07/05/2025
বন্য পশুকে কি পোষ মানানো সম্ভব? অনেকের কাছেই এটি একটি হাস্যকর প্রশ্ন! তারা বলে বসবেন, অবশ্যই বনের পশুকে পোষ মানানো সম্ভব নয়। হ্যাঁ, আমরা অনেকেই জানি যে বনের পশুকে কখনো গৃহপালিত করা সম্ভব নয়। তবে তা সত্ত্বেও আমরা প্রায়ই এমন অনেক ঘটনা শুনি বা জানি, যেখানে বাঘ, সিংহ, সাপ, হরিণের মতো বন্য প্রাণীদেরকে শখের বসে বাড়িতে গৃহপালিত অবস্থায় রাখা হচ্ছে।
অনেক বছর ধরেই সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারে বন্য পশু (যেমন: বাঘ, চিতাবাঘ) গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে রাখার নিয়ম ছিল, যা ২০১৫ সালে আরবে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আমরা অনেকেই ইন্টারনেটে একটি ছবি দেখেছি, যেখানে হোটেল বুর্জ-আল-আরবের সামনে এক সৌদি নাগরিকের গাড়িতে গলায় চেইন পরানো এক চিতাবাঘ দেখা যায়।
মূল কথায় যাওয়ার আগে আরেকজন প্রাণীপ্রেমীর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, যাকে ২০০৭ সালে ‘দ্য লায়ন হুইসপারার’ খেতাব দেয়া হয়। ৫-৬ ফুট লম্বা, প্রাপ্তবয়স্ক সিংহদের সাথে তার অন্তরঙ্গ ছবি আর ভিডিওর কারণেই তিনি এই খেতাব পান। সিংহদের সাথে বিড়ালের মতো আদুরে ব্যবহার করার সেই ইউটিউব ভিডিওতে দর্শকের ক্লিক পড়েছে প্রায় ১৫ মিলিয়নেরও বেশিবার!
ভদ্রলোকের নাম কেভিন রিচার্ডসন। তার জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে। তার ছোটবেলা যেখানে কাটে, সেখানে জঙ্গলের ছিটেফোঁটাও ছিল না। তিনি বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি যে আমি পশুদের নিয়ে কাজ করবো”। তিনি পশু নিয়ে কাজ না করতে চাইলেও পশুরাই তাকে বেছে নিয়েছিল।
প্রাণীদের প্রতি সহজাত ভালোবাসা কেভিনের ছোটবেলা থেকে ছিল। ছোটবেলায় বান্ধবী ও তার পরিবারের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার চিড়িয়াখানা ও গেইম-রিজার্ভ পার্কগুলোতে ঘুরতেন তিনি। ‘গেইম রিজার্ভ’ বলতে মূলত কৃত্রিম বনভূমিকে বোঝায়, যেখানে বন্য প্রাণীদেরকে ‘মুক্ত’ রাখা হয় ও ভাড়ার বিনিময়ে শিকারীরা বদ্ধ পরিবেশে শিকার করেন। তিনি তার কলেজে বেশ কিছু সময় প্রাণিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। হতে চেয়েছিলেন একজন পশু বিশেষজ্ঞ, কিন্তু সে যাত্রায় টেকেননি।
ফলে বান্ধবীর বাবার পরামর্শেই শরীরবিদ্যা নিয়ে পড়ার আগ্রহ জন্মায় কেভিনের। পড়াশেষে একটি ব্যায়ামাগারে প্রশিক্ষকের কাজ করেন কিছুদিন। সেখানেই রডনি ফুর নামের এক ভদ্রলোকের সাথে বন্ধুত্ব হয়। তার মাধ্যমেই আফ্রিকার একটি সিংহ রিজার্ভ পার্ক, ‘লায়ন পার্কে’ সিংহ দেখাশোনার দায়িত্ব পান কেভিন।
এরপর থেকে তিনি যেন তার সেই সহজাত পশুপ্রেম থেকেই দুটি সিংহের বাচ্চা টাও আর নেপোলিয়নের সাথে খাতির করে ফেলেন। তিনি প্রায়ই বলেন,
“সিংহদের পোষ মানাতে আমি কোনো আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করি না। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।”