21/01/2025
[১] ড. আ/ফি/য়া সিদ্দিকী নামটা যখন প্রথম শুনেছিলাম তখন ভাবছিলাম উনি কে? উনার নাম এতো করে বলা হয় কেন? টুকটাক ইনফরমেশন শুনতাম যে তাঁকে সুপার পাওয়ারের দেশ তাদের কারাগারে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু কারণ টা পরিষ্কার ছিলাম না।
একদিন বই এর দোকানে তাঁর সম্পর্কে একটা বই হাতে পাই। বইটার নাম ❝আ'ফিয়া সিদ্দিকী: গ্রে লেডি অব বাগরাম।❞
তো বাসায় এসে বইটা পড়তে পড়তে একটা চাপ্টার ই দেখি এই নামে
“আসলে আফিয়ার অপরাধ টা কি ছিলো?”
[২] এইটা নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তার বোন ড. ফাওজিয়া সিদ্দিকী, একজন চিকিৎসক,স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন:
❝আফিয়া ব্র্যান্ডিজ থেকে পিএইচ.ডি. সম্পন্ন করে। তার গবেষণার বিষয় ছিল “অনুকরণের মাধ্যমে শেখা”। লোকে যে বলে সে নিউরোসার্জন বা পরমাণু বিজ্ঞানী ছিল এগুলো সব ভুয়া কথা। তার পারদর্শিতা ছিল শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। বিশ্বাস করত দেশের ভাগ্যই বদলে দেওয়া সম্ভব যদি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা যায়। সে এমন এক পাঠ্যক্রম তৈরি করছিল যা বাচ্চাদের জন্য সহজবোধ্য এবং একইসাথে আনন্দদায়ক হবে। এজন্য সে দশ বছরের একটি সিলেবাস তৈরি করে আমাকে দেখিয়েছিল।
এরপর যখন আমি সেই সিলেবাসটি বিস্তারিতভাবে দেখতে লাগলাম, বুঝতে পারলাম সে প্রতিটা বিষয়ই ইসলাম এবং কুরআনের সমন্বয়ে সাজিয়েছে। সে বিশ্বাস করত আধুনিক গবেষণা আর আবিষ্কার প্রকৃতার্থে নতুন নয়। বরং এগুলো সব ইসলামের মূলনীতিতে প্রোথিত জ্ঞান থেকেই আহৃত। এখন আমার মনে হয়, যদি আমাদের হর্তাকর্তারা তার শিক্ষানীতির গুরুত্ব বুঝত, আমাদের সার্বিক অবস্থা অনেকখানি উন্নত হতে পারত। আমাদের যুবসমাজকে তাহলে আজ আর বিদেশের ভিসার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতো না। বিশ্বাস করুন, আফিয়ার শিক্ষাপদ্ধতি চালু হলে পনের বছরের মধ্যেই দেখা যেত বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশে আসতে শুরু করেছে।
“আমাদের প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েট হতো কুরআনের হাফিজ।”
আমি এখন জানি কোনো জিনিসটা আ’মেরিকাকে এত ভয় পাইয়ে দিয়েছে। বিচারকরা সবকিছু জানার পরও তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তাকে ছিয়াশি বছরের সাজা দিয়েছে। বিচারক বলেছে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণাদি নেই তবুও এমন রায় তারা লিখেছে “পাকিস্তানের” আইনজীবীদের রায়ের আলোকে।
আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে জানতে পারলেন আফিয়াকে... আফিয়াকে... ওহ কিভাবে বলব আমি, আফিয়াকে সম্পূর্ণ ন/গ্ন করে পাঁচ পাঁচজন পুরুষ আমার ছোট বোনটার দেহে তল্লাশি চালিয়েছে। তারপর ওরা কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেছে। আর আফিয়াকে বলেছে এর ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে। কিভাবে ও পারবে কুরআনের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে! হ্যাঁ! কী করে সম্ভব? ওরা আফিয়াকে এভাবে হাঁটার জন্য বাধ্য করত। কাপড় পরতে দিত না। ন/গ্ন করে রাখত। যতক্ষণ না হাঁটবে কুরআনের পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে, ততক্ষণ কাপড় দিবে না। আফিয়া আমাদের ভাইয়ার সাথে দেখা করতে চাইলেও ওরা এই কাজ করত। আইনজীবীর সাথে কথা বলতে চাইলেও একই ঘটনা। ওরা এসব করে করে রিপোর্ট করত আফিয়া ওদের কাজে সহযোগিতা করছে না!❞
[৩] আফিয়ার আইনজীবি ক্লাইভ স্মিথ এর আগে গুয়ানত|ন|মো বে-র অনেক ব/ন্দীদের নিয়ে কাজ করেছেন এবং এসব বন্দীদের অনেকে আলহামদুলিল্লাহ মুক্তি পেয়েছেন। তিনি আশাবাদী এক সময় না এক সময় আফিয়াও মুক্তি পাবেন। আমরা আশা করি আল্লাহ অতি দ্রুত সেই দিনটি নিয়ে আসবেন। মহান আল্লাহ মুসলিম বন্দীদের কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন। আমাদের অক্ষমতা, অকর্মণ্যতা ও গাফেলতি ক্ষমা করুন।
[মনে রাখবেন, তিনি কিন্তু সেই মহিলা যিনি রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখেছিলেন আর জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমার এই পরীক্ষা কবে শেষ হবে? রাসুল (ﷺ) অশ্রুসিক্ত হয়ে তাঁকে বলেছিলেন,
“এটা তোমার পরীক্ষা না, এটা আমার উম্মতের পরীক্ষা।”]
লেখাঃ ইবতিহাজ তাহসিন
সংরক্ষিত।