06/04/2025
২০ শতকের বিখ্যাত ফরাসি লেখক, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক জ্যাঁ পল সাত্রে বিখ্যাত হয়ে আছেন তার অস্তিত্ববাদ বিষয়ক দর্শনের জন্য। দর্শনের ইতিহাসে তার 'বিয়িং অ্যান্ড নাথিংনেস' বইটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী বইগুলোর একটি। এ বইয়ের জন্য তিনি পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কারও। অথচ ব্যক্তিগত দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক অভিহিত করে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
'একজিসটেনশিয়ালিজম' বা অস্তিত্ববাদে যাবার আগে 'এসেনশিয়ালিজম' সম্পর্কে জানতে হবে। এসেনশিয়ালিজম শব্দটির কাছাকাছি বাংলা অর্থ হতে পারে সারবাদ বা সারাংশবাদ। আপনি কখনো "জীবনের অর্থ কী" এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন? যদি হয়ে থাকেন তাহলে এটা নিশ্চিত যে হুট করেই কোনো উত্তর আপনি দিতে পারেননি। কিংবা চিন্তা-ভাবনা করে উত্তর দিয়েও আদতে নিজের উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। কারণ আপনার দলেই আছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। জীবনের অর্থ বলতে কেউ বলবে প্রেম, কেউ বলবে ঈশ্বর, আবার কেউ বলবে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আসাটাই জীবনের অর্থ। প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে সহজ উত্তর এটিই। পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রতিটি জীব/জড়ের একটি নির্দিষ্ট পরিচয়, সত্ত্বা কিংবা নির্যাস রয়েছে যা তার অস্তিত্বের অর্থ বহন করে। এই ভাবনাকে বলা হয় এসেনশিয়ালিজম।
যারা জীবনের অর্থ নিয়ে ভাবেন না, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু অনেক মানুষ আমৃত্যু জীবনের অর্থ খুঁজতে থাকেন এবং ব্যর্থতা নিয়েই পৃথিবী ত্যাগ করেন। এক্ষেত্রে ভাবুকদের সহায়তায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এসেনশিয়ালিজম নামক এই দার্শনিক মতবাদের প্রবর্তন করেন প্লেটো এবং তার শিষ্য অ্যারিস্টটল। এই তত্ত্ব বলে যে, প্রতিটি বস্তুকে নিজের অস্তিত্ব অর্থবহ করতে হলে কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য বহন করতে হয়। চাকুর উদাহরণে এটি স্পষ্ট হবার কথা। প্লেটোর মতে, মানুষের জীবনের অর্থ এই যে সে মানুষ। মানুষের মাঝে মানবীয় গুণাবলী তার অস্তিত্বকে সার্থক করে। সকল মানুষের মাঝেই সেসব গুণাবলী রয়েছে। যারা এসব গুণাবলীর সদব্যবহার করে, তাদের আমরা সৎ মানুষ বলি। বিপরীত দিকে রয়েছে অসৎ মানুষ।
দর্শন হচ্ছে বহমান নদীর মতো, যা সময়ের সাথে সাথে বাঁক পরিবর্তন করে। সাত্রের এ ভাবনা খুব সহজ মনে হলেও সে সময় তা ছিল বৈপ্লবিক। কারণ, এসেনশিয়ালিজমে বিশ্বাসী মানুষ বিশ্বাস করত তারা নিজেদের পরিচয় নিজেরা সৃষ্টি করে না, বরং সৃষ্টিকর্তা সব ঠিক করে দেন। কিন্তু অস্তিত্ববাদ মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য মানুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়। এটুকু পড়ার পর যে কেউ ভাববেন যে, অস্তিত্ববাদ পুরোপুরি নিরীশ্বরবাদী। এই ভাবনাটা অমূলক নয় যতক্ষণ না আপনি আরও বিস্তারিত জানবেন। অস্তিত্ববাদ কেন নাস্তিকতার অনুরূপ নয়, তা বুঝতে হলে জানতে হবে 'টিলিওলজি' বা পরমকারণবাদ কী। পরমকারণবাদের মূল কথা হচ্ছে আনুষঙ্গিক সকল কার্যকরণ বাদ রেখে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা কেবলই এর উদ্দেশ্য দিয়ে করতে হবে। মানুষের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে পরমকারণবাদের বক্তব্য অনেকটা এরকম, "সৃষ্টিকর্তা কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সামনে রেখেই পৃথিবী এবং মানুষ সৃষ্টি করেছেন।"
বইয়ের নাম : বিয়িং অ্যান্ড নাথিংনেস (২ খণ্ড)
লেখক : জ্যাঁ পল সার্ত্রে
অনুবাদ : মৃণালকান্তি ভদ্র
একত্রে মুদ্রিত মূল্য : ২১৫০ টাকা
বিক্রয় মূল্য : ১৭২০ টাকা মাত্র!
বইটি অর্ডার করতে আপনার নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বার লিখে আমাদের মেসেজ করুন।
যেকোন প্রয়োজনে কল করুন : 01729-011588