04/05/2025
মিরাজের রাতে আমাদের প্রিয় নবী (সা:) যখন হযরত জিবরাইল (আ:) -এর সাথে হাঁটছিলেন তখন হৃদয় জুড়ানো সুগন্ধ পাচ্ছিলেন। কী মন মাতানো সেই ঘ্রাণ! রাসূল (সা:) অবাক হলেন এবং জিবরাইল (আ:) -কে জিজ্ঞেস করলেন- ‘হে জিবরাইল, আমি নাকে কিসের সুগন্ধ অনুভব করছি?’
তখন জিবরাইল (আ:) বললেন- ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, এই সুগন্ধ ফেরাউনের দাসীর কবর থেকে আসছে’। মহানবী (সা:) তখন জিবরাইল (আ:) -কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফেরাউনের দাসীর কবর থেকে এমন সুগন্ধ আসার কারণ কী, হে জিবরাইল?’
তখন জিবরাইল (আ:) বললেন- ‘একদিন ফেরাউনের দাসী ফেরাউন কন্যার চুল আঁচড়ে দিচ্ছিলেন, হঠাৎ তার হাত থেকে চিরুনি পড়ে গেল। চিরুনিটি তোলার সময় দাসী আনন্দে বলে উঠলেন- ‘বিসমিল্লাহ’ বা আল্লাহর নামে।
তখন ফেরাউন কন্যা জিজ্ঞাসা করলো- ‘এই কথা দ্বারা তুমি আমার পিতাকে বুঝিয়েছো নিশ্চয়?’
দা*সী উত্তর দিলেন- ‘না, আমি বলেছি আল্লাহ! তিনি আমার প্রভু, তোমার বাবার প্রভু, জান্নাতের প্রভু, সারা জাহানের প্রভু।’
ফেরাউন কন্যা বললো- ‘তুমি যা বলেছো তা কি আমি আমার পিতাকে জানাবো?’ নির্ভয়ে দাসী উত্তর দিলেন- ‘হ্যাঁ, জানাও’! কথাটি যখন জালিমদের মধ্যে নিকৃষ্ট জালিম ফেরাউনের কানে গেলো, তখন সে দাসীকে দরবারে তলব করলো।
দাসী তার দরবারে গেলেন। তখন ফেরাউন তার উপদেষ্টাদের সাথে তার দরবারে বসেছিল। তাহাদের সুরে সে দাসীকে জিজ্ঞেস করলো- ‘হে আমার দাসী, তোমার প্রভু কে?’ সাথে সাথে দাসীর নির্ভীক উত্তর- ‘আল্লাহ, তিনি আমার প্রভু এবং তোমারও প্রভু’। দাসীর এমন উত্তর শুনে ফেরাউন ক্রোধে মাথা নিচু করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো এবং বললো- ‘যাও, বাড়ি যাও’।
পরদিন ফেরাউন সেই দা*সী ও তার সন্তানদের দরবারে হাজির করার জন্য রক্ষীদের পাঠালো।
যখন দাসীকে দরবারে হাজির করা হলো তখন তিনি দেখলেন, ফেরাউন একটি বড় কড়াইয়ের পাশে পাশাচ্ছী করছে। ইবনে কাসির (রাহ:) এই কড়াইকেই বর্ণনা করে বলেছেন- ‘এটি এমন বিশাল একটি কড়াই যেখানে অনায়াসেই বিশাল সাইজের একটি গরু চুঁ*টঁ পাবে’।
তিনি আরও বললেন- ‘এই কড়াইকে তেল দিয়ে পূর্ণ করা হচ্ছিল এবং কড়াইয়ের নিচে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল’। সন্তানসহ হাজির করার পর ফেরাউন দাসীকে বললো- ‘ওহে দাসী, এবার বল, তোর প্রভু কে’? এবারও দাসী ভয়হীন উত্তর- ‘আল্লাহ, তিনি আমার প্রভু এবং তোমারও প্রভু’। এ কথা শুনে ফেরাউনের আদেশে রক্ষীরা তার বড় সন্তানকে ফুঁটন্ত তেলে নিক্ষে*প করলো। মা মা চিৎকার করতে করতে দাসীর ছোটটি উন্তপ্ত তেলে নিমিষেই গলে গেলো। এই দৃশ্য দেখে জালিম* কাফিরদের দল হো হো করে হাসতে লাগলো। প্রথম সন্তানকে মেরে ফেলার পর ফেরাউন আবারও জিজ্ঞেস করলো- ‘হে আমার দা*সী, তোমার প্রভু কে’? দাসী আবারও বললেন, ‘আল্লাহ’!
এই কথা বলার সাথে সাথে রক্ষীরা তার সন্তানকে চুটে নিয়ে গিয়ে কড়াইর উন্তপ্ত তেলে নিক্ষেপ* করলো এবং সাথে মিশিয়ে গেলো। তারপর ফেরাউন আবারও জানতে চাইল- ‘তোমার প্রভু কে’? চোখের সামনে সদ্য দুই সন্তান হারানো দাসী একটুও বিচলিত না হয়ে এবারও উত্তর দিলেন- ‘আল্লাহ, যিনি আমারও প্রভু, তোরও প্রভু’।
এবার রক্ষীরা দাসীর দুধের শিশুটিকে তেলে নিক্ষেপ* করার জন্য ঝুলিয়ে রাখলো, ঠিক তখনই দেখা গেলো আল্লাহর কুদরত। ছোট্ট শিশুটি বলে উঠলো- ‘চিন্তা করো না মা, আমরা জান্নাতে আছি’!
দাসী এবার সাহস জোর গলায় চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘আল্লাহ! তিনি আমারও প্রভু, তিনি আমার প্রভু, তোরও প্রভু’। এরপর সেই দাসীকেও ফুটন্ত তেলে নিক্ষেপ* করা হলো। দাসীর অটুট ঈমান নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যান। আর এমন কঠিন ঈমান নিয়ে জান্নাতে যাওয়ার জন্যই তাঁকে এমন মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে, সুবহানাল্লাহ...