03/08/2025
“যাকে দেখতেছেন, সে একটা স্বনামধন্য অফিসে চাকরি করে। আজকে লাঞ্চের সময় সে এখানে শুয়ে আছে… পাশে জুতা। তার গেটআপ ইত্যাদি দেখে, আমি আর আমার এক বন্ধু তার পাশে গেলাম। বললাম, ‘এভাবে শুয়ে আছেন কেনো?’ বলতেছে, ‘ছোট ভাই, ডিস্টার্ব করো না, ঘুমটা নষ্ট করে ফেলো না!’
তখন বলল, ‘শোনো, আমি বিয়ে করেছি প্রায় তিন বছর হলো। আমার পিতা-মাতা মেনে নেয়নি… কারণ আমার শ্বশুর নেই (আরো অনেক কারণ বলেছে)। আমি এখানে চাকরি করি, আমার ওয়াইফকে নিয়ে এখানেই একটা ভাড়া বাসা নিয়ে থাকি। আলহামদুলিল্লাহ, চার দিন হলো আমাদের একটি কন্যা সন্তান হয়েছে—সিজারের মাধ্যমে। তিনদিন হসপিটালে থাকতে হয়েছে ওয়াইফকে নিয়ে। আমার কোম্পানি আমাকে তিনদিন ছুটি দিয়েছিল। আজ আমার ছুটি শেষ, তাই অফিসে এসেছি। এই তিনদিন আমি প্রায় ঘুমবিহীন অতিবাহিত করেছি। কারণ আমার ওয়াইফ ও সন্তান দেখার মতো এই শহরে কেউ নেই। আমাকে একাই সব সামলাতে হয়েছে। দেখো ছোট ভাই, এই প্যান্ট আমি চারদিন ধরে পড়ে আছি।’
আমি বললাম, ‘আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট অবস্থায়—আপনার বাবা-মা বা শ্বশুরবাড়ির কেউ তাকে নিতে আসেনি? বা দেখতে আসেনি?’
বললো, ‘আমার শাশুড়ি মারা গেছেন প্রায় এক বছর হলো। আর শ্বশুরবাড়িতেও আমার বউয়ের আপন কেউ নেই যে আসবে। আর আগেই তো বলেছি, আমার পরিবার মেনে নেয়নি। আমি যোগাযোগ করতে চাইলেও তারা আমার সাথে যোগাযোগ করে না। আমাকে বলে, এই বউ বাদ দিতে! না হলে বাড়ির মায়া ছাড়তে হবে। আমার ওয়াইফ আমাকে অনেক ভালোবাসে এবং বিশ্বাস করে। আমিও তাকে ভালোবাসি। আমি ছাড়া ওর আপন কেউ নেই। তাহলে বলো ভাই, এই মেয়েটাকে আমি কীভাবে ছেড়ে দিই? আমি আমার পরিবারকে খুশি রাখতে পারিনি, তাই তারা আমার খোঁজও রাখে না।’
আমি বললাম, ‘লাঞ্চ করছেন?’
সে বললো, ‘সকালে রান্না করে ওয়াইফকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে এসেছি।’
আমি বললাম, ‘তাহলে লাঞ্চ টাইমে বাসায় যাননি কেন?’
বললো, ‘এখান থেকে বাসায় যেতে ১৫ মিনিট, আসতে ১৫ মিনিট—টোটাল ৩০ মিনিট। আমার লাঞ্চ টাইম ৪৫ মিনিট। ওয়াইফকে বলে এসেছি, দুপুরে খাবারটা তুমি খেয়ে নিও। আমি বাইরে খেয়ে নেব। আমার চোখ আর কুলাচ্ছে না। অফিসে ঘুমানোর কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই এখানে… ৩০ মিনিটের জন্য এলার্ম দিয়ে পকেটে ফোনটা রেখে ঘুমিয়েছিলাম। আর ২০ মিনিট না যেতেই আপনারা ডেকে তুললেন।’
শেষে বলল, ‘শোনো ছোট ভাই, জীবন সহজ না। বাবা-মার কথা মেনে চলো, তাহলে তাদেরকে পাশে পাবে। না হলে নয়।’
আমার প্রশ্ন? অনেক কিছু থেকেই গেলো… আর তার লাঞ্চ টাইম শেষ 🙂
©