15/09/2022
💎সুন্নাহ_অগ্রাহ্য_করার_তড়িৎ_শাস্তি💎
আল্লাহর রসূলের সুন্নাহ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করলে, সুন্নাহর যথার্থ কদর না করলে, তার শাস্তি তো পরকালে আছেই। ইহকালে সত্বর শাস্তিও কোন কোন মানুষকে মহান আল্লাহ প্রদান করে থাকেন। তাঁর প্রিয় হাবীবের কথাকে অগ্রাহ্য করার পরিণামে কিছু সাজা দিয়ে থাকেন ঐ উন্নাসিক, উদ্ধত ও ব্যঙ্গকারীকে। এ মর্মে কয়েকটি উদাহরণ নিম্নরূপঃ-
১। ইবনে আব্বাস (রায্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, একদা নবী ﷺ বললেন, “(সফর থেকে ফিরে) তোমরা রাতের বেলায় স্ত্রীদের কাছে গমন করো না।”
কিন্তু দুটি লোক হাদীসটিকে হাল্কা মনে করল; ভাবল, রাতে নিজের স্ত্রীর কাছে গেলে কি আর হবে? ফলে মহানবী ﷺ-এর নির্দেশকে তাচ্ছিল্য করল। আল্লাহর রসূল ﷺ যখন সফর থেকে ফিরে এলেন, তখন ঐ দুই ব্যক্তি তাঁর আদেশ অমান্য করে নিজ নিজ স্ত্রীর কাছে গমন করল। হাদীস তাচ্ছিল্য করার তড়িৎ-শাস্তি স্বরূপ প্রত্যেকেই দেখতে পেল, প্রত্যেকের স্ত্রীর কাছে অপর পুরুষ শয়ন করে আছে! (দারেমী ৪৪৫নং)
২। সালামাহ বিন আকওয়া' বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল ﷺ-এর নিকট বাম হাত দ্বারা কিছু খাচ্ছিল। তা দেখে তিনি তাকে বললেন, “তুমি তোমার ডান হাত দ্বারা খাও।” কিন্তু সে বলল, 'আমি পারি না।' আল্লাহর রসূল ﷺ বললেন, “তুমি যেন না পার।” অহংকারই ওকে (এ নির্দেশ মানতে) বাধা দিয়েছে। সালামাহ বলেন, সুতরাং সে আর কোনদিন তার ডান হাতকে তার মুখের কাছে তুলতে পারেনি। (মুসলিম ২০২১নং)
৩। হযরত আবূ হুরাইরা (রায্বিয়াল্লাহু আনহু) প্রমুখাৎ বর্ণিত, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, “একদা (পূর্ববর্তী উম্মতের) এক ব্যক্তি একজোড়া পোশাক পরে, গর্বভরে, (মাথা আঁচড়ে) অহংকারের সাথে চলা-ফেরা করছিল। ইত্যবসরে আল্লাহ তার (পায়ের নীচের মাটিকে) ধসিয়ে দিলেন। সুতরাং সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত মাটির গভীরে নেমে যেতেই থাকবে।” (বুখারী ৫৭৮৯, মুসলিম ২০৮৮নং)
এক যুবক উপর-নিচে একই শ্রেণীর নতুন ও সুন্দর পোশাক পরে ছিল। সে এই হাদীস শুনে ব্যঙ্গ করে আবূ হুরাইরার উদ্দেশ্যে বলল, 'হে আবূ হুরাইরা! সেই যুবক যাকে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে বোধ হয় এমনি করে চলছিল?' অতঃপর (চলা দেখাতে দেখাতে) সে তার হাতে থাপড় মারল। আর সাথে সাথে সে এমনভাবে পড়ে গেল, যাতে তার (পা) ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আবূ হুরাইরা বললেন, 'তোমার নাক-মুখ ভূলুণ্ঠিত হোক। (মহান আল্লাহ বলেন,)
إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ (الحجر : ৯৫)
অর্থাৎ, বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে আমিই তোমার জন্য যথেষ্ট।' (সূরা হিজর ৯৫ আয়াত) (দারেমী ১/১২৭)
৪। আব্দুর রহমান বিন হারমালাহ থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি হজ্জ অথবা উমরায় যাওয়ার পূর্বে বিদায় জানাতে (আযানের পর মসজিদে) সাঈদ বিন মুসাইয়েবের নিকট এল। তিনি লোকটিকে বললেন, 'নামায না পড়ে যেও না। কারণ, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, “আযানের পর মসজিদ থেকে মুনাফিক ছাড়া অন্য কেউ বের হয় না। তবে সে ব্যক্তি বের হতে পারে, যার প্রয়োজন আছে এবং পুনঃ ফিরে আসার ইচ্ছা রাখে।” কিন্তু সে বলল, 'আমার সঙ্গীরা এখন হার্রাতে আছে। (আর তারা আমার অপেক্ষা করছে।)' অতএব (সে এ হাদীস অমান্য করেই মসজিদ থেকে) বের হয়ে গেল। সাঈদ তার কথা নিয়ে ব্যাকুল ছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি খবর পেলেন যে, সে লোক নিজ সওয়ারী হতে পড়ে গেছে এবং তাতে তার ঊরুর হাড় ভেঙ্গে গেছে। (দারেমী ৪৪৬নং)
৫। আবূ ইয়াহইয়া সাজী বলেন, একদা আমরা বসরার গলিতে কোন মুহাদ্দিসের বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। আমি তাড়াতাড়ি চলতে শুরু করলাম। আমাদের মধ্যে একজন লোক ছিল; সে (ব্যঙ্গ করে) বলে উঠল, 'তোমরা নিজেদের পা ফিরিশ্তার ডানা থেকে তুলে নাও; ডানা ভেঙ্গে দিও না।' যেই বলা, সেই তার পা সেখানেই শুষ্ক হয়ে গেল এবং সেখানেই সে পড়ে গেল। (বুস্তানুল আরেফীন, নওবী ৯২পৃঃ)
৬। কাযী আবুত ত্বাইয়েব বলেন, একদা জামেউল মানসূরে আমরা বিচার মজলিসে বসে ছিলাম। এমন সময় এক খুরাসানী হানাফী যুবক সেখানে উপস্থিত হয়ে গাই-এর স্তনে দুধ জমিয়ে রেখে (দুধের পরিমাণ বেশী দেখিয়ে গাই) বিক্রয় করার বিষয়ে মাসআলা জিজ্ঞাসা করে দলীল চাইল। দলীল স্বরূপ আবূ হুরাইরার হাদীস পেশ করা হলে সে বলল, 'আবূ হুরাইরার হাদীস মকবূল নয়। কারণ--- (তিনি ফকীহ নন।)' তার কথা বলা তখনো শেষ হয়নি, এমন সময় একটি বিরাট আকারের সাপ মসজিদের ছাদ থেকে তার উপরে পড়ল। লোকেরা তা দেখে লাফিয়ে উঠে পড়ল। যুবকটি তা দেখে পালাতে শুরু করল এবং সাপটিও তার পিছনে ছুটতে লাগল। তাকে বলা হল, 'তুমি তওবা করে নাও, তওবা করে নাও।' সে তৎক্ষণাৎ বলল, 'আমি তওবা করলাম।' ইত্যবসরে সাপটি অদৃশ্য হয়ে গেল। তার কোন চিহ্নই দেখা গেল না। (সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' ২/৬১৮)
অবশ্য এর মানে এই নয় যে, যে কেউ এইভাবে সুন্নাহর বিরুদ্ধে নাক সিঁটকাবে অথবা সুন্নাহ নিয়ে ব্যঙ্গ করবে অথবা সুন্নাহ অমান্য করবে তাকেই কারেন্ট শাস্তি দেওয়া হবে। বরং আল্লাহর ইচ্ছা হলে সে এই শাস্তি সাথে সাথে অথবা কিছু পরে দুনিয়াতে পাবে, নচেৎ আখেরাতে তো আছেই।
(বইঃ হাদীস ও সুন্নাহর মূল্যমান)
📝Shaikh Abdul Hamid Al-Faizi Al-Madani Hafizahullah