
06/04/2024
গ্যাংটক, ভারতের ২২তম রাজ্য সিকিমের রাজধানী শহর। শহরটি পূর্ব হিমারয় পর্বতমালায় অবস্থিত। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১,৬৫০ মিটার (৫,৪১০ ফুট)। শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ১,০০,০০০ জন। তাদের মধ্যে রয়েছে ভুতিয়া, লেপচা, কিরাটি এবং গোর্খাদের মতো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী। জানা যায় এ শহরের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রযেছে যা ১৮শ শতাব্দীর প্রারম্ভে শুরু হয়েছিল। মূলত, এটি একটি ছোট গ্রাম ছিল, তবে এটি ১৮৪০ সালে নির্মিত এনচে মনাস্ট্রি বা এনচে মঠ (Enchey Monastery) এর কারণে একটি তীর্থযাত্রী স্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ হয়। এনচে মনাস্ট্রি হল গ্যাংটকের নিকটে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রি। এটি লামা দ্রুপ্তব কার্পো (Lama Druptob Karpo) একজন প্রখ্যাত বৌদ্ধ গুরু দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মনাস্ট্রিটি সিকিমের রক্ষাকবচ গুরু পদ্মাসম্ভব (Guru Padmasambhava) বা গুরু রিনপোচে (Guru Rinpoche) এবং ইয়াবডিয়ান (Yabdean) পূজার জন্য ডেডিকেটেড ছিল। এনচে মনাস্ট্রি সিকিমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র মনাস্ট্রির মধ্যে একটি এবং তার শান্ত পরিবেশ, চমৎকার স্থাপত্য, এবং ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য অতি পরিচিত। ফলে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের ভ্রমন পিপাসু পর্যটক এবং বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করে।
১৯শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে, নামগ্যাল (Namgyal dynasty) রাজবংশের শাসনের সময় গ্যাংটক সিকিমের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮৯৪ সালে সিকিমের তৎকালীন ক্ষমতাসীন চোগিয়াল থুটোব নামগিয়াল সিকিম রাজ্যের রাজধানী গ্যাংটকে স্থানান্তরিত করেন। ২০ শতকের গোড়ার দিকে, তিব্বতের রাজধানী লাসা এবং ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতার মতো শহরের মধ্যে বাণিজ্য পথে গ্যাংটক একটি প্রধান যাত্রা বিরতির স্থান হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর, সিকিম ভারতে যোগ না দিয়ে একটি স্বাধীন রাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। তখনও এই স্বাধীন সিকিম রাজ্যের রাজধানী ছিল গ্যাংটক। তবে, এটি খুবই দুর্গম অঞ্চল এবং সিকিম মনার্চির বা রাজা কর্তৃক প্রবেশ নিষেধাক্কা নীতি আরোপিত থাকায় ২০শ শতাব্দির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আইসোলেটেড ছিল।
১৯৭৫ সালে স্বাধীন সিকিম ভারতের সাথে সংযোগ চুক্তি স্থাপন করে এবং ভারতের ২২তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়, এবং গ্যাংটক নতুন গঠিত রাজ্যের রাজধানী হিসেবে অব্যাহত থাকে। তারপর থেকে, এই গ্যাংটক শহরটির দ্রুত উন্নয়ন আর এ অঞ্চলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য, দৃষ্টি নন্দন বৌদ্ধ মনাষ্ট্রি, বৈচিত্রময় সংস্কৃতি ইত্যাদি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করতে থাকে ।