
12/02/2025
বুড়িগঙ্গার গল্প: অতীতের ডাক
একসময় ঢাকার বুকে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা ছিল শহরের প্রাণ। দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই নদীজুড়ে শুরু হতো ব্যস্ততা। ছোট ছোট পালতোলা নৌকা, পণ্যভর্তি বড় জাহাজ আর মাঝিদের কণ্ঠে ভেসে আসা ভাটিয়ালি গান—সবকিছু মিলে বুড়িগঙ্গা ছিল যেন এক চলমান জীবনের চিত্র। নদীর পানি ছিল স্বচ্ছ, আর শিশুরা বিকেলে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আনন্দে ভাসত ঠান্ডা জলে।
সেই সময়ের ঢাকার মানুষ এই নদীকে মা বলে ডাকত। তাদের জীবনযাপনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বুড়িগঙ্গার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দূর থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এই নদীর ওপর নির্ভর করেই পণ্য নিয়ে আসত। গোধূলি বেলায় বুড়িগঙ্গার পাড়ে হাঁটতে গিয়ে দেখা যেত নদীর জল রোদে চিকচিক করছে, আর পাশের গাছের পাতায় ভেসে আসা হাওয়ায় মন জুড়িয়ে যেত।
কিন্তু সময় বদলে গেল। শহর বড় হলো, মানুষ বদলে গেল। নদী তার গুরুত্ব হারাতে শুরু করল। কারখানার বর্জ্য মিশে গেল পানিতে। সেই স্বচ্ছ জল কালো হয়ে গেল, আর বুড়িগঙ্গার কণ্ঠ যেন রুদ্ধ হয়ে গেল। মাঝিদের গান থেমে গেল, শিশুরাও নদীর ধারে আর আসে না।
আজকের বুড়িগঙ্গা ক্লান্ত, ক্ষতবিক্ষত। কিন্তু তার বুকের ভেতর এখনো জাগে অতীতের স্মৃতি। যেন গভীর রাতে সে ঢাকার আকাশের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, "আমাকে বাঁচাও... আমি আবার সেই পুরোনো বুড়িগঙ্গা হতে চাই।"
বুড়িগঙ্গা আজ শুধু একটা নদী নয়, সে এক ইতিহাস—যে হারিয়ে যেতে চায় না!