30/06/2025
চিরবিচ্ছেদ – এক পবিত্র ভালোবাসার শেষপত্র
(একটি হৃদয়ছোঁয়া ছোটগল্প)
প্রায় এক যুগ পর আজ আবার সেই পুরোনো ক্যাফেটায় বসে নীল। কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে—বৃষ্টি নামছে টুপটাপ। এক কাপ লাল চা তার সামনে ঠান্ডা হয়ে আছে বহুক্ষণ।
এই ক্যাফেটার কোণার টেবিলটা ছিল তাদের প্রিয়।
নীল আর রাই—দুজনের ভালোবাসার আঁচল ছুঁয়ে গিয়েছিল এই জায়গাটাকে।
সেইসব দিনগুলোতে রাই হেসে বলত,
“এই চায়ের দোকানটার চেয়ে বেশি কেউ আমাদের সম্পর্কের সাক্ষী না!”
তখন তারা দু’জনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে,
ভবিষ্যৎ মানে ছিলো—একটা চাকরি, একটা বাসা, আর একসাথে ঘুরে বেড়ানো।
ভালোবাসা ছিল নিখাদ, নিষ্পাপ—
কোনো চাহিদা ছিল না, ছিল শুধু একে অপরকে ধরে রাখার একরোখা ইচ্ছা।
কিন্তু সময় মানুষকে শুধু বড়ই করে না, জটিলও করে তোলে।
রাইয়ের পরিবার তাকে বিয়ে দিয়ে দিলো বিদেশে থাকা এক আত্মীয়ের সঙ্গে।
প্রতিবাদ করেছিল সে, চোখে জল নিয়ে বলেছিল নীলকে—
“চলো কোথাও পালিয়ে যাই।”
কিন্তু নীল পারল না।
সে চাইলেও রাইয়ের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিতে চায়নি।
সে চুপ করে বলেছিল,
“তুমি ভালো থেকো রাই… তুমি যেখানেই থাকো, আমার ভালবাসা থাকবে তোমার সঙ্গে।”
তারপর...
আর দেখা হয়নি।
শুধু বিদায়ের দিনে রাই একটা খাম দিয়ে গিয়েছিল।
তাতে লেখা ছিল:
> “নীল,
আমি যাচ্ছি, তোমার কাছ থেকে নয়, বাস্তবতার কাছ থেকে পালিয়ে।
জানি, একদিন তুমি অনেক বড় হবে, অনেক দূর যাবে…
কিন্তু কোথাও না কোথাও যদি কাঁদো, জানবে, আমিও কাঁদি ঠিক একই মুহূর্তে।
যদি কখনো ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন করো, আমি আছি উত্তর হয়ে।
ভালো থেকো…
রাই।”
চিঠিটার শেষ প্রান্ত ভিজে গিয়েছিল চোখের জলে—কে জানে, কার ছিল সেই অশ্রু।
আজ এক যুগ পর, নীল সেই ক্যাফের কোণায় বসে আছে,
সামনের চা ঠান্ডা, ঠিক যেমন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে তার ভেতরের হাসিগুলো।
রাই নেই, ফোন নম্বর নেই, ঠিকানা নেই—
কিন্তু আছে সেই ভালোবাসা, যা শেষ না হয়েও চিরতরে থেমে গেছে।
বাইরে বৃষ্টি…
নীল চায়ের কাপে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি ভালো থেকো, রাই… আমি এখনো ভালোবাসি, চুপচাপ।”
শেষ কথা:
সব ভালোবাসা মিলনের জন্য হয় না,
কিছু ভালোবাসা শুধুই চিরবিচ্ছেদ হয়ে থেকে যায়—
আর তাতেই হয়তো তার সবচেয়ে পবিত্র রূপ খুঁজে পায়।