24/08/2025
বাবরী মসজিদ তথা অযোধ্যা মামলায় মুসলমান পক্ষের উকিল ছিল একজন হিন্দু! কিন্তু বিস্ময়কর তার যুক্তি
:
ড. রাজীব ধবন একজন হিন্দু উকিল কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষ ও মানবতাবাদী মানুষ। বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দির মামলায় রামকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলো!
অযোধ্যা-মামলার শুনানীর সময় কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল, যার জবাব সরকারী উকিলের কাছে ছিল না। কিছু প্রশ্ন ছিলো নিম্নরূপ:
(১) একই সময়ে দু’রকমের মানুষ কি করে হতে পারে? এক – পুচ্ছধারী, আর এক লেজবিহীন?
দু’ধরনের মানুষই মানুষের ভাষায় কথা বলে, দুইজনেরই পিতা রাজা,- এটা কি করে সম্ভব?
(২) ব্যাঙ থেকে মন্দোদরী কি করে হয়ে যায়/ কি করে জন্ম হতে পারে?
(৩) ল্যাঙটের দাগ ছাড়াতে গিয়ে কি করে অঙ্গদের জন্ম হতে পারে?
একটা পাখী কি করে মানুষের মত কাজ করতে পারে,- যেমন “গিধরাজ” – জটায়ু/গরুড়?
(৪) কোনো মানুষের দশটা মাথা হতেই পারে না। আজ পর্যন্ত ইতিহাস বা পুরাতত্ত্ব দিয়ে এটা প্রমাণ হয়নি যে কোনো মানুষের দশটা মাথা বা কুড়িটা হাত থাকতে পারে?
(৫) যে লঙ্কার কথা আপনারা বলছেন , তার নাম ইংরেজি ১৯৭২ সালে লঙ্কা হয়েছে। তার আগে ছিল সিলোন, আবার সিলোনের আগে ছিল সিংহলা, ইত্যাদি নাম ছিল। তো আসল লঙ্কা কোথায়?
(৬) একটা কলসী থেকে একটা মেয়ের জন্ম কি করে হতে পারে?
এক মাসের মধ্যে মকরধ্বজের কি করে জন্ম হতে পারে? এক মাসেই মকরধ্বজ পাতালপুরীতে চাকরি করতে লেগে গেল। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, তবে প্রমাণ করুন।
একটা মাছের থেকে মানুষ কি করে জন্মাতে পারে?
(৭) ৫০০০ সাল পুরানো দ্রাবিড় ভাষা তো কেউ পড়তে পারে না। তো, ৭০০০ সাল পূর্বে অঙ্গদের ভাষা কি ছিল?
(৮) সম্রাট অশোকের কালে অযোধ্যার নাম ছিল সাকেত। অযোধ্যার পরে সাকেত, সাকেতের পরে অযোধ্যা নাম কি করে হল?
পুরাতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে একটাও প্রমাণ যদি থাকে, তো বলুন যে রামরাজ্য ছিল!
(৯) সাত ঘোড়া নিয়ে সূর্য্য কি করে চলে? আপনার বইয়ে বলছে। যেখানে বিজ্ঞান বলছে সূর্য্য চলেই না।
রামের রাজ্যাভিষেক যখন হচ্ছিল, সুর্য্য এক মাসের জন্য থেমে গিয়েছিল,- আপনাদের বইয়ে লেখা আছে।
সূর্য্য যখন চলেই না। যদি সুর্য্য চলেই থাকে তো প্রমাণ করুন!
(১০) সূর্য্যকে হনুমান খেতে গেল, বগল দাবা করল, তো হনুমানের ‘স্পীড’ – গতি আর সাইজ কত বড় ছিল?
যে হনুমান সূর্যের আগুনে পুড়ে যেতে পারে না, সে লেজের আগুনে কি করে পুড়ে যায়?
(১১) বাল্মিকী রামায়ন বলছে যে চৈত্র-অমাবস্যায় রাবণ বধ হয়েছিল। আবার, তুলসিদাসী রামায়ণে লেখা, দশেরার দিন রাবণ বধ হয়। কোনটা সত্যি?
(১২) ৪০০০ বছর হল সোনা আবিষ্কার হয়েছে। তো, ৭০০০ বছর আগে সোনার লঙ্কা কোথা থেকে এল?
সোনার গলনাঙ্ক হল ৩০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের চেয়ে বেশি। তা হলে বলুন— লেজের আগুন এত বেড়ে গেল কি করে?
সোনার মহল ছিল, না সোনার লঙ্কা ছিল ?
৬০০০বছর আগে সবাই চামড়ার পোষাকই পড়তো, তো ৭০০০বছর আগে রাম কি করে কাপড়ের পোষাক পড়তেন?
(১৩) ব্রহ্মার মুখ থেকে যখন ব্রাহ্মণ জন্ম নিল, তো শুধু ভারতেই কেন জন্ম নিল? ব্রহ্মা যখন ব্রহ্মান্ডই বানিয়েছেন,
তখন – চীন, আমেরিকা, ব্রিটেন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি দুনিয়ার বাকি দেশগুলিতে কেন ব্রাহ্মণ জন্মায় নি, বা জন্মায় না? আজও কি ব্রাহ্মণ মুখ থেকেই জন্মায়, না কি জননাঙ্গ থেকে?
(১৪) ওটা কি ধরণের সফটওয়্যার ছিল, যা দিয়ে জানা যায় যে, সীতা লক্ষ্ণন-রেখা পার করলে কিছুই হবে না, কিন্তু রাবণ পার হলেই জ্বলে ওঠে?
(১৫) যে ধনুকটা রাবণ উঠাতে পারেনি, সেই ধনুক উঠাতে যে পারে সেই সীতাকে রাবণ কি করে উঠিয়ে নিল?
এমন হাজারো প্রশ্ন করা যায়৷ অযোধ্যা মামলার শুনানিতে এই রকম প্রশ্ন উঠেছে, যার জবাব সরকার পক্ষ বা প্রত্নতত্ত্ব-বিভাগ দিতে পারেনি। আপনিও জবাব দিতে পারবেন না৷ মহাকাব্যের একটি চরিত্র রাম৷ তাকে সত্য ধরে মূর্খরা যা করছে তা লজ্জাকর৷
ড. রাজীব ধবন বাবরি মসজিদ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে মুসলিম পক্ষের হয়ে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, তার মধ্যে কয়েকটি সবচেয়ে আলোচিত যুক্তি নিচে দেওয়া হলো—
:
বাবরি মসজিদ ১৫২৮ সালে নির্মিত হওয়ার পর থেকে শত শত বছর মুসলমানরা সেখানে নামাজ আদায় করে আসছে।
এত দীর্ঘকাল ব্যবহার ও দখলের কারণে এটি স্পষ্টতই ওয়াকফ সম্পত্তি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মালিকানায়।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত বাবরি মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়ার সরকারি দলিল, নথি ও সাক্ষ্য আদালতে তুলে ধরেন।
১৯৪৯ সালে রাতে মসজিদের ভেতরে গোপনে রামলালা মূর্তি স্থাপন করার আগে পর্যন্ত মসজিদ হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছিল।
তিনি যুক্তি দেন, “কোনো জায়গা কেবল বিশ্বাস বা পুরাণে উল্লেখ থাকার কারণে মালিকানা হয়ে যায় না।”
আদালতে স্পষ্ট করেন যে জমির মালিকানা আইনি প্রমাণের ওপর নির্ভর করবে, কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসে নয়।
১৯৪৯ সালে রামলালা মূর্তি গোপনে স্থাপনকে তিনি “অবৈধ ও ষড়যন্ত্রমূলক কাজ” হিসেবে দেখান।
১৯৯২ সালে মসজিদ ভাঙাকে তিনি “আইনের শাসনের চরম লঙ্ঘন” বলেন।
তিনি যুক্তি দেন, ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে।
রাষ্ট্র বা আদালত কোনো একটি ধর্মবিশ্বাসকে অন্যটির ওপরে স্থান দিতে পারে না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, হিন্দু পক্ষ কোনো সময় জমির বৈধ মালিক ছিল না।
শুধু বিশ্বাস বা জনশ্রুতি দিয়ে প্রমাণ হয় না যে, সেই স্থানে রামের জন্ম হয়েছিল।
:
দীর্ঘদিন ধরে টানা যুক্তি উপস্থাপন করার জন্য তিনি বারবার শারীরিকভাবে ক্লান্ত হলেও মামলা থেকে সরে আসেননি। হিন্দু হয়েও মুসলিম পক্ষের হয়ে দাঁড়ানোয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণ ও হুমকির শিকার হন। তাঁর যুক্তিগুলো মামলার ইতিহাসে অন্যতম সেরা আইনগত ব্যাখ্যা হিসেবে ধরা হয়। বিচারক স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, বাবড়ি মসজিদ কোনো মন্দিরের ওপর স্থাপনের কোনো প্রমাণ মিলেনি।