Golpo kotha - গল্প কথা

Golpo kotha - গল্প কথা 🦋☺️"প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিছু পেয়ে গেলে_🖤
♡︎মানুষ যত্ন করতে ভুলে যায়!🖤🦋

মা জানো আমি না আস্তে আস্তে তুমি হয়ে উঠছি☺️ এই বাড়িতে আমি এখন সকাল বেলা উঠি,😊 প্রত্যেকটা কাজ আমাকে একাই করতে হয়😅😅বিকাল ...
13/01/2024

মা জানো আমি না আস্তে আস্তে তুমি হয়ে উঠছি☺️ এই বাড়িতে আমি এখন সকাল বেলা উঠি,😊 প্রত্যেকটা কাজ আমাকে একাই করতে হয়😅😅
বিকাল হতে হতে এখন আমার শরীরে ও ঘামের গন্ধ হয়😔🥺
এখন আমি শাড়ি গুছিয়ে, পড়তে শিখে গেছি😊😊
হাত খোপাতেই এখন বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি☺️
এখন আর মুঠোফোনে পড়ে থাকি না, 🙂
সারাক্ষণই ঘড়ির কাঁটার সাথে তর্ক করি ,কাটা আঙ্গুল নিয়েও দিব্যি মসলা বাটি 😅
জানো, রেগে গেলেও আর চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলি না,😢
এখন বুঝি ,,ধুলো পরিষ্কার করতে গেলে কতটা ধুলো শরীরে আগে মাখতে হয😥😥
সব শিখে গেছে তোমার মেয়ে মা,তবে একদিক দিয়ে এখনো বড় হয়নি মা 🙂🙂
ব্যথা পেলে এখনো মা বলেই চিৎকার করি💔💔💔💔
ইতি তোমার
মেয়ে 😥😥

02/09/2023

Facebook Lite Facebook
😆 ❤️

 #যেদিন_তুমি_এসেছিলে #সিজন_২ #পর্ব_৪ #মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া___________________দমকা হাওয়ায় শরীরে কাঁপন লাগে। এরকম শীতল আবহ...
16/09/2022

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_২
#পর্ব_৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
দমকা হাওয়ায় শরীরে কাঁপন লাগে। এরকম শীতল আবহাওয়াতে রুমে কাঁথা গায়ে ঘুমানোর থেকে তৃপ্তি কিছু হতে পারে না। অর্ষার হুট করে এমন ইচ্ছেটি মনের ভেতর জাগল। কী অদ্ভুত! এটা কী করে হয়? একদিকে আহিলের এমন করুণ অবস্থা, অন্যদিকে তার ইন্টার্ভিউ দেওয়া হলো না সব মিলিয়েই সে ভীষণ হতাশ। তবে একটি ধ্রুব সত্য হচ্ছে, তার সকল চিন্তার অর্ধভাগেরও বেশি হচ্ছে আহিলকে নিয়ে। ও যেন সুস্থ হয়ে যায় সেই প্রার্থনাই আল্লাহর নিকট বারবার করছে।

পায়ের শব্দ পেয়ে দু'চোখের পাতা খোলে অর্ষা। তার দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ। একজোড়া পা দেখে সে মুখের দিকে তাকাল এবং বলাই বাহুল্য মুখ দেখে সে যারপরনাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। একটু নড়েচড়ে বসে বলল,

'আপনি?'

আহনাফ অর্ষার কৌতুহলের সুধা নিবারণ করল না। কোনো রকম আগ্রহও তার মাঝে পরিলক্ষিত হয়নি। সে মৃদুস্বরে আমেনা বেগমকে ডাকছে,

'মা, মা, মা!'

আমেনা বেগমের কর্ণকুহরে আহনাফের ডাক পৌঁছাচ্ছে কিনা সন্দেহ। সে গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন। এদিকে অর্ষা যেন একের পর এক ধাক্কা খেয়েই চলেছে। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে আহনাফের দিকে। রাফিকে পড়াতে যে ক'দিন ও বাড়িতে গেছে, একদিনও সে আমেনা বেগমকে দেখেনি। কখনও জানারও প্রয়োজন মনে করেনি ঐ বাড়িতে কে কে আছে। তার চিন্তা-চেতনা জুড়ে থাকত চাকরি। একটা চাকরির প্রয়োজনীয়তা সে খুব ভালো করেই উপলব্ধি করত। টিউশন একসময় করাত নিজের টুকটাক খরচ চালানোর জন্য। ইদানীং চাকরির খোঁজ করতে গিয়ে সেটাও বাদ দিয়েছিল। একটা স্বল্প বিরতির পর রাফিকে দিয়ে টিউশনির পথযাত্রা আবার শুরু হয়েছে; তাও সেটা ছোটো বোনের অনুরোধে।

আমেনা বেগমের ঘুম ভাঙছে না দেখে আহনাফ এবার তার মুখের ওপর কিছুটা ঝুঁকে ডাকল,

'মা? শুনছ? মা?'

আহনাফের মাথা এখন অর্ষার মুখের খুব কাছাকাছি। তার হৃদস্পন্দন বাড়ছে। কেমন যেন একটা অস্বস্তি তাকে জেঁকে ধরেছে। আহনাফ তার নিকটে এসে বুকের ধুকপুকানি কি শুনতে পাচ্ছে?

আহনাফের মৃদু ঝাঁকানিতে আমেনা বেগম নিভু নিভু দৃষ্টিতে চোখে মেলে তাকালেন। আহনাফের মুখটি দেখেই তিনি মিষ্টি করে হাসলেন। ঘুমন্ত বাচ্চারা যেমন ঘুম থেকে উঠে বাবা-মাকে কাছে দেখলে খুশি হয়, আমেনা বেগমের ক্ষেত্রেও সেরকম ঘটনা লক্ষ্য করল অর্ষা।

'তুই এসেছিস বাবা!' বললেন আমেনা বেগম।

আহনাফ তাকে ধরে উঠিয়ে বসাল। বলল,'হ্যাঁ, তুমি এখানে কেন ঘুমিয়ে পড়েছ?'

উত্তরে অর্ষা বলল,'উনি আসলে চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। নিজের ওপর কোনো ভারসাম্য ছিল না। যেকোনো মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে ভেবে আমিই তাকে আমার কোলে মাথা রেখে শুইয়ে দিয়েছিলাম।'

আহনাফ এতক্ষণ বাদে এবার অর্ষার দিকে তাকাল। স্থির দৃষ্টিতে কয়েক সেকেণ্ড তাকিয়ে থেকে বলল,

'ধন্যবাদ আপনাকে।'

এরপর আমেনা বেগমকে নিয়ে সেই স্থান প্রস্থান করল সে। অর্ষা কতক্ষণ বোকার মতো সেদিকে তাকিয়ে থাকার পর আহিলের কেবিন থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসে। অর্ষা এগিয়ে যায় সেদিকে। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে,

'কী অবস্থা এখন ডাক্তার?'

'খুব ভালো বলা যাচ্ছে না। হাতে আর পায়ে ক্ষ'ত বেশি হয়েছে। এমনিতে হাড় ভাঙেনি তবে প্রচুর র'ক্তক্ষরণ হয়েছে। আমাদের কাছে যা র'ক্ত ছিল তা দেওয়ার ব্যবস্থা আপাতত করা হয়েছে। এখনও আরও দু'ব্যাগ ও পজিটিভ (O+) র'ক্ত লাগবে। সেগুলোর ব্যবস্থা করুন দ্রুত।'

অর্ষা মাথা ঝাঁকাল। জিজ্ঞেস করল,'ওর কি জ্ঞান ফিরেছে?'

ডাক্তার জানালেন,'না।'

অর্ষা আবার আগের জায়গায় বসে পড়েছে। সে এখন র'ক্ত কোথায় পাবে? এখনও তো হাসপাতালের বিল দেওয়াও বাকি আছে। তার কাছে এত টাকাও নেই! যা ছিল তা তো কিছু মেডিসিন কিনতেই শেষ হয়ে গেল। আহিলের বাড়িও চেনে না যে কোনোভাবে যোগাযোগ করবে। কী রকম যেন অসহায় লাগছে এখন তার নিজেকে। সে পা দুটো টান টান করে রেখে চেয়ারের গায়ে পিঠ ঠেকাল। কী করবে না করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। ঐ সময়ে তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টসদের নিয়ে একটা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়েছে। সেখানে কেউ তো আহিলের পরিচিত থাকতেই পারে। সে দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকল। ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সবাইকে মেনশন করে জিজ্ঞেস করল,

'তোমাদের মধ্যে কেউ কি আহিলের বাড়ির ঠিকানা জানো? অথবা ওর বাড়ির কাউকে চেনো?'

বেশ কয়েকজন ম্যাসেজ সীন করেছে। কিন্তু কেউই জানে না বলল। হতাশ হয়ে ম্যাসেজের রিপ্লাই দেখছে অর্ষা। ঐ সময়ে আশিক রিপ্লাই করে,

'হঠাৎ ওর বাড়ির খোঁজ করছ কেন?'

অর্ষা তখন গ্রুপেই বিস্তারিত যতটা সম্ভব ম্যাসেজে বলল। আশিক তখন হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে বলল,

'তুমি থাকো হাসপাতালে। আমি আসছি।'

কিছুটা হলেও ভরসা পেল অর্ষা। সে চুপচাপ বসে অপেক্ষা করছে। মিনিট পনেরো বাদেই হাসপাতালে লামিয়া আসে। রিসিপশন থেকে সহজেই সে অর্ষাকে পেয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে এসে অর্ষাকে জিজ্ঞেস করে,

'আহিল এখন কেমন আছে?'

হঠাৎ আগমনে অর্ষা কিছুটা থমকাল। আশিকের আসার কথা ছিল। তবে লামিয়াকে সে আশা করেনি। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

'ডাক্তার বলেছে ভয়ের কিছু নেই।'

'তুমি যে বললে র'ক্ত লাগবে। রক্তের জোগার হয়েছে?'

অর্ষা মাথা নাড়িয়ে বলল,'না।'

'আমার র'ক্তের গ্রুপও ও পজিটিভ (O+)। আমি র'ক্ত দেবো।'

অর্ষা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল লামিয়াকে। সেখান থেকে ফেরার পথে আশিকের সাথে দেখা হলো। ওর র'ক্তের গ্রুপও ম্যাচ করে যায়। দুজনের থেকেই দু'ব্যাগ র'ক্ত যোগার হয়ে যায়। হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচল অর্ষা।

কেবিন থেকে একজন নার্স এসে একটা প্রেসক্রিপশন অর্ষাকে ধরিয়ে দিয়ে বলল,'এই ইঞ্জেকশনটা নিয়ে আসুন।'

প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা। তার কাছে তো এখন গাড়ি ভাড়ার টাকাও নেই। সে ইঞ্জেকশন কিনবে কী করে? লামিয়া কিংবা আশিকের কাছে কি চাইবে?

'অর্ষা?'

ডাক শুনে পেছনে তাকাল অর্ষা। দিদার দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনের সাদা শার্টটি বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে। সে প্রথমেই আহিলের খবর নিল। অর্ষা ডাক্তারের বলা কথাগুলোই বলল এবং আশিক ও লামিয়ার আসার কথাও জানিয়েছে। একটু থেমে বলল,

'তুমি তো একদম ভিজে গেছ। ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।'

'আমি তোমার ম্যাসেজ দেখেছি গ্রুপে। তখন আমাদের শো-রুমে ছিলাম। ছাতা তো ছিল না। তাই ওভাবেই বের হয়ে এসেছি। রিকশা খুঁজতে গিয়েই ভিজে গেছি।'

অর্ষা মলিন হাসল। ইন্টার্ভিউ দিতে না পারার জন্য কিঞ্চিৎ যেই আফসোসটা তার মাঝে হয়েছিল তার জন্য এখন সে নিজেকে মনে মনে ভর্ৎসনা জানাচ্ছে। সে তো একা আহিলের জন্য এগিয়ে আসেনি। আশিক, লামিয়া, দিদারও তো এসেছে।

দিদার অর্ষার চিন্তিত মুখটি খেয়াল করে বলল,'তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তা করছ?'

কোনো রকম রাখঢাক না করে সরাসরিই বলল অর্ষা,'আসলে নার্স এই ইঞ্জেকশনটা আনতে বলেছে। কিন্তু আমার কাছে যেই টাকা ছিল সব শেষ।'

দিদার হাত বাড়িয়ে বলো,'দেখি প্রেসক্রিপশনটা আমায় দাও। এখান থেকেই নিতে হবে?'

'তা কিছু বলেনি।'

'আচ্ছা তুমি টেনশন করো না। আমি নিয়ে আসছি।'

দিদার চলে যাওয়ার দশ মিনিটের ব্যবধানে জুঁই আর রেশমি আসে। সরাসরি অর্ষার কাছে এসে বসে। সব শুনে দুজনে ভীষণ আফসোস করছে আহিলের জন্য। ডিপার্টমেন্টের সবার মাঝে এই কয়েকজনের মধ্যে যেই সল্প বন্ধুত্বের আভাস ছিল তা পূর্ণমাত্রা নিতে পারেনি এ কথা যেমন সত্য। তেমনই প্রথমদিনের আলাপ এরা কেউই ভুলতে পারেনি। সেই থেকেই হয়তো একে অপরের প্রতি অদৃশ্য একটা টানের রেশ ধরে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করেই আহিলের দুর্ঘটনার খবর শুনে ছুটে এসেছে সকলে।

লামিয়া আর আশিক র'ক্ত দিয়ে চলে এসেছে। দিদারও ইঞ্জেকশন এনে নার্সকে দিয়ে ওদের কাছে চলে আসে। রেশমি বলে,

'তোমরা কেউই তো মনে হয় কিছু খাওনি। চলো ক্যান্টিনে যাই।'

লামিয়া, অর্ষা আপত্তি জানাল। জুঁই মৃদু ধমক দিয়ে বলল,'না মানে? তুমি সকাল থেকে হাসপাতালে দৌঁড়াদৌঁড়ির ওপরেই আছ। না খেলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।'

লামিয়া এবং আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল,'আর তোমরা এমনিতেই দুর্বল। তোমাদের খাওয়ার দরকার আরও বেশি।'

জোরপূর্বক সবাইকে নিয়ে ক্যান্টিনে গেল রেশমি আর জুঁই। খাওয়ার বিল রেশমিই দিয়েছে। খেতে খেতে সবাই এক্সিডেন্ট নিয়ে অর্ষার থেকে এবার খুঁটিনাটি সব শোনে। সবাই আহিলকে নিয়ে চিন্তান্বিত।

আশিক বলল,'অর্ষা তুমি এবার বাড়িতে যাও। গোসল করে খেয়ে একটু রেস্ট নাও। তোমার এখন একটু রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন।'

বাকিরা সম্মতি জানাল। অর্ষাও ভাবল রেস্ট না নিক, অন্তত কাপড় পালটানো দরকার খুব। চলে আসার মুহূর্তে নার্স জানাল আহিলের জ্ঞান ফিরেছে। তাই অর্ষা চাইল যাওয়ার পূর্বে একবার আহিলের সাথে দেখা করেই যাবে। সে অনুমতি নিয়ে ভেতরে যায়। একটা টুল টেনে আহিলের মাথার পাশে বসে বলে,

'খুব কষ্ট হচ্ছে?'

ব্যথিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আহিল। জ্ঞান ফেরার নার্স জানিয়েছিল ওর বন্ধুরা সবাই এসেছে। এ কথা শুনে অবাক হয়েছিল আহিল। সে কল্পনাও করেনি যে তার ডিপার্টমেন্টের এই ছেলে-মেয়েগুলো আসবে। সামনে শুধু অর্ষা। তাহলে কি বাকিরাও এসেছে?

অর্ষা নিজে থেকেই বলল,'এক্সিডেন্ট কীভাবে হয়েছে সেসব বিস্তারিত পরে শুনব। তার আগে তোমার বাড়ির ঠিকানাটা দাও। বাসায় এখনও খবর দেওয়া হয়নি।'

আহিল নিরুত্তর। অর্ষা বলল,'কী হলো?'

'তুমি একাই এসেছ?' ভাঙা ভাঙা স্বরে জিজ্ঞেস করে আহিল।

অর্ষা মুচকি হেসে বলল,'না। আশিক, দিদার, লামিয়া, রেশমি আর জুঁইও এসেছে। তুমি কত্ত লাকি! আমার তো রীতিমতো তোমায় নিয়ে হিংসা হচ্ছে। সবাই তোমায় কত ভালোবাসে।'

আহিল মলিন হাসল।

'আচ্ছা শোনো, আমায় এবার উঠতে হবে। তুমি আশিকের কাছে বাড়ির ঠিকানা দিও। ও যোগাযোগ করবে। আমি পরে আবার আসব।' বলল অর্ষা।

উঠে দাঁড়ি চলে যাওয়ার পূর্বে বলে গেল,'টেক কেয়ার।'

কেবিন থেকে বেরিয়ে বাইরের সবার থেকে বিদায় নিল সে। ওরা এবার আহিলের কাছে যায়। পেছন থেকে দিদার অর্ষাকে ডাকে। ডাক শুনে অর্ষা দাঁড়িয়ে পড়ে। দিদার এগিয়ে এসে মানিব্যাগ থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট বের করে অর্ষার হাতে গুঁজে দিয়ে বলে,

'তুমি বলেছিলে তোমার কাছে টাকা নেই। এটা দিয়ে গাড়ি ভাড়া দিও।'

'আরে না, না। লাগবে না।'

'অবশ্যই লাগবে। এতদূরের পথ নয়তো যাবে কী করে?'

'একটা ব্যবস্থা আমি করে নেব। টাকাটা...'

'কাম অন ব্রো! এত ফর্মালিটির কী আছে? আমরা বন্ধু না? আর বন্ধু হয়ে কি বন্ধুর জন্য এতটুকু করার রাইট আমার নেই?'

অর্ষার কী জানি হলো, চোখ ফেটে অশ্রু বের হতে চাচ্ছে তার। সে নিজেকে সামলে নিয়ে স্মিত হাসল। দিদার বলল,

'সাবধানে যেও। একা যেতে পারবে নাকি পৌঁছে যাব?'

'পারব। তোমরা আহিলের কাছে থেকো।'

'থাকব। তুমি চিন্তা ক'রো না। তোমার ফোন নাম্বার দিয়ে যাও আপত্তি না থাকলে।'

'না, আপত্তি কেন থাকবে।'

এরপর দিদারকে নিজের নাম্বারটি দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে অর্ষা। বাইরে তখন ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি হচ্ছে। হায় আল্লাহ্! এই বৃষ্টির মধ্যে বাড়িতে ফিরবে কী করে। রিকশা তাও যা চোখে পড়ছে একটাও খালি নেই। মুসিবতের ওপর মুসিবত। সে বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পাশ থেকে একজন বলল,

'এখানে কেন?'

অর্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল আহনাফকে। বিস্ময় নিয়ে বলল,'যাননি এখনও?'

'গিয়েছিলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখলাম মা প্রেসক্রিপশন রেখে গেছে হাসপাতালে। তাই আবার আসতে হয়েছে।'

অর্ষার মনে হলো সে নতুন এক আহনাফকে আবিষ্কার করছে। আচ্ছা সত্যিই এটা আহনাফ নাকি তার ডুপ্লিকেট কেউ? নতুবা আসল আহনাফ তো কখনও এত কথা বলে না। অন্তত অর্ষার সাথে বলেনি কখনও!

আহনাফের খুব জানতে ইচ্ছে করছিল আহিল এখন কেমন আছে। প্রথম দিকটা এড়িয়ে যেতে চাইলেও এবার আর পারেনি। উপরন্তু বৃষ্টির মাঝে অর্ষাকে বাইরে একা দেখে নিজ থেকেই কথা বলা শ্রেয় মনে করল। এতে হয়তো আহিলের খবরটি নেওয়া যাবে।

'সেই ছেলেটা কেমন আছে?' জানতে চাইল আহনাফ।

অর্ষা বলল,'আহিলের কথা বলছেন?'

'নাম জানিনা। আপনি যাকে র'ক্তা'ক্ত অবস্থায় নিয়ে এসে ছিলেন।'

'হ্যাঁ, ওর নাম-ই আহিল। ভার্সিটির ফ্রেন্ড। এখন কিছুটা ভালো। মাত্রই জ্ঞান ফিরেছে। বাকি ফ্রেন্ডসরা ওর কাছে আছে। তাই আমি বাড়িতে যাচ্ছি।'

এরপর একটু ইতস্তত করে বলল,'আপনি তো বাড়ির পথেই যাচ্ছেন। আমায় একটু বাস স্টপেজ অব্দি পৌঁছে দেবেন?'

আহনাফের মুখাবয়ব কঠিন ঠেকল। সে নির্জীব হয়ে বলল,

'আসুন।'

অর্ষা পেছনে বসতে যাচ্ছিল তখন আহনাফ বলল,'সামনে বসুন।'

অর্ষা সামনেই বসল। গাড়ি ড্রাইভ করছে আহনাফ। প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল অর্ষার। সে একটু পরপর হাই তুলছে। মেইন রোডে গিয়ে জ্যামে পড়ল। এদিকে নিজের ঘুমকে কোনোভাবেই অর্ষা আটকে রাখতে পারছে না। এতবার হাই তুলতে তুলতে নিজেই নিজের ওপর বিরক্ত হচ্ছে। কখন এই জ্যামের সমাপ্তি ঘটবে কে জানে। অপেক্ষার প্রহর শেষ হওয়ার পূর্বেই তন্দ্রায় দু'চোখ বন্ধ হয়ে যায়। আহনাফ এতক্ষণ অন্যপাশ মুখ ফিরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। জ্যাম ছোটার পর গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে অর্ষা আহনাফের ওপর ঢলে পড়ে। দ্রুত বাম হাতে অর্ষার মাথা ধরে ফেলে আহনাফ; নয়তো এখনই স্টিয়ারিং-এ আঘাত লাগত। হলুদ হিজাবের সাথে সাথে কয়েক ফোটা শুকনো র'ক্ত অর্ষার গালেও লেগে রয়েছে। নিরবে দীর্ঘশ্বাস নিল আহনাফ। সযত্নে মাথাটি তুলে ধরে গাড়ির সিটের সাথে হেলিয়ে দিলো।

চলবে...

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

 #শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (৩০)পরের মাসেই ছোট এক বেডরুম, একটা কিচেন,একটা ওয়াশরুমের একটা বাসায় উঠলো ধ্রুব আর শালুক। এখানে ভাড়া...
16/09/2022

#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (৩০)
পরের মাসেই ছোট এক বেডরুম, একটা কিচেন,একটা ওয়াশরুমের একটা বাসায় উঠলো ধ্রুব আর শালুক। এখানে ভাড়া ৮ হাজার টাকা।
ধ্রুবর জন্য ব্যাপারটা স্বস্তিদায়ক। প্রায় ৯ হাজার টাকার ব্যবধান। তবে সমস্যা হচ্ছে বাসাটা একটু বেশি ভেতরের দিকে।
শালুকের সেসব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।বরং শালুক ভীষণ আনন্দিত।
কেননা এখানে এরকম অনেকগুলো ফ্ল্যাট আছে একই ফ্লোরে, সবাই তাদের মতো করে থাকছে।জীবন যুদ্ধের লড়ে যাচ্ছে সবাই।
সকাল হতেই শুরু হয় সব ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের কথাবার্তার শব্দ ভেসে আসে,বাচ্চাদের কান্নার শব্দ ভেসে আসে।
কর্মমুখর মানুষ সাত সকালে বের হয়ে যায় নিজের জীবিকার তাগিদে।

শালুকের পরীক্ষা সামনের মাসে শুরু হবে।শালুক সারাদিন মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে, বিকেলে রাতের জন্য রান্না করে। সন্ধ্যায় শালুকের কাছে আশেপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা আসে।সবাই মিলে গল্প করে যখন শালুকের মনে হয় এরা সবাই যেনো তার কতো চেনা।
এই এক অন্য জীবন যেনো,অন্য রকম অনুভূতি।
একজন এক জেলা থেকে এসেছে, সবার কথাবার্তা আলাদা,রান্নাবান্নার নিয়ম আলাদা,চলাফেরার নিয়ম আলাদা।
একটাই মিল সবার মধ্যে, সবার একই রকম আর্থিক অবস্থা। সবাই খেয়ে পরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।কেউ বিলাসিতা করতে যায় না এখানে।
শালুক দেখলো এখানের মানুষগুলো কি নির্দ্বিধায় প্রতিদিন মাছ মাংস না খেয়ে ও স্বামী, সন্তান নিয়ে হাসিখুশি থাকছে।
এক পদ তরকারি দিয়ে,একটা ভর্তা একটা ডাল দিয়ে খেয়ে খুশিমনে একে অন্যের কাছে তা বলছে।বলতে তাদের মধ্যে কোনো জড়তা নেই।লজ্জা পায় না কেউ নিজের দৈন্যতা স্বীকার করতে। কেউ কাউকে বড় করতে চায় না।কার কি আছে সেসব নিয়ে প্রতিযোগিতা হয় না।
এরা সবাই যেনো সবার ভীষণ আপন।

শালুকের মনে পড়লো আগের বাসার কথা। তার টাইফয়েড হবার পর বাড়িওয়ালার বউ প্রতিদিন বিকেলেই তাদের বাসায় আসতো গল্প করতে।
যেহেতু তার বাসায় কাজ করা মহিলাটি যার নাম দিলারা, শালুকের দেখাশোনা করছে সেই সুবাদে আসতেন তিনি।

এলেই জিজ্ঞেস করতেন,কি রান্না করেছে আজকে, কি দিয়ে খেয়েছে শালুকরা।
তারপর শুনে নাক কুঁচকে বলতেন আজ তারা বড় কাতলা মাছ এনেছেন, কোনোদিন গরুর মাংসের বিভিন্ন আইটেম,কখনো বড় ইলিশ মাছ।
আফসোস করে দিলারাকে বলতেন,"আহারে দিলারা,বাসায় থাকলে তো খেতে পারতি।আজকে আমরা এই রান্না করেছি,সেই রান্না করেছি। "

দিলারা মলিন মুখে হেসে বলতো,"বড় লোকের বাসার খাওন দাওন আর এই গরীবের বাসার খাওন কি এক রকম হয় আপা?কিসের লগে আপনি কি তুলনা করেন।"
লজ্জায় তখন শালুকের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেতো।

নতুন শাড়ি,জুয়েলারি পরে বাড়িয়ালি এলে শালুক তখন এক মনে আল্লাহকে ডেকে যেতো।
শাড়ির দাম কতো,কোন ব্র‍্যান্ডের শাড়ি,জুয়েলারি কই থেকে নেওয়া এসবের ফিরিস্তি শুনিয়ে বলতেন,"তোমার তো এসব নেই মনে হয় শালুক।তোমার কানের এই ছোট দুল ছাড়া আর তো কিছুই দেখি নি কখনো পরতে।তোমার বরকে বলো না না-কি? তোমাকে টাকাপয়সা দেয় না সে?
আমার এসব দেখো,এগুলো আমি গত শুক্রবারে কিনে এনেছি নিজে গিয়ে। "

শালুকের রাগ হতো ভীষণ। সে যেভাবে আছে সেভাবেই তো সে সুখী,সে তো উচ্চাশা করছে না।তবু কেনো উনি এসব কথা বলেন?
এই যে ধ্রুব বাসায় ফেরার সময় মনে করে শালুকের জন্য একটা পাঞ্চ ক্লিপ,একটা ফুলের মালা,একটা গোলাপ ফুল,এক মুঠো কাঁচের চুড়ি,এক জোড়া পায়েল এসব কিনে আনে নিজে থেকে,এসব পেয়ে শালুক যে পরিমাণ সুখ পায় তা কী ২ ভরি ওজনের কানের দুলের মধ্যে পাবে?
১৪-১৫ হাজার টাকা দিয়ে শাড়ি কিনে এনে পাবে?

প্রিয় মানুষটা ভালোবেসে যা এনে দেয় তার চাইতে কি নিজের কেনা হাজার টাকা দামের জিনিসটা বড় হয় কখনো?

এই শো অফে অতিষ্ঠ হয়ে শালুক একদিন জবাব দিলো, "আন্টি,আংকেল কি নিজ থেকে আপনার জন্য কিছু কিনে আনে না?নিজে পছন্দ করে? "

বাড়িয়ালি ইতস্তত করে বলে, "আরে,ওর সময় কোথায়?আমার ওর পছন্দ ভালো লাগে না। ও এসব কেনাকাটা করতে পারে না ভালো করে। আমি নিজেই কিনি নিজের পছন্দে।"

শালুক হেসে বলে, "আমার বর আমাকে ভালোবেসে,আমার কথা মনে করে একটা গোলাপ এনে দেয় যখন, বিশ্বাস করেন আন্টি মনে হয় এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী নারী আমি। আমাদের সংসারে হয়তো বিলাসিতা করার মতো কিছু নেই কিন্তু সুখী হওয়ার মতো অনেক কিছু আছে।
মাঝরাতে আমি আমার বরের সাথে বারান্দায় বসে চাঁদ দেখতে পারি।সেই সময় কামিনী ফুলের এতো মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসে আন্টি!
আমার ছোট্ট বাসাটাকে আমার কাছে স্বর্গ মনে হয়।

আমার বর যখন আমাকে কাঁচের চুড়ি পরিয়ে দেয় পরম যত্নে,যাতে চুড়ি ভেঙে হাত কে/টে না যায়, সেই সময় আমার ইচ্ছে করে সময়টাকে এখানেই থামিয়ে রাখি।এই মধুর সময় যেনো কিছুতেই না কাটে।
আমাদের অনেকগুলো মিষ্টি মুহূর্ত আছে যেগুলো আপনার টাকা দিয়ে কেনা যাবে না আন্টি।আপনার সুখের মাপকাঠি হতে পারে দামী শাড়ি,গহনা আমার কাছে তা ভিন্ন। আমার সুখের মাপকাঠি হচ্ছে স্বামীর ভালোবাসা ।

সবার দৃষ্টিভঙ্গি তো এক না।আপনার কাছে যেটা সুখী হবার কারণ আমার কাছে সেটা মনে হয় লোক দেখানো, ফুটানি করা,নিজেকে সবার সামনে অযথাই জাহির করার প্রচেষ্টা।যার অন্তঃসার আসলে শূন্য, পুরোটাই মেকি। "

তার পরের মাসেই বাড়িয়ালা ভাড়া বাড়িয়ে দিলো। শালুক আপনমনে হাসতে লাগলো এসব মনে করে।

আদনানের সৌদির ভিসা হলো। টিকিট ও কাটা হলো ১৫ দিন পরের। হুট করে আদনান বাড়ি থেকে উদাও হয়ে গেলো।
বাড়িতে কেউ আদনানের খোঁজ জানে না।আদনান কাউকে কিছু না জানিয়ে ঢাকায় চলে এলো শালুকের সাথে শেষ একবার দেখা করতে।

আদনান প্রথমে এলো ধ্রুবর হলে।ধ্রুবর বন্ধুদের ফেসবুক আইডি থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করলো। বন্ধুদের থেকে ধ্রুবর ফোন নাম্বার যোগাড় করে আদনান কল দিলো ধ্রুবকে।
আদনানের নাম্বার ধ্রুবর ফোনে সেভ করা ছিলো। আদনানের কল পেয়ে ধ্রুব ভীষণ অবাক হলো। তার ফোন নাম্বার তো আদনানের জানার কথা না।
বাড়িতে যেই নাম্বার দিয়ে ধ্রুব কথা বলে সেটা শুধু কথা বলার সময় একটিভ করে ধ্রুব। তাহলে এই নাম্বার কিভাবে পেলো সে!
ভাবনা চিন্তা করে ধ্রুব কল রিসিভ করলো। ভাঙা ভাঙা স্বরে আদনান জিজ্ঞেস করলো, "কেমন আছিস ধ্রুব?"

ধ্রুবর চোখ ভিজে উঠতে চাইলো,সামলে নিলো ধ্রুব নিজেকে।নিরুত্তাপ কণ্ঠে জবাব দিলো, "ভালো আছি।"

আদনান বললো, "আমি ঢাকায় এসেছি, একবার শালুককে নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে পারবি?ভয় নেই,তোর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবো না শালুককে। আমি জানি, নিজের জিনিসের যত্ন তুই কতো ভালো করে নিতে জানিস"

ধ্রুব বললো, "আল্লাহ ছাড়া এই পৃথিবীতে এরকম কেউ নেই আমার থেকে শালুককে আলাদা করতে পারবে।এই ভয় ধ্রুব করে না। "

আদনান বললে, "কোথায় আসতে পারবি আমাকে টেক্সট করে জানিয়ে দিস,আমি হাজির হয়ে যাবো।"

ধ্রুব কিছু বললো না।

আদনান বললো, "আমি দেশ থেকে চলে যাবো ধ্রব।১৫ দিন পরে আমার ফ্লাইট চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট হয়ে। শেষ বার তোদের সাথে দেখা করে যেতে চাই।তোদের কাছে ক্ষমা না চাইতে পারলে আজীবনের জন্য নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে থাকবো।"

রাতে শালুক ধ্রুবর সাথে একটা রেস্টুরেন্টে এলো। কেনো আসছে সেটা ধ্রুব শালুককে আগে বলে নি। চেয়ারে আদনানকে দেখে শালুক ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। খামচে ধরে রাখলো ধ্রুবর হাত।ধ্রুব শালুকের হাত আলতো করে চেপে ধরে বললো, "আমি আছি তো।ভয়ের কিছু নেই।"

চলবে......

রাজিয়া রহমান
(আজকের পর্ব অনেক ছোট হয়েছে জানি।দয়া করে কেউ রাগ করবেন না।আমি আসলে লিখতে পারি নি সন্ধ্যা থেকে।১০ টার পর সময় পেয়েছি লিখার। জানি আপনারা মন খারাপ করেন।সরি)

15/09/2022

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে (সিজন-২) সমাচার
_________
আচ্ছা আমার মনে হয়, সিজন-২ নিয়ে কিছু বিষয় ক্লিয়ার করা প্রয়োজন। যারা সিজন-১ পড়েছেন তাদের অনেকেই ধরে বসে আছেন, সিজন-২ হুবুহু সিজন-১ এর মতো হবে। যেমন, আগের সিজনে অর্ষা বোকাসোকা ছিল, এখানেও বোকাসোকা থাকবে। আগের সিজনে আহিল, আহনাফ দুই ভাই ছিল, এই সিজনেও তাই হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখন আমি বলি, সিজন ২ আর ১ যদি হুবুহু একই হতো তাহলে তো আর আমার এতটা সময় আর শ্রম দিয়ে সিজন-২ লেখার কোনো প্রয়োজনই হতো না। জাস্ট কপি পেস্ট করে নতুন করে পোস্ট করতাম।

অর্থাৎ আসল কথা হচ্ছে, চরিত্রগুলোর নাম ব্যতীত আর কোনো কিছুর-ই মিল খুঁজে পাবেন না। সিজন-২ এর প্রতিটা চরিত্রের আচার-আচরণ, ব্যবহার সবকিছু আলাদা। শুধুমাত্র আশিকের ক্যারেক্টার মানে কবিতার বিষয়টি আমি একই রেখেছি। এর বিশেষ কারণ হলো ওর এই ফানি কবিতাই ওদের দলের হাস্যরসাত্মক মুহূর্তে আসল রস। গ্যাঞ্জাম পার্টির বন্ডিং এর জন্যই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা পেয়েছি এই গল্প লিখে। এই কারণে আহনাফ-অর্ষার জুটির সঙ্গে আমি দ্বিতীয় সিজনে গ্যাঞ্জাম পার্টিকেও রেখেছি। এই হচ্ছে মিল এবং অমিল।

আমি আবারও বলছি, কেউ একই রকম গল্প আশা করবেন না। আমার কোনো গল্পই অন্য আরেক গল্পের মতো নয়। প্রতিটা গল্পের থিম আলাদা, ম্যাসেজ আলাদা। সিজন-২ ও এর ব্যতীক্রম নয়। আশা করি, বাকিটা আপনারা গল্প পড়লেই বুঝতে পারবেন।
ভালোবাসা🖤

#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া

 #যেদিন_তুমি_এসেছিলে #সিজন_২ #পর্ব_৩ #মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া__________________'আপনি উনাকে বলেছেন আমি আপনার হাজবেন্ড?'আহনাফ...
15/09/2022

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_২
#পর্ব_৩
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
'আপনি উনাকে বলেছেন আমি আপনার হাজবেন্ড?'

আহনাফের মুখে প্রশ্নটি শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে অর্ষা। মুন ফোন করে চটজলদি নিচে আসতে বলায়, অর্ষাও তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু এমন প্রশ্ন যে তাকে শুনতে হবে সেটি সে কস্মিনকালেও কল্পনায় আনেনি। সে এবার মুনের দিকে তাকাল। মেয়েটা এমন মিথ্যে কথা কী করে বলতে পারল?

'কী হলো? বলুন।' গম্ভীর কণ্ঠটি এবার গমগম করে উঠল।

সম্বিৎ ফিরে পেল অর্ষা।অবিশ্বাস্যকণ্ঠে বলল,'কক্ষণো না!'

মুন বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাল। ঘোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলল,

'তখন না তুই বললি শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিস? তুই তো নিজেই আমাকে এই বাড়ির ঠিকানা টেক্সট করেছিস।'

জহির চৌধুরী, আহনাফ এবং দারোয়ান উত্তরের প্রতিক্ষায় এবার অর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অর্ষা পারে না শুধু মাটিতে গর্ত করে ভেতরে লুকিয়ে পড়তে। যতটা লজ্জা পাচ্ছে ততটা রাগও হচ্ছে মুনের ওপর। এতটা নির্বোধ এই মেয়ে!

সে কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

'শ্বশুরবাড়ির কথা তোকে মজা করে বলেছি আমি!'

'তাহলে তুই এই বাসায় কেন?'

'এখানে আমি প্রাইভেট পড়াই তাই।'

মুন এবার নিজের ভুলটি বুঝতে পেরে জিভ কাটল। আহনাফ এবং জহির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,

'স্যরি, আমারই বোঝার ভুল ছিল।'

আহনাফের রিয়াকশনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সে গম্ভীর হয়েই তাকিয়ে রয়েছে। জহির চৌধুরী মৃদু হাসলেন। বললেন,

'সমস্যা নেই। ভেতরে যাও।'

অর্ষা মুনকে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার পথে ইচ্ছেমতো চাপা রাগ ঝাড়ল কিছুটা। মান-সম্মানের আর কিচ্ছু বাকি রাখল না।

ওরা চলে যাওয়ার পর দারোয়ান হেসে বলে,'তাও ভালো স্যার। আমি আরও মনে মনে ভাবতেছিলাম আহনাফ বাবাজীর বউ আসলো কোত্থেকে! বিয়ের আগেই বেনামি বউ বাসায় উঠে গেছে হাহা।'

দারোয়ানের কথায় জহির চৌধুরী হাসলেও আহনাফ হাসেনি একবিন্দুও। অর্ষাকে নিয়ে মনে মনে তার অন্যরকম চিন্তা-ভাবনা ঘুরছে। আসলেই মুন মেয়েটার বোঝার ভুল ছিল নাকি অর্ষারই কোনো প্ল্যান ছিল সেটা সে ভেবে পাচ্ছে না। ভার্সিটির প্রথমদিন রাশেদকে হেনস্তা করার পর থেকেই অর্ষার প্রতি তার মনোভাবটা অন্যরকম। অথচ আদতে এই ছেলে জানেই না, সেদিন কে রাশেদকে নিয়ে মজা লুটেছিল! কিছুটা বোঝার ভুল সম্পূর্ণ মনোভাবকেই বদলে দিয়েছে।

আহনাফ যেমন ভাবলেশহীনভাবে এসেছিলে সেরকমই ভাবলেশহীনভাবে বাড়ির ভেতর চলে গেল। সিঁড়ি বেয়ে সোজা চলে গেছে দুই তলায়। বাম পাশের করিডোর পেরোলেই মাঝখানের রুমটিতে থাকে আমেনা বেগম। মানিসকভাবে সে অসুস্থ। অন্যদের ভাষায় পাগল! আহনাফের যখন ১৭ বছর বয়স তখন থেকেই তার মায়ের এই সমস্যা। সমস্যাটির উৎস অবশ্য এক্সিডেন্টের মাধ্যমে। অনেক ডাক্তার, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছে; তবে অবস্থার কোনো রকম পরিবর্তন হয়নি। আত্মীয়-স্বজনরা অনেকবার বলেছে কোনো পাগলাগারদে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য। তবে আহনাফের জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। পুরো পৃথিবী একদিকে আর অন্যদিকে তার মা। সে অসুস্থ হোক, পাগল হোক, যা খুশি হোক; নিজের কাছেই রাখবে।

আহনাফ দরজায় নক করে বলল,'আসব?'

ভেতর থেকে উত্তর আসে,'কে? আহনাফ? আয় বাবা।'

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে আহনাফ। আমেনা বেগমের মুখে অমায়িক হাসি। কে বলবে এই মানুষটি মানসিকভাবে অসুস্থ? হুট করে কেউ কথা বললে বুঝতেও পারবে না সহজে।

আমেনা বেগম বিছানায় দু'পা মেলে বসে আছেন। হাতে বই। গল্প কিংবা উপন্যাস নয়; কার্টুনের বই। মানসিক সমস্যাটা দেখা দেওয়ার পর থেকেই তার মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তার আচরণ স্বাভাবিক মানুষের মতো তো নয়ই; বরং শিশুসুলভ। কার্টুন তার ভীষণ প্রিয় এখন।

আহনাফ বিছানায় বসে মায়ের কোলে মাথা রাখল। আমেনা বেগম আহ্লাদী হয়ে বললেন,

'আমায় একটা গোপাল ভাঁড়ের কার্টুন এনে দিস তো বাবা। ডোরেমন আর ভালো লাগে না।'

আহনাফ কিছু বলল না। মায়ের হাতে চুমু খেয়ে হাতটি নিজের বুকের ওপর রাখল।
বিছানার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে মুন। ওর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অর্ষা। সকাল এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় মুনের দিকে। মুন পানিটুকু পান করে ঢোক গিলে বলে,

'কখন থেকে দেখছি ঐভাবে তাকিয়ে আছিস। এমন করছিস কেন?'

'তোর নির্বুদ্ধিতা নিয়ে কী বলব বুঝতে পারছি না। হ্যাঁ রে, তোর মাথায় কি একটুও কমনসেন্স নেই। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা বুঝিস না তুই?'

'কী আশ্চর্য! এতদিন পর দেখা হয়েছে। তাই আমি ভাবলাম, তুই তো আর এখন মিথ্যা কথা বলবি না। আবার বাড়ির ঠিকানাও দেখি অন্যটা। তাই তো ধরে নিয়েছিলাম, তোর বিয়ে হয়ে গেছে।'

'উদ্ধার করেছিস আমায়! ঐ মানুষটাকে আমি মুখ দেখাব কীভাবে?'

'আহ্! ঢং। এমন ভাব করছিস, মনে হচ্ছে তুই ঐ বাচ্চাকে না বরং বাচ্চার মামাকেই প্রাইভেট পড়াতে যাস।'

'তুই বুঝবি না। ঐ লোক যে কী রকম ধরণের মানুষ তুই জানিস না।'

'আমার এত জেনে কাজ নেই বাপু। অন্য ছেলেপেলে নিয়ে এত গবেষণা করেই বা আমার লাভ কী? আমার তো একটা নির্দিষ্ট মানুষ আছেই। আর হ্যাঁ, তোর বকাঝকা এখন বন্ধ কর। আমি তোর বাড়ির মেহমান এখন।'

'হু, ঝামেলায় ফেলানো মেহমান।'

সকাল এবার অর্ষাকে থামিয়ে বলল,'হয়েছে তো আপু। এবার থামো। বেচারিকে একটু নিঃশ্বাস তো নিতে দাও।'

মুন বলল,'হ্যাঁ, একটু বুঝাও ও-কে। রাগ, জেদ আগের থেকে আরও বেড়ে গেছে।'

অর্ষা আর কিছু না বলে রান্নাঘরে গেল কিছু খাবার আনতে। যাওয়ার আগে রুহুলের ঘরে একবার উঁকি দিয়েছে। রুম ফাঁকা।

একটা ট্রে-তে চা, বিস্কিট আর মিষ্টি সাজাচ্ছিলেন সেলিনা বেগম। অর্ষা জিজ্ঞেস করল,

'ভাইয়া কোথায়?'

'বাইরে গেছে। কত করে বললাম এই অবস্থায় বাইরে যাস না। শুনলই না।'

'কখন গেছে?'

'তুই যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই।'

অর্ষা এই ব্যাপারে আর কোনো কথা না বলে ট্রে নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো। চা, বিস্কুট খেতে খেতে জানা গেল মুন বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। ওর বয়ফ্রেন্ড ঢাকাতেই থাকে। কাল-পরশু বিয়ে করবে ওরা।

'পালিয়ে আসাটা কি ঠিক হলো আপু?' জানতে চাইল সকাল।

মুন চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,'এছাড়া আর কোনো পথ ছিল না বোন। বাড়িতে আব্বু-আম্মু অন্য এক ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। বয়ফ্রেন্ডের কথা বাড়িতে জানিয়েছিলাম। মা রাজি হলেও, বাবা রাজি হয়নি।'

সকাল ঠোঁট উলটে বলল,'প্রেম ঘটিত ব্যাপার বুঝি এরকমই হয়।'

অর্ষা ধমক দিয়ে বলল,'তোকে আর প্রেম নিয়ে গবেষণা করতে হবে না। যা পড়তে বোস।'

ধমক খেয়ে সকাল পড়তে বসে। অর্ষা ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসেছে। কয়েকটা মেইল এসে জমা হয়েছে। তার মধ্যে আজকের মেইলটা নতুন। পাঁচটার দিকে এসেছে। মুন পাশে বসে বলল,

'রাগ করে থাকবি এখনও?'

মেইল চেক করতে করতে অর্ষা বলল,'দুই বছর কোনো যোগাযোগ রাখিসনি।'

'এজন্য স্যরি তো!'

'তোর এখন সাহায্য দরকার। থাকার মতো বিশ্বস্ত একটা জায়গা দরকার। তাই মানবিকতার খাতিরে সাহায্য করছি। এরচেয়ে বেশি কিছু আশা করিস না।'

'তুই এত নিষ্ঠুর কেন রে অর্ষা?'

'আমি এরকমই। আরও দুই বছর যাক। তখন কথা বলব।'

'আমি আর আমার বয়ফ্রেন্ড আদিব প্ল্যান করেছি যে, আমরা বিয়ের এক বছরের মধ্যেই বাবু নিব। তারপর বাড়ি ফিরে যাব। নাতি-নাতনির মুখ দেখলে বাবা-মা নিশ্চয়ই আর রাগ করে থাকতে পারবে না। এখন তো দেখছি, বান্ধবীর রাগ ভাঙানোর জন্য হলেও বাচ্চা তাড়াতাড়ি নিতে হবেই।'

অর্ষার প্রচণ্ড হাসি পেলেও এই মুহূর্তে হাসিটা আটকে রাখল সে। মেইল চেক করা শেষ। কাল সকালে হাসপাতালে যাবে ইন্টার্ভিউ দেওয়ার জন্য। সিভি পাঠিয়ে রেখেছিল। ওরা ই-মেইল করে ডেকেছে ইন্টার্ভিউ এর জন্য।

সকালের পড়া শেষ হলে রাতের খাবার খেয়ে তিনজনে একসাথে অনেকক্ষণ গল্প করে। সকালের ক্লাস আছে তাই ঘুমিয়ে পড়েছে এখন। মুনও জার্নি করে আসায় ক্লান্ত। দুজনই বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। অর্ষার নিজেরও আগামীকাল তাড়া আছে তবুও ভাইয়ের চিন্তায় ঘুম আসছে না। অনেক রাত অব্দি জেগে থাকার পরও রুহুল বাড়িতে ফেরে না। বাবা কয়েকবার ফোন করেছিল। রিসিভ করেনি। অপেক্ষা করতে করতে কখন যে অর্ষা ঘুমিয়ে পড়েছে টের-ই পায়নি!
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি বাইরে। ভোরের দিকে ঝুমবৃষ্টি এলেও এখন বৃষ্টির তোড়জোড় কমে এসেছে। ছাতা নেবে নাকি নেবে না দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা। ওমর রহমান ঘর থেকে বেরিয়ে মেয়ের দ্বিধান্বিত মুখটি দেখে জিজ্ঞেস করেন,

'কী হয়েছে মা?'

বাবার মুখে 'মা' ডাকটি শুনলেই মনের ভেতর শান্তি পায় অর্ষা। তার মনটা ভালো হয়ে গেল। সে হাসিমুখে বলল,

'কিছু না বাবা।'

'তোর মা বলল আজ নাকি তোর ইন্টার্ভিউ আছে?'

'হ্যাঁ। জেনারেল হাসপাতালে রিসিপশনিষ্ট পদের জন্য সিভি পাঠিয়েছিলাম।'

'যাক, যাক খুব ভালো। তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? দেরি করিস না।'

'আসলে বাবা, আমি ভাবছিলাম ছাতা নেব নাকি নেব না।'

'নিয়ে যা। রাস্তায় যদি আবার বৃষ্টি জোরে আসে তখন তো ভিজে যাবি।'

'ঠিক আছে।'

অর্ষা রুমে গিয়ে ফাইল আর ছাতা নিয়ে বের হয়। বাবা-মায়ের থেকে দো'আ নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চলে যায়। বৃষ্টির সময় প্রতিবার যা হয়, আজও তাই হলো। রিকশা পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার। বাজার পর্যন্ত হেঁটেই যেতে হবে। তারপর বাস ধরতে হবে। কাদা-পানির মধ্যে খুব সাবধানে পা ফেলছে সে। তার পরনে হলুদ রঙের একটা থ্রি-পিস। হলুদ কামিজে আবার হালকা গোলাপী রঙের হাতে আর্ট করা ছোটো ছোটো ফুল। এগুলো সকালের কাজ। দারুণ আঁকাআঁকি করে মেয়েটা। কখনও মায়ের শাড়িতে আঁকবে তো কখনও অর্ষার জামা কিংবা ওড়নাতে। সকাল সময় নিয়ে খুব যত্ন করে জামাটির ডিজাইন করেছে। তাই অর্ষারও খুব প্রিয় এই থ্রি-পিসটা। ওড়নার দু'ধারেও গোলাপী ফুল আঁকা।

ঠিক সময়ে বাস পাওয়াতে মনে মনে আল্লাহকে একটা ধন্যবাদ দিল সে। বাস থেকে নামল পরের স্টপেজে। এখান থেকে আবার রিকশা নিতে হবে। এই রাস্তায় বাস চলাচল করে না। সিএনজি, বাইক, প্রাইভেট কার, রিকশা এসব চলে। অর্ষার জন্য রিকশাই ভরসা। আরেকটু সামনে এগিয়ে রাস্তা পার হয়ে রিকশা নেওয়ার জন্য অর্ষা হাঁটতে থাকে। কিছুটা সামনেই অনেক মানুষের ভিড় দেখে সে এগিয়ে যায়। উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে র'ক্তা'ক্ত অবস্থায় একটি ছেলে রাস্তায় পড়ে আছে। এখনও অচেতন হয়নি। কিছু লোক প্রাইভেট কারের ড্রাইভারকে ধরে বেধড়ক পে'টা'চ্ছে এক সাইডে। অর্ষা ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায়। কয়েকজন লোক ছেলেটিকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কোলে তুলে নিয়েছে। অন্য একটা ছেলে সিএনজি নিয়ে এসেছে। ছেলেটির মুখ দেখে অর্ষা আঁৎকে ওঠে। দু'হাতে মুখ চেপে ধরে মৃদু চিৎকার করে বলে,

'আহিল!'

সে এগিয়ে যায় র'ক্তা'ক্ত আহিলের কাছে। উৎকণ্ঠিত হয়ে ডাকে,

'আহিল, আহিল!'

উপস্থিত একজন অর্ষাকে জিজ্ঞেস করে,'আপনি উনাকে চিনেন ম্যাম?'

অর্ষা তড়িৎ গতিতে মাথা ঝাঁকাল।

লোকটি বলল,'তাহলে আমাদের সাথে আসুন।'

অর্ষা সিএনজিতে উঠে বসল। আহিলকে বসানো হলো ওর পাশে এক হাতে আহিলকে আগলে ধরল অর্ষা। নিজের ওপর কোনো ভারসাম্য নেই আহিলের। এখন সে অচেতন। সম্পূর্ণ ভার অর্ষাকে সামলাতে হচ্ছে। সিএনজি ডেকে আনা ছেলেটি বোধ হয় অর্ষার মুখাবয়ব বুঝতে পেরেই সামনে থেকে পেছনে এসে বসল। এবার সে আহিলকে আগলে ধরল। অর্ষা অবশ্য আহিলের হাত ছাড়েনি। আহিলের একটা র'ক্ত মাখানো হাত অর্ষার কোলের ওপর পড়ে আছে। এই মুহূর্তে অর্ষা ভুলেই গেছে তার যে ইন্টার্ভিউ রয়েছে একটু সময় বাদেই। আতঙ্কে চোখ-মুখের বর্ণই বদলে গেছে তার।

নিকটস্থ একটা হাসপাতালের সামনে সিএনজি থামে। কয়েকজন ধরাধরি করে আহিলকে সিএনজি থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। অর্ষাও পিছু পিছু দৌঁড়ে যায়। তার হলুদ রঙের থ্রি-পিস, হিজাবে এখন র'ক্তে'র ছোপছোপ দাগ। ভেতরে ঢুকে সকল ফর্মালিটি সে-ই পূরণ করে। একবার রিসিপশনে ছুটছে তো, আরেকবার ফার্মেসীতে। হাসপাতালে আসার পর থেকে সে দৌঁড়াদৌঁড়ির ওপরই রয়েছে। দৃশ্যটা দূর থেকেই দেখছিল আহনাফ। সে আমেনা বেগমকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছিল। অর্ষার আপ্রাণ ছুটাছুটি তার দৃষ্টি এড়ায় না।

অর্ষা এখন রিসিপশনের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাইরে তখন ঝুমবৃষ্টি। ঠাণ্ডা আবহাওয়া। তবুও মেয়েটার কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। ফোনের রিংটোনে দৃষ্টি সরায় আহনাফ। প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটি বের করে। কথা শেষ হলে সে একজন পরিচিত নার্সকে ডেকে বলে,

'আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। এক্ষুণী চলে আসব। মাকে একটু দেখে রাখবেন।'

বয়স্ক নার্সটি বলল,'আচ্ছা বাবা।'

হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পূর্বে আর একবার অর্ষার দিকে দৃষ্টিপাত করল আহনাফ। অর্ষা অবশ্য তাকে দেখেনি। রিসিপশনের কাজ শেষ হলে সে আহিলের কেবিনের সামনে গিয়ে বসে। প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এইটুকু সময়েই। বাম হাতের ঘড়িতে একবার সময় দেখল সে। ঠিক তখন একজন সুন্দরী মাঝ বয়সী মহিলা এসে শিশুকণ্ঠে শুধাল,

'আমি কি এখানে বসতে পারি, মা?'

অর্ষা মহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,

'অবশ্যই।'

তিনি বসলেন এবং নিজে থেকেই কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন,

'আমার ছেলে বাইরে গেছে। ও আসলেই আমি চলে যাব।'

মহিলাটির সরলতায় অর্ষা মৃদু হাসল। বলল,

'কোনো সমস্যা নেই।'

এবার সে অর্ষাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করল,

'তোমার কী হয়েছে? গায়ে র'ক্ত কেন? তুমিও কি ডাক্তার দেখাতে এসেছ?'

এতক্ষণে নিজের দিকে ভালোমতো নজর বুলাল অর্ষা। সত্যিই তার থ্রি-পিসে শুকনো র'ক্ত। হাতেও আছে। তখনই তার মনে হলো ইন্টার্ভিউ এর কথা। ঘড়িতে সময় দেখল সে। না, এখন আর গিয়েও লাভ নেই। সে হতাশ ভঙ্গিতে একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। পাশ ফিরে মহিলাটিকে উত্তর দিতে গিয়ে দেখে সে চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছে। অষার প্রচণ্ড মায়া হলো। সে আলতো করে তার মাথাটি নিজের কাঁধের ওপর রাখল। ঘুমের জন্য মহিলাটি নিজের ভর নিজেই ধরে রাখতে পারছিল না। অর্ষা নিজেও বিষয়টি লক্ষ্য করে।

আহনাফ কাজ শেষ করে ফিরে এসেছে। রিসিপশন পার হয়ে ডানদিকে যাওয়ার সময় তার চোখ পড়ে বামপাশের করিডোরে। হলুদ ড্রেস পরা এক মেয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। তার এক হাত চেয়ারের ওপর। মাথা কাৎ করে রাখায়, আঙুলগুলো কপালের ওপর রাখতে পেরেছে। র'ক্ত মাখা হাতের আঙুলগুলো কপালে ম্যাসাজের মতো বিচরণ করছে। তিনটা চেয়ার দখল করে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে তার মা আমেনা বেগম। মাথা রাখা অর্ষার কোলে। পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা মায়ের মুখ থেকে তার দৃষ্টি গিয়ে পড়ল হলুদ ড্রেস পরা সেই ক্লান্ত মেয়েটির দিকে। এবং বলাই বাহুল্য, অনেক অনেকক্ষণ সেই দৃষ্টি আটকে ছিল মেয়েটির মলিন মুখের ওপর।

চলবে...

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

 #যেদিন_তুমি_এসেছিলে #সিজন_২ #পর্ব_২ #মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া__________________প্রচণ্ড এক থা'প্প'ড়ে স্তব্ধ বনে গেছে রিয়াদ। ...
15/09/2022

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_২
#পর্ব_২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
প্রচণ্ড এক থা'প্প'ড়ে স্তব্ধ বনে গেছে রিয়াদ। গালে হাত দিয়ে সে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সকালের দিকে। পাশে থাকা বন্ধুরাও বেশ অবাক সকালের এমন আচরণে। বেশ কয়েকদিন ধরেই সকালকে বিরক্ত করছিল ওরা। প্রতিদিন চুপ থাকলেও আজ আর চুপ থাকতে পারল না।

সকালের চোয়াল শক্ত। সেও আগুনঝরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

'এতক্ষণ তো মুখ দিয়ে খুব গান আসছিল। এখন গান গাইছিস না কেন?'

সন্ধ্যার অন্ধকার দিনের আলোকে গ্রাস করেছে বহু পূর্বেই। সকাল অংক করতে গিয়ে দেখে কলমের কালি শেষ। বাড়িতে এক্সট্রা কলমও নেই। দোকান বাড়ি থেকে কাছেই বিধায় সে নিজেই কলম কিনতে বের হয়েছিল। আর তখনই প্রতিদিনের মতো রিয়াদ ও তার বন্ধুরা সকালকে দেখে গান গাওয়া শুরু করে। এক কথায় উ'ত্য'ক্ত করে। রাস্তার ধারে লোকজন হাঁটাচলা করছে। রিয়াদ পালটা আক্রমণ করতে গিয়েও যেন করতে পারছে না। সেই সময়ে গলির মুখে অর্ষাকে দেখা যায়। সে সকালকে দেখেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে। একবার ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে সকালকে জিজ্ঞেস করে,

'এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কী হয়েছে?'

সকাল চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,'ওদের গান গাওয়ার শখ মিটাচ্ছি। প্রতিদিন আমাকে দেখলেই বিরক্ত করে।'

অর্ষা এবার ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,

'কিরে কলিজা কি খুব বড়ো? মেয়ে দেখলেই গলার সুর বেড়ে যায়?'

ছেলেগুলো নিরুত্তর। অর্ষা বলল,'নেক্সট টাইম থেকে মেয়ে দেখলেই গান গাওয়া বন্ধ করিস। নয়তো থা'প্প'ড়ে কান গরম করে ফেলব।'

এরপর সকালকে নিয়ে অর্ষা বাড়িতে চলে আসে। মেজাজ ঠাণ্ডা হলে সকাল অর্ষাকে জিজ্ঞেস করল,

'রাফিকে পড়াতে কেমন লাগল?'

অর্ষা হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল। তার চোখ বন্ধ। অবস্থার কোনো পরিবর্তন হলো না। সে ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,

'বিরক্তিকর!'

'সেকি! কেন?'

'কেন মানে? ওটা বাচ্চা নাকি রোবট? কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে।'

সকাল হেসে ফেলে। হাসি থামিয়ে বলে,'যখন ফ্রি হয়ে যাবে তখন দেখিস কত মিশুক।'

'আমার আর দেখে কাজ নেই।'

'মানে কী?'

অর্ষা শোয়া থেকে উঠে বসল। ওড়নার সেফটিপিন খুলতে খুলতে বলল,

'মানে আমি আর রাফিকে পড়াতে যাচ্ছি না।'

'এমন করিস না আপু! রেজাল্ট খারাপ হবে ওর।'

'হোক। তাতে আমার কী? বাচ্চাকে নিয়ে আমার যতটা না সমস্যা; তার চেয়ে বেশি সমস্যা বাচ্চার মামাকে নিয়ে।'

'আহনাফ ভাইয়ার কথা বলছিস?'

'হু।'

'সে আবার তোকে কী করল?'

'আরে রাফিকে পড়াতে গিয়ে আমার ঘুম চলে এসেছিল। টেবিলের ওপর মাথা রেখে প্রায় ঘুমিয়েও পড়েছিলাম। তুই তো জানিস, আমার কান আবার পাতলা। কেউ আসছে শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে একটা বই হাতে নিলাম। মানে আমি বোঝাতে চেয়েছি, আমি ভীষণ মনোযোগ দিয়ে বইটা দেখছি। ঘুমের মধ্যে আর খেয়াল করিনি যে, আমি উলটো ধরেছি। উনি আসলো। চুপচাপ কয়েক সেকেণ্ড থেকে যাওয়ার আগে বলল, বই উলটো করে ধরেছেন। সোজা করে ধরে পড়ুন। এভাবে লজ্জা দেওয়ার কোনো মানে হয়?'

পুরো ঘটনা শুনে সকালের হাসি দেখে কে! হাসতে হাসতে কী যেন বলছে। কথাগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। বিরক্তিতে নাক-মুখ কুঁচকে ফেলে অর্ষা। সে সকালকে আর না ঘাঁটিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য। কিছুতেই সেই সময়টুকুর কথা সে ভুলতে পারছে না। এমনভাবে প্রথমদিনই যে অপদস্থ হতে হবে এটা সে কল্পনাতেও ভাবেনি। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছিল। আহনাফ অবশ্য কথাটি বলেই চলে গেছিল। যত যাই হোক, অর্ষা আর যাবে না। ঐ মানুষটার মুখোমুখি সে কিছুতেই হতে পারবে না।

ফ্রেশ হয়ে এসে সে নিজেই চুলোয় চা বসাল। এক কাপ কড়া চা না খেলে তার মাথা ধরা সহজে ছাড়বে না। সেলিনা বেগম রান্নাঘরের লাইট জ্বলতে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসেন।

'কী করছিস?' প্রশ্ন করলেন তিনি।

চুলোয় চায়ের পানি বসিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অর্ষা। মায়ের প্রশ্ন শুনে দরজার দিকে একবার তাকাল। থমথমে মুখে বলল,

'চা করছি। খাবে?'

'আমি খাব না। তোর বাবার জন্য বানা।'

অর্ষা আর কিছু বলল না। সেলিনা বেগম তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সম্ভবত তিনি কিছু বলতে চাচ্ছেন। অর্ষা নিজেও এটা বুঝতে পারে। জিজ্ঞেস করে,

'কিছু বলবে?'

তিনি বললেন,'না।'

পরক্ষণেই আবার কাচুমুচু হয়ে বললেন,'তুই কি রাগ করে আছিস?'

'রাগ করব কেন?'

'আসলে রুহুলটা তো এমনই! তুই তো জানিস...'

মাকে থামিয়ে দিলো অর্ষা। মুখপানে তাকিয়ে বলল,

'তোমার এত সাফাই গাইতে হবে না, মা। তোমাদের ছেলে তোমরা যা ভালো বোঝো করবে। আমার কী তাতে?'

'তুই তো কথাটা রাগ করে বললি।'

'মোটেও না। আমি কথাই বলি এভাবে।'

কথা বলতে বলতে অন্য চুলায় দুধও গরম করে নিয়েছিল অর্ষা। একটা গ্লাসে দুধ ঢেলে মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

'এটা সকালকে দিয়ে আসবে?'

সেলিনা বেগম হাত বাড়িয়ে গ্লাসটি নিলেন। মেয়ের রাগ সম্পর্কে অবগত সে। রুহুলের মতো চেঁচামেচি করে না। তবে রাগের কমতি নেই। যাকে বলে নিরব রাগ। গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তিনি চলে গেলেন। চা বানিয়ে এক কাপ চা ওমর রহমানকে দিয়ে নিজের কাপটি নিয়ে রুমে চলে গেল অর্ষা। বিছানায় পা উঠিয়ে আরাম করে বসে চায়ে চুমুক দিলো।

হায়ার ম্যাথের জটিল অংক কষছিল সকাল। বোনের উপস্থিতিতে বলল,

'আপু আমায় চা দিলি না কেন?'

'সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে তোর। চা খেয়ে রাত জাগা যাবে না। যেটা খেলে কাজে লাগবে সেটাই খা।'

সকাল কিছু বলল না। চা শেষ করে অর্ষা শুয়ে পড়ল। চোখের ওপর হাত রেখে সকালের উদ্দেশ্যে বলল,

'শোন, রাস্তাঘাটে সাবধানে চলবি। সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে একা বের হবি না। কিছু প্রয়োজন হলে আব্বাকে বলবি। রিয়াদ যদি কিছু বলে তাহলে তোর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমাকে এসে জানাবি।'

সকাল এই প্রসঙ্গে কোনো কথাই বলল না। সে বলল,

'তুই কি এখন ঘুমাবি?'

'হু।'

'খাবি না?'

'না। মা ডাকতে এলে বলবি, আমার ক্ষুধা নেই। এখন পড় তুই।'

সকাল অর্ষার কথা অক্ষরে অক্ষরেই পালন করল। পড়া শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়ে। তার ঘুম ভাঙে ফজরের আজানের সময়। অর্ষা হাই তুলতে তুলতে ধাক্কাধাক্কি করছে তাকে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অজু করে দু'বোনে একসাথে নামাজ আদায় করে নেয়। ওমর রহমান মসজিদে গেছেন নামাজ আদায় করার জন্য। সকাল নামাজ শেষ করে পড়তে বসে। অর্ষা চলে যায় রান্নাঘরে মাকে সাহায্য করার জন্য। সেলিনা বেগমকে ভীষণ চিন্তিত দেখাচ্ছিল।

ভাত চড়িয়ে দিয়ে তিনি আনমনে তরকারি কাটছিলেন। অর্ষা রাতের এঁটো থালা-বাসনগুলো ধুয়ে ফেলে। আড়চোখে সে মাকেও লক্ষ্য করছিল। না পেরে জিজ্ঞেসই করে ফেলে,

'কী ভাবছ?'

হঠাৎ প্রশ্ন শুনে তিনি হকচকিয়ে গেলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,

'রুহুল রাতে বাড়িতে ফেরেনি।'

'ফোন করোনি?'

'করেছে তোর বাবা। ফোন ধরেনি।'

'এত চিন্তার কী আছে? চলে আসবে সকালে।'

তিনি ফ্যালফ্যাল করে অর্ষার দিকে তাকিয়ে আছেন। মেয়েটা এত কঠোর স্বভাবের কেন? বাইরে থেকে যেমন কঠোর, ভেতর থেকেও কি তাই?

রুহুল বাড়িতে এলো সকাল আটটায়। সঙ্গে তার বন্ধু তোফায়েল। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়েই তোফায়েল অর্ষার নাম ধরে ডাকতে থাকে। অর্ষা বের হয়ে আসে বারান্দায়। অবিন্যস্ত রুহুলের দিকে দৃকপাত করে তোফায়েলকে জিজ্ঞেস করে,

'কী হয়েছে ভাইয়ার?'

তোফায়েল ও-কে রুমে নিয়ে যেতে যেতে বলল,'রাতে আমার বাসায় ঘুমিয়ে পড়েছিল।'

রুহুলকে শুইয়ে দিয়ে কপালে হাত রাখল অর্ষা। শরীর প্রচুর গরম। গায়ে একটা কাঁথা টেনে দিয়ে সে তোফায়েলের দিকে তাকাল। শান্ত কিন্তু কঠিনভাবে বলল,

'ড্রিঙ্কস করে ঘুমিয়ে পড়েছিল।'

তোফায়েল আমতা-আমতা করে।
'না মানে, আসলে এক বন্ধুর জন্মদিন...'

'জন্মদিনে ম'দ্য'পা'ন করা লাগে আমি জানতাম না।'

'তুমি ভুল বুঝছ অর্ষা।'

'তাহলে সঠিকটা আমায় বুঝিয়ে দিন।'

তোফায়েল চুপ করে রইল। অর্ষা বলল,'আপনাদের মতো বন্ধুদের পাল্লায় পড়েই আমার ভাইটা খারাপ হয়েছে। কথায় আছে না, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ? খারাপ সঙ্গ পেয়েই খারাপ হয়েছে।'

তোফায়েল মাথা নিচু করে রেখেছে। অর্ষাও আর কিছু বলল না। ঘুমন্ত রুহুলের দিকে একবার তাকিয়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
___________

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল আশিক, দিদার আর রেশমি। গেইট থেকেই ওদেরকে দেখা যাচ্ছিল। ভেতরে ঢোকার সময় আহিলের সাথে দেখা হয়ে যায় অর্ষার। আহিল একবার তাকিয়েই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। যেন সে কস্মিনকালেও অর্ষাকে দেখেনি কখনও। আহিল যতটা পারছিল এই গ্রুপটা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছিল। অপরদিকে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অর্ষা নিজেও ঠিক এটাই করছিল। তবে আশিক, দিদার, লামিয়া, রেশমি এবং জুঁইকে এড়িয়ে চলা ভীষণ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছিল। আশিক তো পারে না শুধু আহিলের গলায় ঝুলে যেতে। বিরক্ত হলেও ভদ্রতার খাতিরে মুখ বুজে সব সহ্য করে যাচ্ছে সে। উপরন্তু অর্ষাও পারছে না কিছু বলতে। অর্ষা, আহিল এমনভাবে দুজন দুজনের দিকে তাকায় মনে হচ্ছিল ওরা একজন আরেকজনের প্রতিদ্বন্দ্বী।

দুটো ক্লাস করে ওরা ক্লাসে বসে আছে। স্যার সম্ভবত আসেনি নাকি আসবে না বুঝতে পারছিল না। রেশমি তখন আশিককে বলে,

'আশিক একটা কবিতা শোনাও।'

খুশিতে গদগদ হয়ে যায় আশিক। কেশে গলা পরিষ্কার করে বলে,

'তুমি আমি ফুলের কাঁটা
মা দেখলে মারবে ঝাঁটা,
বন্ধু তুই সরে দাঁড়া;
মায়ের রাগে আমি দিশেহারা।'

কবিতা শুনে শুধু যে রেশমি হাসল তা নয়, যারা যারা শুনেছে প্রত্যেকে হেসে ওঠে। আহিল চোয়াল শক্ত করে বলে,

'এসব উদ্ভট কবিতা তোমার মাথায় আসে কী করে?'

আশিক চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলে,'কী বলছ ব্রো! এগুলো উদ্ভট নয়, অ্যামাজিং বলো।'

'অ্যামাজিং নয় বরং অ্যামাজন বলা যায়।'

আশিক দমে গেল না। মুচকি হেসে আহিলের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

'রাগ করে না সন্টু টোনা
এনে দেবো কাপড়ের ঝোলা,
কাপড়ের ভেতর আমের বাটি;
তোমায় দেবো আমের আঁটি।
রাগ করলে তাও দেবো না
দেবো তোমায় সুড়সুড়ি।'

কবিতা শুনে আহিলের অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। অর্ষা এবার আর হাসি লুকিয়ে রাখতে পারল না। সে নিজেও আশিকের প্রসংশা করল হাসতে হাসতে। এবং বলাই বাহুল্য, এত অল্প সময়েই ক্লাসের সবাই আশিককে বেশ পছন্দ করে ফেলেছে। আহিল এতক্ষণ লক্ষ্য করছিল অর্ষার বিরক্ত হয়ে থাকা মুখখানা। কিন্তু যেই না তাকে এখন হাসতে দেখল, রাগে শরীর জ্বলে গেল তার।

সে দাঁতে দাঁত চেপে বাকি ক্লাসগুলো করে। খুব চেষ্টা করছিল নিরব থাকার। ওদের সাথে কোনো রকম বাক্যবিনিময় না করে বোবা হয়ে থাকাকেই সে ঢের ভালো বলে মনে করে। ক্লাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আহিল কেটে পড়ে। ওদিকে অর্ষাও তাড়া দেখিয়ে বিদায় নিয়ে নেয়।

বাসায় ফিরে দেখে রুহুলের জ্বর তখনও কমেনি। কাঁথা গায়ে দিয়ে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। জ্বর না এলে এই সময়ে ভু্লেও তাকে বাড়িতে পাওয়া যেত না। বাড়িতে ঠিকমতো খায়ও না। সকালে হালকা নাস্তা করে সেই যে বের হয়, তারপর আর কোনো খোঁজ-খবর নেই। বাড়ি ফেরে রাত করে। এভাবে ভবঘুরে হয়েই তার দিন কাটছে। বিছানায় বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অর্ষা। তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক। দরজায় দাঁড়িয়ে লুকিয়ে দৃশ্যটি দেখেন সেলিনা বেগম। রুহুলের ঘুমন্ত মুখটা দেখে অর্ষার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। সে রুদ্ধশ্বাসে বলে,

'কেন এভাবে বদলে গেলি ভাইয়া? আগের মতো হয়ে যা না!'

রুহুল ঘুমের ঘোরেই নড়েচড়ে ওঠে। নিজেকে সামলে নেয় অর্ষা। ঘুম ভাঙার আগেই তড়িঘড়ি করে সে নিজের রুমে চলে যায়। একবার পেছনে তাকালেই দেখতে পেত সেলিনা বেগম তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রয়েছে।

অর্ষা দুপুরে গোসল করে, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গতকালের মতো আজও তার ঘুম বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সকাল কলেজ থেকে ফিরেই ঘ্যানঘ্যান শুরু করে দিয়েছে। তার মেজাজ খারাপ হলেও সকালকে ধমকে দিতে পারল না। শুধু মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,

'চাকরিটা হয়ে গেলেই আমি আর ও-কে পড়াতে যাব না।'

সকাল দাঁত বের করে হেসে বলল,'ঠিক আছে।'

খিটখিটে মেজাজ নিয়ে রেডি হয়ে অর্ষা বেরিয়ে পড়ে। সরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পথ থেকে একটা মেয়েলী কণ্ঠে নিজের নাম শুনে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। রিকশা থেকে নেমে একটা মেয়ে ব্যাগ হাতে এগিয়ে আসছে। ব্যাগটা বেশ বড়োসড়ো। মেয়েটা কাছে আসার পর একটু অবাকই হলো অর্ষা। অস্ফুটস্বরে বলল,

'মুন!'

মুন অর্ষার হাই স্কুলের ফ্রেন্ড ছিল। একসাথে ওরা ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছিল। সেই সময়টা ছিল প্রজাপতির রঙিন ডানার মতো। হাসি-আড্ডা সব মিলিয়ে সুন্দর অতীত ছিল। সময়ের বিবর্তনে বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ কমে এসেছে। বেশিরভাগ বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যাওয়াতে তারা প্রত্যেকেই এখন সংসার, সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। তবে মুনের বিষয়টা এখানে আলাদা। এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্টের পর হুট করেই মেয়েটা উধাও হয়ে যায়। মাস খানেক পর ওর বাবা-মা'ও গ্রামে চলে যায়। মুনের যেই নাম্বারটি অর্ষার কাছে ছিল সেই নাম্বারে বারংবার ফোন করেও মুনকে পাওয়া যায়নি। কারণ নাম্বারটি বন্ধ ছিল। আজ দুই বছর পর মুনকে দেখে খুশি হওয়ার বদলে অর্ষার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। কথা বলার বিন্দুমাত্র আগ্রহও সে খুঁজে পাচ্ছে না। এটা অনাগ্রহ নাকি অভিমান সেই প্রশ্নও রয়ে যায়। মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে বলে ঘুরে দাঁড়ানোর পূর্বেই হাতের ব্যাগটা মাটিতে রেখে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে মুন। খুশিতে আহ্লাদিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

'কেমন আছিস?'

অর্ষা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,'ভালো।'

'তোর মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? রাগ করে আছিস?'

অর্ষার শরীরটা জ্বলে যাচ্ছিল। এভাবে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে এখন আবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে রাগ করেছিস! নাটক! অর্ষা নিরুত্তর রইল।

'যাচ্ছিস কোথায়?' জানতে চাইল মুন।

অর্ষা কাঠ কাঠ গলায় বলল,'শ্বশুরবাড়ি।'

মুন অবাক হয়ে বলল,'হোয়াট! সত্যিই? তুই বিয়ে করে ফেলেছিস? আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমি তো আরও তোর বাড়িতে যাচ্ছিলাম এখন।'

অর্ষা এবার নিজে থেকে প্রশ্ন করল,'কেন?'

'সে অনেক কথা। কিন্তু এখন আমার হাতে এত সময় নেই। একটা জায়গায় যেতে হবে আগে।' বলে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে নিজের ফোনটি বের করল। তাড়া দিয়ে বলল,

'তোর ফোন নাম্বারটা বল।'

অর্ষা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তখনও দাঁড়িয়ে ছিল। মুন ফের তাড়া দিয়ে বলল,

'কী হলো? বল।'

নাম্বার দিলো অর্ষা। অভিমানকে প্রশ্রয় দিলেও এতদিনের বন্ধুত্বকে একেবারে দূরে সরিয়ে দেওয়াটা তার পক্ষে সম্ভবপর হলো না কিছুতেই। মুন এবার নিজের সেই বড়ো ব্যাগটি অর্ষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

'ব্যাগটা একটু নিয়ে যা প্লিজ! আমি ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই চলে আসব। তোকে ফোন করব।'

অর্ষা কী বলবে বুঝতে পারল না। মুন অবশ্য উত্তরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েও নেই। সে অন্য একটি রিকশা ডেকে উঠে পড়েছে। রিকশাটি চোখের আড়াল হওয়ার পর ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় অর্ষা। হাতে থাকা ব্যাগটির দিকে একবার তাকিয়ে বলে,

'কপাল!'

বাধ্য হয়ে ব্যাগ নিয়েই সে রাফিকে পড়াতে চলে যায়। রাফি গম্ভীর হয়ে বসে আছে অর্ষার সামনে। আজকে আবার কোন নাটক করবে কে জানে!

অর্ষা নিজেও একটু কঠিন হওয়ার চেষ্টা করে বলল,'আজকে একদম কোনো বাহানা বের করবে না। বই বের করো। আর হ্যাঁ, কাল যেই কবিতাটি পড়িয়ে ছিলাম; মনে আছে?'

রাফি গম্ভীরমুখেই উপর-নিচ মাথা নাড়াল।

'গুড। ঝটপট কবিতাটি লিখে ফেলো।'

'কেন? তুমি আবার ঘুমাবে?'

অর্ষা থতমত খেয়ে বলে,'ঘুমাব মানে?'

'কালও তো আমি লেখার সময় ঘুমালে।'

'কী আশ্চর্য! আমি ঘুমিয়েছি নাকি? চোখটা একটু লেগে এসেছিল এই যা!'

'তুমি ফাঁকিবাজ।'

অর্ষা চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,'আমি ফাঁকিবাজ?'

'হ্যাঁ। মামা মাকে বলেছে, ফাঁকিবাজ ছাত্রের ফাঁকিবাজ ম্যাম। তোমার জন্য আমারও বদনাম হচ্ছে। সকাল ম্যাম খুব ভালো। তোমার মতো পড়াতে এসে ঘুমায় না।'

অর্ষার চোয়াল ঝুলে আছে। মুখ কিঞ্চিৎ হা। পরক্ষণেই যেন মেজাজ চটে গেল তার। একটু না হয় ঘুমই চলে এসেছিল, তাই বলে তাকে ফাঁকিবাজ উপাধি দিতে হবে?

রাগে গজগজ করতে করতে অর্ষা জিজ্ঞেস করল,'সত্যিই তোমার মামা আমায় ফাঁকিবাজ বলেছে?'

রাফি আবারও উপর-নিচ মাথা ঝাঁকাল। অর্ষা না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। উভয়সংকটে আছে সে। চলে যাবে নাকি রাফিকে পড়াবে বুঝতে পারছে না। সকালের কথা ভেবেই নিজেকে এবং রাগকে ধাতস্থ করল সে। বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে নিজেকে বলল,

'কাম ডাউন অর্ষা। কাম ডাউন!'

রাফির দিকে তাকিয়ে বলল,'তুমি লেখা শুরু করো। আমি যে ফাঁকিবাজ নই, সেটার প্রমাণ এখন থেকেই পাবে তোমার মামা।'

রাফি কিছু বলল না। খাতা-কলম বের করে চুপচাপ লিখছে। রাফিকে পড়ানোর মাঝেই মুনের ফোন আসে। এই বাড়ির ঠিকানাটাই টেক্সট করে দেয় অর্ষা। রাফিকে পড়িয়ে দুজনে একসাথে বাড়িতে ফিরবে।
মিনিট দশেক পর আহনাফদের বাড়ির সামনে একটা রিকশা থামে।রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাড়িটির দিকে একবার তাকাল মুন। বিশাল জায়গাজুড়ে দু'তলা ভবনের একটি সুন্দর বাড়ি। বাড়ির সামনে এবং দু'ধারে অনেক ধরণের গাছ-গাছালি রয়েছে। ফল আর ফুলের গাছই বেশি। বাড়ির ভেতর ঢুকতে যাওয়ার সময় দারোয়ান পথ আটকে জিজ্ঞেস করে,

'কাকে চাই?'

মুন মুচকি হেসে বলল,'অর্ষার কাছে যাব।'

'এই বাড়িতে অর্ষা নামে কেউ থাকে না।'

মুন একটু অবাক হলো। এরপর দ্বিধান্বিত মনে অর্ষার পাঠানো ঠিকানার সাথে বাড়িটির ঠিকানা মিলিয়ে নিল। না, ভুল তো হয়নি। এই বাড়িটাই। এবার সে দৃঢ়কণ্ঠে বলল,

'অর্ষা এই বাড়িতেই থাকে। এইযে ও আমায় ঠিকানা পাঠিয়েছে।'

দারোয়ানও বলল,'আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।'

'আমার কোনো ভুল হচ্ছে না। এই বাড়িতেই অর্ষা থাকে।'

বাড়ির বাগানে হাঁটছিলেন জহির চৌধুরী। দারোয়ান এবং মুনের বাকবিতণ্ডা দেখে এগিয়ে আসেন এদিকে। একবার মুনের দিকে তাকালেন তিনি। এরপর দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলেন,

'কী হয়েছে?'

দারোয়ান শীতল কণ্ঠে বলল,'স্যার, মেয়েটা বলছে অর্ষার কাছে যাবে। কিন্তু এই নামে তো এই বাড়িতে কেউ থাকে না। মেয়েটি বিশ্বাসই করছে না।'

জহির চৌধুরী এবার মুনকে জিজ্ঞেস করলেন,'কে তুমি?'

'আঙ্কেল, আমি মুন। অর্ষার বান্ধবী। অনেকদিন পর ওর সাথে দেখা হয়েছে। ও-ই আমাকে ওর শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা দিয়েছে।'

জহির চৌধুরী যারপরনাই অবাক হলেন এবার। অবাক হয়েছে দারোয়ানও। জহির চৌধুরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

'শ্বশুরবাড়ি মানে! এটা তোমার বান্ধবীর শ্বশুরবাড়ি?'

'জি। কিন্তু আপনি কে? এই বাড়ির কেউ? বাড়ির কেউ হলে অর্ষাকে কেন চিনতে পারছেন না বুঝলাম না।'

'তুমি শিওর এটা অর্ষার শ্বশুরবাড়ি?'

'আলবৎ!'

জহির চৌধুরী এবার একটু থমকালেন। কিছুক্ষণ আগে দুই তলা থেকে তিনি একটা মেয়েকে ব্যাগ হাতে ভেতরে ঢুকতে দেখেছেন। তাহলে কি আহনাফ লুকিয়ে বিয়েটিয়ে করে ফেলেছে? নিজের এই চিন্তা-ভাবনাকে তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। মুনকে একটু অপেক্ষা করতে বলে তিনি দারোয়ানকে পাঠালেন আহনাফকে ডাকার জন্য। দারোয়ান আহনাফকে সঙ্গে করেই ফিরে এলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আহনাফ মুন এবং বাবার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

জহির চৌধুরী মুনকে জিজ্ঞেস করলেন,'ও-কে চিনতে পেরেছ?'

মুন আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল,'না। কে উনি?'

'আমার একমাত্র ছেলে। তোমার ভাষ্যমতে অর্ষা যদি এই বাড়ির বউ হয়ে থাকে, তাহলে অর্ষার স্বামীই এই ছেলে।'

মুন সালাম দিয়ে হাসিমুখে বলল,'আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই। ভালো আছেন?'

বিস্ময়ে হা হয়ে যায় আহনাফের মুখ। সে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে মুনের দিকে। ভ্রুঁ কুঁচকে আছে তার। বিস্ময়ে অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,

'দুলাইভাই!'

চলবে...
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]

Address

Haluaghat Upazila

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Golpo kotha - গল্প কথা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share