08/08/2025
বড় ভাই আমার বিকাশে দুই হাজার টাকা সেন্ড করে বলল,
-জয়,মাকে নিয়ে সারাদিনের জন্য কোথাও ঘুরে আসবি? আজ তোর ভাবীর বাসা থেকে মেহমান আসবে।
মাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে আমার আপত্তি নাই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আজকে সৌমির সাথে ডেট আছে। ওর সাথে দেখা হলে আপনি এমনি খুব আতঙ্কে থাকি৷ চাকরি-বাকরি হচ্ছে না বলে ও যা ইচ্ছা-তাই বলে। এরউপর যদি সময়মত পৌঁছাতে না পারি সম্পর্কটাই বোধহয় আর থাকবে না।যাই হোক,তবু ওকে কিছু একটা বুঝিয়ে মাকে নিয়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম।
রিকশায় উঠে মায়ের প্রথম প্রশ্ন,
-ওই জয় আমারে কই নিয়ে যাস? ডাক্তার দেখাবি?ফাইলপত্র তো কিছু আনস নাই।
-এমনি মা,মনটা ভালো লাগছে না।ভাবছি তোমায় নিয়ে সারাদিনের জন্য ঘুরে বেড়াব।
-বাড়িতে মেহমান আইব। বউমা কতকিছু রান্না করতাছে।পোলাপান মানুষ,একলা সব সামলাইতে পারব না। আমি হাতে হাতে সাহায্য করে দিতাম।
-ভাবীর বান্ধবীরা আসবে মা। সব চাইনিজ রান্না। এসব তুমি বুঝবা না। কই যাইবা বলো? চিড়িয়াখানা?
-দুই টাকার একটা পাইপ আইসক্রিম খাওয়াবি,জয়!
বাড়িতে ব্রান্ডের বক্স আইসক্রিমে ফ্রীজ ভর্তি থাকে। মা ওসব ছুঁয়েও দেখেন না।একটা পাঁচ টাকা দামের পাইপ আইসক্রিমের দিকে লোভীর দৃষ্টিতে তাকায়। জৈষ্ঠ্য মাসের কাঠফাটা রোদে বাড়ির উঠানে ফসল আসত।ধান শুকাতে শুকাতর মা তৃষ্ণায় কাহিল।আইসক্রিমওয়ালা এসে ডাক দিত।
-ওই আইসক্রিম!
বাচ্চাদের জন্য ধান দিয়ে আইসক্রিম কেনা হত। মায়ের বয়স তখন কত!চৌদ্দ কি পনের! মায়েরও খুব ইচ্ছা হত একটা কমলা রঙের টুকটুকে আইসক্রিম নিয়ে মুখে পুরতে।নতুন বউ,এই ছোট্ট আহ্লাদের কথা স্বামীকেও কোনোদিন বলতে পারে নাই।
বৃদ্ধ বয়সে মানুষ হয়ে যায় পুনরায় শিশুর মত।তাই মায়ের এই না পাওয়া গল্প আমরা হাজারবার শুনেছি। আরো হাজারবার শুনতেও দ্বিধা নাই। সমস্যা হচ্ছে,এই গল্পগুলো মা ভাবীর সাথেও করেন এমনকি ভাবীর পরিবারের লোকজনের সামনে বলতেও লজ্জা পান না। আগেরবার ভাবীর মা-বাবা যেদিন আসলেন।অনেকপদ রান্না হয়েছে। মা নিজেই দাঁড়িয়ে বেয়াই-বেয়াইনদের জন্য রান্না করেছেন কৈ মাছের তেল-ঝাল,সরিষা ইলিশ।খাওয়ার টেবিলে মায়ের পাতে যখন ইলিশ মাছ দেওয়া হল।মা বলল,
-ও বউ,আমারে আধখানা মাছ দাও। পুরাটা খাইয়া ড়শেষ করতে পারুম না।
-পারবেন, মা।খান।
-এত বড় মাছ খাইয়া অভ্যাস নাই তো। খাইতে পারুম না।তুমি আমারে পেটির কাছে একটুখানি ভাইঙা দাও।
মেহমানরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি বিনিময় করল। ভাবী কড়া চোখে ভাইয়ের দিকে তাকাল আর আমরা দুই ভাই অসহায়ের মত আমাদের সরল মাকে দেখছিলাম।ভাবীর হাইক্লাস পরিবার কোনোদিন বুঝবে না,বাবা মারা যাবার পর মা কি পরিমাণ ত্যাগ করে আমাদের দুই ভাইকে মানুষ করেছেন। তাদের কাছে মা একজন অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলা গ্রাম্য মহিলা।
মাকে নিয়ে আইসক্রিম খেলাম। চিড়িয়াখানায় ঘুরলাম। মার সবচেয়ে পছন্দের প্রাণী হচ্ছে জিরাফ। এই প্রাণীটার বিশাল লম্বা গলা দেখে যতবার দেখে ততবার বলে,
-সুবহানাল্লাহ!আল্লাহর দুনিয়ায় কত আজব আজব প্রাণী আছে।
বানরের খাঁচার সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম।মা বানরকে বাদাম ছিলে খাওয়াল।
দুপুরে মাকে নিয়ে খেতে গেলাম ভাই ভাই ভাতের হোটেলে। এখানে নদীর ফ্রেশ মাছ রান্না হয়।মায়ের জন্যে বোয়াল মাছ অর্ডার করে একটা ভর্তা-ভাজির প্লেটার নিলাম।মা বলল,
-ও জয়,তুই কি খাবি?তোর জন্যে গরুর গোশত নে!
হাসলাম।একটা বয়সের পর মানুষের আর খেতে পারে না। চোখের দেখাতেই পেট ভরে যায়।এই যেমন মা বোয়াল মাছ ভেঙে একটু মুখে দিয়েই আর খাবে না।পুরোটা যাবে আমার পেটে কিন্তু বহুদিন পর্যন্ত গল্প করে যাবে,
-জয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়া বোয়াল মাছ খাইছিলাম
।বাটি উপচাইয়া পরতাছে এমন বড় পিস।এমন স্বাদের মাছ বহুদিন খাই নাই।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মায়ের শখ হল শিশুপার্কে যাবার। জিজ্ঞেস করলাম,
-শিশুপার্কে গিয়া কি করবা?তোমার তো হাঁটু ব্যথা। কোনো রাইডে চড়তে পারবা না।
-আহা!চল না আমার সাথে।
মা শিশুপার্কে গিয়েই বায়না ধরল আমাকে ঘোড়ায় চড়তে হবে। একটা ত্রিশ বছরের বুড়া বেটা যদি রাইডে চড়ে তার মানসম্মান কোথায় থাকে!মা অবুঝ!ছোটোবেলায় নাকি মেলায় গিয়ে ঘোড়ায় চড়ার জন্য বায়না ধরতাম,মায়ের কাছে তখন টাকা থাকত না। রাইডের হেল্পার ছেলেটা বলে,
-স্যার সমস্যা নাই। উঠেন।কত বাচ্চাদের সাথে গার্ডিয়ানরা উঠে।
অতঃপর উঠতে হল।ঘোড়াতে চড়ে এক চক্কর না দিতেই আমার ইচ্ছেহল মাটির সাথে একেবারে মিশে যাই।বড় বড় চোখ করে সৌমি তাকিয়ে আছে। ওর সাথে ওর ভাগিনা।দুজনের হাতেই আইসক্রিম। কেউ আইসক্রিম খাচ্ছে না।আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সৌমি বলল,
-তুমি এইখানে?তুমি না কোন বন্ধুকে রিসিভ করবা?তাই এয়ারপোর্টে যাবার কথা।
-ইয়ে মানে...সৌমি ইনি আমার মা।
সৌমি সালাম দিয়ে জানতে চাইল,
-আন্টি আপনি গ্রাম থেকে কবে এসেছেন?
-গ্রাম থেকে আসমু কেন?আমি তো ঢাকাতেই থাকি।
-ও।
সৌমি কটমট চোখে আমার দিকে তাকাল।ও বহুবার চেয়েছে মায়ের সাথে পরিচিত হতে। আমি বলেছি,মা গ্রামে থাকে।অসুখ-বিসুখ হলে শহরে ডাক্তার দেখাতে আসেন।পরপর দুইটা মিথ্যা সৌমির
কাছে ধরা পরে গেল।সৌমি বলল,
-চলেন আন্টি,আমরা কোথাও বসে চা খাই।
মা কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম,
-আমাদের এখুনি বাড়ি যেতে হবে। ভাইয়া,বারবার কল করছে।
সৌমি আমাদের রিকশা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। মাকে রিকশায় উঠিয়ে ওকে বললাম,
-আসি। বাড়ি গিয়ে কল দিচ্ছি।
সৌমি বলল,
-তুই যদি আর কোনোদিন ফোন দিস তোর পা ভেঙে আমি হাতে ধরিয়ে দিব।মিথ্যুক হারামজাদা!
রিকশা কিছুদূর যাবার পরেই ফোন চেক করলাম।অলরেডি সৌমি ফেসবুক,নাম্বার থেকে আমাকে ব্লক করে ফেলেছে। এমনি প্রেম করি,বছরে ছয় মাস থাকি ব্লক লিস্টে,বাকি ছয় মাস কেটে যায় রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে।মনটা সত্যি খারাপ লাগছে।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই মা বলল,
-বউমার মা-বাবা কি চলে গেছেন?নাকি আরো কিছুক্ষণ রিকশায় ঘুরবি?
অবাক হয়ে মার দিকে তাকালাম।মা বললেন,
-আমাকে মিথ্যা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল নারে খোকন।বউমা বললেই পারত,আমি সারাদিন ঘর থেকে বের হতাম না।
-প্লিজ মা,মন খারাপ করো না। সবাই তো আর একরকম হয় না।
-ঠিক। আমার একটা কথা রাখবি,খোকন?
-বলো মা।
-তোর বউকে আমি পছন্দ করে নিয়ে আসব। তোর যেমন ভালো লাগে তেমনি হবে শুধু আমি মেয়েটির মা-বাবার সাথে কথা বলে দেখব তারা মেয়েটিকে শুধু শিক্ষিতা মানুষ করতে পেরেছি কীনা।
-অন্যের মেয়ের থেকে বেশি আশা করা ঠিক না,মা। আমরা দুই ভাই তোমাকে খুব ভালোবাসি। বলো ভালোবাসি না?
মায়ের চোখে জল। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
আমার মা চৌদ্দ বছরে বউ হয়েছিলেন,চব্বিশেই বিধবা।দশ বছরের সংসার জীবনে দুই সন্তানের মা। একপ্রকার চাচীদের লাথি,ঝাটা খেয়ে শ্বশুরবাড়িতে পড়ে ছিলেন কেননা মামারবাড়ি চলে গেলে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত।সংসারের সমস্ত কাজ করার বিনিময়ে ভাত জুটত বিনিময়ে চাচাদের মুখে শুনতে হত,
-নবাবের বউরে বইলো,সকালবেলা যেন ঘর থিকা বাইর না হয়,বিধবার মুখ দেখলে কাজকামে গেলে লোকসান হয়।
পৈতৃকভিটা টুকু ছাড়া সমস্ত সম্পত্তি চাচারা আত্মসাৎ করে নিয়েছে তাতে মায়ের দুঃখ নাই। তাই দুই ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। ভাইয়া মন্ত্রনালয়ে চাকরি করে।। ভাবী বড় ব্যবসায়ীর মেয়ে,ঢাকাতেই বড় হয়েছে। যার পরিবার বছরে ট্যুর দিতে ইউরোপ, আমেরিকা ঘুরে বেড়ায় তাদের স্ট্যাটাসের সাথে সত্যি আমাদের পরিবারকে মানায় না।কিন্তু দুজনের প্রেম আর ভাইয়ার চাকরি জন্যে বিয়ে হতে কারো আপত্তি খাটে নাই।
ভাইয়ার মত আমার প্রেম ভাগ্য এত ভালো নয় ভেবেছিলাম সৌমির সাথে সম্পর্কটাই বোধহয় ভেঙে যাবে কিন্তু পরদিন ঘুম ভাঙতে একটা চিঠি আমার জীবনটা পুরো উলটপালট হয়ে যায়।বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যোগদান পত্র পাঠিয়েছে। কোনোরকমে চিঠিটা পড়েই মায়ের ঘরে দৌড় দিলাম।মা জায়নামাজে বসে কাঁদছেন,
-হে আল্লাহ,আমার দুই ছেলের মনেন সমস্ত আশা তুমি পূরণ করে দাও। ওদের জীবন থেকে বালা-মুসিবত দূরে করে দাও। ওদের আপনি নেকহায়াত দান করুন...
মায়ের মোনাজাতের পিছনে চুপ করে বসে থাকি। এদেশে চাকরি হতে মামা-চাচার জোর লাগে,মোটা অঙ্কের ঘুষ লাগে। আমাদের দুই ভাইয়ের পিছনে ছিল অকৃত্রিম মায়ের দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আর কিছুর প্রয়োজন হয় নাই।
জয়েনিং লেটার নিয়ে সোজা চলে গেলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সৌমির ক্যাম্পাসে ওকে খুঁজে বের করতে অসুবিধা হল না।ও আমার হাতে লেটার দেখে কিছুক্ষণ বান্ধবীর সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল। তারপর বলল,
-এখুনি মায়ের কাছে চলো।মাকে গিয়ে বলবা কবে আমাকে বিয়ে করছ!
-আরে চাকরিতে জয়েন করি।তারপর আন্টির সাথে কথা বলি। এত বছর অপেক্ষা করেছ আর কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে পারবা না?
সৌমি অপেক্ষা করতে রাজি ছিল কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনায় একমাসের মধ্যেই আমাকে ওর মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হল। ওর দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই লন্ডন থেকে ফিরেছে এমবিএ করে। তিনি সৌমিকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে এবং ওকে বিয়ে করে লন্ডন নিয়ে যেতে চাইছে। এত ভালো প্রস্তাব পেয়ে সৌমির মাও রাজি।
অতঃপর সৌমিকে বলতে হল আমার কথা। ওর মা ছুটির দিনে দেখা করবার জন্য ডেট ফিক্সড করলেন।
সৌমির মা রওশানা আরা বেগম, বাংলার অধ্যাপিকা।সৌমির বাবার সাথে ডির্ভোস হবার পর একাই তিনি সৌমিকে বড় করেছেন। উনার সাথে আমার দেখা হবার কথা বিকাল চারটায়। সাড়ে তিনটা থেকে এসে বসে আছি।বুয়া এসে চা-নাস্তা দিয়ে গেল কিন্তু তিনি বসার ঘরে ঢুকলেন ঠিক চারটায়। সৌম্য,সম্ভ্রান্ত চেহারা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা খুব গুছিয়ে শাড়ি পরেছেন।উনি আমার পরিবার,চাকরি সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন।তারপর বললেন,
-তোমাকে কিছু কথা বলব,হয়ত তোমার শুনতে ভালো লাগবে না।কিন্তু কোনো সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে আগে তিতা পরে মিঠা ভালো।
-জ্বী বলেন।
-আমার সাথে সৌমির বাবা ডির্ভোস হয়ে গেছে,জানো নিশ্চয়ই।সৌমির বাবা আলমের সাথে সম্পর্ক খারাপ ছিল না কিন্তু যৌথ পরিবারে আমার স্বাধীনতা ছিল না। সৌমির দাদী আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এমনকি বাবার বাড়ি আসতে চাইলেও উনার অবজেকশন ছিল। পরিবারের বাকিসব সদস্যের প্ররোচনায় আমাদের সম্পর্ক দিনে দিনে খারাপ হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ডির্ভোস।
ভদ্রমহিলা চশমা খুললেন।তারপর বলতে থাকলেন,
-সৌমিকে আমি আমার মত করে বড় করেছি।ও জীবনে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই হয়েছে। ও আর্টস পড়তে চেয়েছিল তাই পড়েছে। তোমাকে পছন্দ করেছে তাতেও আপত্তি নাই কিন্তু আমি চাই না ওর জীবনটা আমার মত হোক।ও যৌথ পরিবারে মানিয়ে নিতে পারবে না।
-আমার মা বাকি সবার মত নয় আন্টি।তারসাথ একবার কথা বললে আপনি বুঝতে পারবেন।মা একেবারে সহজ-সরল।মাটির মানুষ।
-পৃথিবীর প্রত্যেক সন্তানের কাছে তা মা মহান। কিন্তু তারপরও ঘরে ঘরো বউদের নির্যাতিতা হতে হয়। মা মাত্রই যদি মহান হত তাহলে পৃথিবীর কোনো শিশুকে অভুক্ত থাকতে হত না। জয়,তোমার মা তোমাকে কষ্ট করে বড় করেছেন তার প্রতি অবশ্যই তোমার দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। মায়ের ভরণপোষণ করা,অসুস্থ হলে সেবা করা সবকিছুই তুমি সন্তান হিসেবে পালন করবে কিন্তু আমার মেয়েকে তুমি আলাদা সংসার দিবে।পারবে না?
-আমাদের বিয়ের পর আলাদা বাসায় উঠতে বলছেন?
-তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। বুঝতে পেরেছ। তুমি রাজি থাকলে বিয়ের আয়োজন শুরু করো নয়ত সৌমি নেক্সট মাসে লন্ডন যাচ্ছে।শৈশবের মা সৌমিকে বউকে করে নিতে আমার হাতে ধরে বসে আছেন। আমার কথা শেষ। সৌমি,তোমার বন্ধুকে কম্পানি দাও।
সৌমির মায়ের সাথে কথা বলার পর তিনদিন রাতে ঘুমাতে পারলাম না। মনের সাথে দ্বন্দ্ব আর মানসিক টানাপোড়েনে জীবন ক্ষতবিক্ষত। সৌমিকে আমি ভালোবাসি,ভালোবাসার পিছনে কোনে কারণ থাকে না তাই এই ভালোবাসা অফুরন্ত, অকৃত্রিম। আর মা,মাকে ছাড়া তো আমি নিজের অস্তিত্ব কল্পনাই করতে পারি না। সেই মাকে চলে যাব আমি!এও কি আদৌ সম্ভব। সৌমির মা যে এককথার মানুষ তা উনার সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি।উনি শর্ত ভঙ্গ করবেন না।
এদিকে বাড়িতে মহাগ্যাঞ্জাম চলছে। মায়ের সাথে ভাবীর সম্পর্ক একেবারে খারাপ না। কিন্তু এবার মায়ের কথায় ভাবী খুব রাগ করেছে। মা বলেছে,
-ও বউমা!তোমগো কতদিন তো বিয়া হইল!বাচ্চা-কাচ্চা নিতে মন চায় না?
খুব সাধারণ কথা কিন্তু ভাবীর কান্না দেখে মনে হচ্ছে মা উনার চুলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ভাই নতজানু হয়ে চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। সাক্ষী হিসেবে আমাকে ডেকে আনা হয়েছে। ভাবী বলল,
-তুমিই বলো জয়,মা এই কথাটা বলতে পারলেন? কেন উনি আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলেন!
ধীরে ধীরে ভাবীর পাশে গিয়ে বসে বললাম,
-ভাবী,আপনাদের বিয়ে হয়েছে সাত বছর। বিয়ের পর কয়েকটা বছর চাকরির পিছনে ছুটে সারাদিন কোচিং করেছেন,জবের পরীক্ষা দিয়েছেন।তখন এই সংসার আমার মা সামলাত। ভাগ্য সহায় হয় নাই তাই জব হয় নাই।মাঝখানে এতগুলো বছর চলে গেছে মা একটাবার মুখ ফুটে বলেছে বেবির কথা?
ভাবী চুপ করে আছে।
-আপনাদের হাইক্লাস ফ্যামিলিতে বিয়ের ঠিক কতবছর পর বেবি নেয় আমি জানি না।আমার গ্রাম্য মা যে সাত বছর পর স্রেফ জিজ্ঞেস করেছে তাতেই আমি অবাক। মায়ের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়ত বহু আগেই এই বিষয়ে প্রশ্ন করতেন। বলো ভাবী,তোমার বান্ধবীরা বা রিলেটিভ কেউ কি জানতে চায় না?
ভাবী গম্ভীর হয়ে বসে আছে।আমি রুম হতে বের হয়ে যেতেই ভাবী বলে উঠল,
-তোমার ভাই কি বলতে চাইছে আমি বুঝি না?আমার ফিজিক্যাল প্রবলেম আছে এই তো।আজকেই যাব ডক্টর কাছে।দেখব সমস্যা আমার নাকি তোমার!
সৌমি খুব চিন্তায় আছে।ওর মাকে ও জমের মত ভয় পায়।তবু কয়েকবার বলেছে,ওর যৌথ পরিবারে আপত্তি নাই কিন্তু ওর মা শুনতে নারাজ। ও আমাকে বারংবার অনুরোধ করছে আমি যেন একবার ওর মায়ের সাথে আমার মাকে কথা বলতে দেই।কিন্তু আমি জানি,অমন ব্যক্তিত্বময়ী,রাশভারী মহিলার সামনে আমার খেই হারিয়ে ফেলবে আর মা যদি এমন শর্তের কথা শুনে তিনি নিরদ্বিধায় আমাকে দূরে ঠেলে দিবে।বুকে পাথর চাপা দিলেও একবার মুখ ফুটে বলবে না,তোকে ছাড়া আমার কষ্ট হবে বাজান।এমনি আমার মা!
বাধ্য হয়ে একদিন বড় ভাইয়ের অফিসের গেলাম।ভাইয়া সবটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
-সমস্যা কি!মা তো আমার কাছে ভালোই আছে। তুই বিয়েটা করে ফেল।
-কিন্তু মা...
-আরে মাকে যা বোঝানোর আমি বুঝিয়ে বলব নে।তুই প্যারা নিস না।
সেদিন বাড়ি ফিরে অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখলাম, বড় ভাবীর মায়ের পায়ে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মা ভাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ভাবী কাঁদছে।মা বলছে,
-কিচ্ছু চিন্তা কইরো না, মা। আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব। তোমরা চিকিৎসা শুরু করো। আমি মন থিকা আল্লাহর কাছে চাইব। তিনি তার বান্দাকে কোনোদিন খালি ফেরান না।
ভাইয়া এসে আমার পাশে দাঁড়াল।বলল,
-তোর ভাবীর পিসিওএস।পরীক্ষা না করলে কোনোদিন জানতেই পারতাম না। ত্রিশের পর এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে,ঋতুর অলরেডি বত্রিশ চলে। জানি না,ভবিষ্যতে কি আছে!
-তুমি এত চিন্তা করো না ভাইয়া। আজকাল চিকিৎসা ব্যবস্থা সবই আধুনিক। সময় লাগবে হয়ত কিন্তু ঠিক হয়ে যাবে।
ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
-তাই যেন হয়।
বিয়ের আয়োজন শুরু হল।ভাইয়া আর ভাবী গিয়ে একদিন সৌমিকে আঙটি পরিয়ে দিয়ে আসল। মা অসুস্থতার জন্য যেতে পারলেন না। আমি মাকে নেবার জন্য চেষ্টা করতে তিনি বললেন,
-তোর বউকে তো আমি আগেই দেখেছি।
-কই দেখছ?
-ওই যে শিশুপার্কে। ফর্সা মতন কোঁকড়া চুলের মাইয়াটা।কি জানি নাম কইছিল...
-সৌমি?
-সুমী?
-সুমী না সৌমি।
-ওরে একখান লাল টুকটুকে বেনারসি কিন্না দিস বাপ,ওরে লাল রঙে খুব মানাইব।
লাল বেনারসি কেনা হয় না। সৌমি ভাবীর সাথে শপিং করতে গিয়ে অফহোয়াইট রঙের গাউন কিনে। ওর ডায়মন্ড স্টোনের গহনার সাথে নাকি বেনারসি একেবারে খেত লাগবে। স্বর্ণের গহনা হলে একটা কথা ছিল। মায়ের যা স্বর্ণের গহনা ছিল বেশিরভাগই ভাইয়ের বিয়ের সময় খরচ হয়ে গেছে। ভাবী সেই আদ্দিকালের গহনক ভেঙে নতুন ডিজাইনের জড়োয়ার সেট বানিয়েছেন। এই নিয়ে মায়ের মনে কিছুটা ক্ষোভ। জীবনে অনেক দুঃখের দিন গেছে।কিন্তু মা গহনা নষ্ট করেন নাই,বিয়ের স্মৃতি হিসেবে যখের ধনের মত আগলে রেখেছে।তাই বাকি গহনা মায়ের কাছ থেকে চাওয়ার আর সাহস হয় নাই।
এমনি বড় ভাই যখন মাকে বলেছে,চাকরির সুবিধার্থে আমাকে অফিসের কাছাকাছি বাসা নিতে হবে তখনি মা সবটা বুঝে গেছে। বিয়ের পর আমাকে আলাদা হতে হবে।
দুই বাড়িতে উৎসব চলছে। কেনাকাটা -মেহেন্দি অনুষ্ঠান,ব্রাইডাল শাওয়ার, ব্যাচেলর পার্টি। আমি কিছুতেই মন দিতে পারছি না।মায়ের মুখটার দিকে তাকালে নিজেকে ব্যর্থ সন্তান মনে হয়। সৌমি ফোন দিয়ে রোজ বিয়ের পর কি করবে কোথায় হানিমুনে যাবে সেই গল্প করে আমি হু হা করে ফোন রেখে দেই।
ওর খুশিতে আনন্দিত হতে পারি না।
দিন গড়ায়। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে সৌমির সাথে আমার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে শেষ দেখ। সৌমি খুব এক্সাইটেড।ও অনবরত কাকে কাকে দাওয়াত দিয়েছে, কার কাছে সাজবে এসব গল্প বলছে। আমি কফি খাচ্ছি। সৌমি আমার আনমনা ভাব লক্ষ্য করে বলে উঠল,
-তোমাকে আমি প্রেসার দিয়ে বিয়ে করছি নাতো,জয়?
-না।তা হবে কেন?
-বিয়ের কথা হবার পর থেকেই তুমি অন্যমনস্ক আপসেট।যদি বিয়ে করতে না চাও সরাসরি বলে দাও। এখনো সময় আছে।
-সৌমি আমি তোমাকে ভালোবাসি। এই বিয়ের দিনটার জন্য কত বছর অপেক্ষা করেছি। কিন্তু বিয়ে মানে যে আমার সবচেয়ে আপনজনকে হারিয়ে তোমাকে পাওয়া তা কখনো ভাবি নাই।মাকে ছাড়া আমার দুনিয়া অসম্পূর্ণ।আমি ভালো থাকতে পারছি না...
সৌমি চুপ করে আছে। ওর হাতে একটা শপিং এগিয়ে দিলাম।সৌমি বলল,
-এটা কি?
-একটা লাল বেনারসি। খুব বেশি দামী না। তোমার আধুনিক গয়নার সাথে মানাবেও না। কিন্তু আমার মায়ের খুব ইচ্ছা তার বউ লাল টুকটুকে বউ হয়ে বাড়িতে পা রাখবে।মায়ের কোনো ইচ্ছাই তো পূরণ করতে পারলাম না। এইটা পারলে বিয়ের দিন পরো।
সৌমি বলল,
-এখন আর সম্ভব না। পার্লারে কিভাবে সাজব তার বুকিং দেওয়া হয়ে গেছে।
-আচ্ছা। আজ উঠি তাহলে। অফিসিয়ালি বিয়ের দিন দেখা হচ্ছে ।
১৭ ই আগস্ট,রোজ শুক্রবার।আমার আর সৌমির বিয়ে। ওদের বাড়ির পাশেই কনভেনশন হল বুকড করা হয়েছে।ছেলের বিয়েতে নাকি মাকে যেতে নাই। কিন্তু সকাল থেকে বিয়েবাড়িতে সবচেয়ে বেশি ছুটাছুটি করছে মা। দধিমঙ্গলের ব্যবস্থা করা,বরণ ডালা সাজানো।আত্মীয়দের অ্যাপায়নের ব্যবস্থা করা।মায়ের কাজের আর শেষ হয় না।এক ফাঁকে আমাকে ডেকে বলল,
-ও খোকন,একবার আমার ঘরে আসবি?
মায়ের ঘরের গেলাম। মা পুরানো কাঠের আলমারি খুলে গহনার বাক্স বের করেছে। এক জোড়া হাতের বালা,গলার নেকলেস সাথে ঝুমকো কানের দুল। গহনায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-বড় বউমাকে দেবার পর এইটুকুর আমার সম্বল। নতুন বউরে গয়না ছাড়া ঘরে তুলবি!কীসব অমঙ্গলের কথা। নে!বউমাকে সাজাইয়া ঘরে তুল।
-এসবের কোনো দরকার নাই, মা।
-আছে। ওদের জন্যেই আমি এসব রেখে দিয়েছিলাম।নিয়ে যা ওর জন্যে। আজকাল মাইয়া...এসব পুরানো জিনিস পছন্দ করব কী না...আজকের দিনটা যাক...পরে না হয় এইগুলা নতুন করে গয়না গড়ে নিব।
মায়ের হাতদুটো ধরে বললাম,
-তুমিও আমার সাথে চলো, মা। তুমি তোমার ছেলের বউকে গয়না দিয়ে আশীর্বাদ করে নিয়ে আসো।
-পাগলে কি কয়!ছেলের বিয়েতে মায়েরা যায় কোনোদিন!
-তুমি না গেলে আমি বিয়েই করব না।তুমি যাবে কী না বলো!
অনেকটা জোরপূর্বক মাকে গাড়িতে উঠালাম। সারাটারাস্তা মায়ের এক কথা।
-মাইনষে কি কইব!ছি! ছি!পোলার মায়ের কোনো সরম নাই।
ভাই-ভাবী পিছনের সীটে। আমি গাড়ি চালাচ্ছি। পাশে মা বসে। ভাইয়া-ভাবী সাধারণত আমার আচরণে নিস্তব্ধ। কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
প্যান্ডেলে ডুকেই প্রথমে সৌমিকে ফোন দিলাম।
-সৌমি,তোমার সাথে আমার কথা আছে।গেটের বাইরে আসো।
সৌমি আমার কণ্ঠ শুনে বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে। গেট ধরার ঝামেলায় যেতে হল না। সৌমির এক আঙ্কেল আমার হাত ধরে বললেন,
-কি বলবে,বাবা!যা বলার বিয়ের পর বলা যায় না?
-না।
সৌমি, সৌমির মা আর কিছু নিকটাত্মীয় আলাদা ঘরে বসে আছে। আমি মাকে নিয়ে ডুকলাম।আমি সৌমির মাকে বললাম,
-আন্টি,সৌমিকে আমার কিছু বলার আছে। জানি আপনিও শুনতে চাচ্ছেন আমি কি বলব। ওকে যা বলার আমি বিয়ের আগেই বলে দিতে চাই। কেননা সম্পর্কে আগে তিতা পরে মিঠা ভালো।
সৌমির মা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,
-সরি,সৌমি।আমি শুধু তোমাকে নিয়ে সংসার শুরু করতে পারব না। কারণ আমার কাছে আমার পরিবার মানে আমার মা,আমার ভাই,আমার ভাবী। তোমাদের মূল সমস্যা মাকে নিয়ে তো।তোমাকে জানানোর জন্যে বলছি,আমার মায়ের আরো কিছু খারাপ স্বভাব আছে। মা একসময় চুরি করত।
সৌমির মা বলল,
-কীহ চুরি করত?
আমি বললাম,
-জ্বী আন্টি। আমার এসএসসি পরীক্ষা চলে। রাত জেগে পড়াশোনা করি। চাচাদের সংসারে থেকে দুবেলা শাক-ভাত জুটে। ভালো-মন্দ খেতে দেয় না।মা কী করেন,মাছ কাটলে চাচীদের অজান্তে লেজের দিকে এক টুকরো মাছ ভেজে তুলে রেখে দেয়।আমি ভাত খাবার সময় ভাতের ভেতর মাছ পাই।বাড়ির গরুর জন্য ঘাসন কাটে মা৷ ভূষি খাওয়ায় মা।কিন্তু তার দুই ছেলের জন্য এক ছটাক দুধ জুটে না। মা কী করেন,এক গ্লাস দুধ আঁচলের তলায় নিয়ে এসে দুই ভাইকে ভাগ করে দেন। খেতে না চাইলে মা বলত,
-ভালো খাবার না খেলে ভালো রেজাল্ট আসবে কী করে!না খেলে শরীরে বল হয় না,খা!
মা মুখে আঁচল চেপে কাঁদছে। ভাইয়ার চোখ ছলছল। আমি বললাম,
-শুধু চোর না,আন্টি।মা মিথ্যুকও বটে।ঢাকায় যখন পড়তে আসি, মা প্রতিমাসে গ্রাম থেকে খরচ পাঠাতেন। জিজ্ঞেস করতাম,
-ও মা,এত টাকা তুমি কই পাও?
মা বলত,
-একটা গহনা বিক্রি করলাম।
ইদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে দেখি,ঠোঙা বানাতে বানাতে মায়ের হাতে কড়া পড়ে গেছে। সেই ঠোঙা বিক্রির টাকায় আমাদের পড়াশোনা চলে কিন্তু মা একটা গহনাও ভাঙেন নাই। যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তার পুত্রবধূদের জন্যে।আর আমাদের মিথ্যা কথা বলেছে।
সৌমির সামনে সেই গহনার সেট মেলে ধরলাম।
সৌমি হতভম্ব হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বললাম,
-সৌমি,আমার সাথে ঘর করতে হলে তোমার এই মিথ্যুক,চুন্নী মহিলাকেও সহ্য করতে হবে। যদি না পারো এখুনি বলো, আমি আমার মাকে নিয়ে সসম্মানে চলে যাচ্ছি।
সৌমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
-পাঁচ মিনিট সময় দিবা? আমি লাল শাড়িটা পরে আসছি।
সৌমির মায়ের কড়া চাহনি উপেক্ষা করে ও ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
বরযাত্রীর বাস পিছনে রেখে আমাদের গাড়ি সামনে ছুটছে। ড্রাইভিং সীটে আমি,আমার পাশে ভাই। পিছনে দুই বউ মাকে মাঝখানে বসিয়ে মায়ের দুইহাত ধরে বসে আছে।মা বলল,
-ও খোকন, গাড়ি থামা।পানির পিয়াস পাইছে।
গাড়ি থামালাম। পানি খাবার পর মা বলল,
-দেখ তো,ঠাণ্ডা কিছু পাস নাকি!একটা পাইপ আইসক্রিম...
ভাইয়া বলল,
-তোমার খালি আজেবাজে খাওয়ার চিন্তা। জয় গাড়ি স্টার্ট দে।
সৌমি বলল,
-ভাইয়া,আমাদের জন্যেও দুইটা আনেন। খেয়ে দেখি,পাইপ আইসক্রিম কেমন লাগে!
তিনজনের হাতে পাইপ আইসক্রিম। মা শিশুর মত পা দুলিয়ে গল্প করেছেন। পুরানো দিনের গল্প। কিছু গল্প শেষ হতে নাই। দিন কেটে যায়, রেশ রয়ে যায়....
© হাবিবা সরকার হিলা