
27/02/2024
আপনি কি সিগারেট পছন্দ করেন? সবসময় একটু দেরিতে জবার এলেও এবার তা হয়নি। মুহূর্তেই বললো না একদমই না। আপনি কি সিগারেট খান বলে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকলো নামিরা। উত্তরে পলাশ কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। সত্য বলবে না মিথ্যা বলবে।
মিথ্যা বলে সে নামিরার কাছে ভালো ছেলে হয়ে উঠতে পারবে ঠিকই কিন্তু মন মানছে না। মিথ্যা বলে ভালো বোধ করবে না বলে মনে করলো পলাশ। এক পর্যায়ে পলাশ বলেই দিলো হ্যা খাই। নামিরা সাথে সাথে বলে উঠলো ওহ আচ্ছা।
খাই তবে মাঝে মাঝে, বলার আগেই নামিরা অফলাইন হয়ে যায়। হয়তো পলাশ এর কাছ থেকে এটা আশা করেনি। অফলাইন দেখে ও ৪-৫ টা ম্যাসেজ দিয়ে রাখে পলাশ। এরপর অধীর অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকে কখন নামিরা অনলাইনে আসবে।
ওহ বলাই হয়নি এতক্ষণ যাদের নিয়ে কথা হচ্ছিল তারা হলো " নামিরা ও পলাশ " । ফেসবুকে তাদের পরিচয় হলেও তাদের বাড়ি বেশি দূরে নয় একই জেলায় " নেত্রকোনাতে "। বাড়ির দূরত্ব ১০-১১ কিলোমিটার হবে।
এক পর্যায়ে পলাশ ভাবতে থাকে " আমি কি ভুল করে ফেললাম " হয়তো বা না আমি উনাকে নিয়ে একটু বেশিই ভেবে ফেলেছি। পলাশের এমন চিন্তা ভাবনার মধ্যে আশ্চর্যের কিছুই নেই। পলাশ তো কখনো নামিরাকে বলে নি তাকে তার খুব ভালো লাগে। হয়তো ভালো বেসে ফেলেছে। আগে কখনো কাউকে নিয়ে এমন অনূভুতি হয়নি। নামিরাকে তার অনুভূতির কথা বলার জন্য অনেক বার চিন্তাও করে। খুব ভয় লাগে তার যদি বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়। কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এসব যতই চিন্তা করে তার ততই ভয় হতে থাকে। নামিরাকে হারানোর ভয়ে বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব হয়।
আমার সিগারেটের কথা শুনে হয়তো আর আমার সাথে কথা বলবে না। আমি যে তার সাথে কথা বলার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকি। এইসব চিন্তার অবসান ঘটে যখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পায়। পলাশ মনে করে নিরভ এসেছে তার সাথে খেলতে। নিরভ ক্লাস ফাইবে পড়ে প্রতিদিনই তার সাথে খেলতে আসে। কিন্তু আজ তার সাথে খেলতে ইচ্ছে করছে না পলাশের। ভাবলো দুই- তিন বার কড়া নেড়ে চলে যাবে। কিন্তু বারবার কড়া নেড়েই যাচ্ছে। রিতিমত বিরক্তিকর ভাব নিয়ে দরজা খুললো পলাশ। এত দেরি হয় কেনো দরজা খুলতে? বলে উঠলো পলাশ এর মা ***** আক্তার। একি অবস্থা করে রেখেছিস? ঘড়ের দরজা জানালা বন্ধ, লাইট ও অফ কেনো।
কিছু কথা শুনিয়ে চুপ হয়ে যায় ***** আক্তার। রাত প্রায় ১২ টা কিছুতেই ঘুম আসছে না, ঘুম কি করে আসবে নামিরার চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে যে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঘরের অন্ধকার শূন্যে। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবতে থাকে কিভাবে নামিরার সাথে তার পরিচয় হয়েছিলো।
ফেসবুকে কাদের কাদের তার চেনা তা দেখতে গিয়ে কিছুই নিচে যেতেই Ew'r Namira নামে একটি আইডি খুজে পায়। মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি কাজ করে তার। Ew'r Namira নামের Ew'r টা কে অস্ত্র বানিয়ে দুষ্টুমি করবে বলে ঠিক করে। আইডিতে ডুকেই বর্তমান ঠিকানা তাদের থানার নামে দেওয়া বলে একটু খুশিই হয় পলাশ। এই ভেবে যে, যদি ভালো বন্ধু হয় দেখা ও কারা যাবে।
কিছুক্ষণ কথোপকথন পরে জানতে পারে নামিরা মাদরাসাতে পড়ে, দশম শ্রেণিতে। মাদরাসার কথা শুনে নামিরার প্রতি একটু আগ্রহ জন্ম নেয় পলাশের। কারন আগে থেকেই পলাশ ঠিক করে রেখেছে বিয়ে করলে মাদরাসায় পড়া মেয়ে বিয়ে করবে। কারন মাদরাসার মেয়ে গুলো ভদ্র ও পর্দাশীল হয়ে থাকে, ভালো মেয়ে কে না চায়।
কিছুদিন কথা বলে বুঝতে পারে নামিরা তার ব্যতিক্রম নয়। খুবই ভালো ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে। নিজ থেকে কখনো কিছু বলে না নামিরা। কথার টপিক প্রতিবারই পলাশ শুরু করে। এক সময় নামিরাকে ভালো লাগতে থাকে ও তাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে পলাশ। দুঃখের বিষয় এই যে নামিরার আইডিতে তার নিজের কোনো ছবি নেই।
লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে একসময় একটু মজার ছলে বলে ফেলে " আপনি যদি ভুত না হয়ে থাকেন আপনাকে কি দেখতে পারি? " নামিরা সরাসরি না বলে দেয়, এ কথাই আশা করছিলো পলাশ।
সাথে এটাও বলে আমি ভুত না মানুষ কিন্তু আপনি আমাকে দেখতে পারবেন না। আর দেখতে পারবো না ভাবতে ভাবতে এটাও ভাবে, যা কঠিন মেয়ে আর শান্ত স্বভাবের মনে হয় না কোনোদিন নিজের ছবি দিবে নামিরা।
নামিরার উত্তরে পলাশ বলে উঠে, " আমার চোখ আছে আমি দেখতে পারবো আপনি দেন তো, দরকার হয় বুড়ো লোকের চশমা পড়ে দেখবো "। কিছু না বলে শুধু হা হা রিয়েক্ট দিয়ে অফলাইন হয়ে যায় নামিরা। আসলে না দেখেও নামিরাকে পছন্দ করার বিশেষ একটা কারন হলো সে মা- বাবার কথা ছাড়া এক পা এদিক ওদিকে রাখে না। ফোনটা তার হওয়ার সত্ত্বেও সব সময় তার কাছে থাকে না সময় মতো তার মা তাকে ফোন ব্যবহার করতে দেয়। ফোন পেলেই নামিরা অনলাইনে আসে আর তার অপেক্ষায় এক রাশ অপেক্ষা নিয়ে সারাক্ষণ অনলাইনে থাকে পলাশ।
কাউকে না দেখে এতোটা পছন্দ করা সম্ভব শুধু মানসিকতার প্রেমে পড়ে। যে মানসিকতা পলাশ নামিরার মধ্যে খুজে পায়। এরূপ মানসিকতা লোকের সাথে আগে কখনো পরিচয় না হওয়ার নামিরাকে হারাতে চায় না পলাশ। সব সময় তার কথা চিন্তা করলেও তার অনুভূতির কথা কখনো বলে উঠতে পরেনি, যদি হারিয়ে যায়।
এক পর্যায়ে চিন্তা করে নামিরাকে দেখবেই দেখবে। তার মাথায় আরেকটি দুষ্টু বুদ্ধি খেলে উঠে। অবশেষে নামিরার ছবি পেয়ে যায় কিন্তু একটু দুষ্টুমি করে।
প্ল্যান ছিলো একটু হাস্যকর দেখতে মেয়েদের ছবি দিবে আর বললে আপনাকে দেখতে এই রকম ওই রকম হাসলে ডাইনির মতো লাগে। পলাশ যা ভেবেছে ঠিক তাই হয়েছে। নামিরা বিরক্ত হয়ে বলে, আপনি কি আমাকে এতটাই খ্যাত মনে করেন, এই বলে হাসতে থাকা একটি ছবি দিয়ে দেয়। ছবিটি সিন করার সাথে সাথে নামিরা ডিলিট করে দেয়। যা ভেবেছে ঠিক তাই হয়েছে পলাশ তো নামিরার হাসতে থাকা ছবিই দেখতে চেয়েছিলো। বার বার দেখার জন্য ছবিটি সেইভ করে রাখে, সে জানতো সিন করার সাথে সাথে নামিরা ছবি ডিলিট করে দিবে, ঠিক তাই হয়েছে।
নামিরাকে দেখতে পলাশের পরির মতো মনে হলো। কি অপরূপ হাসি, মুখে ২-৩ টা ব্রনের দাগ যে গুলো তার সৌন্দর্য যেনো আরোও বৃদ্ধি করছে। তার মনে হলো মায়াবী চোখে যেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে সে, আসলে তাকিয়ে ছিলো তো ক্যামেরার দিকে। নামিরাকে দেকে পলাশ বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো। এমনটা হওয়ার কারন সে বুঝতে পারছে না হয়তো না বলা কোনো কারন হয়ে উঠবে এটি।
এত্তো এত্তো চিন্তা করতে করতে একভার ভাবে, আমার তাকে ভালো লাগলেই তো হবে না তারও আমাকে ভালো লাগতে হবে। হয়তো উনি আমাকে দেখেই নি কোনোদিন। কারন আমি তো কোনো দিন দেখিনি আমার কোনো ছবিতে উনার কোনো কমেন্ট বা রিয়েক্ট।
পাশের বাড়ির কুকুরের বিকট শব্দ তার চিন্তার ঘোর কাটে। তখন খেয়ার করে দেখে প্রায় ১ টা বেজে গেছে, কিছুতেই ঘুম আসছে না। কেনো জানি বুক শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে তার। বার বারই মনে হচ্ছে এই বুঝি নামিরা এসে বলছে, " ঠিক আছে কোনো ব্যপার না, এখন থেকে আর সিগারেট খাবেন না "। একটু পর পরই পলাশ ফোন অন করে দেখছে নামিরা অনলাইন এসেছে কি না। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে পড়ে।
এর প্রায় ৪ দিন পর নামিরা অনলাইনে আসে। যা দেখে পলাশের আনন্দের পাশাপাশি একটু চিন্তাও হয়। চিন্তার কারন ছিলো যদি ভুল বুঝে চলে যায়।
নামিরা ম্যাসেজ : এতো ম্যাসেজ দিয়ে রেখেছেন কেনো? ( তার কথায় বিরক্তিকর চাপ স্পষ্ট)
পলাশ : আপনি ৩-৪ দিন ধরে অনলাইনে আসেননি তাই ম্যাসেজ গুলো জমে গেছে। আপনি কি সে দিনের কথায় রাগ করেছেন?
নামিরা : রাগ? আমি রাগ করতে যাবো কেনো? আপনার ব্যক্তিগত ব্যপার ওটা, আপনি সিগারেট খাবেন কি না খাবেন। সেখানে আমার কি অধিকার থাকতে পারে?
পলাশ : আপনি কি মন থেকে বলছেন?
নামিরা : আপনি বুঝে নেন।
পলাশ : কি বুঝে নিবো? আপনি বলে দেন !!
নামিরা : আমার রাগ করা আর না করা দিয়ে আপনার কি আসে যায়? আপনি তো নিজের চিন্তাই করেন না। সেখানে আমার চিন্তা করছেন এটা ভাবা তো বিলাসিতা।
পলাশ : ভুল বলছেন আপনি, কে বলেছি আমি আপনার কথা ভাবি না চিন্তা করি না? আপনি জানেন এই দিন গুলো আমার কিভাবে কেটেছে? আমার ঘুম হয়নি ঠিক মতো, এই বুঝি আপনি এলেন।
নামিরা : এগুলো আমার প্রতি আপনার চিন্তা করা বলছেন? আমি তো এ গুলো চাইনি, আপনি যদি আমার কথা চিন্তাই করতেন তাহলে কখনো সিগারেট খেতেন না। নিজেকে নিকোটিনের দোয়া তিলে তিলে শেষ করে দিতেন না !! একবার ভেবে দেখেছেন? আপনার কিছু হয়ে গেলে অন্য এক জনের কষ্ট হতে পারে ?
পলাশ : আমি আসলে....
নামিরা : কিছু বলবেন না আপনি, আপনি তো একটা !! আচ্ছা কেনো খান সিগারেট? কি আছে এতে?
পলাশ : আপনি তো সেদিন পুরো কথা না শুনেই চলে গিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে খাওয়া হয়, যখন আমরা সব বন্ধু একসাথে হই। ভালো লাগে তাই খাই নিদিষ্ট কোনো কারন নেই।
নামিরা : চলে যাবো না? আপনি একটু একটু করে বলেন কেনো? আমি তো মনে করেছিলাম আপনার প্রচুর অভ্যাস সিগারেটের !! আপনি কোন ম্যাসেজের উপর রিপ্লাই দিয়েছিলেন খেয়াল করে দেখেছেন আপনি?