25/09/2025
রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষার সর্বোচ্চ নম্বর ধরা হয় ৫। আর আশ্চর্যজনকভাবে, যদি কোনো ছাত্র একটিও উত্তর না লিখে খাতা জমা দেয়, তবুও সে পায় ২।
প্রথমদিন মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমি যখন এই নিয়ম জানলাম, তখন সত্যিই বিস্মিত হলাম। আমার কাছে মনে হলো, কেউ যদি কিছুই না লিখে, তার তো প্রাপ্য শূন্য হওয়া উচিত।
আমি কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম ড. থিওদর মেদ্রায়েভকে, “স্যার, একজন ছাত্র কিছু না লিখে ২ পাবে, এটা কিভাবে যুক্তিযুক্ত?”
মেদ্রায়েভ হাসলেন। তারপর শান্ত গলায় বললেন, “শূন্য মানে যার কোনও অস্তিত্ব নেই। মানুষ যতক্ষণ চেষ্টা করছে, ততক্ষণ সে শূন্য কীভাবে হয়? ভেবে দেখো, একজন ছাত্র কত ত্যাগ স্বীকার করে প্রতিদিন সকালে ক্লাসে আসে। হয়তো কনকনে শীতের মধ্যে সে ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে, লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বাসে, ট্রামে কিংবা ট্রেনে দাঁড়িয়ে এসেছে। খালি খাতা জমা দিলেও সে ক্লাসে এসেছে, মানে চেষ্টা করেছে। এখন বলো, আমি কীভাবে তাকে শূন্য দিই?”
তিনি আরও বললেন, “ছাত্রটি হয়তো উত্তর লিখতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে তার সব প্রচেষ্টা বৃথা যাবে? সে যে রাত জেগে পড়াশোনা করেছে, নোটবুক কিনেছে, বই খুলে চেষ্টা করেছে, সেই শ্রম কি আমরা অবহেলা করবো?
না বাবা, মানুষ শূন্য নয়। শূন্য দিলে আমরা তার আত্মবিশ্বাস কেড়ে নেবো, তার ভেতরের আগুন নিভিয়ে দেবো। আর আমরা শিক্ষক হিসেবে চাই, ছাত্র যেন বারবার উঠে দাঁড়াতে পারে, হেরে না যায়।”
আমি নির্বাক হয়ে শুনছিলাম। সেই মুহূর্তে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠল। বুঝলাম, শিক্ষা মানে শুধু নম্বর বা খাতার উত্তর নয়, শিক্ষা মানে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা, তার প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেওয়া।
মেদ্রায়েভ সেদিন আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য শিখিয়েছিলেন— শিক্ষা শুধু জ্ঞান বিতরণ নয়, শিক্ষা হচ্ছে মানবিকতার চর্চা।
শূন্য নম্বর অনেক সময় ছাত্রদের জন্য মৃত্যুঘণ্টা হয়ে দাঁড়ায়। খাতায় শূন্য দেখে তারা ভয় পায়, আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে পড়াশোনার প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। অথচ একজন শিক্ষকের দায়িত্ব হলো ছাত্রকে উত্সাহিত করা, তাকে বোঝানো— "তুমি পারবে, আবার চেষ্টা করো।"
যখন আমরা একটি খালি খাতার জন্যও ন্যূনতম নম্বর দিই, তখন আমরা আসলে বলি— "তুমি শূন্য নও, তুমি এখনও যোগ্য। তুমি ব্যর্থ হওনি, শুধু সফল হতে পারোনি। আবার চেষ্টা করো।"
এটাই হলো আসল শিক্ষা।
শিক্ষকের হাতেই ছাত্রের ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে। তাই শিক্ষকেরা যদি একটু মানবিক হন, যদি নম্বরের বাইরেও ছাত্রদের প্রচেষ্টা দেখতে শেখেন, তবে অনেক হতাশ ছাত্র হয়তো নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারবে।
আমার কাছে মনে হয়েছে, এই গল্পটা শুধু রাশিয়ার নয়, সারা বিশ্বের শিক্ষকদের শোনানো উচিত। কারণ শূন্য নম্বর কখনো শিক্ষা নয়, শূন্য নম্বর মানে কাউকে শেষ করে দেওয়া। মানুষ যতক্ষণ চেষ্টা করছে, তার প্রাপ্য অন্তত একটি আশ্বাস, একটি স্বীকৃতি।
রাশিয়ায় অধ্যয়নরত এক ছাত্র এটি লিখেছে, নাম জানা নেই।
আপনিও এই লেখাটিকে শেয়ার করুন আপনার প্রিয় শিক্ষকের কাছে, যাতে শিক্ষাব্যবস্থায় একটা ক্ষুদ্র পরিবর্তন আসে।
©️
#মানুষকোনদিনশূন্যনয় #শিক্ষারদর্শন #শিক্ষকওশিক্ষার্থী #মানবিকশিক্ষা #চেষ্টারস্বীকৃতি