08/11/2024
#বইপড়া বিষয়ে রায়ান হলিডের ১৭ পরামর্শ
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪,
রায়ান হলিডে একজন খ্যাতনামা লেখক। তার বহুল পঠিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে, The Obstacle Is the Way, Ego Is the Enemy, The
Daily Stoic, Conspiracy and Stillness is the Key। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫ হলেও নিজেকে তিনি বলেন, একজন পেশাদার পাঠক। পড়ার জন্য তিনি বছরভর যে ১৭ নিয়ম অনুসরণ করেন সেগুলোই পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন।
১. সবসময় একটি বই রাখুন। পড়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো একটি বই সঙ্গে থাকা। তাই সবসময় একটি বই সঙ্গে রাখুন। আমি গ্রামি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এবং সার্জারি করার আগেও বই পড়েছি। আমি প্লেনে ও সমুদ্রসৈকতে, গাড়িতে এবং গাড়ি যখন টো ট্রাক বহন করে নিয়ে যায় সবসময় পড়েছি। যদি সঙ্গে বই রাখার অভ্যাস থাকে তবে পড়া হয়েই যায়।
২. বই পড়ার জন্য আমি নির্ভর করি কাগজের বই এবং শুধু কাগজের বই।
৩. এমন না যে, অডিও বইয়ে আমার কোনো সমস্যা আছে। যদি এটা পাঠের আনন্দ দেয় তাহলে আমি এর পক্ষেই আছি। আমি যেটা মনে করি তা হলো, কাগজের বইয়ের বাহ্যিক গঠনের মধ্যে একটা বিশেষ অনুভূতি কাজ করে। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি দারুণ বই পড়েছি ম্যারিয়ান উলফের লেখা ‘প্রুস্ত অ্যান্ড দ্য স্কুইড’।
৪. পড়ার জন্য আমি পেপারব্যাকের বইয়ের পরিবর্তে হার্ডকভারের বই অপেক্ষাকৃত বেশি পছন্দ করি।
৫. পড়ার সময় একটি কলম হাতের কাছে রাখুন। পড়াটা আরও ভালো হয় যদি আপনি নোট নেন।
৬. পঠিত বই থেকে নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় এমন জিনিস রেফারেন্সসহ টুকে রাখুন। (এর ফলে প্রয়োজনের সময় বই উল্টে আবার খোঁজার সময় যেমন বাঁচবে তেমনি শুধু এই সংগ্রহটি উল্টেপাল্টে দেখেও নিজেকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করা সম্ভব হবে।)
৭. চিরন্তন বইগুলো এমনি এমনি চিরন্তন বই হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। জীবন যেহেতু ছোট তাই সময় নষ্ট করতে না চাইলে চিরন্তন বই পড়া ভালো।
৮. যেকোনো বই পড়ার পর ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন, এরপর কোন বই পড়া উচিত। এভাবেই নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ওপর জ্ঞানের ভিত গড়ে ওঠে।
৯. যে লেখকের লেখা আপনার ভালো লাগে তার সব বই পড়ার চেষ্টা করুন। আমি তাই করি।
১০. একটি বই পড়ার অন্তর্নিহিত কারণ হলো, কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া। বইয়ের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করে যেসব ব্লগ ও ভøগ হয় তা আপনার কাজে নাও আসতে পারে।
১১. আপনি চান এমন বই দেখলেই কিনে ফেলুন। দাম নিয়ে ভাববেন না। বইপড়া বিলাসিতা নয়। এটা প্রয়োজনীয়। যদি একটি বই থেকে জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম একটি আইডিয়াও পান তাহলেও এটি বেশ ভালো বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
১২. এটা শুনতে অতিকথন মনে হতে পারে। কিন্তু ওয়ারেন বাফেট মনে করেন তার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য গড়ে উঠতে পেরেছে একটি বইয়ের কারণে। তিনি যখন উনিশ বছরের একজন তরুণ ছিলেন তখন বেনজামিন গ্রাহামের দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইনভেস্টর বইটি কিনেছিলেন মাত্র ১.৩০ ডলারে। ১৯৫০ সালের সেই বিনিয়োগ তাকে এনে দিয়েছে ১০৮.৭ বিলিয়ন ডলারের ধনভা-ার। এই ধনভা-ার অবশিষ্ট আছে অবশ্য ৩৭ বিলিয়ন ডলার দান করার পরে। কী বলা যায়, মোটেও খারাপ বিনিয়োগ না, তাই না?
১৩. বই কখন আপনাকে কী ফেরত দেবে, তা আপনি ভাবতেও পারবেন না। আমি ২০০৬ সালে অ্যামাজন থেকে ৮.২৫ ডলারে ‘মেডিটেশনস’ কিনেছিলাম। ওই বইয়ের দর্শন শুধু আমাকে জীবন সম্পর্কেই শেখায়নি বরং লেখার শিল্প, কাজ করা এবং মানুষের সম্পর্কে কাজ করা শিল্পও শিখিয়েছিল এখন যার ওপরে আমি বই লিখছি। মোটেই খারাপ বিনিয়োগ বলা যাবে না, তাই না?
১৪. বই পড়লেই হবে না, পুনঃপঠন জরুরি। স্টয়িক দর্শনের একটি বিখ্যাত উক্তি হলো, আমরা কখনো একই নদীতে দুবার গোসল করতে পারি না। বই হয়তো পরিবর্তিত হয় না। কিন্তু আপনি তো পরিবর্তিত হন। তাই বইয়ের পুনঃপাঠ জরুরি।
১৫. আমি আগেই বলেছি, দ্রুতপঠন একটি ভ্রান্ত ধারণা। আপনার যেটা দরকার তা হলো, প্রচুর পরিমাণে পড়ার অভিজ্ঞতা।
১৬. যদি কোনো বই ভালো না হয় তাহলে সেটা পড়া বন্ধ করুন। একজন ভালো পাঠক প্রচুর বই পড়তে পড়তে বাদ দেন। যে বই পড়ে আনন্দ পাবেন না
তেমন বই পড়ে সময় নষ্ট করার মতো জীবন অত দীর্ঘ নয়।
১৭. বইটি ভালো না লাগলে কখন ছাড়তে হবে তার বিভিন্ন নিয়ম আছে। এর মধ্যে আমার পছন্দের নিয়ম হলো, একশ থেকে আপনার বয়স বাদ দিলে যে সংখ্যা থাকে ততসংখ্যক পৃষ্ঠা পড়ার পরও যদিও বইটি আপনাকে না টানে তাহলে সে পড়া বাদ দিতে পারেন।
রূপান্তর (সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত) : এজাজ পারভেজ
©