31/05/2025
শেখ হাসিনা স্বৈরশাসক কিন্তু কেন ?
১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালের পরেও এত বিশৃঙ্খলা হয়নি, যেটা এক স্বৈরশাসকের অভাবে বর্তমানে দেশে চলছে। সর্বশেষ ১৭ বছরে দেশের সর্বোচ্চ লেভেলে উন্নয়ন হয়েছে এটাও যেমন সত্য, একইসাথে এটাও সত্য দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ একপাক্ষিক আওয়ামীকেন্দ্রীক হয়ে গিয়েছিল। একপাক্ষিক হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা। ১৫ই আগষ্ট তার পরিবারের সকল সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ড ও ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলাসহ ১৭ বার নির্মম হত্যা চেষ্টার ফলাফল ছিল শেখ হাসিনার আলটিমেট স্বৈরশাসক হিসেবে আবির্ভাব।
শেখ হাসিনার প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল ছিল ২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১। পরবর্তী নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন, এবং রক্তপাতহীনভাবে ক্ষমতা বিএনপির কাছে হস্তান্তর করেন। তিনিই এদেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যিনি এভাবে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই। কিন্তু ফলাফল হিসেবে ২০০৪ সালে ২১শে আগষ্টের মত ভয়ানক গ্রেনেড হামলার শিকার হন। মানে আপনি ক্ষমতায় না থাকলে গ্রেনেড হামলার মত জঘন্য হামলার শিকার হবেন, বারংবার হত্যা চেষ্টা করা হবে আর আপনি ক্ষমতায় গেলে যারা এই চেষ্টা করেছে তাদের দুধে ভাতে রাখবেন। মুহাহহহ, এত বড় সুশীল এদেশে এখনো জন্মাই নাই। ২০০৪ সালের সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌঁছালে, একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি কুড়ি মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দেন। তিনি মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ১২ জন নিহত হন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুটি, ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে চারটি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে চারটি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে চারটি হত্যা চেষ্টার কথা জানা যায়।শেখ হাসিনার ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬০ জন দলীয় নেতাকর্মী নিহত হওয়ার হিসাব আছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার।
১৯৮৮ সালে লালদীঘি দিয়ে শুরু
এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে আটদলীয় জোটের জনসভা ছিল। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে জনসভাস্থলে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার ট্রাক মিছিলে সশস্ত্র হামলা হয়। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পাশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছুড়লে নিহত হন ২৪ জন। (ঘটনাস্থলে ২৪ জনের নামফলক আছে)। তাদের মধ্যে ৯ জনের মতো নিহত হন শেখ হাসিনাকে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করতে গিয়ে।
ওই ঘটনায় কিছু লাশ চট্টগ্রামের অভয়মিত্র শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ওই সময় যার নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছিল সেই মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদাকে গণহত্যা মামলার আসামি করা হয়। কিন্তু বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯১ সালে পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল এই পুলিশ কর্মকর্তাকে।
১৯৮৯ সালে ধানমন্ডিতে বাসায় হামলা
১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ফ্রিডম পার্টির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে বলে অভিযোগ আছে। শেখ হাসিনা তখন ওই বাসাতেই থাকতেন। ওই ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম একটি মামলা করেন।মামলায় ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিতে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করে এবং হামলাকারীরা তখন ‘কর্নেল ফারুক-রশিদ জিন্দাবাদ’
বলে স্লোগান দিতে দিতে পালিয়ে যায় বলে এজাহারে অভিযোগ রয়েছে। সাড়ে সাত বছর পর ১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়।
আসামিদের মধ্যে গোলাম সারোয়ার, ফ্রিডম সোহেল, জর্জ, মো. শাজাহান বালু, নাজমুল মাকসুদ মুরাদ কারাগারে রয়েছেন। জামিনে রয়েছেন হুমায়ুন কবির, মিজানুর রহমান, খন্দকার আমিরুল ইসলাম কাজল ও গাজী ইমাম হোসেন। মামলার অপর আসামি সৈয়দ ফারুক রশিদ ও বজলুল হুদার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে অভিযোগ গঠনের সময় অব্যাহতি দেয়া হয়।
অপর চার আসামি সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ, হুমায়ুন কবীর, জাফর আহমদ, রেজাউল ইসলাম খান পলাতক ছিলেন। ২০১৪ সালেই মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে আসে। কিন্তু পলাতক থাকা আসামি নাজমুল মাকসুদ মুরাদকে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ ইন্টারপোলের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর আবারও ওই আসামিপক্ষ আসামিদের জেরার জন্য সাক্ষীদের রি-কল করা শুরু হয়। সর্বশেষ ওই মামলায় সব সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া শেষ হয়েছে। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জাহিদুল কবিরের আদালতে মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
১৯৯১ সালে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে গুলি
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চতুর্থ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সময় ধানমন্ডির গ্রিন রোডে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তার গাড়িতে গুলি লাগলেও অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
এই ঘটনায় করা মামলার মীমাংসা হয়নি গত ২৬ বছরেও। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
১৯৯৪ সালে ট্রেনমার্চে পাবনায় হামলা
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ট্রেনমার্চ করার সময় পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে বেশ কিছু গুলি করা হয়। অসংখ্য গুলি লাগে তার বগিতে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে অক্ষত থাকেন শেখ হাসিনা।
আমাদের পাবনা প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম বাসিদ জানান, এই ঘটনায় সে সময় ঈশ্বরদী থানায় মামলা হয়। এতে ১৩০ থেকে ১৩৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ পৌর বিএনপির সভাপতি মোকলেছুর রহমান বাবলু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীনসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় আদালতে। আসামিরা সবাই জামিনে আছেন। আসামিরা বারবার সময়ের আবেদন করে শুনানি আটকে রেখেছেন।
১৯৯৫ সালে রাসেল স্কয়ারে সমাবেশে হামলা
১৯৯৫ সালের ৭ মার্চ শেখ রাসেল স্কয়ারে সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানো হয়। সশস্ত্র ওই হামলা থেকে বাঁচাতে নেতাকর্মীরা তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় করা মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হামলা
১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্মরণে বক্তৃতা করছিলেন। এসময় হঠাৎ করে একটি মাইক্রোবাস থেকে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। এই মামলটিও বিচারাধীন আছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা
১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলেমেয়েসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে ই-মেইল চালাচালির খবর আসে। এতে জানানো হয়, ওই ই- মেইলটি পাঠিয়েছিলেন ইন্টার এশিয়া টিভির মালিক শোয়েব চৌধুরী। ওই ঘটনায় মামলার বিচার কত দূর কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।
২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা
২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ করার কথা ছিল। ওই সমাবেশের প্যান্ডেল তৈরির সময়ে সন্ত্রাসীরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার জন্য দুটি শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখে। সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা ২০০০ সালের ২০ জুলাই ওই কলেজের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ও একই সালের ২৩ জুলাই হেলিপ্যাডের কাছ থেকে ৪০ কেজি ওজনের দুটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আসার কথা শুনে মুফতি হান্নানসহ আসামিরা সাবান কারখানায় শক্তিশালী বোমা দুটি তৈরি করেন। বোমা দুটি তৈরি করার পর ২০০০ সালের ১৯ জুলাই সাবান কারখানার গাড়িতে করে কোটালীপাড়া এলাকায় নিয়ে যায়। এই দুটি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে বিচারিক আদালতে।
২০০১ সালে খুলনার রূপসায় বোমা
২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ঘাতক চক্র সেখানে শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখে। বিস্ফোরণের আগেই বোমাটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় গোয়েন্দা পুলিশ।
কোটালীপাড়ায় হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হরকাতুল জেহাদ। কিন্তু তার তিন দিন আগে ২৭ মে সেতুর কাছাকাছি রূপসা নদী থেকে দুটি ইঞ্জিন নৌকা থেকে হুজি-বির ১৫ জঙ্গি ধরা পড়ে। ওই ১৫ জনের একজন মাসুম বিল্লাহ ওরফে মুফতি মইন ঢাকায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন বলে তদন্তে বের হয়ে এসেছে।
একই সময় গ্রেপ্তার হওয়া অপর জঙ্গি কুতুবউদ্দিন ওরফে বাবুর বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার কেষ্টপুরে। তিনি ২১ আগস্ট হামলা মামলার দুই নম্বর আসামি ও হুজির আঞ্চলিক নেতা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল ও মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়েরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
২০০১ সালে সিলেটে হামলার আগে বিস্ফোরণ
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা নির্বাচনি জনসভা করতে সিলেটে গেলে সেখানে বোমা পুঁতে রেখে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হুজি। কিন্তু হামলার আগেই জনসভাস্থলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে জঙ্গিদের দুই সদস্য নিহত হলে ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।জনসভার আগের দিন রাত আটটার দিকে সিলেট শহরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলের কাছাকাছি ফাজিল চিশতি এলাকার একটি বাড়িতে বোমা পর্যবেক্ষণ করার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে দুই বোমাবাজ নিহত হন। আহত অবস্থায় হুজির সদস্য মাসুদ আহমেদ ওরফে শাকিল (বাসা ঢাকায়) ও আবু ওবায়দা ওরফে হারুনকে (বাড়ি ফেনী) পুলিশ গ্রেপ্তার করে।ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হুজির আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা আবু সাইদ ওরফে আবু জাফর ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন। তাতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেন তিনি।
২০০২ সালে নওগাঁর বিএমসি কলেজে হামলা
২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা হয়। এই ঘটনার জন্য তখন আওয়ামী লীগ বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলকে দায়ী করেছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এর তদন্ত আর আগায়নি।
২০০২ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পথ আটকে হামলা
২০০২ সালের ২৬ আগস্ট কলারোয়ার হিজলদীতে মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের স্ত্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে সাতক্ষীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৩০ আগস্ট বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা খুলনা সফরের সময় এ খবর পেয়ে তাকে দেখতে সাতক্ষীরা যান।
পথে কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরের ওপর গুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি গাড়ি থেকে বেরিয়ে হামলাকারীদের কাছে জানতে চান, ‘কী চাও তোমরা?’ তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় তাঁর গাড়ির পতাকার স্ট্যান্ড ভেঙে যায়। কয়েকজন সফরসঙ্গীও আহত হন। তাঁর সঙ্গে থাকা সাতক্ষীরার ১২ সাংবাদিক আক্রান্ত ও দুই ঘণ্টা কলারোয়া থানায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
ঘটনার প্রতিবাদে ১ সেপ্টেম্বর সারাদেশে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল পালিত হয়। সে সময় সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু ও সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবীব সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে কলারোয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
২০০৪ সালে বরিশালের গৌরনদীতে হামলা
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই ওই বছরের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে ওই হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, লুটতরাজের ঘটনায় প্রকৃত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না করে উল্টো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের আসামি করে মামলা করে পুলিশ। পরে ওই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত হামলাকারীরা পার পেয়ে যায়।
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে ভোট দেয়ার পর কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে গাড়ি থেকে নামার পরপরই তার ওপর গুলি চালিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ১৯৯৪ সালে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে রাজনৈতিক সফরে গেলে ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেলস্টেশনে তার ওপর আবারও হামলা হয়। গুলি ছোড়া হয় তার সমাবেশে।
১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে এবং ১৯৯৬ একই কায়দায় তার ওপর হামলা চালানো হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়াতেও ভয়াবহ হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০০ সালে জনসভাস্থল ও হ্যালিপ্যাডে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ-হুজি।
পরের বছরই আবারও সক্রিয় হয় হুজি। ২০০১ সালে ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেখানেও বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল তাকে হত্যা করতে।
ওই বছরই ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী প্রচারে সিলেটে গেলে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভার মঞ্চের পাশেই ঘটে বোমা হামলা। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালান হয়।
এ ছাড়া, সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে যশোর ফেরার পথে বিএনপি অফিসের সামনে বাস রেখে ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা হলেও রক্ষা পান তিনি। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে ঘাতকচক্র। চেষ্টা করা হয়েছে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গি দিয়ে মানববোমায় তাকে হত্যার।
২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করেছিল শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য। ২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে কারওরান বাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জঙ্গিগোষ্ঠী।
সর্বশেষ, ৫ই আগষ্ট ২০২৪।
এবারের এই ইতিহাস সকলের ওয়াকিবহাল, শেখ হাসিনাকে গণভবনে পেলে তার লাশ নিয়ে কি করতো সেটা আর বলার প্রয়োজন মনে করছি না। ইতিহাস অনেক কিছু শেখায়, দেখায়, জানাই, ও ভোগায়। ৮/৯ মাসে যার চুড়ান্ত রূপ জাতি উপলব্ধি করছে। আমি, তুমি, বা অন্য যে কেউ এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলে শেখ হাসিনার চেয়ে নির্মম স্বৈরশাসক হতে বাধ্য। যদিও, সময়ে বিবর্তনে দেশের আপামর জনগণ এই স্বৈরশাসককে আবারো ক্ষমতার মসনদে আহরণ অবস্থায় দেখতে চাচ্ছে। স্বৈরশাসক
হিসেবে তার এই অর্জনটা অবস্মরণীয়।
From Ali Rezah