20/09/2022
#স্মৃতিচারণ
#ভ্রমণনেশা #ইচ্ছেথাকলেইউপায়হয়
একটা সময় বাংলাদেশে ভ্রমন মানেই ছিল পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়িয়ে আসা, নয়তো বন্ধু বান্ধবদের সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পরা। সময়ের সাথে সাথে নতুন প্রজন্ম একে অন্যকে বিশ্বাস করতে শিখেছে। এরপরও অপরিচিত কারো সাথে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেরানো, এটা এখনো অনেক মা বাবাই মেনে নিতে পারেন না, আর এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, বিশ্বাস এক দিনে গরে ওঠে না।
সময়টা ২০১৬, দেশ ঘুরে দেখার নেশাটা সবে শিকড় গজানো শুরু করেছে। পরিবারের বাইরে বন্ধুদের সাথে হঠাৎ বেড়িয়ে পরার, সবে মাত্র পারমিশন পেয়েছি, না ! আসলে তখনও পাইনি। আব্বা জানতে পারলেই ট্যুরের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ঝারির উপরে রাখতেন। কাছের বন্ধুদের মধ্যে এই বাউন্ডুলে নেশাটা আমার মধ্যেই প্রোখর ভাবে দেখা দিয়েছিল।
দেখবেন যার যাতে নেশা, সে তা হাসিল করার জন্য কোন না কোন একটা পন্থা ঠিকই খুঁজে বের করে ফেলতে পারে।
ইন্টারমিডিয়েটের পর থেকেই চাকরি ছিল বলে বাসা থেকে কোনদিন নিজের স্বপ্ন পুরনে টাকা চাইতে হয়নি। তাই যেখানে সেখানে হুটহাট চলে যাওয়ার একটা মানসিকতা কাজ করতো। আমি তখন মুক্ত পাখি।
বছরের শুরুর দিকে সাজেক ট্যুর থেকে পরিচয় প্রিওদার সাথে। দাদা একদিন হঠাৎ কল করে বলছে, আমরা বান্দরবন যাচ্ছি,
--হ্যা ! কবে?
--এই মাসেই শেষের দিকে।
--মাসের শেষে? ক্যামনে কি? টাকা কই পামু?
--ম্যানেজ কর। ৫/সাড়ে ৫ হইলেই হবে।
পকেট মানা করলেও আমার মন মানা করতেছে না। ফোনে থাকতেই মাথার মধ্যে ঘুরতেছে টাকা কই পাওয়া যায়। অক্টোবর মাস, তার আগের মাসেই জমা টাকা সব সেমিস্টার ফি দিতেই খরচ করে ফেলছি। কই পাবো টাকা, বাসায় তো বলা যাবেই না।
--দাদা তুমি টিকেট কাটো, আমি দেখি কি করতে পারি।
আমার স্পষ্ট মনে আছে রাতে বাস কল্যাণপূর থেকে, আর দুপুর ৩টা তখনও আমার টাকা ম্যানেজ হয়নি। ৪/৫ জন থেকে অল্প অল্প করে ধার নিয়ে ৫ হাজার হয়েছে মাত্র, এরকম কাটায় কাটায় টাকা নিয়ে কি পাহাড়ে যাওয়া যায়? তারপরও ব্যাগ নিয়ে রওনা দিয়েছি, আম্মা ডাক দিয়ে বললেন, তোর আব্বু ১ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। অথচ আমি জঙ্গলে যাচ্ছি শুনে সকাল থেকে আমার সাথে কথাই বলে নাই আব্বা। আমাকে আর কে পায়, আমি তখন উরে উরে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে।
২১ জনের দল, না কোন ইভেন্ট বা ফেসবুক গ্রপের প্যাকেজ না, এখানে সবাই ভূত থেকে ভূতে খবর পেয়ে। যারা কিশোর, মুসা, রবিনের সাথে পরিচিত তারা এই সিস্টেমটা জানে। বেস মজার এই ভূত থেকে ভূত কনসেপ্ট, এবার তাও আমি অনেককেই চিনি, এখানে অনেকে আছে যে শুধু তার নিজের বন্ধুকে চেনে বাকি ১৯ জনই তার কাছে সম্পুর্ন অপরিচিত।
দাদার হাতে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বললাম, আমার কাছে আর এই ৫০০ টাকা আছে, আমাকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসার দায়িত্ব তোমার। প্রিওদা মুসলিম, আমিই তাকে ইচ্ছে করে দাদা ডাকি। এই গ্রুপের সাবাই আমার চেয়ে ৫/৬ বছরের বড়, তবে এই বয়সের ফারাকটা কোন দিন মনেই হয়নি। এই মানুষ গুলই আমার ভ্রমন নেশার চারা গাছে পানি ঢালার কজ করেছে। আজ তা রীতিমত বৃক্ষ।
To be continued ..........