31/08/2025
শায়েখ আহমাদুল্লাহকে আমি আগে থেকে তেমনভাবে চিনতাম না, বয়সে তিনি হয়তো আমার অ-নে-ক ছোট হবেন তবে মনে হলো তিনি জ্ঞান ও উদারতায় আমার অনেক বড়। ইদানীং তাঁর একটি উদ্যোগ প্রবাসেও আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো—দেখলাম তিনি জন্মদেশে তরুণদের মোবাইল ফোন মেকানিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। নানা ধরণের হাতের কাজ শেখাচ্ছেন। শুনেছি তিনি আরও নানা উদ্যোগ নিয়েছেন, যার মাধ্যমে বেকার যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলছেন, যেন তারা স্বাবলম্বী হতে পারে।
শায়েখ আহমাদুল্লাহর এই প্রচেষ্টাকে আমি একটি মহৎ উদ্যোগ বলবো। এর আগে আমার জন্মদেশে আর কোনো ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব বা ইসলামিক আলোচক এত বৃহৎ আকারে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তাঁর মতো আধুনিক মনমানসিকতার আলেম আমার জন্মদেশে আছে—এটা আমারও জানা ছিল না।
আজ বিদেশের প্রতিটি দেশ আমাদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। কারণ, যারা বিদেশে যায় তাদের প্রায় ৯৮% অদক্ষ, সাধারণ হাতের কাজও জানে না। আর এই কারণেই আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষ যে পরিমাণ বেতন পায়, আমরা তার চেয়ে অনেক কম পাই। সারা পৃথিবীতে মোবাইল বা ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশন মেকানিকদের যে কি পরিমাণ চাহিদা আছে, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। যদি সরকার এই খাতকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে দক্ষ মেকানিকদের বিদেশে পাঠাতে পারে, তবে আমাদের জনসংখ্যা জনশক্তিতে রুপান্তরিত হবে।
আহমাদুল্লাহর কাজ দেখে আমার চীনা সরকারের একটি পদক্ষেপের কথা মনে পড়ে গেল। চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের অনেকেই আগে সময় কাটাতো আড্ডা মেরে, তসবীহ ও তাবিজ বিক্রি করে কিংবা আমাদের দেশে যেমন বলা হয় “মিলাদ পড়িয়ে খাওয়া”—সে ধরণের জীবনযাপন করতো। পরবর্তীতে চীনা সরকার সেখানে কিছু নীতি প্রণয়ন করে একটি সিস্টেম তৈরি করলেন, যার ফলে সবাইকে কাজে যুক্ত করা হলো এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি ও বিভিন্ন খাতে দক্ষ করে তোলা হলো। আজ চীন উইঘুর জাতির লোকেরাও আমার জন্মদেশ থেকে অন্তত কয়েক যুগ এগিয়ে আছে। যারা মূল চীন ভ্রমণ করেননি, তারা হয়তো আমার কথার গভীরতা বুঝবেন না, আর উইঘুর মুসলিমদের নাম হয়তো শুনেছেন কিন্তু তাদেরকে দেখার সৌভাগ্য আজো কারো হয়নি।
একজন আলেম বা হুজুরের দায়িত্ব শুধু ওয়াজ করা নয়—যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। যেমনটি আহমাদুল্লাহ সাহেব করে দেখিয়েছেন। তাঁর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যারা পাস্ করবে এবং অন্তত দু বছর কাজের দক্ষতা থাকবে, আমি বনি আমিন ওয়াদা করলাম তাদের থেকে প্রতি বছরে অন্তত দুজনকে পশ্চিমা বিশ্বের যেকোন দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা আমি নেবো ইনশাআল্লাহ। আহমেদুল্লাহ হুজুরের জন্য আমার আন্তরিক শুভকামনা রইলো।