09/07/2025
গুমের শিকার Tahiat Chowdhury এর ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো -
সেদিন রাতে, দীর্ঘ ১৬ মাস গুm নির্য|তনের পরে আমাকে একটা কালো মাইক্রোতে করে নিয়ে যাওয়া হয় বান্দরবানের টংগাবতী নামক গহীন পাহাড়ে। যাওয়ার পূর্বে আলেপ উদ্দিন বলে - “মুকুল রানার নাম শুনছোস..?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, টিভিতে শুনছি।” সে উত্তরে বললো, “আজকে রাতে দেখা হবে, চিন্তার কিছু নাই, জান্নাতে একসাথে গল্প করবি।”
{যেই পাঠকরা মুকুল রানা নামের সাথে পরিচিত না, আপনাদের জন্য বলছি—২০১৬ সালে অভিজিৎ রায় হত্য| মামল|র দায়ে উনাকে ক্রসফ|য়ার দেওয়া হয়।}
আলেপের কথা শুনে বুঝতে বাকি থাকলো না যে আজকে হয়তো দীর্ঘ গুm জীবনের অবসান হতে চলেছে, হয়তো আজকেই আমাকে ক্রসফ|য়ারে হত্য| করবে। এর কিছু দিন আগে থেকেই ডিউটিম্যানরা এসে বলতো—“তোকে তো ক্রসফ|য়ার দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে।” আমি ভাবতাম, হয়তো ভয় দেখানোর জন্যই এগুলো বলছে। কিন্তু আজকে আলেপের কথা এবং আশপাশের পরিবেশ কিছুটা অন্যরকম মনে হলো।
রাত ২/২:৩০ হবে (ধারণা করে বললাম), গাড়ির ভিতরে হাত-পায়ে হ্যান্ডক|ফ লাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো গহীন পার্বত্য অঞ্চলে। দীর্ঘ রাস্তা অতিক্রম করার পরে একটা আম বাগানের ভিতরে আমাকে নিয়ে শুইয়ে দেওয়া হলো। চোখ তখনো কাপড় দিয়ে বাঁধা। আমি অনুভব করলাম, এখানে শুধু আমি একা না, আমার আশেপাশে আরও কয়েকজনকে এনে মাটিতে ফেলা হয়েছে।
আমাকে একজন ঘাড়ে ধরে মাটিতে গড়াগড়ি করালো—উদ্দেশ্য ছিল আমার জামাকাপড় যাতে ধুলো-ময়লা হয়ে যায়। ভিডিওতে লক্ষ করুন, এখানে আমাদের সকলের কাপড়ে একই কমন স্টাইলে বালু লাগানো। যেহেতু মাটিতে গড়াগড়ি করিয়েছে, তাই পেটের দিকে, পায়ের উরুতে এবং পিঠের পিছনে একটা কমন স্টাইলে মাটির ছাপ। যেকোনো বিচক্ষণ মানুষই লক্ষ্য করলে বুঝবে, এই মাটি ইচ্ছাকৃত ভাবেই লাগানো হয়েছে।
এবার লাইন ধরে শুইয়ে দেওয়া হলো মাটির মধ্যে। চোখের কাপড়ের ফাঁক দিয়ে অল্প আকাশ দেখা যাচ্ছে। ওইদিন চাঁদনি রাত ছিল, আকাশে অনেক তারা ঝলমল করছে—সেটা স্পষ্টই দেখতে পেলাম। মন থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করছি—আল্লাহ যেন নিয়তকে পরিশুদ্ধ করে দেন এবং শাহ|দাতের মৃ*ত্যু দান করেন।
আমার বাম পাশে এক নিরীহ মাদ্রাসা পড়ুয়া ভাইকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে ক্রসফ|য়ারের জন্য। আমার হাতের কনুই তার শরীরে লাগার ফলে অনুভব করলাম, হয়তো খুব বেশি নার্ভাস—সে সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে তার। ওইদিকে র্য|ব অফিসার শ্যামল ফিসফিস করে কমান্ড দিচ্ছে। র|ইফেল রিলোডের শব্দ কানে বাজলো। শ্যামল বলছে—“যে যার ট|র্গেটের দিকে খেয়াল রাখবে।”
হঠাৎ চারদিকে গু*লির শব্দ শুরু হলো—এবং সাথে র্য|ব কর্মকর্তাদের মুখে চিৎকার—“ঐ ধর ধর, জ*ঙ্গি পালাইতেছে!” আকাশের দিকে অনবরত ফায়|র করে কিছু লোক আমাদের দিকে ছুটে আসছে বুঝতে পারলাম। মনে হচ্ছিল, হয়তো এই “ধর ধর” বলে সামনে এসে গু*লি করে দেবে। পরে দেখলাম না—চোখ খুলে দিল। ক্যামেরা, লাইট—সব চোখের সামনে হাজির। ওইদিনই আমার চোখে পড়লো হলুদ মিডিয়ার অন্যতম সদস্য সময় টিভির কমল দের চেহারা। সে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে র্য|ব-এর সাথে এই ঘটনাগুলো মঞ্চায়নে মিডিয়া সাপোর্ট দিত। তার বিষয়ে বিস্তারিত আমি আমার ধারাবাহিক পর্ব ফেরাউনীর আয়নাঘরে রাত-দিন–এ উল্লেখ করবো, ইনশাআল্লাহ।
এ যেন ফেরাউনী হাসিনার নরপিশাচ র্য|ব কর্তৃক মঞ্চায়ন করা বাংলাদেশের বুকে আরও একটি জ*ঙ্গি নাটক। আহা, কত মায়ের বুক খালি হয়েছে এই “জ*ঙ্গি জ*ঙ্গি” নাটকে! হয়তো আমরা বেঁচে ফিরেছি—আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অশেষ রহমতে। কিন্তু এভাবে হয়তো কতই না মজলুমকে গু*ম করে ক্রসফ|য়ার দিয়েছে এই ডেথ স্কোয়াড র্য|ব।
৫ আগস্টের এই গণঅভ্যুত্থ|নের পরে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন আমাদের চোখে পড়ে—কিছু সুশীল, বুদ্ধিজীবী, এক্টিভিস্ট এবং হলুদ মিডিয়া কর্তৃক আবারও “জ*ঙ্গি” জুজুর আলোচনা; এই ন্যারেটিভ ব্যবহার করে আবারও ইসল|মপন্থীদেরকে ‘না-মানুষ’ বানানোর অপচেষ্টা—তখন আমাদের অনেক ভয় হয়। আমরা এই নাম, গোপন তথ্য দিয়ে গুম-কমিশনকে যে সহযোগিতা করছি, তার বদলা কি আবারও আমাদের গুম এবং খুন করে নেওয়া হবে...?