12/05/2025
সাল, একাত্তর।
কুষ্টিয়া জেলার জীবন নগর থানার সানহুদা গ্রাম। দুইজন বিবাহিত যুবতী, যাদের বয়স আঠার পার হলো সদ্য। এক দুপুরে দেখা গেল দুইজন যুবতীই নগ্ন ছুটে বেড়াচ্ছে গ্রামের এদিক-ওদিক। পেছন পেছন রাইফেল হাতে ছুটছে মিলিটারির দল। বন্দুক সামনে রেখে তারা এই দুই যুবতীকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে সারা গ্রাম ঘুরালো, ধর্ষণ করল, তারপর অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখলো সন্ধ্যার দিকে।
এই বীভৎস ঘটনা ছাপা হয়েছিল তৎকালীন ভারত থেকে প্রকাশিত যুগান্তর পত্রিকায় 'পাকিস্তানে নারীত্বের চরম লাঞ্ছনা' শিরোনামের একটা প্রতিবেদনে, মে মাসের বারো তারিখ। আর অক্টোবরের পঁচিশ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন জানিয়েছিল, ঢাকার একটি সামরিক ক্যান্টনমেন্টে আটকে রাখা হয়েছে পাঁচশো তেষট্টিজন নারী। যাদের প্রত্যেকেই প্রেগন্যান্ট৷ গর্ভপাত করানো সম্ভব না। এই রিপোর্ট লিখেছিলেন, ডান কলিন। স্বচক্ষে দেখা ঘটনা তার।
যারা ক্রিকেট খেলায় পাকিস্তান সাপোর্ট করে, একসময় আমি তাদের আনফ্রেন্ড করে দিতাম। এখন করি না। পুরো বিষয়টা রাজনীতির বাইরে থেকে দেখার চেষ্টা করি৷ নিছক একটা খেলা। টাইম পাস। বিনোদন। যে যেমন ইচ্ছে পক্ষ নিক, যে কারোর। শুধু আমি নিতে পারি না পক্ষ। না বাবর আজমের সঙ্গে আমার শত্রুতা, না আফ্রিদি, না ওদের ক্রিকেট বোর্ড। ওদের জনসাধারণের উপরও আমার কোনো ক্ষোভ নাই, ঘৃণা নাই।
আমি শুধু 'পাকিস্তান' দেশটাকে ঘৃণা করি। প্রচণ্ড ঘৃণা। এই যে একটা ট্রমা ওরা দিয়ে গেল, পাকিস্তানের সরকার ও আপামর জনসাধারণ সবাই যদি বাংলাদেশের জমিনে হাত রেখে ক্ষমা চায়, চোখের পানি ফেলে, মন থেকে অনুতপ্ত হয়- তারপরও এই ট্রমা যাবে না। তারপরও 'পাকিস্তান' নাম শুনলেই আমার চোখে ভেসে উঠবে দুইজন নগ্ন যুবতী। যারা প্রাণভয়ে ছুটছে গ্রামের একটা মেঠোপথ ধরে। পেছন পেছন বন্দুক হাতে ছুটছে একদল শুয়োর। যারা ও যাদের এই দেশীয় উত্তরসূরীরা আজও মনে করে, এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার!
©