12/03/2025
সাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan) মানেই কী আমাদের ক্রিকেট?
ক্রিকেটপ্রেমী একটা মানচিত্রে সাকিব আল হাসানের প্রতি প্রেম হয়তো মিশরের পিরামিডের কোনো এক মমির মতো। যেন কি এক অসম্ভব সাকিব তার প্রতি মুগ্ধতা স্থবির করে রেখেছেন চিরস্থায়িত্বে। খুব আবেগশূন্য লোকটা বলতেই পারে কিসের এত বাহুল্য? ইটস অনলি এ গেইন। তবু ব্যাটে-বলে ছন্দে এই যে নিরন্তর শব্দের মিছিল বয়ে যায় অথবা জাস্ট এ গেইনকে মোর দেন এ গেইন হিসেবে হৃদ-মাঝারে ধারণ করার উৎসব তার জন্য হাতে গোনা যে কয়টা পোস্টার বয় বাংলাদেশের তার একটাই তো সাকিব আল হাসান। থাকুক না কিছু আবেগের জায়গা! আবেগ শূন্য আর যাই হোক একটা জাত তো হতে পারে না।
১৯৮৭ সালের ২৪ শে মার্চ মাগুরায় যে ছেলেটার জন্ম হয়েছিল কে জানত? সে ফয়সাল নিজেও হয়তো শৈশব বা কৈশোরে ভাবেননি তিনি একদিন হয়ে উঠবেন সাকিব-আল-হাসান। ওয়ানডে,টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেট মিলিয়ে পারফরম্যান্সের দাড়িপাল্লায় সাকিব যেটা আসে সেটা হল বাংলাদেশের ক্রিকেটের গ্রেটেস্ট অফ অলটাইম।
গেল ১৫বছরে প্রায় প্রতিদিনই সাকিব আল হাসান চর্চা চালু রেখেছেন তাকে নিয়ে। এখন অব্দি শুধু বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার নন, সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারের শর্ট লিস্টে থাকবেন। ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সংখ্যাতত্ত্ব সেটাই যে বাস্তবতা। ক্রীড়া-পাগল এক পরিবার থেকে উঠে এলেও সাকিবের খেলোয়াড় হতে চাওয়া সহজ ছিল না। নতুন সহস্রাব্দের শুরুতেও খেলাধুলাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারার কথা মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকে ভাবতে পারতেন না। সেখান থেকে একে একে সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙে সাকিব বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি তারকার একজন হয়ে উঠেছেন। আইপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি লিগের সেরা তারকাদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
কি ছিল সাকিব আল হাসানের এক সমুদ্র সাফল্যের মূলে? তার কাছের লোকেরা বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন.ছোটবেলা থেকেই ভেতর ভেতর প্রচন্ড জেদী ছিলেন। ফয়সাল কী কেন কীভাবে সাকিব-আল-হাসান হলেন তার সবটাতেই লেপ্টে আছে ঐ জেদের ব্যাপারটা। যেটা তাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে গেল ১৫বছর। সেই জেদ পারফরমেন্সে রূপান্তর হয়ে টইটুম্বুর হয়েছে যেমন। কখনো কখনো তীব্র স্রোতে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলেছে অনেক কুল।
২০১১ সালে ইংল্যান্ডের উস্টারশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে সাকিবের সঙ্গে শিশিরের পরিচয় হয়। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর সাকিব উম্মে আহমেদ শিশিরকে বিয়ে করেন। ২০১৫ সালে সাকিব ও শিশিরের মেয়ে আলায়না হাসান অব্রি জন্ম নেয়। শিক্ষাগত জীবনে সাকিব এআইইউবি (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ) থেকে বিবিএ পাস করেছেন। সাকিব ফুটবলেরও ভীষণ পাগল। বার্সেলোনা ও লিওনেল মেসির সমর্থক।
সমালোচনা বা বিতর্ক থেকেছে তবে সেটা প্রশংসা বা মুগ্ধতার উসাইন বোল্টের গতি কে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। সমসাময়িকরা তো বলে গেছেন এবং বলে যাচ্ছেন বটেই, নতুন যারা আগামীর বহুদূর পারি দেওয়ার পথে মানিব্যাগের পকেটে যেরকম যত্ন করে রাখা হয় কোন প্রিয়জনের ছবি, তাদের চলার পথে সেই ছবিটাই যেন সাকিব-আল-হাসান। এ মানদণ্ড তৈরি করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেটা দেখেই তো আরো আরো বর্ণিল দিনের স্বপ্ন দেখে বিশ্বাস খুঁজে পায় নতুন দিন।
সাফল্য নাকি এক সোনার হরিণ! গল্পের হরিণটা স্বর্ণ দিয়ে নয়, এইখানে বাস্তবতায় হয়তো হীরের প্রলেপ দিয়ে মোড়ানো। গ্রহের এ প্রান্তে কখনো কখনো সাফল্যকে তারা করা মানে এক ঝাঁক ব্যর্থ, হতাশ পরশ্রীকাতর হিংসুক মানুষের তারা খাওয়াও লেট কাটে যেরকম প্রায়ই বলকে সীমানা ছাড়া করেন, বাধা কিংবা নিন্দুকদের সবকিছুকে তাই করে নিজের কাজটা মনোযোগ দিয়ে করতে পারার অনুপ্রেরণার নামিই তো সাকিব।
চ্যাম্পিয়নরা প্রচলিত পথে হাঁটেন না বলেই নাকি তারা চ্যাম্পিয়ন, মাঠের এবং মাঠের বাইরের টাইমলাইন সাজিয়ে সাকিব-আল-হাসান বলতেই পারেন; শুধু ভালোবাসা সে তো বড্ড সেকেলে কজন পারেন ভালবাসতে, বাধ্য করতে?
মেসি যেমন ভেতরটা নির্লিপ্ত রাখতে পেরেছেন বেশিরভাগটাই। আবার রোনালদো নিজেকে আড়াল করতে পেরেছেন কমই। অস্ট্রেলিয়ার ভুবনজয়ী স্টিভ ওয়াহ দলে খেলেছেন সেই দলে খেলেছেন শেন ওয়ার্নও। প্রত্যেকটা বিশেষ প্রতিভার নিজের প্রতিভার ধরন বিকশিত প্রকাশিত করার আছে নিজস্ব পদ্ধতি। কিছু বেদনা রাজ্যসভার জীবনেরই অংশ।
আইডল আইকন যাদের বলা হয় তারাও তো দিন শেষে রক্তমাংসের মানুষ। পারফরম্যান্সের বাইরের বিষয়ে প্রতিনিয়ত ওজন নিতে থাকা সেই ঠিক বেঠিকের পাল্লায় চেপে বসা অদৃশ্য সেই আদর্শ ছেলেটির মত সবসময়ই সব জায়গাই হইতো নিজেকে ঠিক থাকতে পারেননি সাকিব! নাকি সাকিবের কাছে ওরকম থাকার পথটাই চিরচেনা সাকিব-আল-হাসান? কে জানে অন্য কোন সময় জন্মালে ক্রিকেটার না হয়ে হয়তো হতেন বিপ্লবী অথবা বিদ্রোহী কোন কবি।
পোস্ট ভাল লাগলে লাইক এবং ফলো করে সাথে থাকবেন।