07/11/2025
আপনি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন মানেই আপনি level up করছেন।
দেখুন, জীবনে কেউ কঠিন সময় চায় না, কিন্তু সবাই কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়। কেউ প্রিয়জন হারিয়ে, কেউ ব্যর্থতা পেয়ে, কেউবা নিজেরই সিদ্ধান্তের বোঝা টেনে এই সময়ের মধ্যে পড়ে যায়। তখন মনে হয় সবকিছু শেষ। কিন্তু এটা আসলে Psychological Recalibration Period. মানে, আপনার মস্তিষ্ক নতুন বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে সময় নিচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, Harvard Health অনুযায়ী। বড় ধরনের মানসিক ধাঁক্কা (যেমন সম্পর্ক ভাঙা, চাকরি হারানো, বা প্রিয়জনের মৃ'ত্যু) কাটিয়ে উঠতে গড়ে প্রায় ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে মস্তিষ্ক Grief to Growth প্রক্রিয়ায় যায় অর্থাৎ, শোক থেকে বিকাশের পথে। প্রথমে মন অবিশ্বাসে ভরে যায়, পরে রাগ, দুঃখ, শূন্যতা আসে। শেষপর্যন্ত আসে গ্রহণযোগ্যতা। এই পর্যায়ে মানুষ নিজের ভেতরকার শক্তি চিনে ফেলে।
কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সাইকোলজিক্যালি কি হয় জানেন? যখন আপনি ভয়, কষ্ট, বা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন তখন আপনার মস্তিষ্কের Amygdala অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। এটা আপনাকে সতর্ক রাখে, এই পর্যায়ে আপনি হয়ত দেখবেন সামান্য বিষয়েও মেজাজ খারাপ হয়, ঘুমে সমস্যা হয় এগুলো স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু দীর্ঘসময় এভাবে থাকলে মানসিক ক্লান্তি তৈরি হয়।
কিন্তু ভালো দিক হলো এখানেই আসে Adaptation Phase যেটা সাধারণত ২১ দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে হয়। এই সময়ের মধ্যে মস্তিষ্ক আস্তে আস্তে নতুন বাস্তবতায় নিজেকে মানিয়ে নেয়। অর্থাৎ, আজ যেটা "অসহ্য" লাগছে, একদিন সেটাই "সহজ" হয়ে যাবে। যদি আপনি থেমে না যান।
এছাড়াও আপনি খেয়াল করলে দেখবেন আমরা যখন নিজের সমস্যার কথা কাউকে বলি, যদি সে এর সমাধান দিতে না পারে তাহলে বলে ধৈর্য ধরো ঠিক হয়ে যাবে। বিষয়টা আসলেই তাই কিছু কিছু সমস্যা আছে যা সময় আপনা-আপনি সমাধান করে দেয়।
এর বাইরেও আপনি যে কাজ গুলো করতে পারেন:
১। Accept করুন, বাস্তবতা মেনে নিন।
সবচেয়ে প্রথম ধাপ হলো মেনে নেওয়া, হ্যাঁ, এখন সময়টা খারাপ। এর মানে এই নয় যে আপনি হেরে গেছেন; বরং আপনি নিজের বাস্তবতাকে চিনতে শিখছেন। Denial যত বাড়ে, কষ্ট তত লম্বা হয়। এমন অবস্থায় কোন কিছু করার না থাকলে নিজেকে জাস্ট টিকিয়ে রাখুন।
২। Routine ধরে রাখুন, ছন্দই মনকে টিকিয়ে রাখে। জীবন ভেঙে পড়লেও রুটিন যেন না ভাঙে। নিয়মিত ঘুম, সময়মতো খাওয়া, কাজ, প্রার্থনা নামাজ, এই পাঁচটা জিনিস মনের ভিতরে এক ধরনের শৃঙ্খলা তৈরি করে। মস্তিষ্ক Chaos সহ্য করতে পারে না; তাই রুটিনের স্থিরতা মানসিক ঝড়ের মাঝেও একটা নিরাপদ কাঠামো দেয়।
৩। Emotional Release দিন, নিজেকে অনুভব করতে দিন। দুঃখ চাপা দিলে সেটা ভিতরে জমে যায়। তাই প্রয়োজনে কাঁদুন, লিখুন, কারো সঙ্গে কথা বলুন, বা একা নীরবে বসুন। নামাজে মন দিন, আল্লাহর সামনে নিজের দুর্বলতাটা স্বীকার করুন এটাই মানসিক আরোগ্যের শুরু। মানুষ তখনই সুস্থ হতে শুরু করে, যখন সে নিজের ভেতরের যন্ত্রণা অনুভব করতে দেয়।
৪। Overthinking কমান, সময়কে নিজের গতিতে চলতে দিন। এটা কখন ঠিক হবে? এই প্রশ্নটাই আসলে কষ্টকে দীর্ঘ করে। প্রতিটি ক্ষত সেরে ওঠে, সেটা নির্দিষ্ট সময়ে। কিন্তু সময়কে জোর করে টেনে আনলে ব্যথা আরও বাড়ে। তাই ভাবুন কম, করুন বেশি। নিজের ওপর যতটা সম্ভব বিশ্বাস রাখুন এমন কিছুই স্থায়ী নয়, এমনকি কষ্টও না। ছোট থেকে বড় হয়েছেন পর্যন্ত এরকম বহু সমস্যা আপনার জীবনে এসেছে কিন্তু সেগুলোর একটাও এখন নেই।
৫। Learn From Pain, প্রতিটি দুঃখই একেকটা শিক্ষা, যে মানুষ কষ্ট থেকে শেখে, তার পরের জীবনটা আর আগের মতো থাকে না। দুঃখ একেকটা বইয়ের মতো পড়তে জানলে তবেই বোঝা যায় এর অর্থ। জীবন মাঝে মাঝে ভেঙে দেয়, শুধু নতুনভাবে গড়ার জন্য। তাই নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তুলুন।
ডিয়ার, খারাপ সময়কে একদম ভয় পাবেন না। এটাই আপনার জীবনের শেষ নয়, বরং একটা রূপান্তরের সময়। আপনি শুধু টিকে থাকুন; বাকিটা সময় নিজেই বদলে দেবে। ইনশাআল্লাহ💝