
22/09/2025
যশোরের পলাতক সাবেক এমপি রণজিত কুমার রায়ের
আদালতের জব্দকৃত সম্পদ বিক্রি হচ্ছে দেদারচ্ছে !!!
যশোর অফিস : যশোর ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাঘাড়পাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রণজিত কুমার রায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে উপার্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদ বর্তমান
সরকার জব্দ করলেও তা গোপনে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি রণজিত রায়ের ছেলে পলাতক
রাজিব কুমার রায় নিজ মালিকানাধীন তিনটি ট্রাক বিক্রি করেছেন। আহাদ পার্সেল এন্ড কুরিয়ার
সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যে এই তিনটি ট্রাক ক্রয় করেছে। আহাদ পার্সেল এন্ড
কুরিয়ার সার্ভিসের সত্ত্বাধিকারী আহাদ আলী এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, যশোর ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়, তার স্ত্রী
নিয়তি রানী রায়, ছেলে রাজীব কুমার রায় ও সজিব কুমার রায়ের নামে থাকা ৪টি ফ্লাট, ২টি বাড়ি,
৩টি ট্রাক, ৬০টি দোকানসহ ৭৯ দশমিক ৬২ বিঘা জমি ও ১৩৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ২ কোটি ৭৮
লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৭ টাকা ও জনতা ব্যাংক যশোরের জেসটাওয়ার শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের লকারে থাকা
প্রায় সাড়ে ৬শ’ ভরি স্বর্ণালংকার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার একটি আদালত। কিন্তু আদালতের সেই রায়
মানা হচ্ছে না। আদালতের কাগুজে রায়কে তোয়াক্কা না করে রনজতি রায় ও তার সন্তানরা তাদের বৈধ অবৈধ সব
সম্পত্তি গোপনে বিক্রি করে দিচ্ছে। অথবা ব্যাংকের বিভিন্ন একাউন্টস ও লকার থেকে টাকা সোনা
তুলে নিয়ে তাদের সেকেন্ড হোম ভারতে নিয়ে যাচ্ছে।
সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে যশোর উপশহরে
১৩৫৬ বর্গফুটের ২টি ফ্লাট ও যশোর শহরে ১২২৪ বর্গফুটের আরও ২টি ফ্লাট, চার ও তিন তলার ২টি
বাড়ি, ৩টি ট্রাক, অভয়নগর উপজেলায় ৬ হাজার ৬ বর্গফুটের নির্মাণাধীন ৬০টি দোকান ও ৭৯ দশমিক
৬২ বিঘা জমি অর্জনের অভিযোগ ওঠে।
এসব জমির মধ্যে রনজিত কুমার রায়ের নামে রয়েছে ৩১ দশমিক ৪৮ বিঘা, তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ দশমিক
৭৫ বিঘা ও তাদের সন্তানদের নামে রয়েছে ৪৬ দশমিক ৩৯ বিঘা জমি। এসব জমির মোট দলিল মূল্য ১৭
কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৫০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রণজিত কুমার রায়ের ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ৭১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৮ টাকা, তার স্ত্রীর
২১টি ব্যাংক হিসাবে ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬ টাকা ও ৩শ’ ভরি স্বর্ণালংকার, তাদের সন্তান রাজীব কুমারের
৪৪টি ব্যাংক হিসাবে ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৬০২ টাকা ও সাড়ে ৩শ’ ভরি স্বর্ণালংকার, তার নিয়তি ট্রেডে
আছে ১৪ হাজার ৩০১ টাকা, রাজীবের স্ত্রী রিশিতা সাহার ২০টি ব্যাংক হিসাবে ৪০ লাখ ৭ হাজার ৯৮৪
টাকা, রণজিতের ছেলে সজীব কুমারের ১২টি ব্যাংক হিসাবে ৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৪ টাকা ও সজীবের স্ত্রী
অনিন্দিতা মালাকার পিউর ব্যাংক হিসাবে ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ২৫২ টাকা রয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার
একটি আদালত এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ও স্বর্ণালংকার জব্দ
করলেও তা আর সরকারের আয়ত্ত্বে থাকছে না। এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংকের
ম্যানেজার বলেছেন, আদালত রনজিত রায় ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করেছে কিনা তার
কোন চিঠি বা আদেশ আমরা পাইনি। যে কারনে চেক দিলেই আমরা টাকা দিতে বাধ্য।
আদালত কতৃর্ক জব্দকৃত এসব সম্পত্তির মধ্যে সম্প্রতি রণজিত কুমার রায়ের ছেলে রাজিব রায় আহাদ
পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিসের কাছে ৫০ লাখ টাকা মূল্যে তিনটি ট্রাক বিক্রি করে দিয়েছেন। ট্রাক
৩টির নম্বর হলো যশোর-ট ১১-৬০৮২, যশোর-ট-১১-৩৮৫৪ ও ঢাকা মেট্রো -ড-২০-৩৩৯৯ । ট্রাক ৩টি
বিক্রির ক্ষেত্রে রণজিত কুমার রায়ের পালিত ছেলে দুর্গা নাথ রাজিব রায়কে সহযোগিতা করেছেন বলে
অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, পালিত ছেলে দুর্গা নাথ পলাতক রাজির রায়ের স্বাক্ষরিত চেক দিয়ে
বিভিন্ন ব্যাংকের হিসার থেকে জমাকৃত টাকা তুলে তা ভারতে অবস্থানরত রাজিব রায়ের কাছে
পাঠাচ্ছেন। একই ভাবে সাবেক এমপি রনজিত কুমার রায়, নিয়তি রানী রায়, সজীব কুমার রায় ও তাদের দুই
ভাইয়ের স্ক্রীদ্বয়ের স্বাক্সরিত চেক দিয়ে প্রতি নিয়ত বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা তুলে
নিচ্ছেন। এছাড়া রাজির রায় ও তার মায়ের ব্যাংকের লকার থেকেও স্বর্ণালংকার তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে
বলে বিশ^স্ত একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া প্রতি মাসে জব্দকৃত বাড়ি, ফ্লাট ও দোকান থেকে
ভাড়া আদায় করছেন দূর্গা নাথ। এছাড়া সম্প্রতি যশোরের বাঘারপাড়ায় ও অভয়নগরের তিনটি মৌজার
১২ বিঘা ২০ শতক জমি বিক্রয় করে সমুদয় টাকা রনজিত কুমার রায়ের কাছে পাঠিয়েছেন এই দূর্গা
নাথ। কথা উঠেছে সাবেক এমপি রনজিত কুমার রায় ও তার স্ত্রী, ২ ছেলে ও চেলেদের বউ সকলেই পালিয়ে
ভারতে অবস্থান করলেও কিভাবে তাদের নামে থাকা জমি বিক্রি হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। আর আদালদের
নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও এসব সম্পত্তি কিভাবে হাতবদল হচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো বিশ^য় প্রকাশ
করেছেন যশোর বারের একাধিক আইনজীবী।
তাছাড়া এই দূর্গা নাথ রণজিত কুমার রায় ও তার পরিবারের সদস্যদের পালিয়ে যেতেও সহযোগিতা
করেছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সরকারি জব্দকৃত সম্পত্তি বিক্রয়ে কোনো বাঁধা নিষেধ
মানা হচ্ছে না ও যথেচ্ছা ভাড়া দিয়ে আদায় করা হচ্ছে অর্থ।
এ ব্যাপারে রণজিত কুমার রায় ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে তাদের
কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে পালিত ছেলে দুর্গা নাথের সাথে শহরের বারান্দি নাথ পাড়ায় যেয়ে
যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আইন মেনেই সব চলছে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি