08/11/2024
ট্রাম্প ২.০ কীভাবে হলো
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এবারের বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে নিঃসন্দেহে প্রত্যাবর্তনের সবচেয়ে নাটকীয় নজির হয়ে থাকবে। একবার হেরে হোয়াইট হাউজ ছাড়ার চার বছর পর আবার সেই বাড়িতে ফিরছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি ভোটার তাকে ভোট দিয়ে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়েছে।
ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনী প্রচারও ইতিহাস বইয়ে স্থান করে নেবে। দুইবার আক্রান্ত হয়েও প্রাণে বেঁচে গেছেন। নির্বাচনের দুই মাস আগেই জো বাইডেন সরে দাঁড়ানোয় নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর মোকাবেলায় নামতে হয় তাকে। সব ভোট গণনা এখনও শেষ হয়নি, তবে বেশিরভাগ আমেরিকানের রায় ট্রাম্পের পক্ষেই গেছে। তাদের অনেকেই বলছে, অর্থনীতি আর অভিবাসীই তাদের উদ্বেগের বড় বিষয়। পতনের খাদ থেকে ফিরে প্রত্যাবর্তনের জয়ডঙ্কা কীভাবে বাজালেন ট্রাম্প, তা খতিয়ে দেখতে চেয়েছে বিবিসি।
অর্থনীতি
ট্রাম্পের পক্ষ নিতে গেলে সবাইকে দুবার ভাবতে হয়। বেশিরভাগ ভোটারই চাইতেন, ট্রাম্পের অশ্রাব্য কথাবার্তা বন্ধ হোক। কিন্তু ট্রাম্প যখন এই প্রশ্ন করেন যে, “আপনারা কি এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন?” তখন সবাইকে থমকে যেতে হয়।
অনেক ভোটারই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এখন যে অবস্থা, ট্রাম্পের জমানায় তা ভালো ছিল। এখন তাদের রুটি-রুজি জোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও এই মূল্যস্ফীতির একটি বড় কারণ আভ্যন্তরীণ নয়, তারপরও জনগণ দুষছে বাইডেন প্রশাসনকেই।
ভোটারদের আরও বড় উদ্বেগ অবৈধ অভিবাসী নিয়ে। বাইডেন প্রশাসনের সময় যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বর্ণবাদী কোনও দৃষ্টিভঙ্গী এই ভোটারদের নেই, তারা এটাও মনে করে না যে অভিবাসীরা তাদের পেটে হাত দিয়েছে। কিন্তু তারা শুধু চায়, সীমান্ত ব্যবস্থাপনাটা শক্তিশালী হোক।
‘আমেরিকা ফার্স্ট’
‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এই স্লোগানটি ভোটারদের মনে ভালোভাবেই ধরেছে, যা ভোটের ফলের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ডান-বাম সব মহলেই এই নিয়ে অভিযোগ ছিল যে ইউক্রেইনে যুদ্ধের পেছনে যে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে, সেই অর্থ দেশে খরচ করাই ভালো হতো।
এই কারণেই তারা কমলা হ্যারিসকে ভোট দিতে চায়নি, কারণ তিনি জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভোটাররা তাই পরিবর্তন চেয়েছিল। কারণ তারা মনে করছিল, কমলার জয় মানে বাইডেনেরই ধারাবাহিকতা। এটা ঠিক যে চার বছর আগের ট্রাম্পের আর এখনকার ট্রাম্পের অনেক ফারাক। ২০১৬ সালে তিনি যখন প্রথম ক্ষমতায় যান, তিনি ছিলেন রাজনীতির বাইরের লোক। কিছু দিন তিনি নিজেকে রাজনৈতিক নেতাদের বেষ্টনিতে আবদ্ধ রেখেছিলেন।
কিন্তু এখন সেই খেলাটি সেভাবে খেলতে চান না ট্রাম্প। তখনকার পরামর্শদের অনেকে এখন তাকে ‘মিথ্যুক’ বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট’ বলছেন, ‘অযোগ্য’ বলছেন। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্প এখন নিজের আশপাশে তার অনুগতদেরই চাইবেন। আর তাতে ট্রাম্পের ক্ষ্যাপামি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউজ ছাড়েন, তখন ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গা বাঁধানোর মতো অভিযোগ তার কাঁধে ছিল। আরও ছিল নথিপত্র জালিয়াতি আর পর্ণ তারকার মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেওয়ার মামলা।
কিন্তু যখন সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প এক্ষেত্রে দায়মুক্তি পাবেন, তাই তাকে অভিযুক্ত করা যে কোনও প্রসিকিউটরের পক্ষে একটি কঠিন কাজ হবে। প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিতে পারেন যে তার বিরুদ্ধে দাঙ্গার অভিযোগ তুলে নিতে। আবার সেই দাঙ্গায় অংশ নেওয়ার জন্য কারাগারে দণ্ডিত শত শত লোককে ক্ষমাও করে দিতে পারেন তিনি।
ট্রাম্প বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে, আর একমাত্র তিনিই দেশের গৌরব ফেরাতে পারেন। কমলা হ্যারিস অবশ্য সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্প আবার নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।