
31/10/2024
🌹 সালামের গুরুত্ব: সমাজে শান্তি, ভ্রাতৃত্ব, ও মমতার বন্ধন 🌹
ইসলামে সালাম (আসসালামু আলাইকুম) বলা ও এর উত্তর দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। সালাম একটি ছোট্ট বাক্য হলেও, এর মর্মবাণী অনেক গভীর। সালাম একে অপরের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা এবং কল্যাণের দোয়া, যা শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক মূল্যবোধ, যা মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলে।
🔹 সালাম: একটি সুন্নাহ এবং ইবাদত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা ঈমান ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং তোমাদের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে আমি কি তোমাদেরকে একটি কাজ শিখিয়ে দেব? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচলিত করো।” (সহীহ মুসলিম)
এটি থেকে বোঝা যায়, সালাম কেবল একটি সামাজিক প্রথা নয়, বরং এটি ঈমান ও ইবাদতের অংশ। যখন আমরা কাউকে সালাম জানাই, আমরা মূলত তার জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও কল্যাণের দোয়া করি, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি উপায়।
🔹 শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা সালামের অর্থই হলো “তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” এটি একটি নিরাপত্তার প্রতীক। যখন আমরা একে অপরকে সালাম জানাই, তখন আমরা নিজেদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের স্থানকে প্রশান্তি ও বিশ্বাসে পরিণত করি। এটি আমাদের সমাজে নিরাপত্তা এবং আন্তরিকতার পরিবেশ গড়ে তোলে।
🔹 ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা বৃদ্ধি সালাম আদান-প্রদানের মাধ্যমে সমাজে ভ্রাতৃত্ব এবং আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের মধ্যে বিদ্যমান মানসিক দূরত্ব দূর হয়ে একে অপরের প্রতি দয়া, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়। এটি ইসলামী মূল্যবোধের অন্যতম ভিত্তি, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
🔹 ঈমানের পরিচায়ক ও গুণাবলী রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “ঈমান ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে না এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম) এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, সালাম বলা শুধু একটি অভ্যর্থনা নয়, বরং এটি আমাদের ঈমানের প্রকাশ। যে ব্যক্তি সালাম প্রচলিত করে, সে মূলত তার ঈমানের পরিচয় দিচ্ছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে অগ্রসর হচ্ছে।
🔹 সামাজিক দায়িত্ব ও মানবিকতা সালাম মানুষে মানুষে দূরত্ব কমায় এবং সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। এটি কেবলমাত্র একটি বাক্য বা আচার নয়; বরং এটি মানুষের প্রতি দায়িত্ব এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিচায়ক। সমাজে যখন আমরা একে অপরকে সালাম জানাই, তখন আমরা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করি এবং সমাজে সৌহার্দ্য ও সৌজন্যের পরিবেশ সৃষ্টি করি।
🔹 সালামের মাধ্যমে গুনাহ মাফ ও সওয়াবের সুযোগ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “সর্বনিম্ন পর্যায়ের ইবাদতের মধ্যে একটি হলো সালাম। যে ব্যক্তি বেশি বেশি সালাম প্রদান করবে, সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে এবং গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে।” সালামের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে গুনাহ মাফের সুযোগ পাই এবং অশেষ সওয়াব অর্জন করি।
🔹 সালামের উত্তর দেওয়ার গুরুত্ব ইসলামে সালামের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক। যদি কেউ আমাদের সালাম জানায়, তাহলে আমাদের জন্য তার উত্তর দেওয়া ফরজ। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ইসলামী আদব বজায় রাখি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।
সুতরাং, আসুন আমরা আমাদের জীবনে সালামকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করি। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পাশাপাশি সালামকেও জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত করি। সালাম শুধু একজন ব্যক্তির জন্য শান্তির বার্তা নয়, বরং এটি সমাজে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা এবং মমতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সালামের গুরুত্ব অনুধাবন করার এবং এটি নিয়মিতভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমীন। 🤲