19/08/2025
“আমি চির-বিদ্রোহী বীর, বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির।”
🔴কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। ছোটবেলায় আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই দুর্বল। জীবিকার তাগিদে অল্প বয়সেই মসজিদের ইমামতির কাজ করেছেন, লেটো দলে গান লিখেছেন ও গেয়েছেন। এখান থেকেই তাঁর সাহিত্য ও সংগীতচর্চার সূচনা।
🔴১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সৈনিক জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও তেজী করে তোলে। এই অভিজ্ঞতাই পরে তাঁর কবিতায় বিদ্রোহের আগুন জ্বালায়।
১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর কবিতা “বিদ্রোহী” তাঁকে এনে দেয় “বিদ্রোহী কবি” উপাধি।
তিনি লিখেছিলেন—
“আমি চির বিদ্রোহী বীর – বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির।”
🔴নজরুল ছিলেন এক বহুমুখী প্রতিভা। কবিতা, গান, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ—যে মাধ্যমেই তিনি লিখেছেন, সেখানে বিদ্রোহ, প্রেম, মানবতা ও সাম্যের কথা বলেছেন।
🔴কাব্যগ্রন্থ:
অগ্নিবীণা
সঞ্চিতা
বিষের বাঁশি
দোলনচাঁপা
🔴উপন্যাস:
বাঁধনহারা
মৃণালিনী
কুহেলিকা
🔴নাটক:
ঝাঙ্কার
পুতুলের বিয়ে
🔴গান:
তিনি প্রায় ৪,০০০+ গান লিখেছেন ও সুর করেছেন। নজরুলসংগীতে আছে ভক্তি, প্রেম, বিদ্রোহ, ইসলামি সংগীত, শ্যামা সংগীত, কীর্তন—সবকিছু।
👉 তাঁকে বলা হয় “বাংলার গানের ঝংকার”।
🔴 রাজনীতি ও কারাবাস
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তাঁর কলম ছিল অগ্নিময়। “ভাঙার গান”, “দারিদ্র্য”, “বিদ্রোহী”, “কান্ডারী হুঁশিয়ার” কবিতায় তিনি সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।
এর জন্য তাঁকে বহুবার কারাবাস করতে হয়েছে। জেলে থেকেও তিনি লিখেছিলেন—
“কারার এ লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট।”
🔴তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক – হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কণ্ঠস্বর।
নারী স্বাধীনতা ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিয়ে প্রথম কলম ধরেন।
সাহিত্য ও সংগীতে সমানভাবে অবদান রাখেন।
🔴১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ তাঁকে এনে দেয় জাতীয় কবির মর্যাদা।
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক ও ভারতের সরকার পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রদান করে।
ঢাকার নজরুল ইসলাম হল, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল একাডেমি তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত।
তাঁর লেখা আজও বাংলার মানুষকে জাগিয়ে তোলে।
🔴কাজী নজরুল ইসলাম শুধু একজন কবি নন, তিনি ছিলেন মানবতার কণ্ঠস্বর, বিদ্রোহের আগুন, সাম্যের প্রতীক। তাঁর কলমে যেমন প্রেম ও ভক্তি, তেমনি বিদ্রোহ ও বিপ্লব।
তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন—
👉 কলমকে যদি তলোয়ার বানানো যায়, তবে শব্দও জাতিকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে যেতে পারে।