13/10/2022
মুফতি Sayed Ahmad হাফি. শিক্ষক: আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম বা হাটহাজারী।
গণতন্ত্র হারাম ও কুফরি মতবাদ হওয়ার ব্যাপারে ইলমের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন কেউ দ্বিমত করার কথা না।
তবে গণতন্ত্রের প্রধান বা অবিচ্ছেদ্য একটা কাজ হচ্ছে নির্বাচন। এখন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বৈধ কিনা?
একদল আলেম মনে করেন, এতেও অনেক হারাম বিষয় থাকার কারণে অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়। বরং খেলা)ফত প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপকভাবে দাওয়াহ এবং জি) হাদের প্রস্তুতি নিতে থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ, এর সফলতা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।
আবার আরেক দলের বক্তব্য হচ্ছে, গণতন্ত্র হারাম ও কুফরি মতবাদ হলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া আপাতত কার্যকরী কোন পথ খোলা নেই। তাই জান বাঁচানোর জন্য শূকরের গোশত বৈধ হওয়ার মতো কিছু শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ও ভোট প্রদান করা বৈধ। এ কারণেই ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের আলেমগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
এ দলের প্রকৃত সফলতা দেখা না গেলেও তাদের অর্জন ও প্রাপ্তিও কম নয়। কেননা দেশীয় রাজনীতিতে এবং সরকার ও ধর্ম বিদ্বেষীদের ইসলাম বিরোধী ইস্যুতে তাদের বড় ধরনের ভূমিকা ও প্রভাব রয়েছে, যা কোনভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
দুটোই ইজতিহাদী বিষয়, যার যেটা ভালো লাগে গ্রহণ করার সুযোগ আছে। উল্লেখিত সীমার মধ্যে থাকলে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করা বা কটুক্তি করা উচিত নয়। বিষয়টা এভাবেই চলে আসছিল।
কিন্তু এখন উপরোক্ত দুটি দল থেকে আরো দুটি দল জন্ম লাভ করেছে। প্রথম দল থেকে জন্ম নেওয়া দলটির দাবি হচ্ছে, নির্বাচন ও ভোট প্রদান সহ গণতন্ত্র সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়েই অংশগ্রহণ করা যাবে না, বরং সবই হারাম ও কুফরি!
আর দ্বিতীয় দল থেকে বের হয়ে আসা দলটির বক্তব্য হচ্ছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। বরং কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে বলছে, এটা জি) হাদ। আর এটাকে এমনভাবে উপস্থাপন করছে, যেন নির্বাচনই এ যুগের প্রকৃত জি) হাদ!
প্রথম দুই দল থেকে জন্ম নেওয়া শাখা দুই দলই প্রান্তিকতার শিকার। উভয় দলের উচিত, এ বিষয়ে মাঠ গরম না করা এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করা।
আর নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ইসলামী দলগুলোর প্রতি অনুরোধ থাকবে, গণতন্ত্র যেহেতু মহামারী আকার ধারণ করেছে, তাই আপনারা ভোট প্রদান ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সাময়িক বৈধতার বিষয়টি স্পষ্ট করার সাথে সাথে গণতন্ত্রের কুফরি ও হারাম বিষয়ে সাধারণ জনগণকে সতর্ক করা। কেননা এটা ঈমান-আকীদার বিষয়, সাধারণ কোন বিষয় নয়।
মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী হাফিজাহুল্লাহ উম্মাহর সম্পদ ও স্পিকার। তিনি যখন নাস্তিক, সেকুলার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সাথে বুদ্ধিভিত্তিক ডিবেট করে লা-জবাব করে দিয়ে তাদের মুখ ফ্যাকাসে করে দেন এবং মাইকের সামনে তাদের বিরুদ্ধে দরাজ কন্ঠে হুংকার ছোড়েন, তখন খুশির অন্ত থাকে না।
কিন্তু আবার যখন নিজের মাসলাকের পক্ষে বলতে গিয়ে আহলে ইলমসহ অন্যদেরকে একই হুংকার দিয়ে তাকফীর করেন বা গুমরাহ বলেন, তখন আপনাকে সাপোর্ট করার সুযোগ থাকে না!
তাই আপনার প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনি আপনার স্লোগান "মাসলাক যার যার, দ্বীন ইসলাম সবার" কনসেপ্টে কাজ করা যান। এটা আপনার জন্য এবং সবার জন্য উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।
আর শাইখে চরমোনাই মাওলানা ফয়জুল কারীম হাফিজাহুল্লাহ শুধু একজন ব্যক্তি নন, বরং একটি দল ও একটি প্রতিষ্ঠান। আপনি যখন বাইতুল মোকাররম বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভারত ও তাদের তাবেদার সরকারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন, তখন এদেশে আরো কিছুদিন মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি।
কিন্তু আবার যখন একই মুখে হাদিসের মসনদে বসে জি)হাদ নিয়ে বিকৃতির পথ খুলে দেন কিংবা কারো বিরুদ্ধে দাঁত খেচিয়ে কথা বলেন এবং রাজনৈতিক মঞ্চে শিষ্টাচার বহির্ভূত শব্দ চয়ন করেন, তখন আপনার দলের পক্ষে কথা বলার আর আগ্রহ থাকে না!
আপনাকে সব সময় স্বরন রাখতে হবে যে, আপনি একটি রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ আসনে বসে আছেন। আপনার প্রতিটি আচরণ-উচ্চারণ ও মাসআলার সমাধান শুধু আপনি একক ব্যক্তির নয়, বরং একটি দল ও প্রতিষ্ঠানের। তাই এগুলো হাজারো কর্মীর অনুসরণের কারণ এবং বর্তমানে রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের অসাধারণ মূল্যায়ন।
আর কোন রাজনৈতিক দলের কাজ নয় ইসলামে নতুন তথ্য পেশ করা, স্পর্শকাতর বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া ও মাসআলা বয়ান করা। যেই ভুলটা মরহুম মাওলানা মওদুদী সাহেব ও জামায়াতে ইসলামী করেছে।
এছাড়া আপনাদের উসিলায় হাজারো মানুষ হারাম পথ ছেড়ে দ্বীনের পথে এসেছে এবং নামাজী ও জিকিরকারী হয়েছে। এগুলো কোন সাধারণ অর্জন নয়।
তাই এগুলো রক্ষা করার জন্য আপনাকে ও আপনার দলকে সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আশা করি আপনি ও আপনার দল ভবিষ্যতে রাজনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
উভয় দলের প্রতি অনুরোধ রইল, ব্যক্তি আক্রোশ হোক বা অন্য কোন কারণে হোক অনলাইনে একে অপরের বিরুদ্ধে মাঠ গরম করে দুশমনদের হাতে অস্ত্র তুলে দিবেন না এবং হাসির পাত্র বানাবেন না।
আমি কোন দলের লোক নই এবং কারো সাথে আমার দুশমনি কিংবা ব্যক্তি আক্রোশ নেই। পছন্দ না হলে এড়িয়ে যাবেন, কোন পরামর্শ থাকলে সুন্দরভাবে বলবেন।©