25/03/2025
রামাদানকে এখনও গভীরভাবে অনুভব করতে পারেননি?
শেষ রাতে জাগছেন, তাহাজ্জুদেও দাঁড়াচ্ছেন, কিন্তু আল্লাহর কাছে কোনোকিছুই গোছানোভাবে চাইতে পারছেন না? কোনোকিছু গোছানোভাবে বলতে পারছেন না?
আপনার মন বলছে, যদি জায়নামাযে হুঁ হুঁ করে কাঁদতে পারতেন, তাহলেই হয়তো অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে যেত। কিন্তু হায়, আপনার চোখের মাঝে যেন ভর করেছে চৈত্রের খাঁ খাঁ করা দুপুর৷ সেখানে কোথাও মেঘ নেই, অঝোর ধারার বর্ষণ নেই। আপনি খুব করে আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে চান, গভীর অনুতাপে ব্যথিত হতে চান রবের সামনে, কিন্তু পারছেন না?
চারদিকে কতো লোক কতো আমলমুখর করে রামাদান কাটাচ্ছে। ডুবে আছে তিলাওয়াত, যিকির, আযকার আর নিমগ্ন ইবাদাতে। আপনার রামাদান কাটছে যেনতেনভাবে। না বাড়তি আমল, না বাড়তি কোনো আয়োজন। ভাবছেন, রামাদান তো ফুরিয়েই গেল। এবারও ঠিক সেভাবে গুছিয়ে কিছু করা হলো না, আমি কি তবে ক্ষমাপ্রাপ্তদের দলভুক্ত হতে ব্যর্থ হয়ে গেলাম?
এসবকিছুই যদি আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়, এই অপ্রাপ্তি আর ব্যর্থতার দহন যদি আপনাকে এই মুহূর্তে কুরে কুরে খায়, তাহলে এই লেখাটা আপনার জন্য।
আজ পঁচিশে রামাদানের রাত। পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরের সম্ভাব্য একটা মুহূর্ত। এটা এমন এক পবিত্র রাত যে রাতটাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। হাজার মাস মানে হলো প্রায় ৮৪ বছরের সমান। অর্থাৎ, এই রাতে যদি একটা সিজদাহ দেয় কেউ, ৮৪ বছর সিজদাহ দেওয়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে৷ কেউ যদি এই রাতে দুই রাকআত সালাত আদায় করে, ৮৪ বছর দুই রাকআত সালাত আদায় করলে যা সওয়াব, সেই পরিমাণ তার আমলনামায় যুক্ত হয়ে যাবে।
বিশ্বাস করুন, রামাদান এখনও ফুরিয়ে যায়নি আর ফুরিয়ে যায়নি আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভের সুযোগও।
যদি আমরা রামাদানের রাত হিশেব করি, এখনও গুনে গুনে ৫-৬ টা রাত অবশিষ্ট আছে। আর, যদি বেজোড় রাতের হিশেব করি, আজকের রাত সহ সেটা অবশিষ্ট আছে আরও ৩ রাত।
এখনও অবারিত সুযোগ, সুবহানাল্লাহ!
আমাদের একজন নেককার পূর্বসূরি বলেছেন, ‘কবরের বাসিন্দাদের যদি শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবনে একটা রাতের জন্য ফেরার সুযোগ দেওয়া হতো, তারা নিঃসন্দেহে রামাদান মাসের একটা রাতকেই বেছে নিতো।’
রামাদান মাসের একটা রাতেরই আছে অঢেল অঢেল মর্যাদা, সেখানে আমাদের হাতে থাকছে আরও ৫-৬ টা পূর্ণাঙ্গ রাত। দিনগুলো তো আছেই।
সুতরাং, যারা এখনও পূর্ণ উদ্যমে রামাদানকে কাজে লাগাতে পারেনি, তাদের জন্য এটাই সর্বশেষ সুযোগ।
উঠুন। দাঁড়ান। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। অবিশ্বাসী ব্যতীত আল্লাহর রহমত থেকে আর কেউ নিরাশ হয় না। আপনি তো আল্লাহর বিশ্বাসী বান্দা। হয়তোবা একটু পিছিয়ে আমরা পড়েছি। হয়তোবা একটু বেখেয়ালি হয়ে গিয়েছি এই ক’দিন। কিন্তু নিজেকে বলুন—‘আর নয়! আজ এই মুহূর্ত থেকে রামাদানের বাকি সময়টা আমি এমনভাবে কাটাব, যেন এমনভাবে রামাদান কাটানোর জন্য আমি আরেকটা বছর প্রতীক্ষা করতে পারি’।
ইবনু রজব হাম্বলি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘ঘোড় দৌঁড়ে ঘোড়া যখন লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি চলে আসে, তখন সে তার গতি আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। রামাদান মাস যখন পূর্ণতার দিকে চলে আসে, বিশ্বাসী বান্দাও তার নিমগ্ন ইবাদাতের মাত্রাকে বাড়িয়ে নেয় বহুগুণ’।
হে আল্লাহর বিশ্বাসী বান্দা, আপনার জন্য আপনার রব ক্ষমার দরোজা খুলে বসে আছেন। ক্ষিপ্র গতিতে শুধু আপনাকে ছুটে আসতে হবে তার দিকে। তার দিকে ছুটে আসার বসন্তকাল হচ্ছে রামাদান। সেই রামাদানের শেষ মুহূর্তটায়, কী সেই জিনিস যা আপনাকে আপনার রবের ইবাদাতে ডুবে যেতে বাঁধা দিচ্ছে? সোশ্যাল মিডিয়া? বন্ধু? আড্ডাবাজি? রাজনীতি? সুবহানাল্লাহ, এসবকিছু কি আপনার রবের সান্নিধ্য থেকে বড় বিষয়?
উঠুন। দৌঁড়ান। ইতিহাসে এমন বহু মানুষ আছেন যারা শেষ সময়ে দৌঁড় শুরু করে বিজয়ী হয়েছিলেন। আপনার নামটাও তাদের তালিকায় তুলুন।
Your Raab is awaiting for you 💚