30/07/2024
লেখা-Tahmina Tani আপুর টাইমলাইন
#ওপারে_বিজয়ীর_কথোপকথন
- সাঈদ ভাই, চলে এলাম
- হ্যা কিন্তু আপনি এখানে কখন এলেন মুগ্ধ!
- এইতো চলে এলাম,
- কিন্তু আপনি তো এই কিছুক্ষণ আগেও সবাইকে পানি আর বিস্কুট খাওয়াচ্ছিলেন!
- হ্যা খাওয়ানো প্রায় শেষের দিকে, একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম, কিন্তু তখনই...
- থাক আর বলতে হবেনা।
- আসেন আমরা বসে দেখি আর অপেক্ষা করি...
- কাঁদছেন কেনো সাঈদ ভাই, আপনি তো কি সাহসী বীর, বাংলার মানুষ যতদিন বাঁচবে, আপনার শিরদাঁড়া সোজা করা, বুক পেতে দেয়া সাহসী বেশ কোনোদিন ভুলবেনা। রাফি ভাই ওয়াসিম ভাই ওনারা কই,
- ঐ যে ওখানে বসে কাঁদছে, থাক ওদের কাঁদতে দেন, বেঁচে থাকতে তো কাঁদেনি ওরা, সাহসী হয়ে বুকে কান্না জমিয়ে রেখে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলো..
- ঐ যে দেখেন সৈকত আসছে, ওর দু'টো বোন অঝোরে কাঁদছে, আর সৈকতের পেছনে হৃদয় দাঁড়িয়ে, হৃদয়ের বাবা মায়ের কষ্ট দেখে আর সহ্য হচ্ছে না, জানেন হৃদয় যেদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসে তখন ওর বাবার সামর্থ্য ছিলোনা ছেলের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দেয়ার, তখন তিনি শুধু ব্যর্থতার লজ্জায় কাঁদছিলেন, তখন তার মা কিভাবে কার কাছ থেকে কিছু টাকা এনে ছেলের হাতে গুঁজে, আর সাথে দেন বুকে জমিয়ে রাখা আদরটুকু। কি ভরসাই না ছিলো ছেলের প্রতি, একদিন ছেলে তাঁদের অভাব দূর করবে। ঐ যে দেখেন পেছনে আরেকজন, ফরহান ফাইয়াজকে দেখেন, কি তরতাজা একটা সাহসী ছেলে বীরদর্পে এগিয়ে আসছে, কিন্তু ফারহানের আম্মু৷ মানে আন্টির জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে, ওনি এখন পাগলপ্রায়, কোমায় আছেন, জানিনা কেমন করে বাঁচবেন একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে।
- চুপ করেন সাঈদ ভাই, আর নিতে পারছিনা।
- কেমন আছেন সাঈদ ভাই, মুগ্ধ ভাই আপনারা?
- তুমি তামিম না, হ্যা তাইতো, তুমিও এতটুকুন হয়ে রাজপথে নেমেছিলে?
- হ্যা, ঐ যে দেখেন শান্ত ভাইয়া, ইরফান ভাই রাকিব ভাই, হাসান ভাই সহ আরও কতজন আসছি আপনাদের সাথে এক হতে।
- দেখেন একটি ছেলের গায়ে গুলি লাগলো, সাথের ছেলেটি ওকে কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছে, কিন্তু পারছেনা, কারণ ওর পিঠেও যে গুলি ছুঁড়েছে... আহ, আর বলোনা, কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছে..
- আরে ওটা দীপ্ত দে আর পেছনে রৌদ্র সেন না!
-হ্যা ভাই চলে এলাম আমরাও। কেম্নে থাকি বলেন আপনাদের ছাড়া। আপনার সাহস দেখে আমরাও ঝাপিয়ে পড়েছিলাম, সাহসী হয়ে বুক পেতেছিলাম।
- দেখো সমুদ্র আসছে, ওকে দেখলেই মনে হয় ওর বিশাল সমুদ্রের মতো একটা মন আছে, অদ্ভুত ছেলেটা। ছেলেটা পুরোটাই একটা কলিজা...।
- কি ব্যাপার এখানে এত ছোট বাচ্চা মেয়েটা কে, ও কেনো এখানে এলো, কিভাবে এলো, ওতো কোন অধিকার আদায়ে রাজপথে নামেনি,
-. বাচ্চা মেয়েটা আমাদের রিয়া মনি। মেয়েটি ছাদে গিয়েছে হেলিকপ্টার দেখতে, ওখান থেকেই নাকি গুলি ছুঁড়া হয়, মেয়েটির মাথায় লাগে, এজন্যই তো আমাদের সাথে চলে এলো।
- আমাদের বোন, দেখেন ঐ যে, গুলি খেয়ে হাসপাতালে যেতে যেতে মাকে ফোন করে বলেছিলো ' মা কি করো, তোমার মেয়ে আর ফিরবেনা তোমার কোলে,
এখনও মায়ের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে আছে...
- ঐ যে দেখেন ছোট একটা বাচ্চা ছেলে,
- ইস ওর চোখ একটা কোথায়,
- চোখে গুলি লেগেছে।
- কি বলেন, কোথায় ছিলো সে রাজপথে? আমাদের মতো বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করতে বের হয়েছিলো?
- না আমির বাসায় ছিলো, জানালার ধরে দাঁড়িয়ে তান্ডব দেখছিলো, একটা গুলি এসে লাগে ওর চোখে, আর বের হয় মগজ ভেদ করে। জানেন ওর রক্তের দাগগুলি ওর খেলনা পুতুল, বই, খাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, ওর বাবা সেগুলো মুছেনি, স্মৃতি করে রেখেছেন, ছেলের শরীরের একটু অংশ তো তাই....
- আহ, আর সইতে পারছি না, প্লিজ বন্ধ করেন আপনাদের কথোপকথন...!
চরম শান্তির একটা বাংলাদেশ চাই,....
২৭-০৭-২০২৪
২:৫৭ মিনিট ( মধ্যরাত)