15/06/2025
একসঙ্গে তিন তালাক দিলে তা কার্যকর হয় এবং তিন তালাক গণ্য হয়। এর ফলে স্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে স্বামী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পুনরায় বিয়ে বৈধ হয় না, যতক্ষণ না স্ত্রী অন্য কাউকে বিবাহ করে এবং বৈধভাবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক শেষ হয় (এটি হালালা নামে পরিচিত)। তবে একত্রে তিন তালাক দেওয়া একটি গুনাহের কাজ, কারণ এটি সুন্নাহ পরিপন্থী।
দলিলসমূহ:
1. তিন তালাকের কার্যকারিতা সম্পর্কে কুরআন থেকে:
قال الله تعالى:
"فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ"
— (سورة البقرة: 230)
এই আয়াতে বলা হয়েছে, তৃতীয় তালাকের পর স্ত্রী স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যায় এবং অন্য স্বামীর সঙ্গে বৈধ বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
2. হাদিস থেকে প্রমাণ:
رُوِيَ أَنَّ رَجُلًا طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا فِي زَمَانِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمْضَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
— (صحيح مسلم: 1472)
অর্থাৎ, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সঃ-এর সময়ে একসঙ্গে তিন তালাক দেন। রাসূলুল্লাহ সঃ এটি কার্যকর করেন।
3. ফিকহের কিতাব থেকে:
"من طلق امرأته ثلاثا بلفظ واحد أو بألفاظ متفرقة وقعت الثلاث ولا تحل له إلا بعد زوج."
— (الدر المختار مع رد المحتار: 3/240)
এখানে বলা হয়েছে, একত্রে তিন তালাক দেওয়া হলে তিন তালাক কার্যকর হয়, এবং স্ত্রী হারাম হয়ে যায় যতক্ষণ না হিলালা সম্পন্ন হয়।
এক বৈঠকে তিন তালাক দিলেও তিন তালাক পতিত হয়ে যায়।
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ثَلاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ
তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ, তালাক ও রজয়াত। (আবু দাউদ ২১৯৪ তিরমিযি ১১৮৪)
যাই হোক, তথাপি কোনো ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয় তাহলে--
১. স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য হারাম হয়ে যায়। তথা তালাকের পর থেকে তাদের পরস্পরের জন্য দেখা-সাক্ষাৎ, মেলা-মেশা তথা স্বামী-স্ত্রী সুলভ সকল যাবতীয় আচরণ নাজায়েয ও হারাম হয়ে যায়।
২. তখন স্ত্রীর ইদ্দত তথা তালাক পরবর্তী তিন মাসিক শেষ হওয়া পর্যন্ত, আর গর্ভবতী হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত তাকে খোর-পোষ দেয়া এবং মোহর আদায় না করে থাকলে মোহর আদায় করা স্বামীর ওপর ওয়াজিব।
৩. যেহেতু তিন তালাক প্রদানকারী এখন আর এই স্ত্রীর স্বামী নন সেহেতু স্ত্রীর জন্য করণীয় হল, দ্রুত এই স্বামীর সংসার থেকে চলে যাওয়া৷ এরপর যদি অন্য কোথাও স্ত্রীর বিয়ে হয়, ঘর-সংসার হয়৷ সেই স্বামী কোনো কারণে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয় কিংবা মারা যায় তখন দ্বিতীয় স্বামীর তালাক বা মৃত্যুজনিত ইদ্দত পালনের পর নতুনভাবে মোহর নির্ধারণ করে শরীয়ত সম্মত পন্থায় প্রথম স্বামীর কাছে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে৷ এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই৷
আল্লাহ তাআলা বলেন, যে
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা-২৩০)
والله اعلم بالصواب
মুফতি মাহবুবুর রহমান ইউসুফী