31/08/2025
আমাদের যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃতিসন্তান সৈয়দ হাফিজুর রহমান। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ক্রাক প্লাটুনের একজন দুর্ধর্ষ শহিদ গেরিলা যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এক রাতেই ঢাকার ছয়টি আলাদা স্থানে মাইন বিস্ফোরণের বীরত্ব দেখানো হাফিজুরের পরিচয় ছিল "মাইন হাফিজ" নামে।
মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য নিখোঁজ সকল গেরিলাকে মরণোত্তর 'বীর বিক্রম' খেতাবে ভূষিত করা হয়েছিল, কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন শহিদ হাফিজ। দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে তার পরিবার কেবল তার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য লড়াই করে গেছে। ১৯৭৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নয়বার আবেদন করেও তারা ব্যর্থ হন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পান।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে শহিদ হাফিজের স্মারক গ্রন্থ “সেতারে স্বাধীনতার সুর: বীর গেরিলাযোদ্ধা শহিদ হাফিজ” । সম্পাদনা করেছেন শহিদ হাফিজের ভাস্তি, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অধ্যাপক ড. তানিয়া উর্মি। এই স্মারকগ্রন্থটি কেও সংগ্রহ করতে চাইলে অনুগ্রহপূর্বক আমাকে নক করতে পারেন।
শহিদ হাফিজের জন্ম ঝিকরগাছার কাউরিয়া গ্রামে। বড় হয়ে উঠা যশোরের পোস্ট অফিস পাড়ায়। যশোর জেলা স্কুল ও এমএম কলেজে পড়াশুনা করেছেন। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বিভিন্ন শাখায় তার বিচরণ থাকলেও যন্ত্রশিল্পী হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
করাচিতে বিশিষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ দেবু ভট্টাচার্য এর সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক শহিদ আলতাফ মাহমুদ এর সহযোদ্ধা ও ছায়া সঙ্গী হিসাবে সংগীত পরিমন্ডলে পরিচিত ছিলেন।
তার সাথে 'ঊর্মি প্রোডাকশন' নামে একটি সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
ঢাকা বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন হাফিজ। তিনি অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। তিনি একাধারে হাওয়াইন গিটার, স্প্যানিশ গিটার, অর্কেসটা, তবলা, ব্যঞ্জো, ম্যান্ডোলিন, হারমোনিয়াম, সেতার, বেহালা বাজাতে পারদর্শী ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৪ এপ্রিল যশোরের বাড়িতে হাফিজের বাবা আবদুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তান সেনারা। একইসঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের বাড়ি। বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ড স্তম্ভিত করে দিয়েছিল হাফিজকে। বাবা শহীদ হওয়ার খবর পেয়ে হাফিজ বাড়িতে গিয়েছিলেন। বাবার কবর ছুঁয়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবেন। শুরুতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করলেও, পরবর্তীতে তিনি সরাসরি গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন।
২৯ আগস্ট, ১৯৭১ গভীর রাতে এই গেরিলা যোদ্ধাকে পাক হানাদার বাহিনী মগবাজারের নিজ বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যান এবং অন্যান্য গেরিলা যোদ্ধাদের মতো নির্মমভাবে হত্যা করেন।
স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহিদ হাফিজের পরিবারকে নিজ সাক্ষরে চিঠি লিখে সামান্য আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন। এই মহান বীর, জাতির সেরা সন্তান শহিদ হাফিজ আমাদের ঝিকরগাছা তথা যশোরের গর্ব।