28/09/2023
সুন্নতে নববীর আয়নায় জীবনের প্রতিচ্ছবি ! (১ম পর্ব)
একটি স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন, পূর্ণাঙ্গ অবয়ব ধারণ করা যায় এমন আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করালে প্রতিটি মানুষ মাথার চুল থেকে নিয়ে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশ নিখঁুতভাবে দেখতে পারে। শরীরের কোন অংশে কতটুকু ত্রুটি আছে সহজেই তা নির্ণয় করা যায়। আয়না যদি অপরিচ্ছন্ন, অপূর্ণাঙ্গ হয় তার সামনে নিজেকে মেলে ধরলে নিজের সামগ্রিক ত্রুটি কখনও চিহৃিত করা যায় না। মহান আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনকে আয়নাসরুপ পৃথিবীর সমস্ত মাখলুকের জন্য স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও উন্নত করেছেন। সূরা কলামের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:‘ নিশ্চয়ই তুমি চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছ’। প্রতিটি মানুষকে সফলতা অর্জন করতে হলে নবীজি সা: এর প্রতিচ্ছবি নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:‘ বস্তুত রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ—এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্বরণ করে’(সূরা আহযাব:২১)। নবীজি সা: এর আদর্শ সরূপ আয়নার সামনে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ যেকোন কিছু মেলে ধরলে বড় থেকে ছোট সকল ত্রুটি অবলোকন করা যায়। ব্যক্তি দিয়ে শুরু করা যাক:—
(১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া এর মাথার চুলের দৈর্ঘ এক বর্ণনা অনুযায়ী কানের মাঝখান পর্যন্ত এবং অন্য বর্ণনা অনুযায়ী কাধ পর্যন্ত এবং অপর বর্ণনা অনুযায়ী কানের লতি পর্যন্ত ছিল। কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করলে পূর্ণ মাথা মুন্ডাতেও পারবে যেমন নবীজি সা: বিদায় হজ্জ্বে কুরবানী সম্পূর্ণ করার পর নিজের মাথা মুন্ডন করিয়েছিলেন। তবে কেউ যদি চুল ছেটে ছোট করে রাখতে চায়, তাহলে গোটা মাথার চুল সমানভাবে বরাবর করে রাখতে হবে। এই ৩টি পদ্ধতির বাইরে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত কোন মুসলমানের জন্য বিপরীত অবস্থানে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই, যদি সে নিজেকে নবীজি সা: এর একনিষ্ঠ উম্মত হিসেবে পরিচয় ধারণ করতে চাই। প্রশ্ন হলো এই ক্ষেত্রে আমার ও আমার সন্তানদের অবস্থা কিরুপ ?
(২) শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রতি অঙ্গ—প্রত্যঙ্গকে সুষমভাবে সাজিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত বিধানকে উপেক্ষা করে মানুষের অভিরুচি অনুযায়ী যদি তাতে হস্তক্ষেপ করা হয় তাতে মন ও মনন মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। যেমন: ভ্রম্ন— যার চেহারায় যতটুকু পরিব্যাপ্ত করলে সৌন্দর্য উদ্ভাসিত হবে আল্লাহ তায়ালা তার চেহারাতে সেই পরিমান দিয়েছেন। কিন্তু এই মহান নেয়ামতকে যদি কেউ নিজের মত সাজাতে যায় তখনই দেখা দেয় বিপত্তি, তখনই হয় সীমালংঘন। নবীজি সা: বলেন:‘ আল্লাহ তা‘আলা অভিশম্পাত করেছেন সেসব নারীদের উপর যারা দেহাঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যারা করায়, তেমনি যারা ভ্র চেঁছে সরু (প্লাক) করে, যারা সৌন্দর্য মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা মহান আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে’ (সহীহুল বুখারী: ৪৮৮৬)। এক্ষেত্রে আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের অবস্থা কী ?
(৩) একজন পুরুষের চেহারার সৌন্দর্যের বহি:প্রকাশ ঘটে তার দাড়ির মাধ্যমে। পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর চেহারার অধিকারী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র মুখমন্ডলে দাড়ি ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম সা: থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:‘ তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর, গোঁফ সমূহ কর্তন কর এবং দাড়ি সমূহ লম্বা কর’ (সহীহ মুসলিম : ৬০০)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘তোমরা গোঁফ কর্তন কর এবং দাড়ি ছেড়ে দাও (লম্বা কর )। তোমরা অগ্নিপুজারকদের বিপরীত কর’(মুসলিম ১/১২৯)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ যখন হজ্ব অথবা উমরা করতেন, তখন তিনি দাড়ি মুঠ করে ধরে মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলতেন(সহীহ বুখারী:৫৮৯২)। সমস্ত সহাবায়ে কেরামের রা: এই আমলই ছিল। পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। এদের দাড়ি ছিল কামানো আর গোঁফ ছিল বড় বড়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে তাদের এই অবয়ব এতই কুৎসিত লেগেছিল যে তিনি মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ধ্বংস হোক, এমনটি তোমাদের কে করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা। এক্ষেত্রে জান্নাতের অপার নেয়ামত প্রত্যাশি একজন নবী প্রেমিক মুসলমান হিসেবে আমার অবস্থা কী ? (চলবে........)