07/12/2024
জীবন আদপেই সুন্দর। ওকে মানিয়ে নিতে হয়। পৃথিবীতে কেউ সম্পূর্ণ নয়, কেউ নিজেকে নিয়ে একেবারে সুখী নয়। তবুও সবাই ভালো থাকার চেষ্টা করে চলেছে অহরহ। নিজের অপূর্ণতা ঢেকে বাইরে আসছে। সমাজের বুকে পা পেতে চলতে গিয়ে বিদ্ধস্ত হচ্ছে। সারাদিনের পর বাড়ি ফিরে একটু শান্ত হয়ে বসছে। আমরা বাইরে যতই বলি, ভিতরে ভিতরে কিন্তু বরাবরই দুর্বল। সবাই একটা অবলম্বন খুঁজছি, একটা ভরসার জায়গা খুঁজে চলেছি। পাওয়া বা না পাওয়া সে তো অনেক দূরের কথা। সবাই ক্রমাগত খুঁজছি। সবাই ব্যস্ত, কেউ এতটুকুও বসে নেই। রাতে ঘুমিয়েও মানুষ ভালো থাকার স্বপ্ন দেখে।
এ মেয়েও আর পাঁচটা মেয়ের মতো সাধারণ। তবুও কিছু কিছু সময় ও সবাইকে ছাপিয়ে যায়।
শান্ত, মায়াভরা মুখে সৌন্দর্যের জৌলুস নেই। যৌবনের শেষ প্রান্তে এসে ও এখন বৈশাখী নদী। চোখের নীচে রাত জাগা কালির দাগটা কাজলের মতো লেপ্টে থাকে। মোমবাতির আলোয় ঘরটা যখন ম ম করছে, মেয়েটা তখন একটু শান্ত হয়ে চেয়ে থাকে। গায়ে আদুরে তাঁতের শাড়ির আঁচলটা একেবারেই বিদ্ধস্ত ওর মতোই। হাত দিয়ে একটু গুছিয়ে নেয় আনমনে। বুকের উপর আঁচল পেতে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নেয়। হলুদ আলোয় মেয়েমানুষকে একটু অন্যরকম মনে হয়। সেই দূর পাহাড়ের ওপাড়ে থাকা রহস্যময়ীর মত। তাকে পুরোপুরি চেনা যায় না। যতটুকু চিনতে চেষ্টা করে, তার অর্ধেক ও নাগাল পাওয়া যায় না। মেয়েটা চেয়ে থাকে বলে আর পাঁচটা সাধারন মেয়ের থেকে ওকে আলাদা মনে হয়। বয়সের ভার মানুষকে ভীত করে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। এইখানে ও আলাদা। ওর চিন্তা অল্প। তবুও দিনশেষে ও সবাইকে ভালো রাখে। সবাইকে ভালো রাখা তার ভালো থাকার মধ্যে পড়ে, তাকে আর আলাদা করে সমাজ শেখাতে হয় না। ও নিজেই একটা গোটা সমাজ। ওর চোখের নীচে সিন্ধু সভ্যতার পান্ডুলিপি ছাই হয়ে লেপ্টে আছে কাজল হয়ে। ওর মেঘের মতো চুলের ফাঁকে শ্বাস নিচ্ছে রোজকার দিনের সভ্যতা। পুরাতন, নূতন। ও নিজেই একটা সমাজ। একটা গোটা সভ্যতা।।