18/09/2025
শ্রমিকদের দ্বিগুণ মাইনে করার পিছনে হেনরি ফোর্ডের মনে কোনো দয়া কাজ করেনি, করেছিল তুখোড় ব্যবসায়িক বুদ্ধি।
ডেট্রয়েট, ১৯১৪। শীতের সকালে ফোর্ড মোটর কোম্পানির কারখানার বাইরে হঠাৎ অস্বাভাবিক ভিড় জমে গেল। হাতে কাগজ, চোখে অবিশ্বাস—সবাই খবরটা যাচাই করে নিতে চাইছে। হেনরি ফোর্ড নাকি ঘোষণা দিয়েছেন, প্রতিদিনের মজুরি হবে আগের তুলনায় দ্বিগুণ অর্থাৎ পাঁচ ডলার!
সেই সময়ে একজন সাধারণ শ্রমিক আড়াই ডলার পেলেই খুশি। অথচ ফোর্ড এক ঝটকায় মজুরি দ্বিগুণ করে দিলেন। শহরজুড়ে গুজব রটে গেল—“ফোর্ড বোধহয় খেয়ালি হয়ে গেছেন” বা “এমন টাকা দিলে তো কোম্পানি একদিনেই দেউলিয়া হয়ে যাবে।” সংবাদপত্রে কেউ লিখল, এ এক নজিরবিহীন দানশীলতা। কিন্তু ফোর্ড নিজে জানতেন, এর পেছনে আছে একেবারে খাঁটি হিসেব-নিকেশ।
তাঁর অ্যাসেম্বলি লাইন তখন শিল্পবিপ্লবের প্রতীক। গাড়ি তৈরি হচ্ছিল অদ্ভুত দ্রুততায়, অথচ এই যন্ত্রনির্ভর ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করতে করতে মানুষ হারাচ্ছিল ধৈর্য আর শক্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে একই স্ক্রু আঁটা বা একই লিভার টানার মতন বিরক্তিকর ও বিপজ্জনক পরিবেশে শ্রমিকরা টিকে থাকতে পারছিল না। একে একে সবাই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছিল।
তখন ফোর্ড বুঝলেন, শুধু যন্ত্রের জোরে কাজ চলবে না, মানুষকেও ধরে রাখতে হবে। তাই পাঁচ ডলারের ঘোষণায় বদলে গেল সব হিসেব। শ্রমিকদের চাকরি ছাড়া তো দূরের কথা, উল্টে যারা চলে গিয়েছিল তারাও আবার ফিরে এল।
উৎপাদনের গতি হঠাৎ বেড়ে গেল, নির্মাণের সময় ও যোগান পর্যাপ্ত হওয়ার দরুণ গাড়ির মূল্যও হ্রাস পেলো। ফোর্ডের সস্তা অথচ টেকসই “মডেল টি” রাস্তায় নামল একেবারে সাধারণ মানুষের নাগালের দামে আর ধীরে ধীরে পৌঁছে গেল আমেরিকার প্রায় প্রতিটি ঘরে ।
এই এক সিদ্ধান্ত তৎকালীন গোটা শিল্পজগৎকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। অন্য মালিকরাও বাধ্য হলেন মজুরি বাড়াতে। আলোচনায় এলো এক নতুন ধারণা — শ্রমিকদের ভালো মজুরি দেওয়া মানেই ব্যবসায় ক্ষতি নয়, বরং তাতেই লাভ বাড়তে পারে।
আজ ইতিহাস বলছে, ফোর্ডের সেই পাঁচ ডলারের সিদ্ধান্ত শুধু একটা কোম্পানির সমস্যা মেটায়নি, বদলে দিয়েছিল আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষের জীবনধারা। ব্যবসার প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, তার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল সবার জীবনে। যা হয়ে উঠেছিল আমেরিকার শ্রম-সংস্কৃতির এক বড় বাঁক বদলের মুহূর্ত।
লেখা: সৈকত বিশ্বাস
ছবি: সংগৃহীত
© সৈকত বিশ্বাস, বংDoze