20/09/2025
বিজ্ঞান একটি প্রমাণভিত্তিক জ্ঞানব্যবস্থা। বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা যদি ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে তা শুধু ভুল তথ্য ছড়ায় না, বরং অন্যদের বিভ্রান্তও করে। বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়কে বিজ্ঞান দিয়ে ভুলভাবে মেলানোর চেষ্টা করলে তা একদিকে অপবিজ্ঞান, অন্যদিকে ধর্মের প্রতি অসম্মানও বটে। আর আমি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যা খুবই অপছন্দ করি। ডাক্তার নাবিল, আমি তাকে বেশ পছন্দই করি, সুন্দর করে কথা বলেন, বিশেষ করে যেকোনো কিছু সহজভাবে বুঝানোর টেকনিক তাঁর দারুণ। কিন্তু তাই বলে তিনি ভুলভাল বিজ্ঞান শিখাবেন এইটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। বিশেষ করে নবীজি সাঃ এর পবিত্র মিরাজ কে বিজ্ঞানের সাথে ভুলভাবে মিলানো খুবই গর্হিত কাজ। নবীজি সাঃ কে মহান আল্লাহ্ মিরাজ করিয়েছেন তাঁর নিজ মহিমায় এবং এইটা আমাদের জ্ঞানের সীমার বাইরে। আমি জাস্ট ডাক্তার নাবিলের কিছু বৈজ্ঞানিক ভুল এখানে তুলে ধরছি।
১। তিনি দাবি করেছেন কেউ যদি আলোর গতিতে চলে তাহলে সে আর বস্তু থাকবেনা, শক্তি হয়ে যাবে।
ব্যাখ্যাঃ না, তাঁর কথা সত্য না। আসল কথা হচ্ছে কোনো বস্তু যার সামান্য হলেও কোন ভর আছে, সে কখনোই আলোর গতিতে ছুটতে পারবেনা। আলো বা ফোটন এর কোন ভর নাই তাই সে এই স্পীডে ছুটতে পারে। ক্ষুদ্রতম ভরের কোন বস্তুকেও আলোর গতিতে ট্রাভেল করাতে অসীম পরিমাণ শক্তি লাগবে যা সম্ভব না।
২ তিনি দাবি করেছেন নবীজি সাঃ এর মিরাজ কে আইনস্টাইনের স্পেশাল রিলেটিভিটি এর টাইম ডাইলেশন দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
ব্যাখ্যাঃ না, তাঁর কথা সত্য না। টাইম ডাইলেশন হচ্ছে যদি কেও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলে তবে অবজার্ভারের সাপেক্ষে তাঁর সময় কম অতিবাহিত হবে। অর্থ দাঁড়ায় পৃথিবীতে যদি ৩০ বছর সময় পার হয় তাহলে ভ্রমণকারীর মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হবে। আমরা যদি ধরে নেই নবীজি সাঃ ৯৯.৯৯৯৯% আলোর গতিতে ট্রাভেল করেছেন ৫ ঘণ্টায় বেহেস্ত দোযখ দেখে এসেছেন তাহলে এই ৫ ঘণ্টায় তিনি পৃথিবীতে এসে দেখবেন খেলাফায়ে রাশেদীন এর সময় পার হয়ে কারবালার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। নাউজুবিল্লাহ! অথচ সহিহ হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তিনি ফিরে এসে দেখেছেন তাঁর অজুর পানি তখনো গড়িয়ে যাচ্ছে। শুধু এটাই না, এই অল্প সময়ে কারো পক্ষে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিও ক্রস করা সম্ভব না, বড়জোর আমাদের খুব কাছের আলফা সেন্টুরিতে যাওয়া সম্ভব। তাই এই অল্প সময়ে মহাবিশ্ব ক্রস করার কথা বলা শুধু অবৈজ্ঞানিকই নয়, মুর্খতাও।
৩ তিনি দাবি করেছেন আল্লাহ্ যদি বেহেস্ত কে আলোর গতিতে চালিয়ে দেন তবে জান্নাতিদের বয়স ১ সেকেন্ড ও বাড়বেনা।
ব্যাখ্যাঃ না, উনার দাবি ভুল। আইনস্টাইন কখনোই এই কথা বলেন নাই। বরং উল্টা কথা বলেছেন। কোন বস্তু যার ভর যত ক্ষুদ্রই হোকনা কেন এমনকি সেটা যদি একটা ব্যাকটেরিয়াও হয় যা খালি চোখে দেখাই যায় না, তাকেও আলোর গতির সমান গতি দিতে অসীম পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন হবে যা ম্যাথম্যাটিক্যালই এবং ফিজিক্যালি সম্ভব না।
৪ তিনি দাবি করেছেন নবীজি সাঃ এর হাতের আঙুল থেকে এমন শক্তি বের করা সম্ভব আল্লাহ্ চাইল যা দিয়ে চাঁদকে দুই ভাগ করে ফেলা সম্ভব।
ব্যাখ্যাঃ না, তাঁর দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। এইটা সঠিক যে বস্তু আসলে শক্তির ই আরেকটা রূপ এবং একটা থেকে আরেকটায় কনভার্ট করা যায়। কোন বস্তুকে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে কি পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে তা E=mc2 সূত্রের মাধ্যমে বের করা যায় যা আইনস্টাইন বলেছেন এইটাও সত্য। সমস্যা হচ্ছে চাঁদের যেই সাইজ তাকে দুই ভাগ করে ফেলতে যে পরিমাণ শক্তি লাগবে তা কোন মানুষের শরীর থেকে বের করতে চাইলে প্রায় ২০ বিলিয়ন মানুষের সম্পূর্ণ শরীরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে।
৫। তিনি দাবি করেছেন উপর থেকে যদি একটা বালুকণাও ফেলা হয় তাহলে তাঁর ইমপ্যাক্টে একটা বিল্ডিং ধ্বংস হয়ে যাবে।
ব্যাখ্যাঃ না, তাঁর দাবি সঠিক নয়। এখানে তিনি বেশ কয়েকটি ভুল তথ্য দিয়েছেন। মহাবিশ্বের মধ্যে উপরে নিচে বলে কিছু নাই। তবে আমরা ধরে নিতে পারি যে পৃথিবীর গ্রাভিটির মধ্যে যদি কোন বস্তু ঢুকে যায় তবে তাকে আমরা আমাদের উপরে বলে ধরে নিতে পারি। সেটাও যদি ধরে নেই তবুও সেখান থেকে বালুকণা কেন একটা ছোট পাথর ফেলে একটা বিল্ডিং ধ্বংস করা সম্ভব না। প্রথমত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ার সাথে সাথে সেই পাথর পুড়ে ছাই হয়ে যাবে পৃথিবীতে আসবেইনা। দ্বিতীয়ত বায়ুমণ্ডলের ইফেক্ট যদি বাদও দেই তবুও পাথরের পক্ষে এত এনার্জি গেইন করা সম্ভব না যা দিয়ে একটা বিল্ডিং ধ্বংস হয়ে যাবে।
এভাবে ধর্মীয় বিষয় বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করতে যাওয়া শুধু অপবিজ্ঞানই না ধর্মের অপমান।