Nazmul_94

Nazmul_94 Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Nazmul_94, Video Creator, Satkhira, Khulna.

20/07/2023

গল্প_অপরাজিতা
পর্ব_৫ম
গল্প_স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে আনান আবার বাইরে গিয়েছিলো। রাজিতার সাথে ভালো করে কথা বলেনি। হয়ত রাজিতার কথায় কষ্ট পেয়েছে। রাজিতার নিজের উপরেই রাগ হতে থাকে এটা ভেবে যে, যে মানুষটা কাল থেকে আজ পর্যন্ত ওর সাথে এত ভালো ব্যবহার করছে,তাকেই কিনা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। ওর সমস্ত রাগ আনান বেচারার উপর দিয়ে ঝাড়ছে! আনানকে সরি বলা উচিৎ! এসব ভাবছিলো তখনি আনান এসে বললো,
--"সরি, সারাদিন তোমাকে সময় দিতে পারিনি। মা বললো তুমি নাকি রুম থেকেই বের হওনি?"
রাজিতা নরমসুরে বলল,
--"আপনি কেন শুধু-শুধু সরি বলছেন। আমারিতো সরি বলা উচিৎ। প্লিজ আমার কথায় কিছু মনে করবেন না। "
--"আমি জানি তোমার সাথে যা যা হচ্ছে তা মেনে নিতে একটু সময় লাগবে৷ তাই তোমার কথায় কিছু মনে করার প্রশ্নই আসে না। "
--"সত্যি আমার উপরে রেগে নেইতো?"
--"রেগে থাকলে কি রাগ ভাঙাবে?"
--"আগে বলুন, আমাকে মাফ করে দিয়েছেন?"
--"কিসের জন্য?"
--"এই যে কাল থেকে আমি আপনাকেই ভুল বুঝে যাচ্ছি। অথচ আপনি আমার কত খেয়াল রাখছেন।"
--"তোমার খেয়াল রাখাটা আমার দায়িত্ব।"
--"শুধুই দায়িত্ব?"
--"মানে?"
--"না। কিছুনা!"
কথাটা বলেই রাজিতা ভাবে যে, কি বলতে কি বলে দিয়েছে! আনান বুঝতে পারলো যে রাজিতা কি বলতে চাচ্ছিলো, তাই বলল,
--"একটা বিষয় আমরা না চাইলেও মেনে নিতে হবে যে, আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, ভালবাসা, শ্রদ্ধা এগুলোর জন্ম দিতে হবে। জানিনা তুমি আমাকে কি ভাবছো, তবে আমি আনান, ছেলেটা অতোটাও খারাপ নয়, তুমি যতটা ভাবছো।"
রাজিতা যাকে এত কথা শুনাচ্ছে, সে এখনো ওকে এতসুন্দর করে বোঝাচ্ছে ভেবে অবাক হয়ে যায়। আসলেই মানুষটা মনে হয় অনেক ভালো! এতকিছুর পরেও ওর শুধু রাজিতার প্রতিই খেয়াল। দুইদিনেই মানুষটার প্রতি কেমন একটা মায়া জন্মে গেছে রাজিতার। আনানের মায়াবী মুখটার দিকে তাকাতেই লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয় রাজিতা, কারণ আনান ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু মানুষ আছে যারা সামনের মানুষটিকে না দেখে কথা বলতে পারে না। আনানও হয়ত ওই ধরনের হবে।
রাজিতাকে চুপ থাকতে দেখে আনান বলল,
--"আমাকে তুমি কি এখনো বিশ্বাস করতে পারছো না? তুমি বলছিলে না যে, তুমিও রাজি না থাকা সত্বেও আমি কেন তোমাকে বিয়ে করলাম? জানতে চাও?"
রাজিতা যেন মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেছে৷ আমতা-আমতা করে বলল,
--"আপনার ইচ্ছে হলে বলতে পারেন। আমি আর জোর করব না। নিজের মানুষেরা যেখানে বিশ্বাসের মূল্য রাখেনা সেখানে..."
এটুকু বলেই থেমে গেলো রাজিতা৷ আনান বলল,
--"আচ্ছা, আমাকে এখনি বিশ্বাস করতে বলছিনা। তুমি তখন শুনতে চাচ্ছিলে, তাই জিজ্ঞেস করলাম। বাকিটা তোমার ইচ্ছে।"
--"আপনি আমার উপরে রাগ করে আছেন। তাইনা?"
--"সেই অধিকার কি তুমি আমাকে দিয়েছো এখনো? "
--"আপনি কি নিলা আপুকে বিয়ে করলেও এভাবেই কেয়ার করতেন?"
রাজিতার মুখে আবার নিলা নাম শুনে আনান এইবার একটু চটে যায়।
--"দেখো তোমাকে বারবার বলছি যে, এখন আমরা স্বামী -স্ত্রী, সো, বারবার তুমি অন্যকাউকে টেনে এনে কি প্রমাণ করতে চাইছো!"
--"আপনি আজ সারাদিন কোথায় ছিলেন?"
রাজিতা কথা ঘুরাচ্ছে বুঝতে পেরে আনানও আর কিছু বলল না৷ এক বিষয় নিয়ে বারবার কথা বলতে ভালো লাগছে না।
--"কাজ ছিলো একটু। আরেকটা কথা,যদি মনে করো আমি তোমার উপরে রেগে আছি, আর রাগ ভাঙাতে চাও, তো তৈরি হয়ে নাও। একটু বাইরে যাবো তোমাকে নিয়ে।যদি তুমি যাওতো!"
বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো আনান। রাজিতা ভাবলো যে, আনান নিজে থেকে যখন বলছে তখন বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসলেই ভালো লাগবে। সারাদিন একা-একা রুমের মধ্যে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছে ও।
রাজিতা মেরুন রঙের একটা সালোয়ার-কামিজ পড়ল। হাল্কা মেকাপের সাথে খোলা চুল। বেশ লাগছে দেখতে। রাজিতার খুব ইচ্ছে চুল বড় করার, কিন্তু ঘাড় থেকে কিছুটা নেমেই যেন চুলগুলো বড্ড জেদী হয়ে যায়, আর বড় হয়না। তার উপরে হাল্কা কার্লি।
রাজিতার হঠাৎ ওর বাসার কথা মনে হতেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। বাসার কথা ভাবছিলো, তখন হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোন হাতে নিয়ে দেখে যে ওর বান্ধবী নেহা কল করেছে। বেচারী কাল থেকে কল করে যাচ্ছে, কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলো!
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা রাগী, তীক্ষ্ণ কণ্ঠ ভেসে এলো,
--"বান্দরনী! কাল থেকে কল করছি, কল ধরিস না কারোই, আমিতো ভাবলাম মরে-টরে গিয়েছিস! খয়রাতি খাওয়ার প্ল্যান করছিলাম।"
--"আরে কান ফাঁটিয়ে ফেলবি নাকি! আস্তে বল, আমি শুনতে পাচ্ছি। ব্যস্ত ছিলাম খুব, তাই কল ধরতে পারিনি। "
--"বোনের বিয়েতেই এত ব্যস্ত! নিজের বিয়ে হলেতো তোকে মোম-হারিকেন কিছু লাগিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না দেখছি।"
--"আচ্ছা কি বলবি বল। আমি আবার একটু বাইরে যাবো।"
একথা বলতেই দেখে আনান চলে এসেছে রুমে।রাজিতাকে ফোনে কথা বলতে দেখে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ভাবলো রাজিতার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত একটু রেস্ট নেওয়া যাক।
আনানকে দেখে রাজিতা একটু অস্বস্তিবোধ করতে লাগলো।
--"আচ্ছা পরে কথা বলবনে।"
কিন্তু ওপাশ থেকে নেহার ফোন রাখার কোনো তাড়া নেই। ও বলেই চলেছে,
--"আরে আজ যে কি হয়েছে, তুই শুনলে হা হয়ে যাবি। আমাদের ডিপার্টমেন্টে একটা নতুন স্যার জয়েন করেছে। সে কি দেখতে! তুর্জ স্যার আর কি! তার চাইতেও ডাবল হ্যান্ডসাম! সে গাড়ি থেকে যখন নামল, দেখার মতো একটা পরিবেশ। আশেপাশে যারা ছিলো আমার মনে হয় সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলো। ক্যাম্পাসে এখন তুর্জ স্যারের ফ্যান ফলোয়ার কমে যাবে দেখিস। তুই নিজেও তুর্জ স্যারকে বাদ দিয়ে এই স্যারের প্রেমে পড়ে যাবি!"
--"নেহা, আমি তোর সাথে পরে কথা বলবনে।"
--"আরে, আমার কথাতো শেষ করতে দে। হ্যালো, হ্যালো। "
নেহা 'হ্যালো হ্যালো ' করছিলো, কিন্তু তার আগেই রাজিতা কল কেটে দিলো। ওদের ভার্সিটির তুর্জ স্যার অনেক মেয়ের ক্রাশ, রাজিতার কাছেও ভালো লাগে, তবে ওইভাবে না৷ উনি আবার রাজিতাদের ডিপার্টমেন্টের স্যার নয়।
'আমার নিজের স্বামীই এত হ্যান্ডসাম! এখনতো আর আমাকে অন্যকাউকে দেখতে হবেনা। একে ভার্সিটির টিচার হিসেবে জয়েন করিয়ে দিলে দেখা যাবে সব মেয়ে চোখ ফেরাতে পারবে না। ভাগ্যিস উনি আমাদের ভার্সিটির টিচার না। নাহলে বদ মেয়েগুলা নজর দিয়ে দিতো!'
এসব ভাবতেই হাসি পায় ওর। যাকে এ পর্যন্ত স্বামী হিসেবে মানতেই পারেনি তাকে নিয়ে কি সব ভাবছে!
রাজিতাকে একা-একা হাসতে দেখে আনান ওর সামনে গিয়ে বলল,
--"একা-একাই হাসবে নাকি আমাকেও হাসির সঙ্গী বানাবে!"
রাজিতা চমক ভেঙে বলল,
--"না, মানে আমার এক বান্ধবী কল করেছিলো, তাই।"
--"তোমার জন্য ড্রেসটা সুন্দর লাগছে নাকি ড্রেসটার জন্য তোমাকে সুন্দর লাগছে বুঝতে পারছি না!"
--"আমার প্রশংসা করছেন নাকি ড্রেসের আমিও তা বুঝতে পারছি না।"
--"মহারানী তৈরি হলে চলুন, যাওয়া যাক! আর কত ওয়েট করাবেন।"
--"জ্বি চলুন।"
সন্ধ্যা কেটে রাতের অন্ধকারে সবকিছু গ্রাস হতে শুরু করেছে। কিন্তু শহরে তার ছিঁটেফোঁটাও নেই। আনান গাড়ির দরজা খুলতে যাচ্ছিলো তখন রাজিতা বলল,
--"এখন কোথায় যাবেন?"
--"আমিতো চাচ্ছিলাম তোমাকে কিছু শপিং করানোর জন্য মলে নিয়ে যেতে।তুমি কোথায় যেতে চাও বলো।সেখানেই নিয়ে যাবো।"
--"প্রথমে এই গাড়ি ছাড়ুন।"
--"মানে?"
--"রিকশায় ঘুরবেন?"
--"গাড়ি থাকতে রিকশা কেন?"
--"রাতের শহরটা রিকশায় ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। ঘুরবেন?"
--"তুমি চাইলে ঘুরতেই পারি। তুমি ঘুরেছো এর আগে কখনো? "
--"হ্যাঁ, আমরাতো মাঝেমধ্যেই ঘুরতাম।"
--"আমরা মানে?"
--"আমি, রিমি আর নিয়ন ভাইয়া।নিলা আপু মাঝেমধ্যে যেতো আমাদের সাথে"
--"আমার সাথে ঘুরতে ভালো লাগবেতো?"
--"আপনি এত প্রশ্ন করছেন কেন! গেলে চলুন। আর না হলে..."
রাজিতাকে থামিয়ে দিয়ে আনান একটা রিকশা ডেকে দুজনে রিকশায় অনেকক্ষণ ঘুরলো।
রাজিতার কাছে আনানকে এখন আর অপরিচিত লাগছে না। ওর সাথে ঘুরতে ভালোই লাগছে। একটা পার্ক দেখে রাজিতা আনানকে বলল ওখানে নেমে ঘুরতে।
রাজিতা আর আনান দুজনেই চুপচাপ পাশাপাশি হাটছে৷ আনান রাজিতাকে বলল,
--"তোমার হাতটা একটু ধরা যাবে? না মানে, সবার মতো নতুন বউয়ের হাতটা ধরে হাটতাম আর কি। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যে, বউয়ের হাত ধরে পার্কে ঘুরে বেড়াবো। আজ যখন.."
বলতেই রাজিতা আনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আনান রাজিতার হাতে হাত রাখতেই রাজিতার মনে হতে লাগলো যে, এই মানুষটাকে হয়ত বিশ্বাস করা যায়। নিজেকে অনেক মুক্ত লাগছে। সারাদিনের বিষন্নতাগুলো যেন ওকে ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে।
রাজিতা আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
--"আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?"
--"এখনো জিজ্ঞেস করে কথা বলতে হবে!"
--"না মানে, আপনার সম্পর্কেতো আমি তেমন কিছুই জানিনা। তাই.."
--"কি জানতে চাও? বলো।"
--"আপনি কি করেন? মানে আপনার পেশা?"
--"সব রেখে তুমি আমার পেশা নিয়ে পড়লে কেন? অন্যন্য মানুষ সাধারণত পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছে-অনিচ্ছে এসব সম্পর্কে জানতে চায়। আর তুমি প্রথমেই পেশা জানতে চাচ্ছো কেন?"
--"জানতে ইচ্ছে হলো তাই। আপনি যদি না বলেন সেটা আপনার ব্যাপার।"

{সবাই পেজ টা ফলো করবেন}

--"রাগ করলে নাকি! আসলে ওইটা বলা যাবেনা। ওটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ। অন্যকিছু জিজ্ঞেস করো।"
--"আপনাদের এখানেই যখন আছি, আস্তে আস্তে সব জানতে পারব।"
--"আমার সম্পর্কে জানার খুব আগ্রহ দেখছি।"
--"সবকিছু ছেড়ে যার কাছে চলে আসলাম, তার সম্পর্কে না জানলে হয়।"
রাজিতার স্বাভাবিক আচরণ দেখে আনানের অনেক ভালো লাগছে। আনানের মা-বাবাও অনেক খুশি হয়েছেন যে, ছেলে আর ছেলেবৌ একসাথে ঘুরতে বেড়িয়েছে।
আনানের মা-বাবার ব্যবহারে রাজিতা মুগ্ধ! উনারা রাজিতাকে একদম আপন মেয়ের মতো দেখছে। রাজিতা যখন আনানের মাকে, "মা" বলে ডাকছিলো উনি মনে হয় আবেগে কেঁদেই ফেলল।
আনানের মিশন কমপ্লিট। রাজিতা সবার সাথে হেসে-খেলে কথা বলছে। আনানের মায়ের সাথেও গল্প করছে, এসব দেখে আনানের অনেক ভালো লাগছে।
রাজিতার পছন্দ-অপছন্দ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ পর্যন্ত আনানের মায়ের সাথে গল্প করল। রাজিতার গল্প থামানোর কোনো নাম-গন্ধ না পেয়ে আনানের মা-ই বলল,
--"অনেক রাত হয়েছে মা। যা, এবার গিয়ে শুয়ে পড়। কাল নাকি আবার ভার্সিটি যাবি আনু বলল।"
রাজিতা খুশিতে যেন লাফিয়ে উঠল,
--"উনি বলেছে? কাল ভার্সিটি যেতে দিবে?"
ওর শাশুড়ী হেসে বলল,
--"তুই চাইলেই হবে। ও কে তোর ব্যাপারে নাক গলানোর। কিছু হলে শুধু আমাকে এসে বলবি, বাকিটা আমি দেখবো! "
রাজিতা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,
--"আচ্ছা মা, আসি তাইলে। কালতো সকালে উঠতে হবে তাহলে। আমাকে ডেকে দিবেন একটু।"
--"আনু থাকতে আবার আমার ডাকা লাগবে নাকি, ওই ডেকে দিবে দেখিস।"
আনান ডেকে দিবে মনে হতেই ওর সকালের কথা মনে পড়ে গেলো। মুখে পানি ছিটিয়ে কেউ ঘুম ভাঙায়!
রাজিতা রুমে ঢুকতেই আনান বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলতে লাগলো,
--"দরজা লক করে দিও। আর ফোন এখানে রেখে গিয়েছিলে কেন? সাথে নিয়ে গেলেই পারতে।"
রাজিতা দরজা লক করতে করতে বলল,
--"আবার কে ফোন করেছিলো? চাচ্চুরা কেউ? নাকি নেহা? নাকি মালিহা?"
--"তাদের কেউ-ই না। "
রাজিতার চাচ্চুরা কেউ ফোন করেনি শুনে রাজিতার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। ও সারাদিন আশায় ছিলো যে, অন্তত ওর চাচ্চু ওকে একবার কল করে খোঁজ নিবে। মেয়েটা কেমন আছে না আছে! ওর চাচ্চু এতটা নিষ্ঠুর কীভাবে হলো!
রাজিতার হাতে ফোনটা দিতে দিতে খসখসে গলায় বলল,
--"এতরাতে নিয়ন ভাইয়া কেন কল করেছে?"
'নিয়ন ভাইয়া' শুনে রাজিতা যেন কিছুটা খুশি হলো। ফোনটা হাতে নিয়ে কলব্যাক করতে করতে আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
--"আমাকে ডাকেননি কেন?"
--"এতটা জরুরি জানতে পারলে অবশ্যই ডেকে দিতাম। আমিতো ভাবলা..."
আরকিছু বলার আগেই রাজিতা 'হ্যালো' বলতে বলতে বেলকনিতে চলে গেলো।
আনান শুধু বারবার ঘড়ি দেখছে। পুরো ২৩ মিনিট ৪৫সেকেন্ড পরে রাজিতা রুমে আসলো। ওর মুখের হাসিটুকুই বলে দিচ্ছে যে, ও কি পরিমাণ খুশি।
'আমি পাশে থেকেও এতটা খুশি রাখতে পারছি না, আর ওই নিয়ন ব্যাটা হাজারমাইল দূরে থেকেই মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছে! স্বামী থাকতে এতরাতে অন্য মানুষের সাথে কথা বলতে বিবেকে একটুও বাধলো না! কি মেয়েরে বাবা!' আনান মনে মনে ওসব ভাবছিল। তখন রাজিতা ওর পাশে শুয়ে পড়ল আর বলতে লাগল,
--"জানেন, দুইমাস পরেই নিয়ন ভাইয়া দেশে আসছে, উনার থিসিস পেপার প্রায় কমপ্লিট! কতদিন পর ভাইয়াকে সরাসরি দেখব।"
--"ওহ!"
--"ভাইয়া যখন বাইরে যায়, তখন আমার এইচ এস সির টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। কতদিন হয়ে গেছে।"
--"ওহ!"
রাজিতার মুখে নিয়ন ভাইয়ার গল্প শোনার কোনো ইচ্ছেই আনানের নেই।
--"আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকাল সকাল উঠতে হবে৷ নাকি বালতি ভর্তি পানি এখনি রেডি করে রাখব!"
--"আচ্ছা বাবা ঘুমাচ্ছি। "
তারপর একটু চুপ থেকে রাজিতা আবার বলল,
--"ধন্যবাদ। কাল আমাকে ভার্সিটি যেতে দেওয়ার জন্য।"
--"হুম!"
--"কালরাতে ঘুম হয়েছিলো? আসলে আমার ঘুমানো এতবাজে! আপনার কষ্ট হবে নাতো?"
আনান চোখ বন্ধ করে ছিলো, রাজিতার কথা শুনে পাশ ফিরে শুতে-শুতে বলল,
--"বিয়ে যখন করেছি, এইটুকু কষ্টতো সহ্য করতেই হবে৷ এখন বেশি কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো।"
আনান গাড়িতে আসতে বলেছিলো, কিন্তু রাজিতা অনেক অনুরোধ করে বাসে করে ভার্সিটি আসলো। বউপত্র কিছুই সাথে নেই। দোকান থেকে একটা খাতা আর কলম কিনে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো, যদি প্রয়োজন হয়!রাজিতার চাচ্চু সকালে ফোন করেছিলো, এই কারণে আজ ওর মনটা অনেক ভালো।
আনানদের বাসা থেকে রাজিতার ভার্সিটি অনেকটা দূরে। রাজিতা ভাবছে যে, এতদূরে প্রতিদিন এসে ক্লাস করাটাতো কষ্ট হয়ে যাবে।
রাজিতা ক্লাসে ঢুকতেই নেহা আর মালিহা ওকে ঘিরে ধরলো৷ যেন কতকাল পরে ও ক্লাসে এসেছে।
নেহা ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,
--"কাল ওইভাবে কল কেটে দিলি কেন! আমার পুরো কথাটাইতো শুনলি না। তুই ভাবছিস আমি মিথ্যে বলছি! কিন্তু স্যারকে দেখলেই তুই বুঝতে পারবি যে, আমি এক ফোঁটাও মিথ্যে বলিনি "
রাজিতা হঠাৎ দেখতে পায় যে, ওর চাচ্চু দাঁড়িয়ে আছে ওদের ফ্যাকাল্টির নিচে। ও হুট করে কাউকে কিছু না বলেই নিচে চলে আসে ওর চাচ্চুর সামনে।

চলবে....

15/07/2023

গল্প_অপরাজিতা
পর্ব_৪র্থ
লেখক_স্নিগ্ধতা প্রিয়তা

রাজিতাকে দেখেই ওর চাচা ওর চাচিকে বলল,

--"আরে বাসায় নতুন জামাই এসেছে, আর তুমি এখানে কি করছো? যাও ওদের খেতে দাও কিছু।"

রাজিতার চাচি মুখটা কালো করে রাজিতার দিকে তাকালো যেন, এক্ষুনি ওকে চিবিয়ে খাবে। রাজিতা ওর চাচির এমন রূপের কারণ বুঝে গেছে। কিন্তু আনানের সামনে সেটা প্রকাশ করতে চাইলো না।

--"কেমন আছো, ছোট আম্মু?"

বলেই ওর চাচিকে জড়িয়ে ধরল। ওর চাচি ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

--"তুই আর তোর চাচ্চু যেমন রেখেছিস!"

ওর চাচির এমন কথায় রাজিতা কি উত্তর দিবে ভেবে পায়না। যে হাসিমুখ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে ও ওর চাচির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল তার ছিটেফোঁটাও আর নেই।

আনান রাজিতার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। ও প্রথমেই ওর চাচি শাশুড়ীকে সালাম দিলো,

--"আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?"

--"তুমি যে কাজটা করলে বাবা! এটা কি মোটেও ঠিক!"

--"আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না?"

--"আমার মেয়েটাকে এভাবে কেন ঠকালে?"

--"ঠকালাম কোথায়?"

--"আমার মেয়েটাকে কেন বিয়ে করলে না? কেন এমন নাটক করে আমাদের ভড়কে দিলে? "

--"কেন? আপনাদের ঘরের মেয়েকেইতো বিয়ে করেছি। খুশি হননি?"

উনি আনানের কথার কোনো উত্তর দিলেন না। রাজিতার চাচা উনার দিকে চোখ গরম করে তাঁকিয়ে আছেন।

--"তোমরা ফ্রেস হয়েছো? চলো কিছু নাস্তা করে নাও। রাজিতা ওকে নিয়ে আয়।"

রাজিতার চাচি কথাটা বলেই ওখান থেকে চলে যেতে লাগলেন। আনান উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

--"আসলে আন্টি আমরা নাস্তা করেই এসেছি। রাজিতা আপনাদের দেখতে চাচ্ছিলো তাই নিয়ে আসছিলাম৷ আমরা এখনি চলে যাবো। তাইনা রাজিতা?"

বলেই রাজিতার দিকে তাকায় আনান। রাজিতা বুঝতে পারল যে, এখানে থাকলে ওর চাচি আর চাচাতো বোনদের কথা শুনতে হবে, যা হজম করার ক্ষমতা হয়ত ওর এখন নেই। তাই আনানের সাথে সায় দিয়ে বলল,

--"হ্যাঁ ছোট আম্মু। তোমাদের দেখার জন্য এসেছিলাম। এখন আসি।"

ওর চাচা বলে উঠলেন,

--"মাত্র আসলি, আর এখনি চলে যাবি?"

--"এখন কি আর আমরা কেউ আছি ওর! এত ভালো স্বামী পেয়েছে, শশুরবাড়ি পেয়েছে, ওরাইতো এখন ওর সব৷ যা, যাবিই যখন আসছিলি কেন?"

রাজিতার খুব কান্না পাচ্ছে। অনেক কষ্টে তা আটকে রেখেছে। আনান ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,

--"আসলে আপনারা কিছু মনে করবেন না৷মা বারবার বলে দিয়েছে যেন তাড়াতাড়ি ফিরি। কে নাকি আসবে রাজিতাকে দেখতে। তাই আর থাকতে পারছি না। আরেকদিন এসে থাকবে ও।"

ওর চাচাও আনানের কথায় আঁচ করতে পেরেছিলেন যে, ও রাজিতাকে এখান থেকে কেন নিয়ে যেতে চাইছে। নিশ্চয়ই ওর চাচির বলা কথাগুলো সব শুনেছে৷ কিন্তু ওর চাচিতো উনাকে দোষারোপ করছে৷ উনি কিভাবে বোঝাবেন যে, রাজিতার সাথে বিয়ের আগে পর্যন্তও জানতেন না যে আনান পুরোপুরি সুস্থ। আর সবচেয়ে বড় কথা যে, রাজিতার এত ভালো একটা বিয়ে হয়েছে জন্য উনারতো খুশি হওয়ার কথা। তা নয়....

--"চাচ্চু, আমরা আজ তাহলে আসি। চাচি আসি৷ নিলা আপু আর রিমি কোথায়?"

রাজিতার চাচি আর কিছু বলছেন না। উনি নিজেও রাজিতাকে কিছুটা হলেও ভালবাসতেন। কিন্তু আজ আনানকে দেখার পর কেন জানি উনি রাজিতাকে ওর পাশে সহ্য করতে পারছেন না। যেখানে উনার মেয়ের থাকার কথা ছিলো, সেখানে রাজিতা!

--"আছে ওরা কোথাও! তোরা থাকবিইনা যখন তাহলে কিছু একটা নাস্তা করে যা। তোর ছোট আম্মু এত কষ্ট করে রান্না করেছে।"

রাজিতা 'হ্যাঁ' বলতে যাবে, তখন আনান ওকে কিছু বলতে না দিয়ে বলল,

--"সরি আন্টি, মাত্রই খেয়ে এসেছি। কথা দিচ্ছি, আরেকদিন এসে আপনার সব রান্না টেস্ট করে যাবো। আজ আমার একটা কাজ আছে। রাজিতাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি আবার একটু বাইরে যাবো।"

বলেই ওর চাচা-চাচিকে বিদায় জানিয়ে রাজিতাকে নিয়ে বাইরে চলে আসে। ওর চাচি মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ওর চাচা ওদের এগিয়ে দিতে বাইরে আসলো। নিলা আর রিমিকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।

রাজিতার খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, ওর চাচি ওদের জন্য এত আয়োজন করে রান্না করেছে আর ওরা সেটা না খেয়েই চলে আসলো!

রাজিতা বারবার পিছন ফিরে দেখছে। একদিনের ঝড়ে ওর সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে কে জানত৷ যারা ওকে ভালবাসত তারাই ওকে ভুল বুঝছে, যাদের ও পরিবার ভাবতো তারাই ওকে শত্রু ভাবছে! কেন! ও কি আসলেই এ পরিবারের কেউ ছিলো না! সবটাই মিথ্যে মায়ার জাল!

গাড়িতে উঠতে যাবে তখন আনানের একটা কল আসলো। আনান কলটা রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো। তখন রাজিতার নিজের ফোনের কথা মনে পড়লো। কাল থেকে ওর ফোনটা ওর কাছে নেই। এইজন্যইতো ওর কেমন খালি-খালি লাগছিলো।আনানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

--"আমার একটা জিনিস নিয়ে এক্ষুনি আসছি।"

--"এখন আরকিছু আনতে হবেনা। আংকেলকে বলে তোমার যা যা প্রয়োজন পাঠিয়ে দিতে বলব। এখন চলো৷ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।"

--"তাহলে আপনি চলে যান। আমি পরে চাচ্চুর সাথে চলে যাবো।"

আনান ধমকের সুরে বললো,

--"তুমি এখনো এখানে থাকার বায়না ধরছো? সবার এক্সপ্রেশন দেখে বুঝতে পারছো না, 'ইউ আর নট ওয়েলকামড হেয়ার এনিমোর'! আমাকে দেখার পর থেকে কেউ আর তোমাকে পছন্দ করছে না। তুমি কি একেবারেই কঁচি খুকি নাকি যে, কিছুই বুঝো না?"

রাজিতা আনানের লজিক বুঝতে পারলো। ওতো বোকার মতো এটা ভেবে খুশি হয়েছিলো যে, আনানকে দেখে ওরা ভীষণ সারপ্রাইজড হবে আর খুশিও হবে। কিন্তু এমনটা হবে তা ও বুঝতেই পারেনি।

--"আচ্ছা, ঠিক আছে।আমি তাহলে শুধু ফোনটা নিয়ে আসি।"

বলেই আবার বাসার ভেতরে চলে গেলো রাজিতা।

রাজিতা আবার বাসায় ঢুকে দেখলো যে, সবাই বাইরেই আছে।ও ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এনে সবার দিকে তাকালো এইভেবে যে, হয়ত ওরা ওর সাথে কথা বলবে, ওকে থাকতে বলবে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। সবাই যেন রাজিতার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।ওর চাচ্চু যেন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।

রাজিতা ফোন নিয়ে সোজা গাড়িতে চলে গেলো৷ এইবার আর চোখের জলটাকে আটকে রাখতে পারলো না। কান্নাগুলো বৃষ্টির মতো ঝড়তে লাগলো। চোখের জলগুলো মোছার প্রয়োজনও মনে করলো না।

আনানকে দেখে ওর কান্না আরো বেড়ে গেলো। ও আনানকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলো,

--"আপনি কেন এমনটা করলেন?নিলা আপুকে বিয়ে করলে কি এমন হতো? কেন আমার জীবনের ভালবাসার মানুষগুলোকে এভাবে কেড়ে নিলেন?"

গাড়ি চলতে শুরু করেছে। আনান বুঝতে পারলো যে রাজিতা অনেক কষ্ট পেয়েছে। আনান রাজিতাকে বলল,

--"তুমি যাকে পরিবার ভাবছো তারা কি আদৌ তোমাকে পরিবার ভাবে? তুমি যাদের আপন মানুষ ভেবে কষ্ট পাচ্ছো তারা কি আদৌ তোমাকে আপন ভাবে?"

--"আপনি কি বলতে চাইছেন? আমার চাচ্চু আমাকে ভালবাসেনা? আমার ছোট আম্মু আমাকে ভালবাসে না? সব দোষ আপনার। আপনার জন্য সবাই আজ আমাকে ভুল বুঝছে। সবাই ভাবছে যে, আমি জেনেশুনে নিলা আপুর বরকে কেড়ে নিয়েছি। সবাই এটা কি করে ভাবতে পারলো!"

রাজিতার কান্নাগুলো যেন চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। আনান ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,

--"আমি মানছি সব দোষ আমার। তুমি আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে? আচ্ছা কয়েকটি বাদ দাও, জাস্ট দুটো প্রশ্নের জবাব দিবে।"

--"বলুন। আপনার যত প্রশ্ন আছে বলে ফেলুন। আমার জন্যতো এবাড়ির দরজা বন্ধ হতে চলেছে, শুধুমাত্র আপনার খেয়ালীপনার জন্য!"

--"তুমি কি এই বিয়েটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছো না? এখন আমি তোমার স্বামী! তুমি বারবার এসব বলে কি প্রমাণ করতে চাইছো? "

--"আচ্ছা আপনি আপনার প্রশ্ন করুন।"

আনান রাগটাকে একটু কন্ট্রোল করে বলল,

--"প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে,' তোমার চাচা-চাচি যেখানে নিজের মেয়েদের বিয়ে দিলেন না সেখানে তোমাকে কেন জোর করে বিয়ে দিলেন?' আর দ্বিতীয় প্রশ্ন,'আজ যখন উনারা সবাই আমার সম্পর্কে সত্যিটা জানতে পারলেন তখনতো সবার অনেক বেশি খুশি হওয়ার কথা ছিলো, উনারা খুশি না হয়ে কেন তোমাকে আর তোমার চাচাকে ভুল বুঝছে?'"

প্রশ্ন দুইটা শুনেই রাজিতার কালকের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো। ওর অন্য দুইবোনের মতো ও নিজেওতো চাচ্ছিলো না আনানকে বিয়ে করতে। শুধুমাত্র ওর চাচ্চু আর ছোট আম্মুর অনুরোধে ও বিয়ে করেছিলো। আর তারপর থেকে চোখের জলগুলো যেন বাধ মানছে না।

আনানের প্রশ্ন দুইটা রাজিতার মনে অনেক বড় একটা দাগ কেটে গেলো। আসলে আনান কেন এমন করলো? কেন এমন কথা বলে ওর চাচ্চুদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করছে? আনান আসলে কে? রাজিতা কিছুটা ভয় পেতে থাকে। কারণ আজকে যেটা হলো তারপর রাজিতার চাচি কখনও ওকে সহজভাবে মেনে নেবে না৷ ওর চাচিকে ও ভালভাবেই চিনে।

রাজিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে আনান বলল,

--"কি হলো? এখন চুপ হয়ে গেলে কেন?"

রাজিতার কান্নাগুলো এখন থেমে গেছে। চোখের জলগুলো ওভাবেই শুকিয়ে গেছে। শুকনো মুখে রাজিতা বলল,

--"আমিওতো আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি। তাহলে আমার আর নিলা আপুর মধ্যে পার্থক্য কি?"

--"সেটা তোমার না জানলেই চলবে।"

--"কেন জানব না? আমি জানতে চাই।"

ততক্ষণে রাজিতারা বাসায় পৌঁছে গেছে৷ আনান রাজিতাকে বলল,

--"মাকে কিছু বলার দরকার নেই। বলবে যে, আমি আর থাকতে দিলাম না তোমাকে। সবার সাথে দেখা করিয়ে নিয়ে এসেছি। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। একদম কান্নাকাটি করবে না আর। আমি তাড়াতাড়িই ফিরে আসব।"

বলেই গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিতে লাগলো, রাজিতা চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,

--"আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো কিন্তু এখনো পাইনি মিস্টার আনান রেদোয়ান! উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।"

রাজিতা ওর শাশুড়ীকে আনানের শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো বলল। ওর শাশুড়ী ওকে বলল,

--"আচ্ছা, ভালো হয়েছে৷ তুই রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নে৷ কাল থেকে যা ধকল যাচ্ছে তোর উপর দিয়ে।"

রাজিতা, 'আচ্ছা ' বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
ফোনটা চেক করতেই দেখলো যে, ওর বান্ধবীরা অনেকবার কল করেছে। ওদের সাথে কথা বলার কোনো মুড ওর নেই। কিন্তু একজনের কল উপেক্ষা করার কোনো সাহস ওর নেই। ওর চাচ্চুর ছেলে নিয়ন ভাইয়া।

রাজিতা দেখলো যে, ওর নিয়ন ভাইয়া কাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫০বারের মতো কল করেছে৷ ও কল ব্যাক করবে কিনা ভাবছে, তখন আবার নিয়ন কল করলো। কলটা রিসিভ করে কাঁপা-কাঁপা গলায়, 'হ্যালো' বলতেই ওপাশ থেকে নিয়ন অস্থির কণ্ঠে বলতে লাগলো,

--"হ্যালো রাজি! কেমন আছিস তুই? কল ধরিসনি কেন আমার? আমি কত চিন্তা করছিলাম জানিস! কাল কি হয়েছে? আমাকে বল। বল ওরা সবাই আমাকে মিথ্যে বলছে! তোর বিয়ে হয়নি! সব মিথ্যা! বল রাজি, তুই শুধু একবার বল, আমি তোর মুখ থেকে সত্যিটা জানতে চাই।"

এতগুলো কথা একেবারে শুনে রাজিতা বুঝতে পারছে না যে, কি বলবে৷ ওই বাসায় সবাই ওকে আদর করতো শুধুমাত্র ওর চাচ্চু আর ওর নিয়ন ভাইয়ার জন্য। এটা ও ভালো করেই জানে। তারপরেও বেহায়া মনকে জোর করেই বোঝাতে চাইতো যে, সবাই ওকে ভালবাসে। একটু ভালবাসা পাওয়ার জন্য বোকার মতো চিন্তাভাবনা করতো।ওকে চুপ থাকতে দেখে নিয়ন ওপাশ থেকে আবার বলে উঠল,

--"নিশ্চয়ই মা কিছু বলেছে তোকে? নাকি নিলা? নাকি রিমি কিছু বলেছে? তুই আমাকে বল। আমিতো কিছুদিন পর-ই আসছি। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।"

রাজিতার কান্নাগুলো যেন গলার কাছে এসে আটকে ছিলো এতক্ষণ। তা এবার গলাচিড়ে বের হয়ে আসল।

--"নিয়ন ভাইয়া! "

--"হ্যাঁ, বল আমাকে৷ কি হয়েছে বল। আমিতো শুনতেই চাচ্ছি।"

--"আর হয়ত কিছুই ঠিক হবে না। সব শেষ হয়ে গেছে। আমার সাথেই কেন এমনটা হলো?"

--"রাজি! তুই চিন্তা করিস না। আমি আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।"

--"আমার সত্যিই বিয়ে হয়ে গেছে।"

কথাটা শুনে ওপাশের মানুষটা চুপ হয়ে গেছে। রাজিতা আবার বলতে লাগলো,

--"আচ্ছা নিয়ন ভাইয়া, ছোট আম্মু কি কখনও আমাকে নিজের মেয়ে হিসেবে দেখেনি? নিলা আপু আর রিমি কখনো আমাকে নিজের বোনের মতো দেখেনি? নাকি আমিই শুধু বোকার মতো তাদের আপন ভেবে গিয়েছি?"

--"রাজি, প্লিজ চিন্তা করিস না। কিছুই হয়নি। আমার পরীক্ষাটা শেষ হলেই যত দ্রুত পারি চলে আসব৷ আমি কিছুতেই ওই ছেলেটাকে তোর জীবন নষ্ট করতে দিবো না। মায়ের কথা না হয় বাদ দিলাম, বাবা কি করে পারলো এমন একটা ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিতে। আর তোকে বিয়ে দেওয়ার কথা ওরা ভাবলো কি করে!"

--"ভাইয়া, আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছুই হয়নি৷ আনান সম্পুর্ণ সুস্থ৷ আর এজন্যেইতো ছোট আম্মু আর নিলা আপু আমাকে ভুল বুঝছে।"

তারপর রাজিতা নিয়নকে সবটা খুলে বলল।
নিয়নকে সবটা বলার পর রাজিতার নিজেকে কিছুটা হাল্কা লাগলো। ছোটবেলা থেকেই ওর চাচি বা চাচাতো বোনেরা কিছু বললে ওর চাচা আর নিয়ন ভাইয়া ছিলো যারা ওর পাশে থাকত৷ ওকে হাসানোর চেষ্টা করতো। অথচ আজ ওর মন খারাপের সময় কেউ ওর পাশে নেই৷ ওকে হাসানোর মতো কেউ নেই!

রাজিতা কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতে পারেনি৷ হঠাৎ মাথায় কারো হাতের ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখে যে ওর সামনে আনান দাঁড়িয়ে আছে।
আনানকে দেখেই রাজিতা তাড়াতাড়ি করে উঠে বসল।

--"কখন আসলেন?"

--"এইতো একটু আগেই৷ "

--"আমাকে ডাকেননি কেন?"

--"দেখলাম ঘুমাচ্ছো, তাই আর ডাকলাম না। তা আমার উপর থেকে রাগ কমেছে নাকি এখনো আছে?"

রাজিতা ঠান্ডা স্বরে বলল,

--"আপনার উপরে রাগ করে কি লাভ! "

--"হঠাৎ কথার এত পরিবর্তন? এখানে এসে বুদ্ধি-সুদ্ধি খুলেছে নাকি?"

--"যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে।"

বলেই রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো রাজিতা৷ আনান ওর হাত টেনে ধরে বলল,

--"কেউ নেই মানে? আমাদের কিছুই মনে হয়না? কি শুরু করেছো তুমি?"

--"শুরু আমি করেছি নাকি আপনি? আপনি কেন আমাকে বিয়ে করেছেন তার উত্তর আজ দিতেই হবে।"

--"সময় হলেই উত্তর পেয়ে যাবে। মা ডাকছে, ফ্রেস হয়ে আসো৷ আর সবার সামনে যেন না দেখি কোন সিনক্রিয়েট করতে।"

রাজিতা চুপচাপ আনানের কথাগুলো শুনতে লাগলো। আনান বুঝতে পারলো যে,রাজিতার মন অনেক খারাপ। ও ভাবলো যে করেই হোক রাজিতার মন ভালো করতে হবে।

চলবে......

15/07/2023

বল্টু আর পল্টু দুই বন্ধু,জাপানে বেড়াতে গেলো।তারা বড় একটা হোটেলে উঠল।

পল্টু: খুব খিদে পেয়েছে দোস্ত।

বল্টু: তোর এই খাই খাই স্বভাবটা আর গেল না।

পল্টু: চল না , দোস্ত

বল্টুঃবল কি খাবি?

পল্টঃ তুই অর্ডার দে।

বল্টু: ওয়েটার কে ডাকলো ।

ওয়েটার খাবারের মেনু
বইটা দিল।

বল্টু ভাষা না বুঝে আন্দাজে একটা টিক দিয়ে দিল।

একটু পরে খাবার
আসলো,

পরোটা আর মাংস দু'জনে খুব মজা করে খাচ্ছে

বল্টুঃ খুব টেস্ট, এটা খাসির মাংস

পল্টু: আরে দূর ব্যাটা এটা গরুর মাংস

এই নিয়ে দু'জনের মধ্যে ভিশন ঝগড়া
লোকজন জরো হয়ে গেল,

ওয়েটারকে ডাকলো,ওয়েটার তো এদের ভাষা বোঝেনা,
তাই এরা মাংসের টুকরা হাতে নিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে ।

বল্টুঃ এইটা „, ম্যা ম্যা ,,,,,,,,,

পল্টু: এইটা ,,, হাম্বা হাম্বা,,,,,,,

ওয়েটার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

ইট'স ,,,,, ঘেউ ঘেউ,,,,,,,,,,,,,,,

😂😂😂😂

অবশেষে বল্টু বেহুঁশ 😀😀😀

15/07/2023

গল্প_অপরাজিতা
পর্ব_৩য়
লেখক_স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

আনানকে দেখে কেউ চিনতে পারছিল না। আর সবাই রাজিতার বরকে খুঁজছিল। কিন্তু কোথাও হুইলচেয়ার না দেখে ভাবতে থাকে যে রাজিতার বর আসেনি। কিন্তু নিলার বাবা যখন এসে আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

--"আনান বাবা, ভেতরে আসো। "

তখন নিলা আর রিমি এটা ভেবে অবাক হলো যে, এই ছেলেটিকে ওর বাবা কি করে চিনে! একথা জিজ্ঞেস করতে যাবে, তখন আনান ওর মিষ্টি কণ্ঠে বলল,

--"আমি ভেতরে কি করে যাবো বলুন, আপনাদের মেয়েতো আমাকে রেখেই হনহন করে চলে যাচ্ছে।"

রাজিতা পেছন ফিরে বলল,

--"আপনার কি পা নেই! নাকি হাঁটতে পারেন না! যে আমাকে নিয়ে আসতে হবে। "

রাজিতার চাচা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

--"নিজের স্বামীর সাথে অমন করে কথা বলতে হয় না মা।"

নিলা আর রিমি নিজের বাবার মুখে একথা শুনে বুঝে গেলো যে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই সুন্দর ছেলেটাই রাজিতার বর। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব! নিলা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷

আনান রাজিতার চাচার সাথে বাসায় ঢুকছিল তখন নিলা ওর সামনে এসে বলল,

--"আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।"

--"জ্বি বলুন। "

--"এখানে নয়। একটু পার্সোনাল কথা।"

এটুকু বলতেই ওর বাবা বললেন,

--"নিলা মা, শান্ত হ। বাড়ির নতুন জামাই, মাত্র আসলো। বাসায় আসতে দে, বসতে দে, একটু রেস্ট করুক, তারপর যা বলার দরকার বলিস। ওতো আর কোথাও চলে যাচ্ছে না।"

রাজিতার সাথে অন্যসবাই এতক্ষণে বাসার মধ্যে চলে গেছে পুরো ঘটনা শোনার জন্য। আর রাজিতা সবার কাছে ওর সাথে ঘটে যাওয়া কালকের ঘটনাগুলো বলে যাচ্ছে। সবাই সিনেমার কাহিনী শোনার মতো মনোযোগ দিয়ে শুনছে রাজিতার কথা।

নিলা ওর বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

--"বাবা তুমি নিজের মেয়ের সাথে এটা কি করে করতে পারলে? আমার চেয়ে রাজিতা তোমার কাছে আপন হয়ে গেলো?"

ওর বাবা নিজের মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে বলল,

--"তুই এসব কি বলছিস! আমি নিজেও কিছু জানতাম না এ ব্যাপারে। এসবতো আনান বাবার প্ল্যান ছিলো। আমিতো রাজিতার সাথে বিয়ের পর পুরো ঘটনা জানতে পারলাম।"

--"বাবা তুমি কাজটা মোটেও ঠিক করো নি।"

নিলার নিজের বাবার সাথে এমনভাবে কথা বলতে দেখে আনানের প্রচুর রাগ হচ্ছিলো৷ কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।

--"দেখুন আপনি আংকেলকে শুধু-শুধু দোষ দিচ্ছেন। আংকেল কালকেই আমাকে প্রথম দেখেছেন। উনি নিজেও আমার প্ল্যান সম্পর্কে কিছু জানতেন না। আমিই জানতে দেইনি।"

--"আর আপনি? আমাকে বিয়ে করতে এসে আমারি নিজের চাচাতো বোনকে বিয়ে করে নিয়ে গেলেন। লজ্জা করলো না?"

--"দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন। আমি আপনার ছোটবোনকে বিয়ে করতে নয়, আপনাকেই বিয়ে করতে এসেছিলাম। সেতো আপনি নিজেই নিজের বিয়ে ভেঙে দিলেন।"

--"হ্যাঁ, ভেঙে দিয়েছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম আপনি..."

--"আমি কি একবারের জন্যও বলেছিলাম যে, আমি হাঁটতে পারি না?"

--"তাহলে ওই হুইলচেয়ার?"

--"সেতো আমার কালকে হাঁটার কোনো মুড ছিলো না জন্য এনেছিলাম। "

--"মজা করছেন আমার সাথে? আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়ে মজা লাগছে আপনার?"

--"সরি! এক মিনিট! আমি আপনার জীবন নষ্ট করলাম মানে!"

--"তাহলে কালকের ওইসব নাটক কি জন্য?"

--"দেখুন বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন স্বপ্ন থাকে। তেমনি আমারও স্বপ্ন ছিল যে, হুইলচেয়ারে বসে বিয়ে করতে আসবো।"

--"তাহলে সেটা আগে কেন বলেন নি?"

--"আগেইতো বলেছিলাম৷ কেন আপনার বাবা আপনাকে বলেনি যে, ছেলে যেমনি হোক আপনাকে বিয়ে করতে হবে? আমিতো সেই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলাম যে, যাই হয়ে যাক না কেন বিয়ে করেই যাবো। সো, বিয়ে করে বউ নিয়েই বাসায় ফিরেছি। আপনিইতো আপনার কথা রাখতে পারেননি।"

নিলা আর কিছু বলার মতো না পেয়ে নিজের বাবার দিকে আগুনচোখে তাঁকিয়ে বলল,

--"বাবা, তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।!"

বলেই কান্না করতে করতে ওখান থেকে চলে গেলো নিলা।

নিলার বাবা আনাননে উদ্দেশ্য করে বলল,

--"ওর কথায় কিছু মনে করো না বাবা! ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। "

--"আরে আংকেল, কি যে বলেন না। আপনি কেন ক্ষমা চাইবেন৷ আমি কিছু মনে করিনি।"

আনান বাসায় ঢুকতেই শুনতে পেলো যে রাজিতা কয়েকটা মেয়ের সাথে বসে গল্প করছে। রাজিতা সবাইকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে,

--"জানিস তারপর কি হলো! আমি এতসুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম আর ওই কানা এসে আমার মধুর স্বপ্নে জল ঢেলে দিলো!"

ওর কথা শুনে সামনের সবাই শব্দ করে হাসছে। রাজিতা একটু থেমে আবার বলল,

--"আরে আমি এমনি জলের কথা বলছি না। সত্যি সত্যি হাতিটা আমার চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে... "

এটুকু বলতেই আনানের দিকে চোখ গেলো রাজিতার। আনানকে দেখেই ও বোবা হয়ে গেলো।

রাজিতার চাচাও লজ্জা পেয়ে গেলো রাজিতার কথাগুলো শুনে। তারপর রাজিতাকে ডেকে বলল,

--"অনেক গল্প হয়েছে। এইবার এইদিকে আয়, আনানকে তোর রুমে নিয়ে যা। দুজনেই ফ্রেস হয়ে আয়। "

রাজিতা অনিচ্ছা থাকা সত্বেও উঠে এলো। আনানকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।

আনান ফ্রেস হয়ে রাজিতাকে বলল,

--"তোমার চাচির সাথে দেখা করেছো?"

রাজিতা জিভ কেটে বলল,

--"ধুর! ভুলেই গিয়েছি। ওদের সাথে গল্প করতে করতে মনেই নেই যে ছোট আম্মুর সাথে দেখা করতে হবে। ছোট আম্মু কি যে ভাববে!"

এইবলেই দৌড়ে ছুটে যেতে লাগল রাজিতা। আনান পেছন থেকে ডেকে বলল,

--"আস্তে ছোটো, পড়ে যাবেতো৷ আমিও যাচ্ছি চলো।"

রাজিতা পিছন ফিরে আনানকে বলল,

--"আপনি কেন যাবেন?"

--"আচ্ছা পাগলী মেয়েতো! আমি কোথায় এসেছি বলোতো?"

--"আমাদের বাসায়।"

--"আমার কিছু হয়না?"

রাজিতা লজ্জা পেয়ে বলল,

--"হুম। আপনার শশুরবাড়ি। "

--"জ্বি মহারানী। আপনিতো নিজের বাসায় এসেই আমার নামে বদনাম ছড়ানো শুরু করেছেন।"

--"কি বদনাম ছড়ালাম?"

--"ওই যে বলছিলে, কানা, হাতি, আরো কি কি যে বলেছো কে জানে!"

রাজিতা মুচকি মুচকি হাসছে।

আনান আর রাজিতা ওর চাচির রুমের সামনে যেতেই শুনতে পেলো যে, ওর চাচি বলছে,

--"ওই যে কথায় আছে না, ' দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পোষা'। তো আমিও এতদিন তাই করেছি। দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি। যে আজ আমাকেই ছোবল মারলো।"

চলবে......

14/07/2023

গল্প_অপরাজিতা_
পর্ব_২য়-
লেখক_স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

রাজিতাকে বিছানার উপরে ফেলতেই রাজিতা আবার চেঁচিয়ে উঠল,

--"ও মাগো! আমার কোমরটা মনে হয় ভেঙে গুড়ো-গুড়ো হয়ে গেছে। এতজোরে কেউ আছাড় মারে।"

আনান ওকে নকল করে বলল,

--"ও মাগো! আমার কোমরটা মনে হয় ভেঙে গুড়ো-গুড়ো হয়ে গেছে! এমনভাবে বলছে যেন আমি উনাকে আকাশ থেকে ফেলেছি। "

--"আকাশ থেকে না ফেলুন। আপনার..."

এটুকু বলেই থেমে গেলো রাজিতা। আনান ওর কাছে এগুতে এগুতে বলল,

--"এতকষ্ট করে কোলে করে নিয়ে আসলাম, ধন্যবাদ দিবে কি উল্টো আমাকেই কথা শুনাচ্ছে। ওইজন্যইতো বলে যে মানুষের ভালো করতে নেই।"

--"আপনার ভালো আমার লাগবে না। একেতো ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছে। তার উপর জোর খাটাচ্ছে। আমাকে তেমন মেয়ে পাননি যে, জোর খাটিয়ে সব করবেন।"

আনান হাসতে হাসতে রাজিতার আরো কাছে এগিয়ে যায়। একদম রাজিতার মুখের সামনে গিয়ে বলে,

--"জোর করে কি করলাম মিসেস..."

রাজিতা এক ধাক্কায় আনানকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

--"কি-কিছুই করতে পারবেন না। একদম আমার কাছে আসবেন না। কাছে আসলে কিন্তু আমি..."

--"আবার কি কলম এটাক করবে নাকি!"

বলেই হো-হো করে হেসে ওঠে আনান।

--"তুমি কি ভেবেছো হ্যাঁ! আমি তোমাকে বিয়ে করেছি বলে তোমার রূপের আগুনে জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে গেছি! মোটেও না। আমার জন্য কত মেয়ে পাগল, আর আমি কি না তোমার মতো একটা ক্যাবলা মেয়ের জন্য পাগল হবো! নেহাৎ দাদু ওয়াদা করেছিল তোমার দাদুকে। নইলে তোমার দিকে আমি ফিরেও তাকাতাম না।"

--"তো কে বলেছে আমার দিকে ফিরে তাকাতে। যেসব মেয়েরা আপনার জন্য পাগল, তাদের কাছে যান।"

--"তখনতো আবার এটা বলবে না যে, ক্যারেক্টারলেস ছেলে!"

--"আপনার ক্যারেক্টার কেমন তাতো বুঝেই গেছি। চেনা নেই জানা নেই, একটা মেয়ের গাঁয়ে পড়ে ঝগড়া করতে এসেছেন।"

--"হেই, লিসেন! তুমি অপরিচিত হলেও আজ থেকে আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ। আর তোমার জন্য আমি যা করছি শুধুমাত্র একজন স্বামীর দায়িত্ব হিসেবেই করছি। তুমি চাইলে আরোকিছু স্বামীর দায়িত্ব পালন করতে পারি।"

বলেই আবার রাজিতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে আনান। রাজিতার ফোলা-ফোলা মুখটা এবার লজ্জায় রাঙা হয়ে যায়৷ দুইহাতে মুখ ঢেকে বলতে থাকে,

--"একদম কাছে আসবেন না। আমি মাত্র অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়া বাচ্চা একটা মেয়ে।"

আনান হাসতে হাসতে রাজিতার পেছন থেকে বালিশটা নিতে নিতে বলল,

--"অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়া একটা মেয়ে যে বাচ্চা হয় তাতো আগে জানতাম না। তোমার থেকে আজ বাচ্চার একটা নতুন সংজ্ঞা শিখলাম৷ তোমার থেকে দেখছি অনেক কিছু শিখতে হবে আমার। হা-হা-হা!। তুমি কি ভেবেছিলে! আমিতো বালিশটা নিচ্ছিলাম। ঘুমাবো বলে। তুমিও ফ্রেস হয়ে ওসব রংচং ধুয়ে আসো। কান্না করতে করতে মুখের একেবারে তোরো-চৌদ্দটা বাঁজিয়ে ফেলেছো। আর এসব ঢং মার্কা কাপড় চেঞ্জ করো। কিছু না পেলে দেখো মা মনে হয় আলমারিতে তোমার জন্য কিছু কাপড়চোপড় রেখেছে । ভয় পেও না তুমি না চাইলে আমি তোমাকে কোনকিছুতে জোর করব না। আমি ওমন ধরনের স্বামী নই।"

রাজিতা লজ্জা পেয়ে বাথরুমে চলে গেলো। সেখানে আগে থেকেই দুটো তোয়ালে, দুটো ব্রাশ, আনানের জিনিসের পাশাপাশি মেয়েদের প্রয়োজনীয় সব জিনিসও সাজানো। তারমানে আগে থেকেই কেউ সব সাজিয়ে রেখেছে। রাজিতাদের বাড়িতে বিয়ের জন্য বিশাল আয়োজন করা হলেও, এখানে তার ছিটেফোঁটাও নেই। নিশ্চয়ই আনান কোনো অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। আচ্ছা ওর আবার নতুন করে কাউকে বিয়ে করার ফন্দি নেইতো! অনুষ্ঠান কেন করেনি! বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে তবুও কোনো অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়ে করল! আনান পেশায় কি করে তাওতো রাজিতা জানে না। শুধু শুনেছিল যে ঢাকায় দুইটা বাড়ি আছে। একটা ভাড়া দেওয়া, আরেকটার একটা ফ্লাটে ওরা থাকে,বাকিগুলা ফ্লাট ভাড়া দেওয়া। নিজের সম্পর্কে কেন যে সব লুকিয়ে রেখেছে কে জানে! কোনো মাফিয়া-টাফিয়াদের সাথেতো আবার জড়িত নেই! এসব ভাবতে ভাবতে শুনতে পায় যে বাথরুমের বাইরে থেকে আনান ওকে ডাকছে।

--"এই যে আমার বাচ্চা মিসেস। বাথরুমেতো ঢুকে গেলেন, কাপড় কে নিবে! দরজাটা খুলুন, এই কাপড়টা নিয়ে চেঞ্জ করে নিন। আমারতো মনে হচ্ছে যে, বাথরুমটা তোমার অনেক পছন্দ হয়েছে। তুমি চাইলে ওখানেও ঘুমাতে পারো।"

রাজিতা দরজা খুলে কাপড়টা নিয়ে আবার বন্ধ করে দিতে দিতে বলল,

--"আপনি আসলেই বেহায়া! যতই আমার থেকে দূরে থাকতে বলছি, ততই কাছে আসছেন৷ আবার বলছেন যে, আপনি ওমন স্বামী না।"

বলেই খট করে আনানের সামনেই দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

সকালে আনান ঘুম থেকে উঠে দেখে যে, রাজিতা ওর পায়ের দিকে মাথা দিয়ে চার হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। রাজিতার পা আনানের গায়ের উপর তুলে দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে। আরেকটু হলেইতো আনানের লাথি খেয়ে নিচে পড়তে হতো! এতবাজে ভাবেও কেউ শুয়ে থাকে নাকি! এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কি করবে৷ কেন যে ওর দাদু এমম একটা ওয়াদা করেছিল! ও জীবনেও ওর দাদুকে ক্ষমা করতে পারবে না। ভাবতে থাকে আনান।
তারপর রাজিতার মাথার নিচে একটা বালিশ দিয়ে দিলো, আর কাথা দিয়ে শরীরটা ঢেকে দিলো।

আনানের মা এরমধ্যে দুইবার কাজের মেয়েটাকে পাঠিয়েছে আনান আর রাজিতাকে ডেকে আনার জন্য৷ আনান রাজিতাকে ঘুম থেকে না তুলে যেতেও পারছে না। অবশেষে হাতে পানি নিয়ে রাজিতার চোখেমুখে ছিটিয়ে দিলো আনান।

পানির ছিটায় ধড়ফড় করে লাফিয়ে উঠল রাজিতা। তারপর সামনে পানির গ্লাস হাতে আনানকে দেখতে পেয়ে বলল,

--"কি করছেন এসব?"

--"আমার বাচ্চা মহারানীর ঘুম ভাঙাচ্ছি।"

--"এভাবে কি কেউ কারো ঘুম ভাঙায়?"

--"তো কিভাবে ভাঙাবো? আমারতো মনে হয় তোমার ঘুম ভাঙানোর জন্য মাইক আনাতে হবে। যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে এসো। কাল থেকে যেন দেরি না হয়। তাহলে নেক্সট টাইম বালতি ভর্তি পানি রেডি থাকবে বলে দিলাম।"

বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আনান।

খাবার টেবিলে সবাই রাজিতার জন্য অপেক্ষা করছে দেখে লজ্জায় রাজিতার মুখটা এইটুকুন হয়ে গেছে।

খাওয়া শেষে রাজিতা ওর শাশুড়ীকে গিয়ে আস্তে আস্তে বলতে লাগল,

--"আমি ওইবাড়িতে কখন যাবো আন্টি?"

--"তোমার চাচ্চু বলেছিল যে, উনারা তোমাকে নিতে আসবে। কিন্তু আনান..."

এটুকু বলতেই রাজিতা জোরে বলে উঠল,

--"আমাকে ওই বাড়িতেও যেতে দিবে না নাকি?"

এইবার আনানের মা হেসে ফেললেন।

--"ধুর পাগলী! আমাদের তোর কি মনে হয়? আমরা কি তোকে খাঁচায় বন্দী করেছি নাকি যে যেতে দিবো না। "

--"তাহলে?"

--"আনান বললো যে, শুধু-শুধু উনাদের কষ্ট করে আসতে হবেনা। আনান নিজেই তোকে নিয়ে যাবে।"

--"আমি উনার সাথে কেন যাবো! আমি চাচ্চুর সাথেই যাবো।"

এতক্ষণ আনান রাজিতার কথাগুলো শুনছিল। এইবার বলে উঠল,

--"বেশি কথা বলো না। যদি যেতে চাওতো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো। নইলে কিন্তু আমি আর নিয়ে যেতে পারব না।"

রাজিতা মুখ বাঁকিয়ে বলল,

--"কে বলেছে আপনাকে কষ্ট করে নিয়ে যেতে। আমি চাচ্চুর সাথেই যাবো।"

--"মা, ওকে বলো রেডি হতে। আমার হাতে বেশি সময় নেই।"

আনানের মা রাজিতাকে ঠেলে রুমের দিকে পাঠাতে পাঠাতে বললেন,

--"যা মা৷ ওর সাথে বেশি বাজে বকিস না। ও ভালোর ভালো আবার রেগে গেলে.."

--"আচ্ছা আন্টি, আমি যাচ্ছি। তবে আজ কিন্তু আসব না। ও বাসায় সবাই এসেছে, কত মজা করছে আর আমি এখানে!"

আনান এইবার রাজিতার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গেলো।

--"তোমাকে না বারণ করেছি, আমার মাকে আন্টি না ডাকতে। মা ডাকলে কি তোমার মুখ খুলে পড়ে যাবে! নাকি কথা বলা বন্ধ হয়ে যাবে!"

--"আচ্ছা। বলব। "

বাইরে 'বলব' বললেও রাজিতা মনে মনে ভাবতে থাকে যে, কালরাতে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছিল। আর সকালে উঠেই মুখটা একেবারে রামগরুরের ছানার মতো গোমড়া করে রেখেছে। কি লোক রে বাবা! ওই আন্টি থুক্কু মা ঠিকই বলেছে। এর মুড সুইং হয় খুব দ্রুত।

রাজিতা গাড়ি থেকে নামতেই ওর চাচাতো বোন নিলা আর রিমি ছুটে আসে৷ নিলা রাজিতাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,

--"সরি রে! আমার জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো। আমাকে ক্ষমা করে দিস বোন।"

এটুকু বলতে না বলতেই যখন আনান গাড়ি থেকে নামল তখন নিলাসহ বাকি সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আনানের দিকে। কে এই সুন্দর ছেলেটা!

চলবে.....

Address

Satkhira
Khulna

Telephone

+8801742430979

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Nazmul_94 posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category