03/07/2025
কিডনি দিয়ে স্বামীকে বাঁচালেন স্ত্রী, সুস্থ হয়ে স্বামী সংসার গড়লেন পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে!
এক অসহায় নারী টুনির হৃদয় বিদায়ক ঘটনা, দৈনিক সংবাদ ৭১
ঢাকার সাভার থেকে উঠে এসেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। স্বামীকে ভালোবেসে নিজের একটি কিডনি দান করে জীবন বাঁচিয়েছিলেন স্ত্রী টুনি আক্তার। কিন্তু সেই আত্মত্যাগের প্রতিদান হিসেবে পেয়েছেন শুধুই অবহেলা, অপমান আর প্রতারণা।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে টুনি আক্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারেক হোসেন। দাম্পত্য জীবনের শুরুর দিকে সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক ও মধুর। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই তারেক হোসেন কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গেলে চিকিৎসকরা জানান, তাকে বাঁচাতে হলে জরুরি ভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে।
তখন নিজের জীবন বাজি রেখে স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন স্ত্রী টুনি আক্তার। সকল সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও শারীরিক ঝুঁকি উপেক্ষা করে নিজের একটি কিডনি স্বামীর দেহে প্রতিস্থাপন করান তিনি। সফল অপারেশনের পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তারেক।
কিন্তু চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেই বদলে যেতে থাকেন তারেক। টুনি আক্তারের অভিযোগ, সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই তারেক বিভিন্ন অজুহাতে তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, তারেক হোসেন গোপনে একটি সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে এবং এখন সেই নারীকে নিয়ে গড়েছেন নতুন সংসার।
টুনি আক্তার বলেন,
“আমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার জীবন বাঁচিয়েছি। আমি কল্পনাও করিনি, সে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। এখন সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে সংসার করছে। আমি ন্যায়বিচার চাই। সমাজ যেন আর কোনো নারীর সঙ্গে এমন অন্যায় না করে।”
এই ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা একে মানবতা, ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগের চরম অপমান বলে উল্লেখ করেছেন।
সাভার এলাকার মানবাধিকার সংগঠন ‘মানবতার পক্ষ’ ইতোমধ্যে টুনি আক্তারের পাশে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি লায়লা খানম বলেন,
“এটি শুধু একটি নারীর সঙ্গে প্রতারণা নয়, এটি একটি ভয়ংকর সামাজিক অপরাধ। আমরা টুনি আক্তারকে আইনি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে প্রস্তুত।”
ইতোমধ্যে টুনি আক্তারও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। তিনি বলেন,
“আমি আইনের মাধ্যমে আমার অধিকার আদায় করব। সে শুধু আমাকে না, আমার আত্মত্যাগকেও অসম্মান করেছে।”
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন— ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের মূল্য কী এতই তুচ্ছ? সমাজ কি এই নির্মম অন্যায়ের বিচার করতে পারবে?