29/06/2025
বানর খেক উপজাতি
বানর খেক উপজাতি একটি কল্পিত বা লোককাহিনিভিত্তিক গোষ্ঠীর নাম, যার মূল উৎস বিভিন্ন পাহাড়ি ও জঙ্গলের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা কিংবদন্তি ও জনশ্রুতি। এই উপজাতির নাম শুনলেই মানুষের কল্পনায় ভেসে ওঠে একধরনের রহস্যময়, বন্য পরিবেশে বসবাসকারী, সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষের চিত্র—যারা বানর শিকার করে এবং খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
এই উপজাতির নাম ‘বানর খেক’ শব্দটি মূলত এসেছে ‘বানর খাওয়া’ অর্থ থেকে। যদিও এমন কোনো উপজাতি আধুনিক নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় বা বাস্তব ইতিহাসে প্রমাণিত হয়নি, তবে বিভিন্ন অঞ্চলের পুরনো লোককথা, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার কিছু পাহাড়ি অঞ্চলে, এমন একটি উপজাতির কথা শোনা যায়। এগুলো সাধারণত মৌখিকভাবে ছড়িয়ে পড়া গল্প, যেখানে এই উপজাতিকে খুব ভীতিকর ও বন্য রূপে উপস্থাপন করা হয়।
লোককাহিনিতে চিত্রণ:
বানর খেক উপজাতিকে লোককাহিনিতে প্রায়শই বনের গভীরে বাস করা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, রাতের অন্ধকারে শিকার করা এবং বানরের মাংস খাওয়ার জন্য পরিচিত এক গোষ্ঠী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তাদের সম্পর্কে বলা হয়, তারা নাকি শুধুই বানর নয়, অন্য প্রাণী এমনকি পথভ্রষ্ট মানুষকেও শিকার করে। এই ধরনের গল্প সাধারণত ছোটদের ভয় দেখানোর জন্য কিংবা বনাঞ্চল থেকে দূরে রাখার জন্য তৈরি ও প্রচার করা হতো।
বাস্তবতার ছোঁয়া:
বাস্তবে, পৃথিবীর অনেক উপজাতি সম্প্রদায় বনজীবী এবং তারা বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী শিকার করে থাকে। আফ্রিকার কিছু অংশে, যেমন কঙ্গো বেসিনে বসবাসকারী কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়, বানর সহ অন্যান্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী খায়। একইভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু উপজাতির মধ্যেও বানর বা প্রাইমেট খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। তবে তাদেরকে "বানর খেক উপজাতি" নামে ডাকাটা একধরনের বহিরাগত দৃষ্টিভঙ্গি বা অপবাদ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ:
যেকোনো জাতি বা উপজাতির খাদ্যাভ্যাস তার প্রাকৃতিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতার ওপর নির্ভর করে। তাই কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী যদি বানর খায়, তবে সেটা তাদের জন্য স্বাভাবিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু বাইরের সমাজ সেই আচরণকে অস্বাভাবিক বা ভয়ংকর মনে করে এবং এক ধরণের কাল্পনিক 'বানর খেক উপজাতি' ধারণা তৈরি করে।
উপসংহার:
বানর খেক উপজাতি মূলত এক ধরনের লোকজ গল্পের সৃষ্টি, যার বাস্তব ভিত্তি তেমন নেই। এটি একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর ও ভীতিকর গল্পের অংশ, অন্যদিকে এটি সমাজের ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের ভুলভাবে চিহ্নিত করার একটি দৃষ্টান্তও হতে পারে। বাস্তব সমাজে এমন কোনো নির্দিষ্ট উপজাতির অস্তিত্ব নেই, যারা শুধুমাত্র বানর খেয়ে থাকে এবং যার পরিচয় “বানর খেক” নামে স্বীকৃত। তবে এই ধরনের গল্প মানুষের কল্পনার জগতে আজও জায়গা করে আছে।