31/03/2025
আপনি যে ধর্মের অনুসারী ই হন না কেন, যে মতের বা পথের সাথে আপনার উঠা বসা হোক অন্তত একটা জিনিস তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না যে প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে।
মৃত্যুই যেহেতু আমাদের শেষ পরিনতি এবং সেটাকে উপেক্ষা করার কোনো পথ আমাদের জানা নেই তাহলে আসেন কিছু আলাপ করি।
দুনিয়াতে যে আমরা এসেছি আমাদের আসলে উদ্দেশ্য কি? আপনাকে যে সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন তার উপাসনা করা, একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে তার সৃষ্ট জীবের প্রতি সুবিচার করা এবং নিজের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা এই তো?
আচ্ছা ধরে নিলাম আপনি অবিশ্বাসী, আপনার কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, আপনি প্রকৃতির সন্তান তাহলে আপনার জন্য সৃষ্টিকর্তার উপাসনা দরকার হচ্ছে না। এখন আপনি ভালো থাকার জন্য কি করবেন?
অন্যকে ঠকিয়ে, অন্যায় আচরন করে, নিজের কাজকর্মের দ্বারা অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে আসলে আপনি কি ভালো থাকতে পারবেন। সুখে শান্তিতে থাকা আর নিজের হেডম দেখিয়ে অন্যের জীবন বিপর্যস্ত করে আমি অনেক ভালো আছি এটা প্রকাশ করা কি এক জিনিস?
অন্যের সফলতায় যদি আপনার জ্বলে, আর একজন কেন ভালো অবস্থানে আছে এটা দেখে যদি আপনার ইর্ষা হয় তাহলে কি আপনি আসলেই সামনে আগাতে পারবেন?
আমাদের পৃথিবী এমন ভাবে চলছে যে এখানে শ্রেনী বৈষম্য থাকবেই। একবার ভাবুন তো আপনার সমাজে সবাই যদি তরকারির দোকানদার হয় তাহলে এই গুলো বিক্রি করবেন কার কাছে? আবার মনে করেন সবাই বড় বড় মিল ফ্যাক্টরি এর মালিক তাহলে সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করবে কে? সুতরাং আর একজন কেন আপনার চেয়ে বড় দায়িত্ব পেলো আপনি কেন পেলেন না এই চিন্তা করে কি আপনার জন্য নির্ধারিত সময় অপচয় করবেন?
গতানুগতিকভাবে আমাদের জীবন যেভাবে চলছে এর বাইরে গিয়ে একটু চিন্তা করে দেখেন তো। আমরা যদি সৃষ্টি কর্তার কোনো আদেশ না মানি তাহলে তার কি আসবে যাবে? তিনি চাইলে এক মুহূর্তে সব ধংস করে দিতে পারেন না? ওহ আপনি তো অবিশ্বাসী, সৃষ্টিকর্তায় মানেন না তাহলে আপনি একটু অন্য ভাবে চিন্তা করুন আমাদের এই বিশ্বব্রম্মান্ডে তো গ্রহ নক্ষত্রের অভাব নেই তাহলে কোনো গ্রহ যদি পৃথিবীর সাথে এসে ধাক্কা খায় তাহলে কি হবে? আপনি যদি গ্যালাক্সি নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করেন তাহলে বুঝবেন যে এই ধাক্কা লাগার ব্যাপার টা অমুলক নয়।তখন কি হবে আমাদের?
আমরা যদি অহেতুক প্রতিযোগীতায় না নেমে নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে নিজের নৈতিকতা দিয়ে সবকিছু ডিল করতে পারতাম তাহলে কি আমরা শান্তিতে থাকতে পারতাম না? যার যতটুকু সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা আছে তাকে ততটুকু সম্মান দিলে আমার আপনার কি হবে? আপনার লাইফে যতটুকু দরকার ততটুকু পেয়ে গেলে আপনার অতিরিক্ত জিনিসের পেছনে ছোটার দরকার কি?
যদি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে আফসোস হয় যে আপনি আমি চাইলে আমাদের জীবনটা কে আরও সহজ, সুন্দর, স্বাভাবিক ভাবে মানুষের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে সুখে শান্তিতে কাটাতে পারতাম তখন কি করবেন? মৃত্যুকে বলতে পারবো কি যে আরও কিছু দিন পর আসতে?
আমরা কেন যে নিজেদের জীবন কে অশান্ত করে তুলছি দিন দিন সেটাই আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা যদি শুধু একটা নীতি মেনে চলতে পারি যে আমার দ্বারা কারও উপকার যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত কারও কোনো ক্ষতি না হোক তাহলেই ধীরে ধীরে সবকিছু সুন্দর হয়ে উঠবে। বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা? তাহলে কাল থেকেই শুরু করে দেখুন না। প্রতিটা কাজ করার আগে বা কথা বলার আগে একবার ভাবুন কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবে কি না?তবে কোথাও অন্যায় দেখলে চুপ হয়ে থাকবেন না এটা ভেবে যে সেই অন্যায়ের বিরোধিতা করলে যিনি অন্যায় করছেন তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাহলে কিন্তু অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
এবার আসেন আসল আলাপে। আপনি যদি বিশ্বাসী হয়ে থাকেন তাহলে সৃষ্টিকর্তার হক আর সৃষ্ট জীবের হক এই দুটো টার্ম তো আপনি জেনে থাকবেন। ধরেন আপনি আপনার জীবদ্দশায় কখনো আপনার সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করেননি। আপনার মহানুভব সৃষ্টিকর্তা চাইলে সেই অপরাধ মাফ করেও দিতে পারেন।
কিন্তু যদি আপনি কোনো সৃষ্ট জীবের হক নষ্ট করেন? তাহলে যার হক নষ্ট করলেন সে যদি মাফ না করে তাহলে কি করবেন? সবাই তো আর সৃষ্টিকর্তার মত মহানুভব না।
আর আপনি যদি অবিশ্বাসী হয়ে থাকেন তাহলে সৃষ্টিকর্তার হক না হয় বাদই দিলাম কিন্তু অন্যের উপর জুলুম করার রিটার্ন গিফট আপনি না পেয়েই পার পেয়ে যাবেন ভাবছেন? আপনার জানামতে কেউ পেয়েছে? আপনার বিজ্ঞান কি বলে? কোনো কিছু কি এমনি এমনি হয়? প্রতিটা ক্রিয়ার একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে না? আপনার কাছে কি মনে হয় আপনি অন্যের জমি দখল করলেন জন্য তার রিটার্ন গিফট হিসেবে কি কেউ আপনার জমিই দখল করবে? জমি বলতে কি শুধু আপনি চাষ বা অফিস বাড়ী করার ভিটাকেই বুঝছেন?