25/05/2025
😥😥😥মধুমতি নদীর তীরে😥😥😥
সকালবেলা চোখ খুললেই দেখা যেত নদীটা কী সুন্দর করে বয়ে যাচ্ছে। পানির ওপরে রোদ পড়লে মনে হতো, যেন সোনালি রঙের একটা চাদর বিছানো আছে। সেই ছোটবেলা থেকেই নদীটা ছিল আমাদের জীবন, আমাদের আনন্দ, আর কোথাও কোথাও আমাদের কান্নাও।
আমরা যারা মধুমতির পাড়ে জন্মেছি, তারা জানি—এই নদী কেমন করে হাসায়, আবার কেমন করে একদিন সবকিছু কেড়ে নেয়। বাড়িঘর, মাঠ, গাছ, বাপ-দাদার ভিটে—সব কিছু একে একে গিলে খেয়েছে এই মধুমতি।
তবুও আমরা নদীকে ঘৃণা করতে পারিনি। কেউ পারে না। কারণ, আমরা এই নদীর সাথেই বড় হয়েছি, হাসতে শিখেছি, কাঁদতে শিখেছি।
বিকেলের সময়টা ছিল সবচেয়ে সুন্দর। নদীর পাড়ে বসে অনেকেই জাল সেলাই করত, কেউ কেউ খেলা করতো, কেউবা আবার অলস গল্প। আর আমি? আমি ঘুড়ি ওড়াতাম। বাতাসে যখন ঘুড়িটা ভাসত, মনে হতো—আমার শৈশবটা যেন আকাশে উড়ে যাচ্ছে।
নদীতে তখন পাল তোলা নৌকা চলত। দূর থেকে দেখতাম, নৌকার পালে বাতাস লাগলে কী সুন্দর করে নদীর বুক চিরে এগিয়ে যায়। মাঝিরা গলায় গান ধরে, আর নদীও যেন সেই গান শুনে ধীরে ধীরে বয়ে চলে।
সেই সময়টায় মনে হতো—আমাদের জীবনটাই যেন নদীর সাথে একেবারে গাঁথা। একটু পানি বাড়লে ভয় পেতাম, যদি আবার কিছু হারাই! আবার পানি নেমে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতাম।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আজ সব হারিয়েছে। কারো আর নিজস্ব ঘর নেই, কারো জায়গা জমি নেই। মধুমতি কেঁড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। কিন্তু তবুও কেউ এই পাড় ছাড়তে চায় না। কেন জানো?
এই পাড়ে তাদের বাপের কবর আছে, শৈশবের হেঁটে যাওয়া পথ আছে, প্রথম প্রেমের স্মৃতি আছে, আর আছে নদীর সেই চেনা ডাক—যেটা কেউ ভুলতে পারে না।
নদীর পাড়ে এখনো অনেকে থাকে। টিনের ছাউনি দেওয়া ছোট ঘর, চৌকাঠ ভাঙ্গা দরজা, কিন্তু মনে বড় স্বপ্ন। তারা ভাবে, “আর ক’দিন পরে যদি নদী পিছু হটে?”
তাদের অভিমান আছে, কষ্ট আছে। তবুও ভালোবাসাটাই বেশি। কারণ, মধুমতি শুধু একটা নদী না—এটা তাদের মা, তাদের শেকড়, তাদের জীবনের গল্প।
আজ আমি দূরে, তবুও চোখ বন্ধ করলে মনে হয়, আমি আবার সেই নদীর পাড়ে হাঁটছি। কাদায় পা দিচ্ছি, বাতাসে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে ছোট্ট আমিটা।
মধুমতি ডাকছে—নরম সুরে, নিজের মতো করে।
゚
゚
゚