11/12/2022
আমাদের কারো কারো বাচ্চা খুব দুষ্টু প্রকৃতির— পুরো ঘর মাতিয়ে রাখে। ঘরকে অগোছালো করে রাখার অঘোষিত দায়িত্ব পালনে তারা বদ্ধপরিকর। সারাদিন প্রশ্ন করে বেড়াবে— এটা কী, ওটা কী, এটা এমন কেনো, ওটা এরকম নয় কেনো। আমরা বিরক্ত হই আর বলি— বাবা! একটু তো শান্তি দিবা, তাই না? সারাটাদিন জ্বালিয়ে মারা লাগবে?
আবার, আমাদের কারো কারো বাচ্চা একেবারে কথাই বলে না। বেড়ে উঠার স্বাভাবিক যে গতি, সেটা তার মাঝে অনুপস্থিত। খেতে চায় না, কোনোকিছুতেই তার কোন রা থাকে না। আমরা খুব করে চাই— ও সারাদিন কথা বলুক, ঘর মাতিয়ে রাখুক, জিনিসপত্র উলোটপালোট করে পুরো ঘরদোর নাস্তানাবুদ করে রাখুক, প্রশ্ন করতে করতে আমাদের ক্লান্ত করে দিক। কিন্তু ও কোন কথাই বলে না৷ বাড়িতে আস্ত একটা বাচ্চা আছে তা বোঝার কোন উপায়-ই থাকে না!
আমাদের বাবা-মা'রা কেনো দিনের মধ্যে আমাদের এতোবার ফোন দেয় তা নিয়ে আমাদের অনেকের বিরক্তির সীমা থাকে না। কতোবার বাবা-মা'র ফোন কেটে দিই দিনের মধ্যে তার কোন ইয়ত্তা নেই। ফোন রিসিভ করে বলি, 'এতোবার ফোন দেওয়া লাগবে কেনো?'
আবার, আমাদের অনেকের হয়তো বাবা নেই, কারো নেই মা। কারো আবার দুজনের একজনও বেঁচে নেই। আমরা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকি ফোনের দিকে— বাবা-মা'র নাম্বার থেকে একটা ফোন যদি আসতো! ফোনের ও'প্রান্ত থেকে স্নেহমাখা গলায় যদি আরেকবার কেউ বলতো, 'খেয়েছিস কিছু, বাবা?'
ভাইদের সাথে আমাদের অনেকের দা-কুমড়ো সম্পর্ক— কেউ কারো মুখ না দেখতে পারলেই বাঁচি।
অন্যদিকে, এমন কতোক আছি যারা একটা আপন ভাই নেই বলে কী যে এক শূন্যতা অনুভব করি হৃদয়ে!
বোনদেরকে আমরা অনেকেই বোঝা মনে করি। কেউ কেউ বলি— আপদ!
আবার, একটা বোনের জন্য আমাদের কতোকের কতো হাহাকার! ইশ, যদি আমার একটা বোন থাকতো দুনিয়ায়!
দুনিয়া কেমন অদ্ভুত যেন! যার থাকে সে বোঝে না মর্ম, যার নেই বা কোনোদিন থাকবে না— তার হৃদয়-ভর্তি হাহাকার!
আপনার যা আছে তা মহান রবের দেওয়া নিয়ামত। বাস্তবতা হচ্ছে— সেই নিয়ামত একদিন অতি-অবশ্যই হারিয়ে যাবে কিংবা ফুরিয়ে যাবে। হারিয়ে যাওয়ার আগে কিংবা ফুরিয়ে যাওয়ার আগে সেগুলোকে যত্নের কোন ত্রুটি রাখবেন না। বিশ্বাস করুন— সম্পর্কের চাইতে মজবুত বাঁধন দুনিয়ায় আর কিচ্ছু নেই।