23/09/2025
৩০টা দেবে কেন? মাত্র ৩টা দিয়েই তো জমাতের চেয়ে ডের বেশি হুজুর পাওয়া যাচ্ছে। দাঁড়িও লম্বা, শরীরজুড়ে গোল জুব্বা, সেই নুরানি চেহেরা মাশাআল্লাহ। ৩টি দিয়ে যেখানে এতো এতো আসল হুজুরই পাওয়া যায়, সেখানে ৩০টা দিয়ে জমাতের নকল ও অর্ধমোল্লাদের পেছনে দৌড়ার কোনো মানে আছে বিএনপির?
মির্জা ফখরুল সাহেব একটা কথা ঠিক বলেছেন, “জমাত যতো না বড়ো শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।” মির্জা ফখরুল সাহেবরা বুঝেছেন যে, দেশের আসল শক্তি হচ্ছে কওমিরা। যখন ওলামা সম্মেলনের তরফে কওমি সমর্থনের নিশ্চয়তা পেলেন তখনই সাক্ষাৎকার দিয়ে জমাতে “না” করে দিলেন।
এ রকমটা শেখ হাসিনার আমলেও হয়েছিল। জমাতের বিচার শুরু হবে হবে অবস্থা। ভরসা পাচ্ছিল না হাসিনা। সেই ২০১২ সালেই একদল ওলামা হযরাত শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন। হাসিনা হুজুরদের পা ছুঁয়ে সালাম করে, বাপ ডাকে; নিজের বাবা-মাকে হারানোর কথা কান্না মিশিয়ে হুজুরদের সামনে তুলে ধরে এবং হুজুররাই তার “বাপ-মা সব” একথা বলে নিজের মেয়ে মনে করে সহযোগিতার কামনা করে। নিজেকে একজন নিষ্ঠাবান ও ইবাদতগুজার আল্লাহর বান্দী দাবি করে শেখ হাসিনা ইসলাম, মুসলিম স্বার্থ, শরীয়ত ও কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কিছু করবে না বলে দৃঢ়তার সাথে ওয়াদা করে।
হৃদয়বান হুজুরদেরও মনে গলে যায়। কয়েকটা সতর্কবাণী, ওয়াজ-নসীহত ও স্নেহভরা কথা বলে চলে আসেন। সেই থেকে লাই পেয়ে গেল হাসিনা। শুরু করে কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। একে একে ফাঁসি দেয় বিরোধী দলীয় নেতাদেরকে। হ্যাঁ, হাসিনা কিন্তু হুজুরদের সাথে ওয়াদা ঠিকই রক্ষা করেছিল। দাবি অনুযায়ী ফতওয়া বিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছিল। ইসলামের খেদমতও করেছে বেশ; থানায় থানায় মসজিদ নির্মাণ করেছে, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়েছে, হাইকোর্ট থেকে মুর্তি সরিয়েছে এবং ধোলাইখালের নিজের বাপের মূর্তি নির্মাণ বন্ধ করেছিল। এমনকি কাদিয়ানিদেরকে অমুসলিম ঘোষণার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং এর জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ আয়োজন করে সরকারের ওপর “চাপ প্রদর্শনে”র আয়োজনও করতে বলেছিল। যাতে আন্তর্জাতিক মহলকে বুঝতে দিতে পারে, জনগণের চাপের মুখে কাদিয়ানিদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করতে হয়েছে, করার কিছু ছিল না।
আর হুজুরদের খুশি করার জন্য বেশি কিছু লাগে না। একটা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরে আসবেন, মাথায় কওমি ধারার টুপি দেবেন, বক্তব্যের শুরুতে শুদ্ধ করে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম পাঠ করবেন, বক্তব্যের মাঝখানে একট-আধ চরণ উর্দু কবিতা পড়বেন। হেই মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ। নেতা চাই তো এমনই, ওয়াহ ওয়াহ। এসব করে ওলামা সম্মেলন থেকে একটা লাইসেন্স তারা পেয়ে গেল। সেই লাইসেন্সের নতীজা কী? “চরমোনাই ভণ্ড”। এই হচ্ছে ওলামায়ে কেরামের সমর্থনের ফল।
জমিয়তের নাম ধারণকারী কিছু কুলঙ্গারের মনে যেন ঈদের আনন্দ বইছে বিএনপির আত্মস্বীকৃত চাঁদাবাজ নেতা অ্যানি কর্তৃক “চরমোনাই ভণ্ড” আখ্যয়িত করায়। চরমোনাইয়ে ভণ্ড কে? এখানে সাইয়েদ ইসহাক (রহ.) আছেন, আছেন সাইয়েদ ফজলুল করীম (রহ.)। তাঁরা কি আল্লাহর অলী নন? আল্লাহর অলীদের সাথে যারা যুদ্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে তো স্বয়ং আল্লাহ যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই জমিয়তিরা কোন ইসলাম ধারণ করে? হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইসলাম কি সেই শিক্ষা দেয়? তাহলে এদের মনে এতো আনন্দ কীসের?
জমিয়তের গণ্ড মূর্খগুলো জমাতিদের ছড়ানো একটা পত্রিকা কাটিং শেয়ার করে চরমোনাইকে মওদূদীবাদী বানিয়ে দিতে চায়। এসব মূর্খদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই যে, ঘটনা সত্য, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে চরমোনাইয়ের দাদা হুজুর সাইয়েদ এসহাক (রহ.) জমাতের এমপি প্রার্থী মাওলানা আবদুর রহীম সাহেবের নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিলেন। কারণ সাইয়েদ ইসহাক (রহ.) ছিলেন তৎকালীন আসল “জমিয়তে ওলামায়ে ইসরাম ও নেজাম ইসলাম পার্টি”র পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক সিনিয়র নায়েবে আমীর। জমাত প্রার্থীর প্রচারণায় গিয়েছিলেন তার কারণ হচ্ছে, সেই নির্বাচনে জমাত ও নেজামে ইসলাম পার্টি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছিল।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজকের জমিয়ত নামধারী কংগ্রেসিরা সেই নির্বাচনে জোট করেছিল আওয়ামী লীগের সাথে। ১৯৬৯-৭২ সালের এই জমিয়তের রাজনীতি ছিল মুজিববন্দনায় ভরপুর। শেখ মুজিব যখন ভারতীয় প্রেসক্রিপশন সংবিধানে “ধর্মনিরপেক্ষতা” প্রক্ষেপ করে তখন এই জমিয়তিরা তার সমর্থনে কিতাবও লিখেছিল। কথা সত্য না মিথ্যা তা কবি মুসা আল-হাফিয লিখিত “মুক্তিযুদ্ধ ও জমিয়ত: জ্যোতির্ময় অধ্যায়” কিতাবটি পড়লেই বুঝতে পারবে, তারা সেই সময় কী পরিমাণ মুজিবপুজোয় লিপ্ত ছিল। একসময় মুজিব, তারপর এরশাদ সরকারে গিয়ে তাকে আমিরুল মুমিনীন ঘোষণা, অতঃপর বিএনপি। এদের পুরা ইতিহাসই তো লেজুড়বৃত্তির।
আপনারা বোধোয় খেয়াল করেননি, অ্যানি বলেছে যে, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩০ দফা সংস্কারপ্রস্তাব দিয়েছেন। উচ্চকক্ষ হবে। যেসব দল সংসদে নির্বাচিত হতে পারেন না তাদেরকে বিএনপি উচ্চকক্ষে পাঠাবেন।” তারপর বলল, “চরমোনাই ভণ্ড।” কেন? কারণ কী? চরমোনাইয়ের পীর সাহেব মাথা নত করেননি, সারাদেশের কোটি কোটি দীনপ্রেমক সংগঠিত মানুষের মাথা তিনি বিক্রি করে দিতে পারেননি নিজে বা তাঁর পরিবারের কয়েক ব্যক্তিবিশেষের জন্য বিএনপির আসননিশ্চয়তার প্রলোভনে। এটা হতো সাংঘাতিক রকমের প্রতারণা ইসলামি জনতার প্রতি। এই জনতা সংঘটিত হয়েছে পীর সাহেব বা জনকয়েক ব্যক্তিবিশেষের আসনপ্রাপ্তির জন্য নয়। এটা মর্যাদাপূর্ণ নয়, এটা সম্মানজনক নয়। এই ভিক্ষা পীর সাহেব নিতে পারেন না।
মরহুম পীর সাহেব হুজুর বলে গিয়েছেন, “ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা শরীয়া চাই, যদি শরীয়া দেন, তবে একটা আসনও দেওয়া লাগবে না। আর যদি শরীয়া না দেন তবে দুনিয়ার সকল এমপি-মিনিস্ট্রি দিয়েও কোনো লাভ হবে না।” এই হলেন সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.)। বর্তমান পীর সাহেবগণ তাঁরই উত্তরসূরি, যোগ্য উত্তরসূরি। এই সাদাতের বংশ হারাম খাবেন না। দুঃখ হয় ওলামায়ে কেরাম সম্মেলন করে বিএনপিকে “ব্লাংক চেক” দিয়ে দিয়েছেন। কোনো শর্তারোপ করেননি তাদের প্রতি, কোনো সুনির্দিষ্ট দাবি-দাওয়া পেশ করেননি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছাড়া এই সম্মেলনের কোনো বার্তা কি আছে? আ্যানির ধৃষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে সেই সম্মেলন দায় নেবে নাকি আনন্দ উদ্যাপন করবে? এই তাহলে আলেমদের শান-মান?