
22/08/2025
বড়োই চিন্তার কথা!
আমি কয়েক দিন আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম।
হেডিংটা ছিল কানাডায় আসার আগে ভাবুন। সেই পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম অনেকেই কানাডায় আসার পর চাকরি মেনেজ করতে পারেন না বা কষ্ট হয়। এইসব ছিল আরকি।
সেই পোস্টে এক মূর্খ এসে সরাসরি তুই দিয়ে স্টার্ট করে কমেন্টে লিখলেন, "কানাডা অনেক ভালো দেশ তুই হিংসুক তাই চাস না আর কোন বাংলাদেশই আসুক"। হুবহু এইটা ওনার কমেন্ট ছিল।
আমিও তাঁকে কড়া একটা জবাব দিয়েছিলাম। ফলে এক পর্যায়ে আমি তাঁকে ব্লক করে দিয়েছি।
কানাডার বাস্তবতা মানে যোগ্য-অযোগ্যরা চাকরি খুঁজে পান না ইত্যাদি নিয়ে লিখলে একদল আসেন ঐরকম ভাষায় গালি দিতে।
আবার কানাডার যেসব ফেডারেল সুবিধা আছে সেগুলো যদি জানাই কারোর জানার জন্য আরেকদল এসে গালি দেয়।
আসল কথাটা হলো, কানাডায় সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। যেমন পৃথিবীর সব দেশেই থাকে। অনেকেই অভিযোগ করেন যে অনেকেই নাকি ভাবেন কানাডায় আসলে কিচ্ছু করা লাগবে না।
কানাডার সরকার নাকি তাদের সবকিছু করে দেবেন।
এই কথাটা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। সরকারের বেনিফিটস যাদের ইনকাম নেই বা কম তাদের জন্য। তারাই সব ধরণের সুবিধা পান। আর আমরা যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারা জীবন চাকরি করে যাচ্ছি আমরা কিন্তু এ টু জেট সুবিধা পাই না। কিছু কিছু পাওয়া যায় যেমন OHIP বা হেল্থ বেনিফিটটা। অথচ আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিমাসে সরকারের ট্যাক্স পে করি $1,040 CAD। আর আমার হাসবেন্ডও এর চেয়ে বেশি।
সুতরাং কানাডায় যারা চাকরি করেন বা মোটামুটি ভালো আছেন তাদের সবাইকেই সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়।
সবাইকেই কষ্ট করতে হয়।
এখন আসেন বাস্তব একটা উদাহরণ শোনেন:
গতকাল আমার হাসবেন্ড আমাদের বাড়ির পাশের মসজিদে যখন যোহরের নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন, তখন সেইসময় একটা জানাযার নামাজের আয়োজন হয়।
একজন বাঙালির লা* শ ছিল ওটা। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তো জানাযা শেষে হুজুর ঘোষণা দিলেন যে যদি কেউ এই ব্যক্তির কাছে কিছু দেনা পান বলুন, বা কোনো দুঃখ পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা করুন।
তখন আরেকজন বাঙালি দাঁড়িয়ে বললেন, আমি এখন খুবই কষ্ট পাইতেছি যে, গত বছর এই ছেলেটা আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিল কিন্তু সেটা আমার ক্ষমতা বাইরে ছিল। এখন আমি খুবই কষ্ট পাচ্ছি সাহায্য করতে না পারার জন্য। তিনি বলেছেন, এই ছেলেটা নাকি খুই মেন্টাল স্ট্রেসে ছিলেন।
গতকালকে যাঁর লা*শ জানাযা হলো তিনি একজন বাঙালি যার বয়স চল্লিশ বছর। তিনি বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন কানাডায় গত বছর।
ইনি কী ভিসায় এসেছিলেন বা কীভাবে কী করেছেন এসব কিছুই জানাযায় আলোচনা হয় নি।
যেহেতু তিনি গত বছর এসেছিলেন এবং খুবই মেন্টাল স্ট্রেসে ছিলেন তাতে ধারণা করাই যায় হয়তো আসার পর এ্যাসাইলাম সিক করতেও পারেন। ইমিগ্রান্ট হবেন সেটাও শিওর না। কীভাবে মা*রা গেলেন তাও সঠিক জানি না। অনেকে হয়তো জানেন বা বলতে পারবেন।
তবে এটা তো শিওর জীবনযুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক হতে হয়েছে তাঁকে। আজ তাঁর লা*শটা পর্যন্ত বাংলাদেশে যাচ্ছে না। কীভাবে যাবে? অনেক খরচ তো। আবার এখানে যে দাফন হচ্ছে তার ও অনেক খরচ। সেসব নাকি বাঙালি কমিউনিটিরা জোগাড় করেছেন বা করতেছেন।
যিনি চলে গেছেন তো গেছেনই। তিনি আর ফিরতে পারবেন না।
এই যাওয়ার আগে তাঁর কি কোনো ভুল ছিল সিদ্ধান্তে?
হতে পারে। আমি জানি না তিনি কোন ভিসায় বা কীভাবে এসেছেন। যদি ধরেন সবার মতো তিনি ভিজিট ভিসায় এসে এ্যাসাইলাম সিক করেছেন। তাহলে তো তাঁর এটাই ভুল ছিল শুরুতেই। আসার বিমানের খরচ থেকে শুরু করে দালালের টাকা, এখানে এ্যাসাইলাম আবেদন করতে যে উকিল নামের দালাল থাকেন তাদের টাকা, আছে প্রতিটা পদক্ষেপেই খরচ। করতে হয়েছে অনেক টাকা ব্যয়।
এখানেই তো শেষ না। বাড়ি থেকে আসার সময় এত্তগুলো টাকা মেনেজ করেছিলেন সেগুলোও তো হয়তো ধার-দেনা করতে হয়েছে। জমি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন উনি মা*রা গেছেন দেশে রেখে আসা পরিবারের কী হবে? ঐসব দেনা কে শোধ করবে? ঐত্তগুলো টাকা দিয়ে কি দেশে কিছু করা যাইতো না। গ্রামে কিছু হইত না?
এখন তো ঐ হিংসুক বলা ব্যক্তির মতো কেউ কেউ আমাকে বলতে আসবেন, আপনি চান না কেউ আসুক। আসুন। কে নিষেধ করেছে আসতে? এসে এভাবে মরবেন তাও কেউ একটু পরামর্শ দিলে তাকে নগ্ন ভাষায় গালি দেবেন।
টরন্টোর যে মেয়র অলিভিয়া সে তো এক যন্ত্রণার কারণ হয়ে গেছেন। এই অলিভিয়াকে বাঙালিরাই কিন্তু জেতায়ছেন। এখন বাঙালিরা বুঝবেন মজা। এই অলিভিয়া কথায় কথায় প্রোপার্টি ট্যাক্স বাড়ায় দেন। কিছুদিন আগে প্রোপার্টি ট্যাক্স বাড়ায়ছেন। আবার গতকাল ঘোষণা দিয়েছেন যে এ্যাসাইলামদের টানতে গিয়ে $107 মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার ঘাটতি পড়েছে।
অলিভিয়া কার্নির কাছে এই অর্থ চেয়েছেন। আর যদি কার্নি না দেন তাহলে অলিভিয়া আবারো একটা বিগ সাইজ প্রোপার্টি ট্যাক্স বাড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। হইছে তো? অলিভিয়াকে বাঙালিরা তো জিতিয়ে আনলেন। অথচ ডাগ ফোর্ডের ভাই রোব ফোর্ড যখন ছিলেন তিনি কখনোই এইসব বাড়াতেন না।
আর এদিকে ডাগ ফোর্ড বলেছেন, এ্যাসাইলামদের কেন হোটেলে বসিয়ে খায়াচ্ছো? তাদের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে দাও তারা কাজ করে খাবেন।
যাই হোক, কানাডায় আসার আগে ভাবুন। আপনি কতোটুকু স্ট্রেস নিতে পারবেন। কীভাবে নিজেকে দক্ষ বানাবেন কাজে টিকে থাকতে।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
কাজী হালিমা আফরীন
টরন্টো, কানাডা।
আগস্ট ২২, ২০২৫