24/07/2025
আমার ভাই মিরসাদের লা*শ শনাক্ত হইছে, হ্যাঁ লা*শ শনাক্ত হইছে। শুনে খুশি লাগতেছে না? আমিও খুশি হইছিলাম! কিন্তু....
(পুরো পড়েন তারপর জানতে পারবেন লাশগুলো কিভাবে শনাক্ত করা হচ্ছে, যাদের সমস্যা আছে দয়া করে পোস্ট এড়িয়ে যাবেন, মিরসাদের চাচী বলছে আর আম্মুর পাশে বসে সব নিজ কানে শুনছি।)
বডি পাইছে মানে দেহ আরকি, মানে আমার ভাই আরকি;
কেমন বডি জানেন? এমন একটা বডি যেখানে মাথা, পা, হাত কিচ্ছু নাই। তো কি আছে? শার্ট পাইছে, ফুল প্যান্ট এর ছেড়া ছেড়া অংশ পাইছে। শার্টের পিছনের অংশে পিঠের চামড়া লেগে আছে। ওর শার্ট যে এইটা কিভাবে বুঝছে? এইটা আম্মুকে শিখায় দেওয়ার পর আম্মু জিজ্ঞাস করছে। কলের ঐপাশ থেকে উত্তরগুলো ছিল এইরকম:
এক আলাদা রুমে নাকি সবার ড্রেসগুলো খুব আলাদা আলাদা করে সিকিউর করে রাখছে, আলাদা আলাদা করে অনেকের পায়ের আঙুল, হাতের আঙ্গুল, কান এইরকম অংশও রাখা আছে ক্লাস ভিত্তিক। মানে ক্লাসগুলো ঘেঁটে যা যা পাইছে এগুলো সব একত্রে রাখা হইছে এমন কিছু বুঝাইছে।
আমার এগুলো স্বপ্নের কথার মতো লাগতেছিল, বিশ্বাস হচ্ছিল না, মিরসাদের চাচী বলতেছিল আর আমরা শুনতেছিলাম, মনে হচ্ছিল কোনো গল্প, কোনো থ্রিলার মুভির ট্রেইলার!
মিরসাদের মামা আর নানা আজকে গেলো খোঁজ নিতে, আজকে বিকালে তারা ঢাকা পৌঁছাইছে মাত্র। তারা আজকে লা*শ শনাক্ত গেছে কারণ স্কুল কমিউনিটি থেকে কল আসছে, তাঁরা বলছে অন্তত একবার দেখে যান কোন অংশ পান কিনা! আমরা সবাই তো লা*শ এর ছিটে ফোঁটাও পাবো ধরেই নিছিলাম, বুঝাই ফেলছিলাম মনকে সবাই!
তারপর: গেলো লা*শ শনাক্ত করতে, দেয়ালে টাঙ্গানো পেইজ দেখে এক্সাক্ট রুমটা নাকি প্রথমে খুঁজে বের করতে হইছে। অনেক হাসপাতালে নাকি রাখা হইছে বডি, চিকিৎসা + লা*শ একসাথে কয়েকটা হাসপাতালে রাখা হইছে। ওরা গেছিলো ন্যাশনাল বার্ন ইনস্টিটিউট আমার যতটুকু মনে আছে, আরও কি কি হাসপাতালের নাম বলছিল এতো কিছু আমার মনে নাই। ঐখানে নাকি ডিএনএ ম্যাচ করে, ক্লু দেখে দেখে সব মিলে গেলে দেহ হস্তান্তর করা হচ্ছিল। হাসপাতালে গিয়ে অন্য গার্ডিয়ান থেকে জানতে পারে যে: এখন সর্বমোট ৬ টা দেহ শনাক্ত সম্পন্ন হইছে!
সব ক্লাস ভিত্তিক বক্স থেকে ক্লাস 1 (সেকশন নাকি কয়েকটা আছে, তো এগুলো হয়তো সেকশন আকারে সাজানো ছিল সব, উনি বয়স্ক মানুষ এতো বুঝাই বলতে পারে নাই মোবাইলে) এর বক্সে আঙুল, কান যা যা আছে অর্থাৎ দেহের যা যা অংশ ক্লাসরুমে পাইছে আরকি সবগুলো থেকে আলাদা আলাদা স্যাম্পল সংগ্রহ করছে, কিন্তু একটা স্যাম্পলও মিলেনি আন্টির ডিএনএ এর সাথে, মাইশার ডিএনএ এর সাথে। যারা কর্মরত ছিল তাদের ব্যবহারও নাকি তেমন ভালো ছিল না , এই বিষয়ে লিখতেছিনা আমি।
(উল্লেখিত যে: আন্টি থেকে ডিএনএ স্যাম্পল উনি যখন আইসিইউতে জীবিত ছিলেন তখন নিয়ে রাখা হইছিলো।)
তারপর দেখলো সব সংগ্রহীত শার্ট ঘেটে, একটা শার্টে ঝাপসা লিখা আছে : মিরসাদ ইসলাম আযান! আযান নামটা আমি দিছিলাম, এইটা রেখে দিছিল আংকেল আন্টি। কি সুন্দর নাম না? যেমন নাম তেমনই রহমতের নূরের মতো সুন্দর ছিল আমার ভাইটা, একদম গুলুমুলু!
ওই শার্টের পিছনে পিঠের অংশে লেগে আছে মাংস আর চামড়া। আন্টি আর ওর বোন মাইশা এর সাথে ডিএনএ টেস্ট করছে শার্টে লেগে থাকা মাংস, চামড়ার অংশ থেকে। আল্লাহ্ এর রহমতে এই স্যাম্পল মিলে গেছে, না মিললে এই শার্ট নিতে পারতো না ফ্যামিলি। এই শার্টে লেগে থাকা চামড়ার অংশ ছাড়া আমার ছোট ভাইয়ের দেহ হিসেবে আর কিচ্ছু নাই, আর কিচ্ছু নাই। এইটাই আমার ছোট্ট ভাইয়ের শরীর।
এই শার্ট দিয়েই জানাজা হবে আমার ভাইয়ের, এইটাই দাফন হবে কবরে।
ওহ্ আল্লাহ্ আমি তোমার পাপি বান্দাহ, আমার ছোট্ট ভাইটা তো নিষ্পাপ ছিল। আমি তোমার কাছে জানতে চাই কেনো এমন মৃত্যু আমার ছোট ভাইরে দিলা?
— Aminul Montasir
[ বি:দ্র: ছেলের শোকে মিরসাদের মাও ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি র-জি‘ঊন। আল্লাহ তাদের উভয়কে ফিরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করে নিন। আ-মীন! ]