03/03/2025
একত্রে বসে (দলগত) খাওয়ার ২৬ টি আদব-লেহাজ:
১. যে পাত্র থেকে সবাই খাবার নিচ্ছে (খিচুড়ি বা মুড়ি মাখা), তার উপর ঝুঁকে খাবার নেওয়া যাবে না, মুখ থাকবে মুখের জায়গায়। হাতে খাবার নিয়ে হাতটাকে মুখের কাছে নিতে হবে।
২. হাতে থেকে যাওয়া অতিরিক্ত খাবার যা একেবারে মুখে ঢুকানো যায়নি, তা ঝাড়া মেরে প্লেটে ফেলে দেওয়া যাবে না, হাতে ধরে রাখতে হবে। তারপর মুখের খাবার শেষ হলে বাকিটুকু মুখে দিতে হবে।
৩. হাতে নেওয়া সমস্ত খাবার মুখে দিয়েছেন, এখন হাত কোথায় রাখবেন? অনেকে মুখে খাবার খাচ্ছেন আর খালি হাতটা সম্মিলিত খাবারের পাত্রে রেখে দিচ্ছেন, এটা করা যাবে না। হাত নিজের কাছে রাখতে হবে।
৪. কিছুক্ষণ পরপর সকলের অনুমতি না নিয়ে নিজের ইচ্ছেতেই ভালো করে মেশানোর অজুহাতে খাবার ওলট-পালট করা যাবে না।
৫. সকলের অনুমতি না নিয়ে নিজের পছন্দমতো এডিশনাল ফুড (মুড়ি মাখার ক্ষেত্রে বুন্দিয়া বা পুদিনাপাতা, খিচুড়ির ক্ষেত্রে লাউয়ের ঝোল) ফট করে পাত্রে ঢেলে দেওয়া যাবে না।
৬. আপনি যেদিক দিয়ে খাচ্ছেন, সেদিকে যা আছে তাই খাবেন, আরেকজনের দিক থেকে বারবার পিয়াজু বা মাংসের টুকরো নিবেন না।
৭. সবাই যে আইটেম খাচ্ছে, সেটাই খেতে হবে। সবাই যখন করলাভাজি খাচ্ছে, তখন আপনি "করলা ভাজি খাই না" বলে তড়িঘড়ি করে রোস্টের বড় পিসটা নিয়ে নেবেন- এটা ঠিক হবে না। অপেক্ষা করুন; করলাভাজি দিয়ে সবার খাওয়া শেষ হোক।
৮. হোস্ট বা সাহিদার একজনকে খাবার সার্ভ করছে, তাঁকে সিরিয়ালি তা করতে দিন। মাঝখান থেকে সিরিয়াল ব্রেক করে আপনার দিকে ডাকবেন না তাঁকে।
৯. নিজের খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকুন, অন্যদের পাতের দিকে ঘনঘন তাকাবেন না।
১০. যে হাতে খাবার খাচ্ছেন, ওই হাতে চামচ, প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি ধরবেন না।
১১. খাওয়ার সময় ঢেঁকুর তুলবেন না, কোঁৎকোঁৎ শব্দ করবেন না।
১২. হুট করে নিজের পাতের খাবার আরেকজনের দিকে ঠেলে দিবেন না। আপনি সিদ্ধ ডিম না খেয়ে একটা মাংসের পিস বেশি খাবেন বা জিলিপি না খেয়ে আলুর চপ খাবেন, বাড়তি তাই বলে জিলাপি বা সেদ্ধ ডিম পাশেরজনের পাতে দিয়ে দেবেন না; আপনার মতো সেইম চিন্তা তারও থাকতে পারে।
১৩. যতটুকু খেতে পারবেন, ততটুকুই পাতে নিবেন। খাবারের দখল নেওয়ার অপচেষ্টা চালাবেন না। মুখে অল্প করে খাবার নেবেন, খাবার মুখে ঢোকানোর পর দুই গাল যাতে দৃষ্টিকটুভাবে ফুলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
১৪. খাবারের শেষে দই বা ডাল আছে কিনা জিজ্ঞেস করবেন না! সেটা নাই ধরে খাওয়া চালাতে থাকবেন।
১৫. হোস্ট আপনার সামনে টিস্যু রাখবে, কিন্তু তাই বলে সেটা অযথা অপচয় করবেন না। পর্যাপ্ত পানি দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর রুমাল বা টিস্যু দিয়ে ভেজা হাতটা মুছবেন।
১৬. নির্দিষ্ট কোনো খাবার বেশি ভালো লেগেছে- এটা বলবেন না, হোস্ট সবগুলো আইটেমই যথেষ্ট মমতা সহকারে রান্না করেছেন- এটা মাথায় রাখবেন।
১৭. খাবার মুখে নিয়ে চপ চপ করবেন না, খাইতে খাইতে নাকে পেডা আসলে সেটা আস্তে করে মুছে নিবেন; উখ্খু উখ্খু শব্দ করে সেটাকে পেটে ঢুকানোর চেষ্টা করবেন না। মুখে কাকড় বা কাটা পড়লে মুখের খাবারটুকু বের করে সকলের সামনে ফেলে দিবেন না, সকলের আড়ালে কোথাও ফেলুন।
১৮. কোনো একটা আইটেম নেওয়ার জন্য যদি আপনি প্রথমে উদ্যোগ নেন, তাহলে চেষ্টা করবেন আশেপাশে দু-একজনকে আগে দিয়ে পরে নিজে নিতে। নিজে বড় পিসটা নিয়ে পাশেরজনের দিকে বাটি ঠেলে দিবেন না। নেওয়ার সময় চামচ দিয়ে সবগুলো পিস ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না, চোখের অনুমানে আগে সিলেক্ট করে তারপর সেটা চামচে তুলবেন।
১৯. দূরে থাকা কোনো খাবার নেওয়ার জন্য বাটি নিজের দিকে দেওয়ার জন্য আরেকজনকে বলবেন না, সেটা উনার জন্য পরিশ্রমের। আপনার প্লেট বাটির কাছে এগিয়ে নিয়ে তারপর প্লেটে নিজে নেন বা কাউকে দিতে বলুন।
২০. নিজে ডিমের কুসুম না খেয়ে রেখে দিয়ে পাশেরজনকে কুসুমের পুষ্টিগুণ বুঝাতে যাবেন না।
২১. সালাদের বাটি থেকে বেছে বেছে শুধু টমেটো নেবেন না। টমেটো, শসা, মূলা আনুপাতিক হারে নিবেন।
২২. শুধুমাত্র আপনাকে একা কাঁচামরিচ বা লবণ এনে দেওয়ার জন্য কাউকে অনুরোধ করবেন না।
২৩. হোস্ট পোলাওয়ের বাটি আনার সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞেস করবেন না- সাদা ভাত আছে কিনা?
২৪. মজলিশে যিনি সবচেয়ে আস্তে খান, তার সঙ্গে তালমিলিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন, এতে করে সবাই সমানভাবে খাওয়ার অংশ পাবে।
২৫. সকলের সঙ্গে একত্রে খাওয়া শেষ করুন।
২৬. গলা পর্যন্ত খেয়ে হোস্টের মুখে "কিছুই তো খাইলেন না" শোনার জন্য "বেশি খায়ালছি" বলে ঢং করবেন না। আপনি যে বেশি খায়ালছেন- এটা সবাই বুঝে যাবে!