03/10/2023
লন্ডনের ভিক্টোরিয়া ডালহৌসিতে আজও রয়েছে একটা কাঠের খেলনা। খেলনাটির নাম টিপুর বাঘ। ব্রিটিশ এক সৈন্যের কলার টেনে ধরে আছে একটা ভয়ানক হিংস্র বাঘ। এটা কিন্তু কোন মামুলি খেলনা নয়। বাঘটার শরীরের ভিতরে রয়েছে একটা পাইপ অর্গান। আর হাতলটা ঘুরালে শোনা যায় বাঘের গর্জন সাথে সৈনিকের আর্তনাদ। আবার সৈনিকের হাতটা উঠানামা করে। ১৮ শতকে এ ছিল একেবারে অত্যাধুনিক পদ্ধতি। এই বাঘ আসলে টিপু সুলতানের প্রতীক। তিনি নিজেইতো ছিলেন মহীশুরের বাঘ। আর তার প্রতীকী বাঘই যেন খতম করে ফেলছে শত্রু ইংরেজদেরকে। শ্রীরঙ্গপতন যুদ্ধে যখন টিপু সুলতানের মৃত্যু হয় তখন ব্রিটিশরা এই খেলনা উদ্ধার করে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। সঙ্গে করে নিয়ে যায় টিপুর বাঘ, খোদাই করা সোনার সিংহাসন, তলোয়ার আরও কত কি। সোনার সেই সিংহাসনটা টুকরো টুকরো করে ভেঙে এক একটা টুকরো এক একজনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বড় বাঘের মাথাটা উপহার দেওয়া হয় রাজা তৃতীয় জর্জকে। আর সিংহাসনের মাথায় মনিমানিক্য বসানো সেই পাখিটা সেটা দেওয়া হয় কুইন কারলটকে। সব দামি দামি জিনিসপত্র নিমেষের মধ্যে সকলে পকেটে পুড়ে দেওয়ার পর বাকি রয়ে গেল এই খেলনাটা। এটাকে তো ভেঙে চুরে আর কোন দাম পাওয়া যাবে না। তাই এটা জায়গা পেল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লিডেন হলের মিউজিয়ামে। টিপু সুলতান ছিলেন ব্রিটিশদের ত্রাস। সেই টিপুকে নিয়ে অনেক রকমের রং মেশানো হিংস্র বর্বর কাহিনী ব্রিটেনে তখন লোকের মুখে মুখে ছিল। বাচ্ছারা দুষ্টামি করলে ব্রিটিশ ম্যামরা তাদের বলতো আর একটু দুষ্টামি করলে কিন্তু টিপসুলতান চলে আসবে। তাই টিপুর সেই খেলনা ব্রিটিশরা মিউজিয়ামে রেখে দেশবাসীকে বোঝাবার চেষ্টা করেন দেখো ভাই মহিশুরের সেই টিপু সুলতান কতটা ভয়ংকর ছিল। দেখো আমাদের সৈনিকের মৃত্যু নিয়ে সে খেলনা বানিয়েছে। বহু বছর এক এক মিউজিয়াম ঘুরে সেটা এসে পৌঁছায় ভিক্টোরিয়ার মিউজিয়ামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জমান ব্রেশটের কবলে গোটা ব্রিটেন। লন্ডনে ক্রমাগত বোমা ফেলছে হিটলারের নাৎসি। এমন সময় চরম বোমায় ধসে পড়ল সেই মিউজিয়ামের ছাদ। আর টিপুর বাঘের উপরই পরল। খেলনার উপরের কাঠের অংশটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তাও খুব যত্ন করে ঠিকঠাক করে আবার মিউজিয়ামে ফেরত আনা হয়। আজ সেই মিউজিয়ামের অন্যতম সেই খেলনাটা। স্কুলের বাচ্চাদের জন্য সেটা হল মাস্টার।।
বি.দ্র: সংগৃহীত
Stay Curious SIS
'Tipu's Tiger', 1780s or 1790s, Mysore, India. Museum no 2545 (IS). © Victoria and Albert Museum, London