26/10/2025
🕊️ “মৃত্যু: এক অবধারিত সত্য, এক অমোঘ জাগরণ” 🕊️
🌑 ভূমিকা
লোকেরা বলল,
> “আমাদের মৃত্যু সম্পর্কে বলুন—এমনভাবে বলুন যেন তা উপদেশ হয়ে হৃদয়কে কোমল করে তোলে। আমাদের অন্তর আজ কঠিন, শুষ্ক ও অনমনীয় হয়ে গেছে।”
আমি বললাম:
তোমরা সৌভাগ্যবান!
কারণ মৃত্যু নিয়ে ভাবা কেবল তারাই পারে, যাদের অন্তরে আল্লাহর রহমতের আলো জ্বলে।
আমি নিজেও দরিদ্র সেই চিন্তায়—আমারও কত অভাব মৃত্যুচিন্তার!
হায়! আমরা কত অবহেলিত, কত মত্ত দুনিয়ার মোহে!
⚰️ মৃত্যুর বাস্তবতা
আমরা মৃত্যুকে ঘৃণা করি, ভয়ে দূরে ঠেলে দিই—
কিন্তু জীবনের মোহে এমনভাবে আবদ্ধ, যেন চিরস্থায়ী প্রেমিক হয়ে পড়েছি এই দুনিয়ার।
আমরা ভুলে গেছি, মৃত্যু আমাদের নিকটতম সঙ্গী—
যে প্রতিদিন নিঃশব্দে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
এ এমন এক অবশ্যগামী জলাশয়, যেখানে একদিন না একদিন আমাদের সবারই ডুব দিতে হবে।
আমরা যেখান থেকে সৃষ্টি হয়েছি—
একদিন সেখানেই ফিরে যাব।
💔 মৃত্যুকে ভুলে থাকা মানুষের অবস্থা
আমরা আনন্দে, আকাঙ্ক্ষায়, অহংকারে ডুবে আছি—
কিন্তু মৃত্যু আসছে নিরন্তর, দ্রুতগতিতে।
আমরা পেছন ফিরে পালাতে চাই, কিন্তু তা থেকে মুক্তি নেই।
ধার্মিক ও তাকওয়াবান ব্যক্তিরাও মৃত্যুকে ভয় করতেন—
কারণ তাঁরা জানতেন,
“আল্লাহর সাক্ষাত সহজ নয়, বরং সবচেয়ে কঠিন।”
বেশর আল-হাফি মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন:
> “আমি জীবনকে ভালোবাসি, কারণ আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া কঠিন।”
সুফিয়ান সাওরি মৃত্যুর সময় বলেছিলেন:
> “আমরা মৃত্যুকে কামনা করতাম, কিন্তু যখন তা এলো, বুঝলাম—এটি কত ভয়াবহ!”
🌅 মৃত্যু—চারটি শিক্ষা
১️⃣ মৃত্যু এই দুনিয়ার মুখোশ উন্মোচন করে
এ পৃথিবীর জন্য এটাই যথেষ্ট দোষ—
এটি এমন এক জায়গা, যেখানে সবাই মরতে আসে।
যত দীর্ঘ হয় জীবন, তত বাড়ে কষ্ট, রোগ, চিন্তা ও ক্লান্তি।
আমাদের পিতা, পূর্বপুরুষ কেউই রক্ষা পায়নি।
মৃত্যু প্রতিটি সুখের মাঝেই বিষ ঢেলে দিয়েছে।
হাসান বসরি যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর এক মানুষকে দেখেছিলেন,
বলে উঠেছিলেন:
> “আজ আমি এমন এক দৃশ্য দেখেছি, যা আমাকে সারাজীবন প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।”
২️⃣ মৃত্যু—জাগরণের ঘণ্টা
মৃত্যু মানুষকে সাবধান করে, সংযম শেখায়,
দুনিয়ার মোহ থেকে জাগিয়ে তোলে।
যে মৃত্যুকে চেনে, সে জীবনকে জানে।
আমরা খেলায় মত্ত, অথচ মৃত্যু আমাদের ঘিরে রেখেছে নিঃশব্দে।
যতদিন সূর্য উঠবে, ততদিনই মৃত্যুর আহ্বান বেজে চলবে।
উমর ইবনু আবদুল আজিজ লিখেছিলেন:
> “যে বেশি মৃত্যুচিন্তা করে, সে দুনিয়া নিয়ে অল্পেই সন্তুষ্ট হয়।”
আবু বকর ইবনু আইয়াশ বলতেন:
> “একটি দিনার হারালে আমরা কাঁদি, কিন্তু জীবন হারিয়ে যাচ্ছে—তবুও আমরা নির্বিকার!”
৩️⃣ মৃত্যু—মুমিনের জন্য রহমত
যারা নেক আমল করে, কিয়ামতের ভয় রাখে, তাদের জন্য মৃত্যু কোনো শাস্তি নয়—
বরং আল্লাহর দিকে ফেরার সান্ত্বনা।
সৌভাগ্যবান সে, যার আত্মা অনুতাপে গলে,
যে প্রতিটি শ্বাসে আল্লাহর স্মরণ রাখে।
ইমাম জুনাইদ বাগদাদি মৃত্যুশয্যায়ও কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন।
জিজ্ঞেস করা হলো, “এই অবস্থায়ও কুরআন?”
তিনি বললেন:
> “আমার আমলের পৃষ্ঠা এখন বন্ধ হতে চলেছে—এখনই তো তিলাওয়াতের সময়!”
৪️⃣ মৃত্যু—সমতার ঘোষণা
মৃত্যু রাজা-গরিব কাউকেই ছাড়ে না।
যারা প্রাসাদে বাস করত, আজ তারা মাটির নিচে নিশ্চুপ।
তাদের কণ্ঠ, ক্ষমতা, ধনসম্পদ—সব হারিয়ে গেছে।
> “মৃত্যু তো পরোয়া করে না, সে কাকে নেয়—
রাজা, যোদ্ধা, বক্তা—সবাই আজ মাটির অধিবাসী।”
🩶 শেষ উপদেশ
লোকেরা বলল,
> “আপনি তো আমাদের হৃদয়ে ভয় সৃষ্টি করে দিলেন!”
আমি বললাম:
ভয় করো, কারণ ভয়ই হৃদয়কে জাগিয়ে দেয়।
সময়কে নিরাপদ মনে কোরো না—
এ সময়ই আমাদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে প্রতিদিন।
নিজের নফসের বিরুদ্ধে লড়ো,
অলসতা ত্যাগ করো,
ইবাদতে অভ্যস্ত হও,
তাকওয়ায় দৃঢ় হও।
আবু হাজিম বলেছেন:
> “যে কাজের জন্য তুমি মৃত্যুকে ভয় পাও, সেই কাজ ত্যাগ করো—
তারপর কবে মরবে, তা নিয়ে চিন্তা করো না।”
ইবরাহিম আত-তাইমি নিজেকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে কল্পনা করে বলেছিলেন:
> “আমি এখনো সেই সুযোগে আছি—
তাহলে কেন সৎকর্ম করছি না?”
🌿 উপসংহার
> মৃত্যু কোনো দূরের বিষয় নয়—
বরং প্রতিটি নিঃশ্বাসের ফাঁকে সে দাঁড়িয়ে আছে।
যে মৃত্যু চিনে, সে জীবনকে বুঝে নেয়।
যে প্রস্তুতি নেয়, সে-ই নিরাপদ হয়।
#মৃত্যুচিন্তা #ইসলামিকউপদেশ #আখিরাতেরপ্রস্তুতি